চীন সরকার অনেক কিছু নিজেদের মতন করে। তাদের শাসন ব্যবস্থা তাদের নিজেস্ব জীবন যাপনের খবর বাইরের মানুষের সাথে শেয়ার করতে চায় না। সরকার থেকে কঠিন ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয় এই বিষযগুলো। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবন ভীষণ ভাবে সীমাবদ্ধ সরকারি নিয়মদ্বারা।
আমি যখন ঢাকায় এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলাম চীনে যাওয়ার জন্য। তখন দেখলাম অনেক চীনের নাগরিক আমার আসেপাশে। সময়ের আগে চেকিং শেষে অপেক্ষা করছিলাম প্লেনে বোর্ডিংয়ের কিন্তু শেষ মূহুর্তে জানাল প্লেন একঘন্টা লেইট। অপেক্ষায় বসে থেকে থেকে বাড়ির লোকজনের সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে ফেসবুক দেখা শেষ করে, পাশের চাইনিজ লোকের সাথে কথা বলছিলাম। সে আমাকে বলল, তুমি তাড়াতাড়ি ভিপিএন এ্যাড করে নাও তোমার ফোনে। চীনে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারবে না তা না হলে। নিজের আইডি লুকিয়ে অন্যভাবে অর্ন্তজালে ঘোরার জন্য অনেকে ভিপিএন সিস্টেমটি রাখে। তবে চীনের ভিতর ঢুকে গেলে সেটা আর করা সম্ভব না। অন্যদেশ থেকে আগেই সিস্টেম নিয়ে রাখতে হবে।
চীনে ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ।
চীন সরকার জনসংখ্যা রোধ করার জন্য একটি মাত্র সন্তান নেয়ার ঘোষনা দেয় অনেক আগে এবং কেউ দুটো সন্তান জন্ম দিলে তাকে ফাইন করা থেকে পরের সন্তানের কোন দায় দায়িত্ব সরকার নেয় না।
ছেলে সন্তান একটি হলে আর সন্তান নেয়ার সুযোগ নাই। কিন্তু মেয়ে সন্তান হলে আরেকবার সুযোগ নিতে পারে। বেশ কবছর আগের খবর ছিল মেয়ে সন্তানের ঘাটতি পরেছে চীনের একটা প্রদেশে। বিয়ের জন্য পুরুষ অনুপাতে নারীর সংখ্যা কমে গিয়েছে। সরকার এক নারীকে দুজন বিয়ে করার আইন করে দেয়। কে কেমন জীবন যাপন করবে। পড়ালেখা কাজকামের অনেক বিষয় সরকার নিয়ন্ত্রনে রাখে।
গতবছর থেকে চীনের কিছু বৈরি স্বভাবের প্রভাব দেখছিলাম কানাডার উপর। হংকংয়ের উপর। আঠারো সালের শেষে চীনের হুয়ান কোম্পানির সিনিয়র হুয়াওয়ে টেলিকমসের নির্বাহী মেং ওয়াঞ্জহুকে ভ্যানকুভারে গ্রেফতার করা হয়। আমেরিকার নির্দেশে, বেশ কিছু তথ্য গোপনে পাচার এবং অস্বচ্ছ অর্থ বিনিময়ের সন্দেহে। হুয়াওয়ে টেলিকমস কোম্পানি এ সময়ের বিশাল বড় একটি প্রতিষ্ঠান। ফাইভ জি তারাই চালু করতে যাচ্ছে।
এই বিশাল প্রতিষ্ঠানের সিইও কে আটক করা চীনের জন্য ভীষণ অপমানকর ব্যাপার। তারা কোন কারণ শুনতে নারাজ। পাল্টা আক্রমণ হিসাবে সাথে সাথে কানাডার দুজন নাগরিককে বন্দী করে এবং তাদের হত্যাকরার হুমকি দেয়। কানাডার দুতাবাস বন্ধ করে দেয় চীনে। এমন কি কানাডার প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে ফোন করেও কথা বলতে পারেন না চীনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বন্দী দুজন নাগরিকের বিষয়ে। ২০১৯ জি ২০ জাপানের ওসাকা শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট বেশ শীতল ব্যবহার করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে।
কানাডার সাথে ব্যবসা বানিজ্যের সম্পর্ক চীনের দিক থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয় যত দিন যেতে থাকে। যা কিছু রপ্তানী হতো চীনে সব ব্যবসায়ীরাই কানাডার দ্রব্য নিতে অস্বীকৃতি জানায়। মনে হলো সবাই একজোট। ফসল থেকে মাংস এবং অন্যান্য বস্তু সামগ্রী যা কানাডা থেকে চীনে রপ্তানী হতো সব প্রায় বন্ধ হয়ে গেল । ব্যবসায়ীদের বিশাল একটা অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে পরতে হলো। অপর দিকে কানাডা উদার মনো ভাবে চীনের দ্রব্য যেমন আমদানী করছিল সে ভাবেই করে । ফলে চীনের কোন রকম ক্ষয়ক্ষতি হয় না।
কোন দুতাবাস না থাকায় চীনে থাকা কানাডার নাগরিকদের দায়িত্ব পালনে দেশটার বেশ অসুবিধার সম্মুখিন হয়।
বিশেষ করে এই মূহুর্তে চীনের ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের সময়ে যে সমস্ত কানাডার নাগরিক কানাডায় চলে আসতে চাইছেন কানাডা সহজে তাদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে পারছেন না। চীনে কানাডার দুতাবাস না থাকায়। এছাড়া কানাডা দেশের নাগরিক যারা সিটিজেন নন কিন্তু পার্মানেন্ট নাগরিক তাদের জন্যও সমান দ্বায়িত্ব পালন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু চীন যেহেতু দ্বৈত নাগরিকত্ব দেয় না তাই যারা কানাডার পারমানেন্ট নাগরিক কিন্তু চীনের সিটিজেন বলে চীনা পাসপোর্টধারী তাদেরকে কানাডায় আসতে দিতে রাজী নয়। তাতে পরিবার দুই ভাগ হয়ে গেলেও চীনের কোন সমস্যা নাই। অথচ চীনের নাগরিক যারা কানাডার সিটিজেন হয়নি কানাডার পারমানেন্ট রেসিডেন্ট তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে চায় কানাডা। পরিবারকে এক সাথে রাখা কানাডা গুরুত্ব দিয়ে দেখে।
অথচ চীন তাদের নাগরিকদের রেখে দিয়ে কানাডায় জন্ম নেয়া বাচ্চা এবং কানাডার সিটিজেন মা বা বাচ্চা বাবাকে পাঠাতে রাজী হচ্ছে।
অদ্ভুতভাবে তারা নিজের দেশের নাগরিকদের অনেক ইচ্ছা অনিচ্ছা কঠিন ভাবে নিয়ন্ত্রন করে সরকারী আইনে। তেমনি কঠিন ভাবে তারা বিদেশের সাথে সম্পর্কও নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বিদেশের কারো কোন চাহিদা দাবীর মূল্যায়ন না দিয়ে চীনা সরকার শুধু নিজের দেশের কথা ভাবে। এবং নিজের দেশের সবাইকে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেয় সে বিষয় মানতে বাধ্য করে।
করোনা ভাইরাস ২০১৯শের শেষ দিকে যখন একটু একটু করে ছড়াচ্ছে তখন তারা এটা বড় কিছু নয়। নিজেদের সমস্যা নিজে মোকাবেলা করবে এবং বিশ্ববাসীকে এমন কি দেশের সকল মানুষকেও জানাবে না এই মনোভাব ধারন করে ছিল।
ডঃ লি ওয়েেনল্যাং চীনের একজন চোখের ডাক্তার। উহান অঞ্চলের একই এলাকা থেকে একই ধরনের অসুস্থ বেশ কয়েকজন রোগী দেখে, প্রথম ধারনা করেন এটা অন্য রকমের একটা রোগ, অনেকটা সার্সের মতন মনে হচ্ছে। তাই তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করছিলেন। অথচ চীনের পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে লিখিত বন্ড নিয়ে নেয়, যে এ বিষয়ে সে মুখ খুলবে না।
শাসক গোষ্টি সব সময়ই মূর্খ হয়, চীনের ভয়ানক অহংকারী সরকার সেই উদাহরণটি নতুন করে রাখল আবার।
বেচারা ডাক্তার ডঃ লি ওয়েনল্যাং নিজেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছিলেন তবে ভালো হয়েছেন।
গ্যালিলিওকে পনের শতাব্দীতে ধর্মযাজকরা বন্দী করে বলেছিল তুমি ভুল বলছো এটা স্বীকার করো, সূর্যই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে তুমি কিছু জান না। আস্ত মূর্খ।
ডঃ লি ওয়েেনল্যাং এর সাথে এই ২০২০ সালে তেমন ব্যবহার না করে সাথে সাথে বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতো চীনা সরকার তবে এই ভয়াবহ অবস্থায় আজ চীন শুধু না সারা বিশ্বের মানুষকে পরতে হতো না। যতক্ষন না অন্যদেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর রোগ সম্পর্কে প্রকাশ করা না হয়েছে , চীন চুপচাপ নিজেকে সামাল দেয়ারই চেষ্টা করছিল। এমন কি নিজেদের লোকদেরও সতর্ক করেনি। বিশ্ব যোগাযোগ না থাকলে বিশ্ববাসী হয় তো জানতেও পারত না এ্ বিষয়ে।
সরকার সবসময় মূর্খ হয় এই জঘন্য উদাহরণ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত এই আধুনিক সময়ের সকল দেশের সকল সরকারের। আজ পাঁচ ফেব্রুয়ারী। গণজাগরণ হয়েছিল রাজাকারের বিরুদ্ধে আজকের দিনে ২০১৩ সালে। সতর্ক মেধাবীরা অনেক আগে থেকে জানান দিচ্ছিলেন গোপনে রাজাকারদের ধর্মের নামে বেড়ে উঠার কথা। গোপনে বিভিন্ন দলে মিশে যাওয়ার কথা। বিভিন্ন বড় পদ দখল করে নিজেদের সুবিধা আদায়ে এবং দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে বিষয়ে। একজন, দুজন মেধাবী মানুষ মেরে ফেলছিল ভয়ানক ভাবে । অথচ শেখ হাসিনার সরকারও তেমন আমাল দেননি বিষয়টাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না ষোল সালে বনানী হলি আর্টিজান ভয়ানক হত্যাকাণ্ড না হয় কিন্তু তারপরও সরকার মিলেমিশে বেশ সুযোগ দিয়ে যাচ্ছেন ধর্মের নামে দেশ বিরোধীদের।
এখনও সতর্ক না হলে শেখ হাসিনার পর ঐ চীনের করোনা ভাইরাস হয়ে ছড়াবে সারা দেশ জুড়ে ধর্ম প্রচারক মুখোশধারী।
আরেকটা বিষয়ে সরকারের যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া দরকার। উহান থেকে যাদের ফিরিয়ে আনছেন। তাদের গণহারে এক ঘরে রেখে দেয়া হয়েছে।
রোগের চিহ্ন দেখা দিলে তারপর তাদের আলাদা করা হবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। এটা খুব বড় ভুল। প্রত্যেককে আলাদা করে রাখা দরকার। যারা সংক্রামিত হননি তারাও সংক্রামিত হয়ে যাবেন এই একসাথে থাকার মাধ্যমে। যদি একজনের মধ্যেও রোগটির ভাইরাস থাকে।
জার্মান এবং ফ্রান্সে উহান থেকে কাজে আসা সহকর্মি সুস্থ সবলই ছিলেন কিন্তু তাদের মাঝে করোনা ভাইরাসের জীবানুটি ছিল। তাদের সাথে কাজ করার পরই জার্মান এবং ফ্রান্সবাসী করোনা ভাইরাস সংক্রামণ ঘটে।
বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মি প্লেন চালিয়ে উহানে গিয়েছিলেন বাংলাদেশীদের আনতে। তাদের অন্য এয়ারপোর্টে ঢুকার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন দেশে। এ থেকে সরকারের এখনই আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত উহান থেকে আনা মানুষদের একাকী রাখার বিষয়ে।
হাজী ক্যাম্পের খোলা রুমে মাটিতে ম্যাট্রেস দিয়ে যে ভাবে তাদের রাখা হয়েছে এটা সঠিক নয। ভাইরাসটি সংক্রামণ হলে নিউমোনিয়ার ভাব হয় এই ঠাণ্ডার সময়ে এই মানুষগুলোকে এভাবে মাটিতে শুতে দেওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক নয় মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৪৭