পরিবেশবাদীরা পরিবেশ নিয়ে ক্রমাগত কথা বলতে থাকে। গাছ কেটো না। গাছ লাগাও। পশুর প্রতি সদয় ব্যবহার করো। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করো।
শুনতে আমাদের কারো কারো কাছে খুব ভালোলাগে। কিন্তু নিজেরা সচেতন ভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কতটা কমিয়েছি। অনেক জায়গায় শপিং করতে গেলে প্লাস্টিক ব্যাগ এখন কিনতে হয়। অনেক দেশে প্লাস্টিকের বোতল কন্টেইনার ইত্যাদি রিসাইক্লিং করার ব্যবস্থা আছে। ফিরিয়ে দিয়ে কিছু মূল্যও পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশে।
আবার রিসাইক্লিং কন্টেইনারে সঠিক ভাবে অনেকে ফেলেন না প্লাস্টিক বোতল, কাগজের ঠোঙ্গা ইত্যাদি অনেক শিক্ষিত মানুষও। পার্ক, সাগর পারে, লেইকের ধারে, পাথরের মাঝে পরে থাকতে দেখি আনন্দকারীদের ফেলে যাওয়া জুসের, মদের বোতল। জলে ভাসতে ভাসতে তারা কোথায় চলে যায় কোন তিমির পেটে ঢুকবে বলে । অথবা কোন পাখি তুলে নেয় খাবার ভেবে।
পরিবেশবাদীদের সংখ্যা পৃথিবীর মানুষের তুলনায় হাতে গোনা বলা যায়। তবু তারা সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন । আমার ছোটবেলায় দেখতাম চটের ব্যাগ হাতে বাজারে যেতে । প্লাস্টিক বন্ধ করে দেয়ার পর অনেকে কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যান। প্লাস্টিক ব্যগ কিনেন না। কিন্তু অনেকে এখনও পয়সা দিয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ কিনেন। বাজার ঘরে আনতে। তাদের সংখ্যা প্রচুর।
পাটের তৈরি পরিবেশ ফ্রেণ্ডলি ব্যাগ হাতে নিতে অনেকের লজ্জা লাগে অথচ প্লাস্টিক ব্যাগ ঠিক আছে। ঘর ভর্তি হযে যায় একটা বোঝার মতন এই ব্যাগ বাজার সদাইর সাথে ঘরে আসতে আসতে। যার কোন ক্ষয় নেই। তখন বাইরে ফেলে দেয়া হয়, যা মাটিতে কখনো নষ্ট হয় না শত বছরেও।
বিভিন্ন প্রকারের বোতল কন্টিইনার ৪৫০ বছর থেকে একহাজার বছর পর্যন্ত সময় নিবে, ডিকোম্পজ হতে। অথচ গত তের বছরে ৯.১ বিলিয়ন টন তৈরি হয়েছে। মোট ২৫,০০০ এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর ওজন, বর্তমানে জীবিত প্রত্যেক ব্যক্তির প্রায় ২,৪০০ পাউন্ড ট্র্যাশ ব্যবহার করে।
প্লাস্টিক দূষণ মানুষ, প্রাণী, জল এবং মহাসাগরের উপর বিষাক্ত প্রভাব বিস্তার করছে। প্লাস্টিক দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সমান্তরাল বৈশ্বিক জরুরী অবস্থা এখন।
বিষাক্ত রাসায়নিক প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাংশ যা চোখে দেখা যায় না তা আমাদের রক্ত এবং টিস্যুর মধ্য পাওয়া যায়। এর প্রকাশ হয়, ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি, প্রতিবন্ধী, ইমিউনিটি সিন্টেমের সমস্যা, অন্তঃস্রাবের সংক্রমণ এবং অন্যান্য রোগের সাথে সম্পর্কিত।
কিছুদিন আগের এক গবেষনায় পাওয়া গেছে কানাডার নাম করা কোম্পানির বোতলজাত পানির বোতলের পাঁচটির পানির মধ্যে মিশে আছে ত্রিশ ভাগ প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশ। অথচ নির্দ্বিধায় পরিচ্ছন্ন মনে করে আমরা পান করছি সে সব বোতলজাত পানি। নিশ্চয়ই সবদেশের বোতলজাত পানিতেই এই সমস্যা আছে।
শরীরের ভিতর কি ভাবে প্রভাব বিস্তার করে নিচ্ছে আমরা নিজেও জানতে পারছি না।
অথচ আমরা ভালোবাসি এই প্লাস্টিক ব্যবহার করতে। থালা বাটি ঘটি জুতা স্যান্ডেল থেকে ব্যবহার্য সব রকম দ্রব্যই এখন পাওয়া যায় প্লাস্টিকের তৈরি। সহজ লভ্য এবং ভঙ্গুর নয় বলে এর ব্যবহারও আকর্ষণিও মানুষের কাছে।
প্লাস্টিক ব্যাবহারের জন্য খুব ভালো। খাবার দাবার মুড়িয়ে নিতে। প্যাকিংয়ে পানি, ভেজা তরল অবস্থা থেকে দ্রব্য বাঁচাতে সহজ পদ্ধতি। কিন্ত খাবারে প্লাস্টিকের প্রভাব যা শরীরের জন্য ভালো নয়।
প্লাস্টিক খারাপ বলে, আমি এর ব্যবহার কমাতে পারছি না নিজের ইচ্ছায়। অনেক কিছু প্লাস্টিক মোড়ানো এবং কন্টেইনারে থাকে যা ইচ্ছা না হলেও সে ভাবেই কিনতে হয়। যত দিন এর উৎপাদন বন্ধ না হবে ততদিন এই ভয়ংকর চিরজীবী পদার্থ আমাদের মাঝে ঘুরে ফিরে আসতেই থাকবে আমাদের গ্রাস করে ফেলতে। পরিবেশবাদীর বলা কওয়ায় কোন লাভ হবে না।
সাগরের জলের সাথে যে পরিমান প্লাস্টিক এখন বর্জ্য হিসাবে ভাসে তা মাছের তুলনায় বেশী। বেশী দিন না আর কয়েক বছরের মধ্যে সাগরের অনেক মাছ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে প্লাস্টিকের কল্যাণে।
বিষ বৃক্ষের গাছ একবার গজিয়ে গেলে তাকে নিধন করতে সময় লাগে। তবে ইচ্ছা থাকলে করা যায়। পর্যাপ্ত প্লাস্টিকের ব্যবহারের মধ্যেও অনেকে প্লাস্টিক বিহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। খুব বেশীদিন আগে নয় একটা সময় মানুষ প্লাস্টিক ছাড়া জীবন যাপন করেছে। প্লাষ্টিকের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পাটের তৈরি পরিবেশ বান্ধব পন্যের উৎপাদন ব্যবহার। সেদিকে মনোযোগ দেয়া যেতে পারে পরিবেষেকে ভালো রাখতে।প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ রাত ১:৪৫