somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চেঁচাতে চেঁচাতে যে ঘাটের জন্ম, তার নাম চেঁচানিয়া

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটি নদী - দুটি গ্রাম - একই নাম - গোয়ালগ্রাম । বড় কোন চরের অস্তিত্ত্ব না থাকলেও এর একটির নাম চর-গোয়ালগ্রাম, যাকে কুঠি গোয়ালগ্রাম নামেও ডাকা হয় এবং আরেকটির নাম পার-গোয়ালগ্রাম; মানে নদী পার হয়ে যেতে হয় তাই গ্রামের নামের আগে পার শব্দটি যোগ করা । আর মাঝখানের যে নদীটি একটি গ্রামকে দুটি গ্রামে বিভক্ত করে দিয়েছে, সেই নদীটির নাম মাথাভাঙ্গা নদী (পদ্মার দক্ষিণের প্রথম শাখা নদী) ।


বলাবাহুল্য, এ দুটি গ্রামই এক সময় একই নামে শুধু গোয়ালগ্রাম নামে পরিচিত ছিল । সেটা এখন থেকে প্রায় এক'শ বিশ বছর আগে অর্থাৎ আঠার'শ সালের গোড়ার দিকের কথা । যখন বর্তমান এই খেয়াঘাট থেকে নদী ছিল আরো পশ্চিমে প্রায় পাঁচ/ছয়'শ গজ দূরে । যা দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে ঘুরে আবার পূর্ব দিকে চলে গিয়েছিল । এর মাঝখানে প্রায় দুই/তিন কিলোমিটার সমতল ভূমি ছিল; যে জায়গার উপর দিয়ে বর্তমানে নদীটি চলে গিয়েছে । পরবর্তীতে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত নদীটির উৎস্য মুখটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় এবং সংক্ষিপ্ত ঐ নদীটির নাম হয় মরগাঙ্গী । যেখানে শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকলেও বর্ষায় জীবন্ত হয়ে সে তার কিছুটা যৌবন ফিরে পায় ।


যাইহোক, এবার আসি চেঁচানিয়া ঘাটের কথায় । কেন এই ঘাটের নাম 'চেঁচানিয়া' হলো ? কথিত আছে নদীটির দক্ষিণ দিকের উৎস্য মুখটি বন্ধ হয়ে যখন প্রচন্ড পানির তোড়ের সৃষ্টি হয়ে পূর্বের সমতল ভূমির দিকে এগুতে থাকে, তখন বিকট আওয়াজে নদী ভাঙ্গন হয়; যা অনেকটা চেঁচানো শব্দের মতো ছিল এবং কয়েক মাইল দূর থেকে সেই শব্দ স্পষ্ট শোনা যেত । বিগত কয়েক প্রজন্মের মানুষের মুখ থেকে জানা গেছে, দক্ষিণের উৎস্য মুখটি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং পূর্ব দিকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নদীটি এগিয়ে যাওয়ার সময় চেঁচানোর মতো যে শব্দ, তা প্রায় তিনরাত তিনদিন ধরে হয়েছিল । আবার কেউ কেউ বলে সাত রাত সাত দিন ধরে হয়েছিল ।


তবে তিনদিন বা সাতদিন যাই হোক না কেন, নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করতে গিয়ে স্রোত আর পানির তোড়ে ভাঙ্গনের যে শব্দ হয়েছিল এবং তৎকালীন সময়ে আশেপাশের গ্রামের মানুষের কাছে সেটা চেঁচানো শব্দের মতই মনে হয়েছিল । এবং এরপর থেকে এই ঘাটের নাম হয়ে যায় 'চেঁচানিয়ার ঘাট' । যে ঘাটের নামের ইতিহাস শুধুই কি জনশ্রুতি নাকি এর বাস্তব কোন ভিত্তি আছে - তা হয়ত আরো গবেষণার বিষয় । এ ছাড়া আরো কথিত আছে, এই ঘাটের বিশেষ কয়েকটি অংশে গভীর রহস্যের কথা । যেখানে জলের তলদেশে মানুষ নামিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কিছু গুজবও প্রচলিত আছে । তবে যে সময় কালে নদীর উৎস্যমুখ বন্ধ হয়ে ভাঙ্গনের ফলে এখানে চেঁচানো শব্দের কথা বলা হয়, তখন এ নদীর জলের প্রবাহ ছিল আরো ভয়ংকর এবং দু'পাড়ের ব্যবধান ছিল আরো প্রসস্থ । যা এখন অনেকটাই ক্ষীণকায় হয়ে গেছে । বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে খুবই কম । তাই সেসব দিনের কথা এখন শুধুই ইতিহাস ।


পরিশেষে বলতে হয়, দূভার্গ্যজনক হলেও সত্য যে এই চেঁচানিয়া খেয়াঘাটের উপর এখন পর্যন্ত কোন ব্রিজ নির্মিত হয়নি । এর উত্তর পাড়ের কাঁচা রাস্তাও চলাচলের অনুপযোগী । বর্ষা কালেও এক বৃদ্ধ মাঝি রশি টেনে নৌকায় করে পার করছে দু-পাড়ের মানুষকে ।

চেঁচানিয়া গাটের দক্ষিণ পাড় চর-গোয়ালগ্রাম বা কুঠিগোয়ালগ্রামে অবস্থিত; যা গাংনী উপজেলার মেহেরপুর জেলার মধ্যে পড়ে । আর উত্তর পাড় পার-গোয়ালগ্রামের মধ্যে পড়ে; যা দৌলতপুর উপজেলার কুষ্টিয়া জেলায় অবস্থিত । এবং মাথাভাঙ্গা নদীটি মুলতঃ পদ্মার দক্ষিণ দিকের প্রথম শাখা নদী ।


দৌলতপুর, কুষ্টিয়া
তারিখঃ ২২.০৮.২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×