somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

চালচিত্র জীবনের দুই

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইচ্ছে হলেই গ্রামে ফিরে যাওয়া যায়, প্রকৃতির মাঝে কাটানো যায়। অনেকদিন আমি গ্রামে বাস করি। সতেজ বাতাস, প্রকৃতির নির্মল রোদ জোছনার কারুকাজে ডুবে থাকি। শহুরে জীবন বাস করে অভ্যস্থ হওয়া থেকে গ্রামের জীবনে ঢুকে যাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। কিন্তু মানিয়ে নিতে পারলে অনেক আনন্দ প্রকৃতির অবারিত হাত উপুর হয়ে ঢেলে দেয় সে আনন্দ।
বিদেশের গ্রামে দেখি, অনেক জোনাকি। ঘাস ফড়িং, প্রজাপতির আনন্দ, পাখির কোলাহল। গ্রামে না থাকলে কখনোই জানা হতো না গ্রাম এবং প্রাকৃতিক জীবন যাপনের অনেক রকম বৈচিত্র।
শহরগুলো প্রিয়। শহর গুলোতে নাগরিক সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি। তেমনি আছে পলিউশন। ব্যাস্ততা ভীড় ভাট্টা। পৃথিবীর অনেক নাগরিক শহর দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। থাকারও সুযোগ হয়েছে। বড়বড় দালান কোঠায় সাজানো শহরগুলোর পরিচ্ছন্নতা সব জায়গায় সমান নয়। খুব বেশি মার্কস দেয়ার সুযোগ নাই নাগরিক সব শহরকে। সাজানো বাড়ি ঘরের পাশেই থাকে জনাকির্ণ নোংরা পথ, ঘাট। নিউ ইয়র্ক, লণ্ডন লস এঞ্জেলেসের মতন শহরে এক পাশে যখন বিশাল সুরম্য অট্টালিকার জীবন যাপন ঠিক পাশেই বাসগৃহ হারা মানুষের বাস । তাবুতে গাড়ীতে অনেক মানুষ জীবন যাপন করে।
ঢাকা শহরটা, আমার প্রিয় শহর। অনেক বছর ঢাকা শহরে কাটিয়েছি। হাতের রেখার মতন চেনা হয়েছিল এর মানচিত্র। অথচ সেই শহর এখন বড় অপরিচিত লাগে। রাস্তা চিনতে পারি না। গত কিছুদিন ধরে ঢাকায় আছি। শরীর তাতানো গরমে জ্বলে চামড়া। ভ্যাপসা গরম, এসি আর ফ্যানের বাতাসের বিশ্রী একটা পরিবেশ সারাক্ষণ ঘিরে থাকে। আমি উন্মুখ হয়ে থাকি একটু সতেজ বাতাসের জন্য। যদিও বড় বড় জানালা আর ব্যালকুনি বাড়ি জুড়ে তবে বাড়ির একটা জানালার একটা কোনা দিয়ে অনেক বাড়ির উঁচু দালানের মাঝ দিয়ে একটা গুহা সাদৃশ্য গলি দিয়ে, কখনো তাজা বাতাস ধেয়ে আসে। আমি সেই জায়গাটা বেছে নিয়েছি, ফ্যান বন্ধ করে বসে থাকার জন্য। ঘ্রাণ ভেসে আসে কর্দমাক্ত রাস্তা এবং ফেলে দেয়া ময়লা অবর্জনার । রান্না, কালকারখানার কাজের জ্বলা, পুড়া নানা রকম ক্যামিকেল গন্ধ। তেলতেলে জলাজলা ঝাঁজ মাখানো গন্ধ। তবু সতেজ বাতাস আসে এইটুকু উপভোগ করার চেষ্টা করি।
রাস্তায় থিকথিকে ভেজা নোংরা ময়লার উপচে পরার মাঝে জীবন তবু চলছে। বর্তমানের নতুন সংযোজন মুখের মাস্ক অনেকে পরছে, অনেকে পরছে না। তবে মাস্ক রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে অনেক।
খুব খারাপ লাগছে, দেখতে কিছু মানুষ উপায়হীন ভাবে বাস করে এই শহরে রাস্তার সাথে তাদের জীবন। অনেকেই জানে না। এই পরিবেশের বাইরে অন্য রকম জীবন আছে। নাহ দূর থেকে ভোদ্দর লোকের জমকালো বাড়িগুলো তারা দেখে, নাহ ভুল বললাম. অনেকে প্রসাদসম বাড়িগুলোর ভিতরে ঢুকারও সুযোগ পায়। কাজ করে তাদের বাড়ি গুলো ঝকঝকে তকতকে করে তুলো। অনেকে বাজার সদাই বা গাড়ি চালানোর কাজ করে, কেয়ার টেকার আর মিস্ত্রী যারা এই বাড়িগুলো বানিয়েছে যত্ন করে। কিন্তু কখনো থাকার সুযোগ হয় না তাদের সাজানো এসব ঘরে। এইসব বাড়ির ভিতরে যাওয়ার সুযোগ পায় । সারাদিন দারুণ সুন্দর একটি বাড়িতে থেকে, রাতে নিজের ঘরে ঘুমাতে তাদের মনে কি ভাবনা আসে জানার ইচ্ছা করে।
আমার তো চলে যাওয়ার সুন্দর আরেকটা আবাস আছে কিন্তু এত্ত সব মানুষ কোথায় যাবে। মন খারাপ হয় দেখে শোনে।
তবে এই ইট কাঠের শহরেও কিছু মানুষ বেহেস্তি আবাস বানিয়ে নিয়েছে নিজের আবাসকে। তাদের কপাল দেখে আমিও ঈর্ষা করি। পরক্ষণে মন ভালো হয়ে যায় ঈর্ষার কোন কারন নাই। বাড়ির ভিতর ছাড়া বাইরে বেরিয়ে কেউ কোন সুখ পায় না তারা। অপেক্ষা কাটিয়ে দিতে হয় রাস্তায়। কিছু খেতে গেলে তার পরিচ্ছন্নতা এবং মান নিয়ে ভাবতে হয়। কেনাকাটায় অনেক পয়সা খরচ করেও মানুষ মান সম্পন্ন জিনিস কেনার সুযোগ পায় না ।সঠিক রাখার সব নিয়ম কাগজে পত্রেঅআছে ব্যবহারে নেই। কিছু মানুষ জিম্মি করে রাখে অগুনতি মানুষের জীবন এই দেশে।
সে তুলনায় আমার বিদেশের রাস্তায় ময়লা নর্দমা, গলা পচা কিচ্ছু নেই। নিয়ম মাফিক পরিচ্ছন্ন করা হয়। খাবারের পরিচ্ছন্নতা যথাযথ বিভাগ, নিয়ন্ত্রণ করে। যারা মানুষের বাসায় বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন বা সাপ্লাইয়ের কাজ করেন । ট্যাক্সি, উবার চালান। নিম্ন আয়ের কাজ করেন তারাও একটা বাড়িতে বাস করেন। যেখানে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা, গ্যাস বিদ্যুৎ, পানি হিটিং ফ্রিজ, স্টোভ, ওভেন থাকে।
যাদের থাকার মতন বাড়ি নাই বা অনেকে ইচ্ছা করে স্ট্রিটে থাকে তাদের জন্যও সেলটার রাখা আছে।
কোভিটের এ সময়ে পথের মানুষদের হোটেলে নিয়ে রেখেছিল সরকারী ভাবে।
বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক। সব বাচ্চাদের হাইস্কুল অর্থাৎ বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়ালেখা ফ্রি। সরকার থেকে খরচ বহন করা হয়। নাগরিকের নিম্নতম শিক্ষা দিক্ষার। শিক্ষক যারা আছেন তারা সম্মানীয় ব্যাক্তি। ভালো বেতন ছুটি ভোগ করেন।
যে যা আয় করেন তার একটা অংশ সরকারের ট্যাক্স আয় অনুসারে দিয়েই পে চেক হয়। কারো সুযোগ নেই ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার। এই বিষয়গুলো সিস্টেম। খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নূন্যতম প্রয়োজনগুলো সরকার থেকে মেটানো হয়।
প্রতিটি বাচ্চা যখন জন্ম নেয় তারা সে দেশের নাগরিক। সরকার তাদের আঠার বৎসর বয়স হওয়া পর্যন্ত তাদের বেশ খানিকটা বিষয় দেখ ভাল করে বাবা মায়ের পাশাপাশি। তাই বাবা মা যদি বাচ্চাকে শাসন করার নামে গায়ে হাত দেন। সোশ্যাল ওয়ার্কার যে বিভাগটি এসব দেখাশোনা করে তারা এসে বাচ্চাকে তাদের জিম্মায় নিয়ে নিতে পারে। বাবা মাকে নিয়ে যেতে পারে পুলিশ কাস্টডিতে। মারধর করার অপরাধে।
কথায় কথায় শাসনের নামে বকা মার দেয়া থেকে বিরত থাকা অনেকটা শিখে নিতে হয় বিভিন্ন দেশের অভিভাবকদের।
এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় আমি জেনেছি, বাচ্চাদের মনটা বড় উদার বড় নরম হয়। বাচ্চারাই অনেক সময় বাবা মায়ের চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বাচ্চাদের সিদ্ধান্তে অবিবেচক বাবা মা বেঁচে যায় আইনের শাস্তি থেকে কারণ শেষ পর্যন্ত বাচ্চারা বাবা মাকেই তাদের আশ্রয় ভাবে এবং তাদের মার অত্যাচার সয়েও তাদের প্রটেক্ট করে আইনের প্রকোপ থেকে। আইনের শাসনে অভিভাবকদের নিজের বাচ্চাকে হারাতে হয় আবার কারাগারে শাস্তিও পেতে হয় অমানবিক আচরণের জন্য।
আর আমার দেশে সব বাচ্চা বড় হয়ে উঠে এই তো জীবন মারধর খাওয়া এই নিয়ম জেনে। ইচ্ছে হলেই বকা দিবে কড়া ধমক খেয়ে পেসাব হয়ে যাবে। যখন তখন দুষ্টামির জন্য বেদম মার খাবে অনেক সময় শিশুটি ঠিক বুঝেও উঠতে পারে না , কেন মার খেলো । কী তার অপরাধ। ঘুরে ফিরে তবু তারা বাবা মায়ের কাছেই আসে।
শুধু অভিবাবক না, মার দিবে শিক্ষক। বকবে বড় কর্তা। বাড়ির মালিক। নিজের চেয়ে বড় শ্রেণীর যে কেউ গায়ে হাত পর্যন্ত দিতে পারে বড় পূর্ণ বয়স্ক মানুষ হয়ে গেলেও। সেটা নির্ভর করে সামাজিক অবস্থানের উপর।
একই মানুষ উপরতলার মানুষকে যখন হুজুর হুজুর করে সালাম দিয়ে চলে দরিদ্র অসহায় অবস্থানের মানুষকে, ধমকের উপর রাখতে ভালোবাসে।
অথচ সবার জন্য একটি আবাস একটি ন্যুনতম সাম্যময় শিক্ষা এবং জীবন ধারনের অবস্থান তৈরি করার দায় বাধ্যতা সে দেশের সাংবিধানিক আইনে থাকবে। যা কোন সরকার ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন করতে পারবে না।
বাতাস হচ্ছে আজ দারুন। ফাঁকা গলির মাঝ দিয়ে ধেয়ে আসছে। গতকালকের তুমুল বৃষ্টির পর আজকের পরিচ্ছন্ন বাতাস আমাকে বলছে, তবুও এখানে মানুষ নিজের মতন করে বাঁচার জন্য পরিশ্রম করে যায়। কষ্ট ক্লান্তি ভুলে হাসে কাশ ফুলের শুভ্রতায় তুমুল মেঘের আনাগোনার মতন তারা ঘুরে নগরীর পাকদণ্ডী বেয়ে কোন অভিযোগ ছাড়া তারা আপন আনন্দে বাঁচে।










সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪১
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×