somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোজা ইফতার সেহেরি

২৮ শে মে, ২০১৯ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকে অভ্যাসটা গড়ে উঠেছিল। রোজার দিনে ইফতারের আধঘন্টা আগে থেকে টেবিল জুড়ে থালা সাজিয়ে সাবার থালায় সমান ভাবে খাবার সাজানো। এর মাঝে দু চারটা বেশি থালা রাখা হতো। সবাই যখন খেতে বসেছেন প্রতি দিনই দু একজন ভিক্ষুক আসত। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইফতার দিয়ে আসাটাও নিয়ম ছিল। কয়েক প্রকার ইফতার। এবং সরবত গ্লাসে প্রায় প্রতিদিন করা হতো। ছোলা, পিয়াজু নিয়মিত তার সাথে আরো অন্য সব খাবার থাকত। কখনোই পাঁচ ছয় পদের নিচে নয়।
একটু পানি একটু সরবত একটু খানি খাবার মুখে দিয়েই সবাই লাইন দিয়ে নামাজ পড়তে দাঁড়ানো। নামাজ শেষে আস্তে ধীরে সব ইফতার খাওয়া। এর পর প্রায় সময় আমাদের পেটে আর জায়গা থাকত না। অথচ বাবা ভাত খাওয়া শেষ করার জন্য তাগদা দিতেন। ভাত খাওয়া শেষ হলে সবাই টেবিল গুছিয়ে অবসরে যেতে পারে। ভাত না খেলে বাবা রাগ হতেন। আমরা তাই খেতে বসতাম কিন্তু মূল খাওয়া আর এত ইফতারির পরে খাওয়া যেত না। বাবা কে দেখানোর জন্য বসা হতো।
এই খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে মায়ের বড় বিছানায় সবাই শটান শুয়ে পরে গল্পে মেতে উঠতাম। আর অপেক্ষা থাকত কড়া লিকারের চা আসার।
বছরের পর বছর একই নিয়মের কোন ব্যাতিক্রম ছিল না। কিন্তু বাড়ি ছেড়ে যখন পড়ালেখার জন্য ঢাকা আসা হলো। তখন রোজার কিছুদিন অন্য রকম হযে যেত। বাড়ির সেই মায়ের যত্নে বানানো খাবার যেমন ছিল না। তেমনি ছিল না নিয়মগুলোও। মাঝে মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে যেত গাউসিয়া, নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে। তখন দেখতাম ছোট ছোট প্লেটে, ইফতারি সাজিয়ে রেখেছে দোকানদার। তাই কিনে আর সব মানুষদের সাথে কখনো বসে কখনো দাঁড়িয়ে রোজা ভাঙ্গা হতো। নামাজ পড়ার সুযোগ ছিল না।
এই সারাদিন রোজার পরও বেশ বাকি কেনাকাটার জন্য সময় দিতে পারতাম। বিছানায় গড়িয়ে পরার দরকার হতো না।
দোকানে যারা কাজ করেন তাদের দেখতাম বিশাল এক গামলায় মুড়ি ছোলা পিয়াজু ভেঙ্গে শশা পিয়াজ ধনেপাতা ইত্যাদি দিয়ে মেখে একসাথে বসে গোল হয়ে খেয়ে নিতেন। এর মধ্যে কোন ক্রেতা আসলে তাও সামলাতেন। কাজ করতে করতেই তাদের রোজা ভাঙ্গা। শেষ রোজার দিকে এই কাজের ব্যস্ততা ইবাদতের চেয়ে বেশি বেড়ে যেত। রাতভর অনেক দোকান খোলা থাকত।

এক সময় দেশ থেকে বিদেশে চলে আসার পর দেখলাম। এখানে সবাই কাজে এত ব্যস্ত । ঘরে ফিরে কোন রকমে রাতের রান্না করে তা দিয়েই ইফতার সারেন । অনেকটা ওইসব দোকানের কর্মচারিদের মতনই।
হয় তো কখনো ফল, সরবত থাকত। মাঝে মধ্যে সপ্তাহের ছুটিতে বন্ধু স্বজন মিলে এক সাথে ইফতার খাওয়ার আয়োজন বা বাড়িতে নানা রকম ইফতার করা হয় ঐতিহ্যময় অভ্যাসে।
সেহেরির সময়ও আমাদের কত আয়োজন ছিল। সন্ধ্যার খাবারে চেয়ে অন্যরকম নতুন সব রান্না করে রাখা হতো সেহেরিতে খাবার জন্য। রাতে উঠে গরম ভাত রান্না করা হতো। নানা পদের তরকারি দিয়ে খাওয়ার পর, দুধভাত খাওয়া যেন মাস্ট ছিল।
বিদেশে এইসব নিয়মও উবে গেল। অনেকেই সকালে এক কাপ দুধ, বিস্কুট, পাউরুটি বা শুধু পানি দিয়েই সেহেরি করেন।
একটু ঘুমিয়ে উঠে নিয়ম মতন কাজে যাওয়া।
আমার ক্লাস যখন শেষ হতো। সূর্য ডুবার তখন আর মিনিট পনের বাকি হয় তো।
দু তিনটা বাস বদল করতে করতে বাড়ি পৌঁছানোর আগেই পথে সূর্য ডুবে যেত। আযান শোনার কোন সুযোগ ছিল না। ঘড়ির কাটায় সূর্য ডোবার সময় মেপে ব্যাগ থেকে পানি বের করে পথেই রোজা ভাঙ্গা হতো। তারপর আরো অনেকটা পথ চলার পর বাড়ি পৌঁছানো। বাড়ি ফিরে রান্না খাওয়ার জোগাড় নিজেকেই করতে হতো।
প্রথম দিকে বাড়ির অভ্যাসটা মনে করে সে ভাবে নিয়ম পালনের চেষ্টা করে এক সময় পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে সবটাই বদলে যেতে থাকল। সেহেরি খাওয়ার জন্য উঠতে ইচ্ছে করে না।
এক সময় দেখলাম রোজার সময় উনিশ ঘন্টা পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে দীর্ঘ সময় রোজা ঠিকই রাখছেন।
ইফতারি খেয়ে সব কাজ সেরে ঘুমাতে যাওয়ার অল্প সময়ে ভোর হয়ে যাচ্ছে। ঘুমের সময় নাই হয়ে যাচ্ছে। এখানে রোজার দিনের অজুহাত দিয়ে পাড় পাওয়া যায় না।
তবে সহকর্মি অনেকে অবাক হয়ে বলে একটু পানি পান করো। এত গরমে ডিহাইড্রেড হয়ে যাবে। অন্য ধর্মের হয়েও অনেকে সহযোগী হয়ে নিজেদের খাবার বাদ দিয়ে রোজা রাখা শুরু করে দিয়েছে, সম্মান দেখানোর জন্য। বিষয়টা খুবই ভালোলাগার, আন্তরিকতা বিনিময়ের।
সেহেরি খাওয়ার জন্য এখন রেস্টুরেন্টে যায় বাংলাদেশের রোজাদাররা। আর ইফতার খাওয়ার ধুমের সাথে ইফতার পার্টির এই যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এটা রোজার সাথে কতটা সম্পৃক্ত কে জানে।
যারা নিজেরই ভালোভালো ইফতার খাওয়ার আয়োজন করতে পারেন তাদের সম্মানে ইফতার পার্টির দাওয়াত দেওয়া হয় গনভবনে । এখন পত্রিকার খবর নয় যারা যান তারা ফেসবুকে ছবি দেন গনভবনে যাওয়ার । কিন্তু যারা ইফতার খেতে পায় না তাদের জন্য কোন পার্টি হতে দেখলাম না এখনও।
রোজা রেখে আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবে রোজা শেষ করলাম। এই যে ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস এতে কি আল্লাহ সন্তুষ্ট হচ্ছেন। রোজা গ্রহণ হলো কি হলো না সে তো এক মাত্র আল্লাহই জানবে। আপনার কাজ হলো নিয়ম মেনে রোজা রাখা। রোজার আগে পাঁচ ফরজ নামাজ পড়া। তারাবী পড়ে রোজাকে পোক্ত করা। তেলাওয়াত করা এসব না করে কেবল সেহেরি আর ইফতারি খাওয়ার সংস্কৃতি মানলে রোজা কতটা সহি ভাবে পালিত হচ্ছে।
বাবার বাড়িতে থাকার সময় যে নিয়ম পালন করেছি জেনেছি, সেখান থেকে এখন অনেক দূরে নিয়ে এসেছে সময় পরিবেশ। তার সাথে মানিয়ে নিরবে চলাই শ্রেয় মনে করি।
কিন্তু দেশের ইফতার পার্টি আগে যেমন দশ দিন পরে শুরু হতো এখন মনে হয় রোজার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়। এই সব কালচার ঠিক কিভাবে ধর্মের সাথে যায় জানি না।
রোজার সময়ে জিনিসের দাম বাড়ার সাথে নানা রকম ইফতার বানানোর হৈ চৈ যে ভাবে বাড়ছে তাতে মনে হয় রোজা রাখার চেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ ইফতার খাওয়া। এখন সাথে একদিন অন্তত রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেহেরি খাওয়া যেন ফরজ হয়ে গেছে। অথচ জানি রোজা সংযমের মাস। রোজার মাসে সংযম করে খাওয়া কম করার কথা। অথচ জনগনের ওজন ইফতার খেয়েই বেড়ে যাচ্ছে।
বিদেশে দীর্ঘ সময় ধরে রোজা রাখেন অনেকে। গতবছর ফিনল্যান্ডে রোজা প্রায় একুশ ঘন্টার মতন দেখেছিলম। ওখানে তো রাতের আঁধারই নামে না। তারপরও রোজা হচ্ছে। কোন আয়োজন না করে রোজা রাখেন ভাঙ্গেন । দেশে উদ্ভুট্টি সংস্কৃতি রোজাকে ঘিরে ইফতার সেহেরি আয়োজন সংযম, খাওয়া কমের চেয়ে বেশি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৯ সকাল ৭:৩৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×