'কখনো একটা খেলোয়ারকে দেখেছেন ইপিএলের স্পিডি কাউন্টার এ্যাটাকে এতটা ক্লিন ফিনিশিং দিতে?', 'কয়জনকে দেখেছেন স্ট্রাইকিং পজিশনে এতটা নিঁখুত পজিশনিং করতে?', 'কয়জনকে দেখেছেন স্ট্রাইকার হয়েও মাসের পর মাস গোল না পেয়ে থাকতে?', 'কয়জনকে দেখেছেন সাবেক রাইভাল ক্লাবের খেলোয়ার হয়েও মাসের পর মাস গোল না পেয়েও সাপোর্টারদের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছে?'
'আলোচনা-সমাচোলনা, ভালোবাসা, পার্ফেকশন, হতাশা, ব্যার্থতা, নিজেকে প্রমান করা' এই সব কিছুই ফার্নান্দো তোরেস।
আসলে তার জীবনটাই ছিল আনপ্রেডিক্টেবল। দাদা ছিলেন অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের পাড় সমর্থক, নাতি হিসেবে তাই ক্লাবের প্রতি ভালোবাসাটা জন্মগতভাবেই থেকে গিয়েছিল তার মধ্যে। রায়ো একাডেমিতে প্রথম দুই বছর খেলেন গোলকিপার হিসেবে, সাত বছর বয়স থেকে খেলা শুরু করেন স্ট্রাইকিং পজিশনে। তারপর ১০ বছর বয়সে রায়ো ১৩ একাদশে চান্স পেয়ে এক মৌসুমেই করেন ৫৫ গোল। এই পারফর্মেন্স যথেষ্ঠ ছিল অ্যাথলেটিকোর ইউথ সিস্টেমে চান্স পাওয়ার জন্য।
১৯৯৮ সালে অ্যাথলেটিকোর অনূর্ধ-১৫ দলের হয়ে জেতেন নাইকি কাপ, আর বয়সভিত্তিকভাবে জেতেন ইউরোপের শ্রেষ্ঠ খেলোয়ারের খেতাব। ১৯৯৯ সালেই অ্যাথলেটিকোর সাথে ৫ বছরের চুক্তিতে সই করেন। প্রথম মৌসুমে 'বি' দলে খেলার পরই ২য় মৌসুমে দল লা লীগার যখন টিকিট পেল, তখন বিরাট কিছু আসার বাকি ছিল। লা লীগায় প্রথম মৌসুমে করেন ১৩ গোল। মৌসুমের শেষের দিকে এই প্রতিভাবান স্ট্রাইকারকে দলে ভেরানো চেষ্টা করেন চেলসির মালিক রোমান আব্রাহোমোভিচ, দিয়ে বসেন অবিশ্বাস্য ২৮ মিলিওন পাউন্ডের লোভনীয় প্রস্তাব, তবে অ্যাথলেটিকো বোর্ড তা সরাসরি না করে দেয়। পরের মৌসুমে ৩৫ টি লীগ ম্যাচে করেন ১৯ গোল, আর পড়েন ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড। তার অধীনেই দল খেলে ইন্টারটোটো কাপের ফাইনাল, যদিও তারা হেরে যায় ভিয়ারিয়ালের কাছে। পরের মৌসুমে আবারো আব্রাহামোভিচের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে অ্যাথলেটিকো। ২০০৬ বিশ্বকাপে ভালো খেলার পরও সেই আব্রাহামোভিচ এবং প্রস্তাব প্রত্যাখান। ২০০৬-০৭ মৌসুমেও করেন ১৪ গোল, তবে এবার আরেক ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল তাকে পাবার জন্য নড়েচড়েই বসে, অফার করে ক্লাব রেকর্ড ডিল, ২০ মিলিওন পাউন্ড+লুইস গার্সিয়া, যার ফলে তার অ্যানফিল্ডে আগমন নিশ্চিত হয়ে যায়।
প্রথম মৌসুমটা ছিল সবার চিন্তার বাইরে, লিভারপুল লেজেন্ড মাইকেল ওয়েনের রেকর্ড ভেঙে সব মিলিয়ে করেন ২৯ গোল, যার ২৪ টিই ছিল লীগ গোল, যা অভিষেক মৌসুমে বিদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও। এবারও চেলসি করে বসে ৫০ মিলিওন পাউন্ডের রেকর্ড বিড, এবং এবারও অগ্রাহ্য। পরের মৌসুমেই করেন লিভারপুলের ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত ৫০ গোল, হন বিশ্ব একাদশের গর্বিত সদস্য। পরের মৌসুমেও একই চেহারা বিশ্ব একাদশে, ৩২ ম্যাচে করেন ২২ গোল।
তবে পরের মৌসুমের গোল খড়া তাকে আর বেশিদিন অ্যানফিল্ডে থাকতে দেয় নি। এবার রোমান আব্রাহামোভিচ হতাশ হন নি, ব্রিটিশ রেকর্ড ৫০ মিলিওন পাউন্ডে তোরেসকে নিয়ে আসেন চেলসিতে। তবে প্রথম মৌসুমে ফ্লপ, ১৮ ম্যাচ খেলে করেন মাত্র ১ গোল। পরের মৌসুমে লীগে তেমন কিছু না করতে পারলেও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ মাতা-দ্রগবার সাথে দারুন ত্রয়ী উপহার দেন, যা চেলসির পরম আরাধ্য চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতাতে সাহায্য করে। মৌসুমে সব মিলিয়ে করেন ১১ গোল। পরের মৌসুম সাবেক গুরু রাফা বেনিতেজের অধীনে করেন ২২ গোল, যার মধ্যে একটি ২০১৩ ইউরোপা লীগের ফাইনাল জেতাতে ভূমিকা রাখে। এই মৌসুমে ইতোর আগমনে একটু হলেও সমস্যার সম্মুখিন তোরেস।
স্পেন জাতীয় দলের হয়ে তিনি সবসময়ই ভালো খেলেছেন। ১০৬ ম্যাচে করেছেন ৩৬ গোল, হয়েছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। জিতেছেন ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো।
ফার্নান্দো তোরেসের ক্যারিয়ারটা আসলেই আনপ্রেডিক্টেবল। তোরেস যতটাই খারাপ খেলুক সমালোচনা করতে আপনার একটু হলেও বাধবে। তোরেস অনেকটা ঘুড়ির মতো। মাঝে মাঝে অনেক ওপরে, আবার মাঝে মাঝে আকাশের ঠিক মধ্যখানে আবার মাঝে সুতা কেটে যাওয়ার জন্য মাটিতে। ঘুড়ি কতটা ভালো উড়ছে সেটা কেউ দেখেনা, কিভাবে অন্য ঘুড়ির সাথে লেগে কেটে যায় সেটা সবার চোখে পড়ে। কারণ ওড়াটাই ঘুড়ির বৈশিষ্ট্য, মাটিতে পড়ে যাওনা না।
♥ এল নিনো ♥
![](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/generic-ads-580x400.jpg)
আলোচিত ব্লগ
শোকের উচ্চারণ।
নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন
প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।
এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন
আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন
পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি
একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন