somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন, ঢাকা কলেজ

২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা কলেজ ...
নামটা শুনলেই অনেকের আত্মা কেঁপে উঠে। অনেকেই মনে মনে ভাবেন যে ঢাকা কলেজ বুঝি কোন কলেজ না, একটা সন্ত্রাসীদের আতুঁড়ঘর। তাদের ভাব দেখলে মনে হয় এখানে যারা পড়ালেখা করে তারা ছাত্র না, সাক্ষাৎ কোন যম!

ঢাকা কলেজের ভর্তি হওয়ার আগে সবসময় শুনে এসেছি, ওইখানে পড়ালেখা হয় না, পরীক্ষা হয় না। সব গুণ্ডা-মাস্তান ভর্তি হয়। ওইখানে সারাদিন মারামারি চলে, চাঁদাবাজি চলে। যারা ভর্তি হয় তারা সব খারাপ ছাত্র। ও হ্যাঁ সবচেয়ে ভয়ংকর কথা ঐখানে নাকি টাকা ছাড়া ভর্তি হওয়া যায় না। মানে নির্ধারিত টাকার বাইরেও আরো ফি দিতে হয় ছাত্রনেতাসহ হেনতেনদের ...

ঢাকা কলেজে যখন ভর্তি হই তখন দেশের সবচেয়ে কম টাকায় (২৬৬২/-) ভর্তি হয়েছি। অন্যান্য বেসরকারি কলেজের তুলনায় কম করে হলেও ৩-৫ ভাগ কম। একটা টাকাও অতিরিক্ত লাগে নি।

পরীক্ষা আর ক্লাস প্রসঙ্গে আসি। আমরা ভর্তি হওয়ার পর নিয়মিত ক্লাস হয়েছে। এমনকি এইচএসসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার জন্য যেদিন সকালে ক্লাস হত না সেদিন দুপুরে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা ঠিক, আমরা ক্লাস করতাম না। তবে আমাদের ক্লাস করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা কলেজ প্রশাসন থেকে করা হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় বর্ষে উঠে সে চেষ্টায় ভাটা পড়ে যায়। পরীক্ষার প্রসঙ্গে আসলে বলতে হয় এই দুই বছরে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা আমরাই দিয়েছি। প্রথম বর্ষের ক্লাস টেস্ট, মিড টার্ম, ইয়ার ফাইনাল সবগুলো পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বর্ষেও মিড টার্ম, ক্লাস টেস্ট, প্রি-টেস্ট, টেস্ট (চলছে) যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আর এই কয়েকদিনে ক্যাম্পাসের ভিতরে কোন গণ্ডগোল দেখিনি। নিউ মার্কেট বা নিলক্ষেতে চাঁদাবাজিও দেখিনি। বাস ভাঙ্গচুরের ঘটনা একবার কি দুইবার ঘটেছে।

যাই হোক, যত কিছু শুনেছি তার অনেক কিছুই আমরা দেখিনি। হয়তো কোন এককালে এসব চলত। কিন্তু এখন অনেক কিছুই ঘটে না। দিন দিন কলেজ প্রশাসন যথেষ্ট কঠোর হচ্ছে। তবে সরকারি কলেজ বলে অনেক সীমাবদ্ধতা থেকেই যায় তার উপর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক একইসাথে চালানো যথেষ্ট কঠিন কাজ।

একটা মজার কথা বলি। এই তো সেদিন একজন আমাকে বলছিল তোমাদের ঢাকা কলেজের ছেলেরা তো কোন আমলের মহাপুরুষদের নিয়ে গর্ব করে বেড়াও। বর্তমানে একজনও কি দেখাতে পারবা যে তার কার্যক্ষেত্রে সফল। আমি চাইলেই অনেক কিছুই বলতে পারতাম কিন্তু কেন জানি বলিনি। কিন্তু পরেরদিনই এই বছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীতদের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশিত হয় আর সেই তালিকার একজন ছিল বাংলাদেশী, যে কিনা ঢাকা কলেজের !

ঢাকা কলেজের অনেক সমস্যা আছে এটা আমিও মানি। এরপরেও ঢাকা কলেজ ঢাকা কলেজই। ১৭৪ বছর ধরে টিকে থাকা, প্রত্যেক বছর কমপক্ষে ১০% করে ছাত্র দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তৈরি করে আসা একটা প্রতিষ্ঠান আর যাই হোক কোন সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে পারে না।

ঢাকা কলেজ থেকে আমি তেমন কোন আহামরি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাইনি। কিন্তু একটা শিক্ষা পেয়ে গেছি আর সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ...
“ এটা তোমার জীবন, কারো কোন দায় নেই। তোমার জীবন কিভাবে গড়বে সেটা তোমার ব্যাপার। ”
এই শিক্ষাটা আমাদের এই বয়সে খুবই দরকারি। আমাদের বয়সটা এমন থাকে যে হাজার চাপ দিলেও যদি উক্ত শিক্ষাটা না আসে তাহলে কোনভাবেই সফলতা সম্ভব না। এইজন্যই বোধহয় প্রত্যেক বছর বিপুল পরিমাণ ছাত্র (দেশের ২য় সর্বোচ্চ) এই কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়। আর স্নাতকের পরও প্রায় একই পরিমাণ ছাত্র বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়। এই মন্ত্রই বোধহয় ঢাকা কলেজের সাফল্যের গোপন রহস্য!

আজ হটাৎ ঢাকা কলেজ নিয়ে এত কথা বলছি কারণ আজ ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। চলুন তাহলে এই ঐতিহ্যবাহী কলেজের প্রতিষ্ঠা নিয়ে কিছু জেনে নেই ...

ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৮৩৫ সালের ১৫ জুলাই ‘ঢাকা গভর্নমেন্ট স্কুল’ নামে এটি যাত্রা শুরু করে। এর মাধ্যমে ঢাকাতেই বাংলার প্রথম সরকারি ইংরেজি স্কুল স্থাপিত হয়। ১৮৩৮-৩৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা গভর্নমেন্ট স্কুলে ৮টি ক্লাস ছিলো এবং ছাত্র সংখ্যা ছিল ৩৪০। শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ৭ জন ইংরেজ এবং ৪ জন বাঙালি। ১৮৪১ সালে স্কুলটি কলেজের মর্যাদায় উন্নীত হয় এবং এর নাম হয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ’। ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর কলকাতার বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল সদরঘাটে কলেজের মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮৪৪ সালে। ১৮৭৩ সালে স্থান সঙ্কুলানের অভাবে ভিক্টোরিয়া পার্কের পূর্বে একটি প্রশস্ত দালানে কলেজটি সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আবার ১৯০৮ সালে বর্তমান কার্জন হলে স্থানান্তরিত করা হয়।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব ঢাকা কলেজের উপরও এসে পড়ে। শিক্ষা-দীক্ষার কাজে এবং অন্যান্য নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাই ভাটা পড়ে এমনকি কলেজ ভবনগুলি সামরিক বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ারও নানা রকম সম্ভাবনা দেখা দেয়। কৌশলগত কারণে ১৯২০ সালের জুলাই মাস থেকে ঢাকা কলেজের ইন্টারমিডিয়েট অর্থাৎ এফ.এ ক্লাসকে কলেজের বি.এ, বি.এস.সি এবং এম.এ, এম.এস.সি ক্লাস থেকে পৃথক করে নতুন একটি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ গঠন করা হয়। এই নব গঠিত ইন্টারমিডিয়েট কলেজকে ২০ আগস্ট কার্জন হল থেকে সরিয়ে তদানীন্তন ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধনকে নির্ঝঞ্ঝাট করার উদ্দেশ্যে কলেজের অপর অংশটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত করে নেয়া হয়। একই সাথে প্রাক্তন ঢাকা কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বহু পুস্তক, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে সরবরাহ করে এবং এর যাত্রাকে সুগম করে দেয়। নতুন আদেশ বাস্তবায়নের ঠিক আগে, ১৯২১ সালের ৩১ মার্চ ঢাকা কলেজের মোট ছাত্র সংখ্যা ছিল ৭২৯। এদের মধ্যে ৫৫০ জন হিন্দু এবং ১৭৯ জন ছিল মুসলমান। ১৯২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকা কলেজটিকে অন্য ভবনে অর্থাৎ সে সময়কার প্রকৌশল বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ঢাকা কলেজকে ছোটলাটের বাস ভবনে (বর্তমান ল’কমিশন এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) স্থানান্তর করা হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলকে কলেজের হোস্টেলে রূপান্তরিত করা হয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলটি সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া কলেজের অন্যান্য অবকাঠামোও সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ভাগাভাগি করতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আহত সৈন্যদের পুনর্বাসনের জন্য ভবনটি ছেড়ে দিতে হয় এবং আবার ঢাকা কলেজ লক্ষ্মীবাজারে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৫ সালে কলেজটি বর্তমান জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে কলেজটি ১৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর ছাত্রসংখ্যা ২০ হাজারের বেশি এবং শিক্ষক-কর্মচারী সহ স্টাফ প্রায় ৫০০ জন।

১৭৪ বছর ঐতিহ্য নিয়ে টিকে থাকা এই প্রতিষ্ঠান আজ ১৭৫ বছরে পা দিচ্ছে।
শুভ হোক এই পথযাত্রা। এই ঐতিহ্য নিয়ে ঢাকা কলেজ টিকে থাকুক চিরকাল।
শুভ জন্মদিন ঢাকা কলেজ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০০
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×