অ্যানফিল্ড, ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসের এক অন্যতম তাৎপর্যবহ একটি অংশ। একবার ভাবুন তো, আপনি টানেল থেকে বেরিয়ে সবুজ মাঠটায় প্রবেশের জন্য আগাচ্ছেন আর অ্যান্ফিল্ডের ৪৫ হাজার দর্শক আপনার নাম নিয়ে গান গাচ্ছে, হাতে নিয়ে আছে ছোট বড় অনেক ব্যানার যাতে আপনার নামের পাশে 'ঈশ্বর' শব্দটি উল্লেখ করা আছে। You have to be that special, have to do that special to be the 'God of Anfield'! এমনি একজন ছিলেন রবি ফাউলার!
ইতিহাস লেখার কাজটা শুরু হয়েছিল সেইদিন, ফাউলার যখন তার ১৭ তম জন্মদিনে নিজের প্রথম প্রোফেসনাল কন্ট্র্যাক্ট সাইন করেন। অভিষেকও হয় সেই মৌসুমেই, ফুলহ্যামের বিরুদ্ধে লীগ কাপের তৃতীয় রাউন্ডের এক খেলায়। এই ম্যাচের দ্বিতীয় লেগেই একায় পাঁচ গোল করে ঢুকে যান রেকর্ড বুকে। সেই মৌসুমেই ইংল্যান্ড অনুর্ধ্ব ১৮ দলকে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতান তিনি। মৌসুম শেষ করেন ১৮ গোল নিয়ে, যা একজন উঠতি তারকার জন্য যথেষ্ঠ ছিল। বর্ষসেরা উঠতি তারকার এ্যাওয়ার্ড।
পরের মৌসুমে ছিলেন আরো দুর্দান্ত! লিভারপুলের হয়ে প্রতিটি ম্যাচেই খেলেন তিনি। এদের মধ্যে আর্সেনালের বিরুদ্ধে লীগ কাপের ফাইনালের দ্রুততম হ্যাট্রিক (৪ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড) করার কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এবারও জেতেন বর্ষসেরা উঠতি তারকার এ্যাওয়ার্ড।
ফাউলার কতোটা দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার ছিলেন তার খুব ছোট্ট একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, তিনি ছিলেন একমাত্র খেলোয়াড় যে কিনা নিজের প্রথম তিন মৌসুমে ৩০ এর অধিক গোল করেছে, যে রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাংতে পারেনি। মাত্র ১১৬ ম্যাচ খেলেই করেন ৯৮ গোল! যা একজন ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকারের জন্য অবশ্যই বিশাল কিছু। পেয়ে যান 'God of Anfield' এর খেতাব। স্টিভ ম্যাকম্যানাম্যানের সাথে তার জুটি ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে ভয়ংকর স্ট্রাইকিং জুটি। এই দুজন মিলে অনেকটা একাই লিভারপুলকে ম্যাচের পর ম্যাচ জেতান।
তবে অফ ফিল্ডে তার প্লেবয় ইমেজ, ইঞ্জুরি আর মাইকেল ওয়েনের দুর্দান্ত ফর্ম তার প্রথম একাদশে থাকার সুযোগ কমিয়ে দেয়। আবার মাঠে একের পর এক ঘটনার জন্ম দেওয়ায় সাস্পেনশন আর ব্যাড বয় ইমেজ ততকালীন কোচ জেরার্ড হুলিওরের পছন্দ হয়নি। তাই ২০০০-০১ মৌসুম শুরু করেন দলের থার্ড চয়েস স্ট্রাইকার হিসেবে। এই মৌসুমে করেন ১৭ গোল, জেতেন ট্রেবল কাপ। তবে হেসকি-ওয়েইন জুটির সাথে যেন পেরেই উঠছিলেন না। বেশিরভাগ ম্যাচেই খেলতে হতো বদলি হিসেবে যা একজন হাইলি রেটেড স্টাইকারের জন্য ছিল খুবই হতাশার। আর একারণে কোচের সাথেও সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে তার। যার কারণে পারি জমান লিডস ইউনাইটেড এ। ১২ মিলিওন পাউন্ডে লিডসে যোগ দেওয়াটা লিভারপুল সমর্থকদের এক বড় অংশ মেনে নিতে পারেনি সেই সময়।
তবে লিডস ইউনাইটেডেও ফাউলার যাদু অব্যাহত থাকে। প্রথম মৌসুমে এক হ্যাট্রিক সহ করেন ১২ গোল, দলকে নিয়ে যান ইউয়েফা কাপে। ২০০৩-০৪ মৌসুমে প্রি সিজনে পড়েন ইঞ্জুরিতে যা ডিসেম্বর পর্যন্ত তাকে মাঠের বাইরে রাখে। লিডসের হয়ে ততোদিনে ৩১ ম্যাচ খেলে করেন ১৫ গোল, আর ক্লাবের আর্থিক অবস্থা ও তেমন ভালো ছিল না। আর সেই সুযোগে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি তাকে সাইন করায়। তবে এই ট্রানফারও তেমন কাজে দেয় না। এবারও সেই ইঞ্জুরি আর বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুতে জড়িয়ে ফর্ম হারান। সিটির হয়ে খেলেন ৮০ টি ম্যাচ, করেন ২০ টি গোল।
২০০৬ সালের জানুয়ারী ট্রান্সফার উইন্ডোতে ফ্রি ট্রানফারে আবারও লিভারপুলে যোগ দেন। 'God Of Anfield' কে পেয়ে লিভারপুলের সমর্থকদের শুরু হয় বাঁধভাঙা উল্লাস। বার্মিংহাম সিটির বিরুদ্ধে খেলার সময় সমর্থকরা ব্যানার নিয়ে আসে যাতে লেখা ছিল, 'God –
number eleven, welcome back to heaven!' এবারের এক মৌসুম ইঞ্জুরি আর বেশিরভাগ ম্যাচ বদলি হিসেবেও খেলেও ৩০ ম্যাচে ৮ গোল। দুই দফায় লিভারপুলের হয়ে খেলে জেতেন একটি এফএ কাপ, দুটি লীগ কাপ, একটি চ্যারিটি শিল্ড, একটি ইউয়েফা কাপ ও একটি ইউয়েফা সুপার কাপ।
ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে কোনো ক্লাবেই এক মৌসুমের বেশি থাকতে পারেননি। আগামী পাঁচ মৌসুম পাঁচটি ভিন্ন ক্লাবে খেলেন, করেন ২৪ গোল। ক্যারিয়ার শেষ করেন মুয়ানথং ইউনাইটেডের হয়ে খেলে।
নিজের পিক টাইমে লিভারপুলে যতোটা সফল ছিলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ছিলেন ততটাই ব্যার্থ। দলে চান্সই পেয়েছেন ২০০২ সাল পর্যন্ত, এসময়ে তেমন কিছুই করতে পারেননি। মাত্র ২৬ ম্যাচে করেন ৭ গোল।
এই God Of Anfield নিজের সেরাটা খেলেছেন অ্যানফিল্ডেই। নিজের সেরাটা দিয়েছেন এই অ্যানফিল্ডেই। সেরার খেতাবটা যতটা দ্রুত পেয়েছেন, ইঞ্জুরি আর বিতর্কে জড়িয়ে হারিয়েছেন ও ততো দ্রুতই। তবে যতো দিন অ্যানফিলড আছে ততদিন থাকবেন স্মরণীয় হিসেবেই। After all, He's the 'God Of Anfield'!
রবি ফাউলার
আলোচিত ব্লগ
দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া
১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।