somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্যাটম্যান ফ্যাক্ট: নাগাসাকি দিবস

০৯ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ৯ই আগস্ট, ঐতিহাসিক নাগাসাকি দিবস। মনে প্রশ্ন আসতে পারে সারদিন টিভির সামনে বসে থাকলাম কোথাও তো চোঁখে পড়লো না!! উত্তরের জন্য চলে যেতে হবে ৬৮ বছর আগের এই দিনটিতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট সকালে জাপানের হিরোশিমা শহরে লিটল বয় এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে ফ্যাটম্যান নামের পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে সারা বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। মানব জাতি এ চরম নিষ্ঠুরতা দেখে যেন মুহূর্তের মধ্যে থমকে গিয়েছিল গোটা পৃথিবী। কিন্তু এতো ধ্বংসযজ্ঞ, রক্তপাত,পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এ মর্মান্তিক ঘটনার জন্য কখনো অনুতাপ করেননি। :-< :-<
হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবসের আলোচনা করতে গেলে একটু পেছনে নজর দিতে হবে। ১৯১৮ সালের ২৮শে জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফার্ডিনান্ড সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হলে অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে ৷ শুধু দায়ী করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি,হত্যাকাণ্ডের মাত্র এক মাস পর অর্থাৎ ২৮ শে জুলাই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ৷ স্বাভাবিক কারণেই দু'দেশের বন্ধু দেশগুলোও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ৷
অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, তুরস্ক, জামার্নীকে নিয়ে কেন্দ্রীয় শক্তি এবং সার্বিয়া, ফ্রান্স, রাশিয়া,বৃটেন, জাপান, ইতালি ও আমেরিকাকে নিয়ে গড়ে ওঠে মিত্র শক্তি৷ এ যুদ্ধে জার্মানীর নেতৃত্বাধীন বাহিনী পরাজিত হয়৷ ইতিহাসে এই যুদ্ধই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ৷ ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ৷
অবশেষে ১৯১৯ সালের ১০ই জানুয়ারী ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয় ৷ দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধে ৮৫ লক্ষ মানুষ নিহত এবং ২ কোটি ১০ লক্ষ লোক মারাত্মকভাবে আহত হয় ৷ এ যুদ্ধ শেষ হবার মাত্র বিশ বছর পর আবারো বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা ৷ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অপমান আর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানী পোলান্ড আক্রমণ করে এ যুদ্ধর সূচনা করে ৷ এ যুদ্ধে জাপান জার্মানীর পক্ষে অবস্থান নেয়৷ জার্মানী, ইতালি, জাপান, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়াকে নিয়ে গড়ে উঠে অক্ষশক্তি ৷
অপরদিকে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, নরওয়ে ও ডেনমার্ককে নিয়ে গড়ে ওঠে মিত্রশক্তি ৷ টানা ৬ বছরের যুদ্ধে জাপান,জার্মান ও ইতালীর নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তি পরাজিত হয় ৷ তবে জাপান আত্মসমর্পন করতে দেরী করায় আমেরিকা জাপানকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দেয় ৷
১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট ৷ মার্কিন বোমারু বিমান বি-টুয়েন্টি নাইন ইনোলা গে 'লিটল বয়' নামে একটি পারমাণবিক বোমা নিয়ে হিরোশিমার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ওই দিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে প্লেন থেকে বোমাটি নিচের দিকে নিক্ষেপ করা হলে হিরোশিমা শহর থেকে প্রায় ৫০০ মিটার ওপরে সেটি বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে শহরটির প্রায় ৬০ ভাগ ধবংসস্তুপে পরিণত হয় এবং নিহত হয় ৭৫ হাজার মানুষ৷
হিরোশিমার এ ভয়ঙ্কর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মাত্র তিনদিন পর তিনিয়ন দ্বীপ থেকে বি-টুয়েন্টি নামে একটি বিমান দ্বিতীয় বোমাটি নিয়ে নাগাসাকির উদ্দেশে রওনা হয়। এ বোমাটির নাম দেয়া হয়েছিল ফ্যাটম্যান। বোমাটি ছিল গোলাকার প্লুটোনাম ক্ষেপনাস্ত্র। নাগাসাকি শহরে ৯ আগস্ট বেলা ১১টা ২ মিনিটে বোমাটি মাটি থেকে ৫০০ মিটার উপরে বিস্ফোরিত হয়। নিমিষে ঝরে গিয়েছিল প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার প্রাণ। আহত হয় আরো ৭৪ হাজার মানুষ। বোমার তেজস্ক্রিয়তায় শিশুদের মাথার চুল পর্যন্ত উঠে যায় ৷ শিশুরা খাওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলে৷ আর বোমার আঘাতে আহতরা দীর্ঘদিন কষ্ট ভূগতে ভূগতে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ৷ ১৯৫০ সাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখে পৌঁছে ৷
প্রতিবছর ঐ ঘটনাকে স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবস। হিরোশিমা-নাগাসাকি দিবস উপলক্ষে একটাই প্রত্যাশা-পৃথিবী থেকে সকল পারমাণবিক বোমা ধ্বংস করা হোক। নিশ্চিত হোক বারুদের গন্ধমুক্ত সুন্দর পৃথিবী, যেখানে নতুন প্রজন্মের জন্য থাকবে নিশ্চিত নিঃশ্বাস এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:০৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×