ফেব্রুয়ারি বইমেলা ২০২০ এ এবার আমার একটি উপন্যাস আসছে। প্রকাশ করছেন একরঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী। উপন্যাসের চরিত্রের নাম আর একরঙ্গা ঘুড়ির প্রকাশকের নাম কাকতালীয় ভাবে এক হয়ে গেছে। এবং চিঠিতে লেখা এ উপন্যাসের প্রতি প্রকাশকের নিজের অনেক বেশি আগ্রহ থাকায় বইটা ছাপার অক্ষরে পাঠকের কাছে আসছে।
বইটির নাম আকাশের চিঠি। চিঠিতে লেখা উপন্যাস। অনেকগুলো চিঠি একটি গল্প তৈরি করেছে। একটি ভিন্নধারার উপন্যাস। আছে প্রেম, ভালোবাসা, আদর, কষ্ট, যন্ত্রনা। পৃথিবীর অস্থির সময়ের কথা।
আগের প্রজন্ম যারা চিঠি লেখায় আগ্রহী । অনেক চিঠি লিখেছেন নিজের জীবনে তাদের কাছে আকর্ষনিয় হতে পারে সুন্দর চিঠি পড়ার জন্য। নতুন প্রজন্ম যারা চিঠির সাথে অভ্যস্ত নয় । গোপন চিঠি মানে চিরকুট এস এম এস তাদের কাছে। তারাও জানতে পারে চিঠি কতটা আবেগময় এবং অন্তরের কথা ধারন করতে পারে এই বইটি পড়ে।
এই বইটি আমার প্রথম প্রেম নয়। প্রথম প্রেম, প্রথম প্রকাশিত ছিল কবিতার বই। তারপর ছোটগল্প, উপন্যাস কয়েকটি পাঠকের হাতে পৌঁছেছে আগের বেশ কিছু বছর ধরে। তবে প্রতিটি সন্তানের মতন প্রতিটি বই, লেখা আমার ভালোবাসা ধারন করে সমান ভাবে। সবাই আমার কাছে অনেক আদরের।
দুহাজার এগরোতে যৌথ উপন্যাস প্রকাশ পেয়েছিল এক সাথে, একটি "আলোর যাত্রা" অন্যটি "শ্রাবণ তিথির সোনালি আলো"। আলোর যাত্রা বইটা মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পরে লেখা যুদ্ধ সময় এবং পরবর্তি সময়ে যুদ্ধ সময় কেমন ভাবে অনেক মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে তার কিছু খণ্ড চিত্র কিছু চরিত্রের মাঝে প্রকাশ করেছি। শ্রাবণ তিথির সোনালী আলো বইটাতে পরিবারে একজন প্রতিবন্দী হয়ে গেলে তার জীবনের কষ্ট একটা পরিবারে কতটা দুঃসময় নিয়ে আসে অথবা উশৃঙ্খল জীবনযাত্রা পারিবারকে কেমন দূরে ঠেলে দেয় এইসব সামাজিক জটিলতার বিষয়গুলো ধরার চেষ্টা করেছি। তবে সর্বেপরি ভালোবাসার গল্প।
অনেকদিন বই করার ইচ্ছাও হয়নি। অমনিবাস একটি বই প্রায় হয়ে গিয়েছিল বছর তিনেক আগে। তারপর ভালোলাগেনি প্রকাশকের অযত্ন অবহেলা যেমন তেমন করে প্রকাশ করার চেষ্টা। আমার অনেক মন খারাপ করে দিয়েছিল। শেষ মূহুর্তে ছাপা হওয়া বন্ধ করে দিলাম সে বইয়ের। ঐ বইটি অন্য একজন প্রকাশও করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কোন উৎসাহ পাইনি কেন যেন। অথচ যারা প্রুফ দেখছিলেন বা বইটা প্রকাশের আগেই পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা বইটা প্রকাশ করার দাবী জানিয়েছিলেন। লেখাগুলো খুব ভালো বলেছিলেন। হয়তো ঐ ভালো লেখাগুলো নিরবেই নিজের কাছে থেকে হারিয়ে যাবে এক সময়।
আমার বইয়ে প্রকাশিত লেখা গল্প উপন্যাস ব্লগের পাঠকরা পড়েন নাই। কয়েকজন ব্লগার মনে হয় বই পড়েছেন। তারা জানেন ব্লগের লেখার চেয়ে গল্পগুলো অন্যরকম।
প্রতিটি গল্পে ভিন্নতা রাখতে চেয়েছি। যদিও আমাদের পাঠকের পাঠ অভ্যাস এক হিমু বা মিশির আলীর গল্প পড়ায় স্থায়ী হয়ে গেছে ভালোলাগায়। আমি চাইলে তেমন লিখতে পারি কিছুদিন আগে তেমন একটা গল্প লিখেছিলাম, পরীক্ষনীয় ভাবে দেখলাম যারা আমার ব্লগে বা ফেসবুকে মন্তব্য দেন না তারাও পড়ছেন এবং ভালোলাগার কথা জানাচ্ছেন।
তবে আমি লিখি নিজের মতন প্রতিটি চরিত্র যেন আলাদা হয় আগের লেখা থেকে সে চেষ্টা করি। এক কুমিরের ছানা বারবার দেখাতে চাই না। চেষ্টা করি নিজের ভিতর নিজেকে ভাঙ্গি গড়ি। অনেক লেখার চেয়ে ভালো লেখা হোক সত্যিকারের পাঠকের ভালোলাগা হোক।
এই প্রকাশিতব্য উপন্যাসটি অনেক দিন আগে লেখা হয়েছে। কিন্তু ছাপতে দেয়ার আগে নিজের কাছে পড়ে বারবার ভুল অসংলগ্নতা ধরা পরছিল। আবেগে লিখে ফেলার পর অনেক দিন রেখে দিলেই ভুলগুলো চোখে পরে। অনেক কিছু বদলে দিতে হলো। অনেক ঠিকঠাক করতে সময় গেল। বিরক্তও হলাম সম্পাদনার যন্ত্রনায়। আর সব কাজ দূরে সরিয়ে রাখতে হলো। কিন্তু সব শেষে ভালোলাগল সঠিক ভাবে লেখাটা ছাপার ঘরে গেল। এখন যদি বানান টানান ভুল থাকে সেটা প্রুফ রিডার আর ছাপা খানার ভুতের দোষ। তবে গল্পের ভিতর সংযোগ রাখাটা আমার কাজ সেটা ঠিক করেছি অনেক যত্ন করে।
অনেকটা সময় নিয়ে এবার বই আকারে প্রকাশ পাচ্ছে আকাশের চিঠি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৭