somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

চালচিত্র জীবনের

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাইরে দৃষ্টি মেলে দিলে আকাশ দেখা যায় উঁচুতে তবে চোখের সমান্তরালে থাকে অনেক ইটকাঠের দেয়াল ছাদ, জানালা, এ্যান্টিনা। বৈদ্যুতিক তার আর টিভির তারের দীর্ঘ সমান্তরাল রেখা।
একটার পরে একটা বাড়ির ঢেউ বয়ে যায়। তার ফাঁকে কোন দিকে একটু খানী সবুজ গাছের আভাসও পাওয়া যায়।
সকালে জেগে থাকি এই সময়টায় নিয়ম মতন আমি ঘুমাতে যেতাম, বাড়ি থাকতে। ভোরের আলো ফোটার সময় বিছানায় গিয়ে বেলা দশটা এগারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠা। এ আমার নিত্যনৈমত্কি নিয়ম। কিন্তু এখন হয়ে গেছে সময়টা আপসাইড ডাইন।
এখন ঠিক সন্ধ্যা বেলা আমার দু'চোখ জড়িয়ে ঘুম নামে। যখন জাগি তখন রাত এগারোটা। তারপর আবার সেই সারারাত জেগে থাকা। আকাশ যখন ফর্সা হতে শুরু করে ইট কাঠের শহরে কোথা থেকে কিছু পাখি এসে যায়। এ্যন্টিনার লাইনে, ছাদের রেলিংয়ে বসে, উড়ে, ডাকে মাথা ঘুরিয়ে এদিক সেদিক দেখে ফুরুত করে একজন উড়ে যায়। অন্যজন আসে। নানা রঙের, নানা কিছিমের পাখি। এখন এত প্রজাতির পাখি এই ইট, কাঠের নাগরিক শহরে বাস করে, দেখে ভালোলাগছে। সে দিন একটা ময়না দেখলাম । মনে হলো খুব দূর্বল। কারো পোষা ময়না পালিয়েছে মনে হলো খাঁচা ভেঙ্গে। ঢাকা শহরে আগে কখনও ময়না দেখিনি। তবে টিয়া দেখেছি। ঝাঁক বাঁধা টিয়া আকাশ সবুজ করে উড়ে যেত। আর দেখি কাক । কাক গুলো দেয়ালের ভিতর ঢুকে যেতে চায় যেন এমন ভাবে দেয়ালের গা ঘেষে বসে। দূরে কোন বাড়িতে মোরগ বাগ দেয় পর পর তিন বার নিয়ম করে। গ্রামিণ একটা ভাব ফুটে উঠে ব্যাস্ততার কোলাহলের মাঝে।
সারারাত ধরে যন্ত্রজান ছুটে চলে তার আভাস পাই। এক সময় আমরা বলতাম বড় বড় শহর ম্যাগা সিটি রাতে ঘুমায় না। সেই দলে মিলে গেছে ঢাকা। সারা রাত ধরে গাড়ির হর্ণ ছুটে চলার শব্দও পাই। এখন খুব বেশ সাইরেনের শব্দও পাই। দরজা জানালা যতই বন্ধ করি ঢুকে যায় ভেদ করে শব্দ।
ভাদ্র মাসের তীব্র গরম। এই গরমে প্রতিটি বাড়িতে এসি চলছে ফ্যান চলছে। নানা রকম ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি চলছে । তার এক ধরনের শব্দ সারাক্ষণ জড়িয়ে থাকে।
অনেক আগে একবার মাত্র চারমাসের জন্য ইংল্যাণ্ড, আমেরিকা, কানাডা ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখন থেকে ফিরে এসে এয়ারপোর্টে থেকে বাইরে এসে মনে হলো শব্দে আমার কানে তালা লেগে যাচ্ছে। আগে এত বছর এই দেশে থেকেছি কখনো এমন অনুভব হয়নি।
ওখানে বিস্তৃর্ণ ভূমি শুনশান নিরবতায় বাড়িগুলো আলাদা আলাদা। এবং ভয়ানক রকম সাউণ্ড প্রুফ। মানুষরা কথাও বলে খুব আস্তে।শোরগোল হৈ হল্লা একদমই নেই। মাঝে মধ্যে ফ্রাইডে নাইটে, পার্টির শব্দ আর স্কুল ছুটির পর সাবওয়ে মাতিয়ে বাচ্চাদের কথাবার্তা শোনা ছাড়া তেমন কোন সারা শব্দ কোথাও দেখিনি। টাইম স্কোয়ারে, পিকাডেলি সার্কস বা ন্যাথন ফিলিপ্স স্কয়ার সবখানে এত্ত এত্ত মানুষ। স্থানীয় পযর্টক ঘুরছে কিন্তু কি শুনশান নিরবতা।
এই ..., ও ভাই,,,,,,,আরে তুই এখানে? এ্যাই........তুই এখানে!! কই যাস...... রিকাসায় দুপাশের রাস্তা থেকে এমন চিৎকার দিয়েও বন্ধুদের কথা হয়। এমন হঠাৎ কারো সাথে দেখা হলেও বাঙালি স্টাইলে কেউ চিৎকার করে উঠতে দেখিনি বিদেশে, আর কোথাও। যা কেবল বাাংলাদেশেই সম্ভব।
সেবার এয়ারপোর্ট রেখে গিয়েছিলাম খোলামেলা। ফিরে এসে পেলাম বিশাল উচু এক ঝরকা কাটা বেড়া দেয়া। তার বাইরে নিতে আসা মানুষজন অপেক্ষা করবে, বিদেশ থেকে ফিরে আসা স্বজনের জন্য। যখন ভিতর থেকে স্বজনরা বেরিয়ে আসছেন। ঝরকা কাটা বেড়ার বাইরে থেকে অনেকে নাম ধরে ডাকছেন এক সাথে। বিভিন্নজনের নামে এবং সম্বোধনে ডাকার সব শব্দ মিলে মিশে শোরগোল হচ্ছে। কেউ শুনতে পাচ্ছেন না কিছু, নিজের পরিচিতকে দেখে ফেলা ছাড়া। আবার কেউ অর্ধেক বেড়া বেয়ে উঠে পরছেন উপরে নিজেকে দেখানোর জন্য বা অন্য দিকে চলে আসার জন্য। কি একটা অবস্থা। মাত্র চারমাসে কান শুনসান নিরবতায় অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিল দেখে নিজেই লজ্জা পেলাম। কিন্তু অন্যদেশের শব্দহীনতা শরীরের মনের জন্য উপকারী এটা মানতে বাধ্য হলাম।
হঠাৎ করে আমার মনে হলো আমার কানে তালা লেগে গেছে এত শব্দে। আর সেই শব্দের ঘোর বেশ অনেকদিন জ্বালিয়ে ছিল আমাকে।
এবারও দেখছি সেই শব্দ বিরামহীন রাতদিন ছুটে চলছে।
মোরগের বাগ শুনে আমি দরজা খুলে ছাদে চলে যাই। ফজরের আযান চলছে একটার পর একটা মসজিদ থেকে। কিছু কাক ও কা কা করে সকালের রাগ সঙ্গীত বা প্রার্থনা দিয়ে দিন শুরু করছে। বাদুড় ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায়, অন্ধকার দেখে ঝাকড়া কোন গাছে ঝুলে থাকবে বলে। রমনা পার্কে দল বেঁধে বাদুড়দের মাথা নিচে দিয়ে ঝুলে থাকা দেখেছিলাম এক সময়। এখনও কি তেমনি থাকে জানি না।
ভেবেছিলাম ভোরের সময়টায় কিছু সতেজ বাতাস পাবো। কিন্তু কোন বাতাস সেই। গুমোট একটা অবস্থা, ঝিনঝিন করে বেজে যাওয়া যন্ত্রপাতির শব্দের ভিতর নানা রকমের পুড়া, লোহা তামা এবং প্লাষ্টিকের উৎকট গন্ধ। সাথে ধূলার ভ্যাপসা গন্ধ নাকের ভিতর ঢুকে গেল।
একটা প্লেন ঠিক মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল। একপাশে মৃয়মান হয়ে চেয়ে আছে কৃষ্ণপক্ষের এক টুকরো চাঁদ। এই টুকু চাঁদের আলো কিন্ত অনেক, অন্ধকারে ফুটে উঠে। সেটা আমার পরখ করা আছে।
নির্জনতার মধ্যেই এখন ক্রমাগত বসবাস। অথচ এখানে চাঁদটাই দেখতে পাচ্ছি আলো নয়। ভ্যাপসা হেইজি একটা পলিউশনের ফগি আস্তরন ছড়িয়ে আছে চারপাশে। তার মাঝে একটু সবুজ ছাদ বাগানের কিছু গাছ। ডালিম ধরেছে। লেবু এবং বেলফুল। অন্য গাছগুলো এখনো নিজেদের পরিচয় বহন করে ফুল বা ফল ধরায়নি।
দু একটা বাড়িতে আলো জ্বলে উঠেছে। বেশির ভাগ বাড়ি এখনো অন্ধকার। সফেদ লম্বা কুর্তা পরে তসবী হাতে অন্যপাশের ছাদে একজন লম্বা লম্বা পায়ে হাঁটছেন।
এখন ঘুমাব। কয়েক ঘন্টা পরে জেগে উঠেই কানে আসবে হকারের শব্দ। লেবু উ উ, মা...ছ চাই? মুরগী..........ই এমন আরো নানান শব্দ। অথবা ঘুমটাই ভেঙ্গে যাবে কোন এক ধাতব শব্দে। হতে পারে গাড়ির হর্ণ। ইট, লোহার ঠোকাঠুকির শব্দ। ঠকঠক কামার কাঠের মিস্ত্রীর শব্দ ক্রমাগত বদলে যাওয়া শহরে সব সময় দালান কোঠার কাজ হচ্ছে। উড়ে যাবে হেলিকাপ্টার খানিক পরে পরে। মনে হবে ঢুকে যাবে বুঝি জানলা ভেঙ্গে ঘরে।
নিচতলা থেকে উলু ধ্বনীর শব্দ আসবে একটু পর পর। ঘন্টা ধ্বনী বাজবে। আমি বরাবার বাস করেছি হিন্দু পরিবারদের পাশে কিন্তু রাতদিন এমন শাঁখ বাজিয়ে উলুধ্বনী দিতে শুনিনি কখনো। কখনো বিশেষ কোন অনুষ্ঠান থাকলে হতো। কিন্তু নিচের পরিবারে কোন অনুষ্ঠান নেই নিত্য দিনের পুজা আর্চা চলছে। মিনিট দশ পর পর পাঁচবার শাঁখের পর উলুধ্বনী তারপর ঘন্টা বাজানো।
মাঝে মাঝে ব্যালকুনিতে এসে কেউ একজন কথা বলেন, ফোনে। প্রতিদিনই এক রকম অভিযোগ শাশুড়ির প্রতি। কথা বলার মাঝে বাচ্চাকে ধমক দিতেও শুনি। ঘরে যাও খেলো গে যাও। খাওয়া শেষ করেছো। অংকটা করো।
যাও আসতেছি।
একপাশে আগর বাতির ঘ্রাণ,এক পাশে ধুপ, দুই গন্ধ মিলে ঢুকে যাবে নাশারন্ধ্রে। সাথে নিজের ঘরের কিছু রান্নার ঘ্রাণ মিশবে। পাশের বাড়ির মাছ রান্নার ঘ্রাণের সাথে অন্য কোথাও থেকে তেলে ভাজা। পাঁচফোড়ন। মাংসর ঘ্রাণ ভাসে। স্নো, ক্রীম, ক্লিনিং ডেটল এর ঘ্রাণ মিশে যাবে অনেক রকম শব্দের সাথে।
চালচিত্র জীবনের বয়ে চলে সব মিলে মিশে। ধীরে আবার অভ্যস্থ হয়ে উঠছি ধূলা ময়লা শব্দের জীবনের সাথে।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪৯
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×