নিস্তব্ধ গভীর রাত। ভ্যাবসা গরম আর অবিরাম মশার প্যাঁনপ্যাঁনানি। পাশের রুম থেকে ভেসে আসছে মোটা ছেলেটার কর্কশ নাক ডাকার শব্দ। সেই শব্দের সাথে আমার ঘরের দেয়ালঘড়িটার টিকটিক শব্দ মিলে এক অনন্য তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে। অনেক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখেও ঘুমের সন্ধান পাইনি। বন্ধুর দেয়া সেই উল্টো গোনা নিয়ম, গল্পের বই পড়ার নিয়ম সবই হার মানছে আজ। কোন ভাবেই ঘুম আসছে না দু’চোখে। স্মৃতির দুয়ারে শুধুই ভেসে উঠছে সেদিনের সেই স্মৃতিটুকু। দুরালাপনে তুমি যখন জরুরী ভাবে দেখা করতে চাইলে, আমার কি যে আনন্দ হচ্ছিল! অথচ দেখ, সেই দিনটিই এখন আমার জীবনের সবচেয়ে ঘৃণিত আর দুঃখের দিন। তুমি আমি দুজনই কত স্বপ্নই না দেখতাম। আমাদের ছোট্ট একটা বাড়ি, বাড়ির সামনে একটা বাগান, বাগানের পাশেই ছোট্ট একটি পুকুর...........আরো কত কি!
আমি ভেবেছিলাম এসব নিয়ে তোমার মনের উড়ো চিন্তাগুলো আর বিস্তৃত করে বলবার জন্যই হয়তো আমায় ডেকেছো। আমার সব আশা-স্বপ্ন কাঁচের ঘরের মতো ভেঙ্গে গেল, যখন তুমি বললে, “আমায় তুমি ক্ষমা কর,পিন্টু”। আমি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে না পেরে আবার তোমায় প্রশ্ন করলাম, “তুমি কি অসুস্থ, কি হয়েছে তোমার?” তুমি বেদনা ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললে, “আমি খুবই দুঃখিত। আসলে আমি জানতাম না যে, তোমার বাবা একজন রাজাকার। আর তুমিতো জানোই আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাই একজন রাজাকার পরিবারের সাথে একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোন সম্পর্ক হতে পারে না- এটা আমার বাবার কথা।” বলেই তুমি ছলে গেলে। আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তোমার চলে যাওয়ার দিকে। আর ভাবছিলাম, “আসলেই তাই, তবে যেটা তোমার জানা ছিল না, সেটা যে আমারও অজানা। যদি আগে জানতাম আমার বাবা একজন রাজাকার, তবে তার পরিচয়ে সমাজে কখনোই পরিচিত হতাম না। কারণ এর চেয়ে ঘৃণার আর কি হতে পারে?
আমার বেদনাসিক্ত হৃদয় হতে এখন শুধু একটি কথাই উচ্চারিত হচ্ছে, “ ছি বাবা! ছি! তুমি কি শুনছো, তুমি কি দেখছো তোমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত?”
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




