আর
আমার বিরান হয়ে আসা নখ
তার ত্রিসীমা পেরিয়ে অরণ্যের শুরু
তারপর নদী, তারপর খোলা মাঠ, তারপর
কিছু নেই যেখানে সেখানে শুয়ে
প্রহর গুণছে আমার আকাশ;
কতকাল তার ছায়া পড়ছে না
এই নখের সমুদ্রে, আমি
শীতার্ত বাঘের চরিত্রে নিস্তেজ
থাবা নিয়ে একা-
স্টেশনের শেষ ট্রেনের বাঁশিতে
আমার অনেক ভয়
একদিন,
কোনো এক অন্ধকার যুগে
আলো বলতে মানুষ
যখন কেবল চোখকে বুঝতো
যে সময়ে খেঁকশিয়ালরা এতো
ক্ষুধার্ত ছিল না, সশস্ত্র ছিল না
সেইসব দিনে,
আমি প্রাণ দিয়েছি ট্রেনের তলে-
ভাবা যায়, আমার সকল আত্মা
মৃত-
শুধু যুদ্ধবাজ দেহ নিয়ে কোনো মতে
বেঁচে আছি
পোটলা হারানো টোকাইর মতো-
তাই এই বাঁশি
এই পাতা ঝরা সুর
আর দেহের ঘর্মাক্ত হাসি
আর আঙুলের পরমায়ু
এবং নখের ঐতিহ্য ও বিনাশ
শেষাবধি একাকার হয়ে যাচ্ছে
সমস্থ চৈতন্যে-
এদিকে কুয়াশা যেভাবে রয়েছে
সেইভাবে, একদিন
আমি ও বিধাতা- বিধাতা ও আমি
খোলা পায়ে,
শীতের অতিথি হয়ে গেছি
পৌষের গ্রামের বাড়ি;
শীতের বিরাট সুনাম যে,
তিনি পর্দাশীলা ঋতু
তার রসালো কেচ্ছার কথা মানুষমাত্রই জানে-
অন্যদিকে, অথর্বের মতো
নগরীর ফুটপাথে দাঁড়িয়ে দেখেছি
শীতের পিঠার নির্মাণ কৌশল
(এ সময় আমার সহিত ঈশ্বর ছিলনা)
শিল্পী রমনীর অগ্নিগর্ভ চোখ দেখে
এবার আমার নখ
খামছে ধরছে
ভাপা পিঠার মতন অবিকল
কিছু হৃদপিণ্ড:
ফলে আকাশ যেনবা
দুরের নক্ষত্র; তার কোন কর্ম নেই
শুধু আলোর গরিমা ছাড়া
ঝিকিমিকি ছাড়া কিছু নেই
আর ছায়া ছাড়া
নিজের উত্থান নেই কোনো,
তাই নক্ষত্র না
আয়াসে আমার নখের গভীরে
ঢুকে যাচ্ছে
ঢুকে যাচ্ছে শত কোটি বস্তি
শত সহস্র সভ্যতা
ও দুর্ভিক্ষ
এবং স্বাধীনতা-
এই দিনে
প্রসঙ্গত: বলে রাখি
অতিথি পাখির সঙ্গে
প্রতিদিন ডানা মেলে
এই আমি গুলিবিদ্ধ হতে আছি
তোমাদের হাওড়ে-বাওড়ে;
একদিন-
চেয়েছি আমার মৃত্যু হবে
বজ্রপাতে,
তীব্র বজ্রপাতে আমার প্রয়াণ হোক
এ প্রার্থনা জানিয়েছি
প্রকৃতিকে-
আমি চেয়েছি এমন
সাদামাটা মৃত্যু
যাতে যমদূতের সহিত
কোনো জবাবদিহিতা
থাকবে না-
তা আমার না পছন্দ;
এমন বিবেচনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে
ঝাঁঝড়া হওয়া মন্দ নয়
বরং অত্যধিক ভালো এই হঠাৎ প্রস্থান
(সর্বোপরি, প্রস্তুতিমুলক মৃত্যু নিয়ে আমার ধারণা খুব কম)
পাশাপাশি
তীব্র কুয়াশায় শীতকালীন সংসদ
অধিবেশন এবার বসছে না
জেনে,
আমার আনন্দ;
খবরে প্রকাশ,
সুদক্ষ ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে গেছেন স্পিকার
আর মন্ত্রী-এমপিরা
(যার কুয়াশা বলতে দশজন কুমারীকে বোঝে)
চরম দুর্ভোগে পড়েছেন
রীতিমতো আগুন পোহানো যাচ্ছেনা বিধায়-
সত্যি, সাংসদদের মতন
শীত কালে মানুষকে বড় মেকি লাগে
এ সময় তার মগজে ও গায়ে
এক ধরনের আরোপিত ভঙ্গি চলে আসে
যেন তারা প্রফেশনাল মডেল
অথবা চরম দু:খি- যেন
তারা সকলে শুক্কুর আলী,
খালি গায়ে হাওয়া লাগলে
কাঁপতে থাকবে, কাঁশতে থাকবে
তারপর মরে যাবে-
ভাবো,
বৃক্ষেরা যখন পাতার পোষাক
খুলে,
পুরোপুরি আদিম হয়েছে; এ সময়
মানুষ কেবল গরম পোষাক পড়ে
জানাতে চাইছে,
সে উলঙ্গ ছিলনা কখনো, কোনোদিন
বড় কথা,
গত চৈত্রের উত্তাপ আর
তার মনে থাকছে না,
থাকবে কী;
পোষাকের ওপর পোষাক চাপানোর ফলে
এই শীতে,
মানুষকে আর মানুষ লাগেনা...
তাই মৃদুমন্দ এই বেঁচে থাকা-
আর তাই এ্যাশট্রের আয়ু নিয়ে
কৌতুক করছে মুহুর্তের সিগারেট;
আর ছাই,
ধোঁয়া এবং কুয়াশার নামে
বলি করছে অনেক সন্ধ্যা
আর শীতের অরণ্য
আর আলোর সামান্য মুখ
এবং সৌন্দর্যের নখ
আর...