এইতো প্রায় ১ বছর ১ মাস ২৮ দিন হল নিজের দেশ থেকে ৫৫০০ কিমি দূরে রাশিয়াতে আমি এখন "ডক্টর অফ মেডিসিন" হবার উদ্দেশে অবস্থানরত। দেশে থাকতে আমি একদম ই শহরের বাইরে মানে ঢাকা এর বাইরে যেতাম না বললেই চলে। সবথেকে বড় কথা, একা একা তো না ই। মাঝে মাঝে মা-বাবা আর বড় ভাইয়ের সাথে মামার বাড়ি অথবা অন্যান্য আত্মীয়ের বাড়িতে বেরাতে যেতাম। তবে সেটা ছিল খুবই কম, কারন আমি একা থাকতেই বেশি পচ্ছন্দ করি। মনে করে দেখলাম, আমি ঢাকা এর বাহিরে ১০-১২ দিনের বেশি কখনো থাকিনি। এইটাই আমার সবথেকে বেশিদিন বাইরে থাকা এবং একেবারে বছর। যাইহোক।
এয়ারপোর্টে ঠিক যেই মুহূর্তে ঢুকলাম আর দেখলাম মা-বাবা আর ভাই অন্যপাশে দাড়িয়ে আর আমি আর একপাশে, তখনি বুঝে ফেললাম আর দেরি করে লাভ নেই, এখন থেকে,আমি আর কারো ছায়ায় নেই। নিজের ছায়াকে অতিক্রম করে,ছায়াকে পিছনে ফেলে দিলাম।শুরু হল এক নতুন যাত্রা বিভিন্ন রকমের অনুভূতিকে সাথে নিয়ে। একদিকে পরিবারের লোকজন,দেশ ও বন্ধুবান্ধব আর অন্যদিকে, জীবনের এক নতুন মোড়, এক নতুন অভিজ্ঞতার সাগর।
আমার এই অভিজ্ঞতার সাগরে ঝাপ দেওয়া শুরু হল, বিমানে চড়ার মাধ্যমে। এই অভিজ্ঞতাটা সারাজীবনই আমার মনে থাকবে। কাস্টমস অফিসারদের পাড় করে যখন বিমানে উঠলাম তখন একটু অন্যরকম মনে হল। অভিজ্ঞতাটা নতুন বিধায়, চারিদিকে উৎসাহে তাকানোটাই মাথায় সবথেকে বেশি কাজ করল। বিমানে যাত্রা শুরু হল, জি,পি,এস এর পর্দায় গতিবিধি আর বিমানের জানালা দিয়ে বাহিরের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতেই ।কিছুটা সময় কেটে গেল, ঠিক যেমনটা কেটে গেল,বিমানে চড়ার কৌতূহল। বলা বাহুল্য, ক্রিস্টফার নোলানের " ইনসেপশন" দেখার ইচ্ছাটাও বিমানে মিটিয়ে ফেললাম। ফিল্ম বাফ বলে কথা।আর একটা জিনিশ লক্ষ্য করলাম যে, আমি যেই বিমানটায় চরছিলাম, আমার দেখামতে, সেটা ৩১,১৮৯ ফুট উঁচুতে আর ৫৮৮ মাইল/ ঘণ্টা বেগে চলছিল। সাদা মেঘদের খেলা দেখতে দেখতে দোহা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট হয়ে নতুন আর এক বিমানে চড়ে
চলে আসলাম মস্কো দামোদেদোভা এয়ারপোর্ট। দোহা এবং মস্কো- দুটাতেই অবতরন ছিল মনে রাখার মতন। দোহাকে মনে হচ্ছিল একটি ছোটখাটো উন্নত দ্বীপ, আর রাতের আকাশে মস্কো অবতরনের দৃশ্য এখনও আমার চোখে ভাসে। অসাধারণ ছিল সেই দৃশ্য। এইতো গেল আমার বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা। ছোট জীবনের এক ছোট অভিজ্ঞতাই বলা সঠিক হবে। কারণ অন্য ভাষাভাষী এক মানুষের দেশে, গোর্কি টলস্তয় আর গ্যাগারিনের দেশে, আসা মানে এক অভিজ্ঞতার সাগরে ঝাপ দেওয়াই বটে।
আজকে আর লেখার ইচ্ছা হচ্ছে না। বাকিটা আর একদিন বলবো।তবে নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন আবহাওয়া, নতুন ভাষা সাথে নিয়ে এখনো সাঁতরে যাচ্ছি সেই অভিজ্ঞতার সাগরে। তার সাথে চলছে নিজেকে মানিয়ে নেবার সংগ্রাম এবং আমি এইসব খুব উপভোগ করছি।
সবসময় কোন লেখা শেষ করার সময় একটা উক্তি দিয়ে শেষ করা,আমার মতে ভাল।
"Get Busy Living Or Get Busy Dying" - আশা করছি যে আমি উক্তিতার প্রথম অংশে আছি।
শান্তনু সেন। ( বিকাল ৫ টা বেজে ৫ মিনিট, শনিবার ০৭-০১-২০১২)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৬