বাইরে তাপমাত্র নেমে যাচ্ছে দ্রুত । সময়টাই এমন তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সময় এখন। পুরো সপ্তাহ জুড়ে থাকবে দুই সংখ্যার মায়নাসের ঘরে। বাতাস যখন প্রবল হয় তখন চল্লিশ পর্যন্ত হয়ে যায় শূন্যর নীচের সংখ্যা। চারপাশে সাজানো বরফ মাঠ। যেদিন তুষার পরতে শুরু করে, ঘরের ছাদ থেকে,গাছের ন্যাড়া ডাল, পাইনের চিরসবুজ গাছের সারিতে শুভ্রতার আবরণ পরে যায়। অপার্থিব সুন্দর আমাকে দারুণ আকর্ষণ করে। আবার কখনো বরফ পরার দিন ফ্রিজিং রেইন অর্থৎ বরফ বৃষ্টি হয় তারপর সূর্য জাগলে চারপশে দেখা যায় প্রকৃতির ক্রিষ্টাল সৌন্দর্য। অজস্য হীরের কণার ঝলকানিতে যে অপরূপ অলংকরণ তার সাথে আর কোন কিছুর তুলনা হয় না। শীতকালে এমন দিন কয়েকবার আসে সে দিনগুলোর সাথে তখন আমি মিতালী করি।
এক সময় এই রকম শীতের দেশে মানুষ, বরফের ঘর বানিয়ে জীবন যাপন করত। প্রাণী যা শিকার করত খাওয়ার জন্য তার চর্বি জমিয়ে বানাত মোম, ঘরের প্রদীপ, চামড়ার কোট, জুতা, টুপি। এমন জীবন যাপন করেও মানুষ টিকে ছিল ।
নিজেকে উষ্ণ রাখার অভাবনীয় সব উপায়, মানুষ ঠিক আবিস্কার করে নেয় প্রয়োজনের সাথে সাথে।
আমাদের দেশের মানুষ যেমন সূর্যের উত্তাপে শীত কাটায় দিনে। আর রাতের বেলা শীতের সাথে যুদ্ধ করে খড় ন্যাড়া পাতা কুড়ানো, ডালপালায় আগুন জ্বালিয়ে, আগুনের উত্তাপে শীত রাত কাটায়।
যাদের ঘরে থাকার সুযোগ আছে তারা তুষের ধিকি ধিকি আগুন, ঘর গরমের জন্য রেখে দেয় রাতের বেলা মাটির পাত্রে। সূর্যের তাপে উষ্ণ করে নেন লেপ তোষক বালিশ দিনের বেলা।
লেপের ভিতর যেন সূর্যের তাপ ভাঁজে ভাঁজে ঢুকে থাকত। শুতে গিয়ে লেপ মেলে গায়ে দেওয়ার সাথে ছড়িয়ে দিত উত্তাপ। আহা কিযে মজার সেই অনুভব।
বিদেশের মানুষের কঠিন শীত কাটানোর মতন অবস্থায় জীবন কাটানোর সুযোগ হয়নি তেমন আমার। মানুষরা কেমন কতটা উত্তাপ পেত তাদের ইগলুর বরফ ঘরের ভিতর সেটা পরখ করা হয়ে উঠেনি কখনো, আমার সময়ে আমি পেয়েছি অত্যন্ত আধুনিক ব্যবস্থা সব জায়গায়।
আধুনিক ব্যবস্থায় ঘরের ভিতর তাপ চলে আসে সুইচ টিপে দেওয়ার মাধ্যমে। বড় বড় দালন থেকে বাড়ি সব জায়গায় সিস্টেম করা আছে বৈদ্যুতিক বাতির মতন গ্যাস, বিদ্যুত বা তেলের লাইন যার মাধ্যমে, ঘর উত্তপ্ত হয় সুইচ টিপে চালিয়ে দিলেই।
ঘর ছাড়া স্যুয়ােরেজের ড্রেন, সিস্টেমগুলোতেও উত্তাপ চালায় শহর কতৃপক্ষ, তা না হলে সব জমে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হবে। ঘরে ঘরে ড্রেন দিয়ে পানি যাবে না। টয়লেট উল্টে উপরের উঠবে। বরফ জমে পানির পাইপ গুলো ফেটে ঘর ভেসে যাবে। দেয়াল ভেঙ্গে পরতে পারে। এমন দূরবস্থা হলে তারপর নতুন করে সব ঠিক করতে হবে আবার। বিশাল এই খরচ সামলাতে হয় শীতের দেশের পৌর কতৃপক্ষকে শহর উত্তপ্ত রাখতে প্রতিটি শহরে। এছাড়া সাপ্লাই দেয়া হয় গরম পানি, সারা বছর জুড়ে।
এত ঠাণ্ডা পানি সাপ্লাই থেকে আসে, ফ্রিজের পানির চেয়ে ঠাণ্ডা তা। গরম পানি না মিশিয়ে ব্যবহার করা কঠিন। তবে সাপ্লাইর গরম পানি খাওয়া ঠিক না।
গৃহহীন মানুষরা শীত থেকে বাঁচতে ড্রেনের ঢাকনার উপর শুয়ে থাকে। যেখান দিয়ে নিচ থেকে উষ্ণ বাষ্প উঠে আসে। চারপাশের শীতের মাঝে কিছুটা উষ্ণতা। বড় বড় শহর গুলোতেও এখন অনেক মানুষ গৃহহীন থাকে ।
শহর কতৃপক্ষ এবং মানবিক মানুষ, সংস্থা চেষ্টা করে এইসব গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় দিতে শীতে।
শহর গুলোতে বরফের হোটেল তৈরি হয়েছে এখন শখ করে এক দুদিন বরফের ঘরে থেকে মানুষ ইগলু ঘরে থাকার স্বাদ নিতে চায়। আমারও একবার তেমন ঘরে থাকার ইচ্ছা আছে। পারলে আসল বরফের ঘরে যাবো একবার, অথেন্টিক ফ্লেবার নিতে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কত রকমের বিষয় যে জড়িত। কত কিছু মনে রাখতে হয়।
তারিখ হিসাব করে, কত রকমের বিল পরিশোধ করতে হয়। কখনো মাসের নিদৃষ্ট তারিখে কখনো নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে। সেট ভুলে গেলে আলাদা চার্জ, ফাইন। মনে রাখতে হয় শীত গ্রীষ্ম, শরত বসন্তের সময় কি কি করতে হবে কখন গাছ গুলো বুনতে হবে কখন তুলতে হবে। কখন প্রতিদিনের হিসাবে দিতে হবে খাদ্য, পানিও গাছদেরও। সময় বদল থেকে জীবনের জরুরী তারিখগুলো প্রিয় মানুষদের জন্মদিন বিবাহ বার্ষিকী মৃত্যু দিন ।
ভাড়ার ঘরে কমতি বাড়তি চাল, ডালের হিসাব থেকে চা চিনি তেল নুন মশলা কি আছে নেই মনে রাখতে হয় বড় হিসাব করে।
তেমনি মনে রাখতে হয় শীতের সময় ঘর গরম করার গ্যাস বা রান্নার গ্যাস, বারবিকিউয়ের কয়লা আছে কিনা। গাড়ির তেল থেকে স্টিকার নেয়ার সময় মনে রাখতে হবে ঠিকঠাক মতন । ইন্সুরেন্স রিনিউ করা থেকে ট্যাক্স দেয়া সব ঠিক ঠাক সময়ে করতে হবে। তিন মাস, চারমাস বা এক বছর পরের ডাক্তার এ্যাপয়েনমেন্টগুলো ভুলে গেলে আবারো অপেক্ষার সময় বেড়ে যায়।
মাথাটা আমাদের পুরো কম্পিটার। প্রতিটি কাজের সময় ঠিকঠাক জানান দেয় মোটামুটি। সিরি বা গুগোলের সাহায্য ছাড়াই এতদিন বেহিসাবী কত রাস্তা চলেছি, ফোন নাস্বার, ঠিকানা মাথার ভিতর জমা ছিল। বন্ধুদের মুখ নাম ধাম। অথচ নিজের মাথার সেলগুলোর ব্যবহার না করে প্রায় সময় আজকাল আমরা ছেড়ে দিচ্ছি কম্পিউটার মেশিন, ফোনের কাছে। ভুলে যাচ্ছি নিজের মাথার সেলের ব্যবহার। হয়ে যাচ্ছি মেশিন নির্ভর মানুষ।
কাল মাঝ রাতে ঘুমের মাঝে শীত, অনুভব হতে থাকল, বেশ শীত। তখন টের পেলাম হিটার চলছে কিন্তু তাপ আসছে না। মেশিনের ভিতরে তাপ দেয়ার রশদ শেষ। কি অবস্থা তাপ না চলার সাথে সাথে দ্রুত নিচে নামতে থাকল ঘরের উত্তাপ। গরম কাপড়ের আধ্যিক্য দিয়ে তা পূরন করার চেষ্টা।
ভোর হওয়া এবং গ্যাসের অফিস শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হলো মাঝ রাত থেকে। তারপর তাদের অনুরোধ করলাম আজকের মধ্যে সাপ্লাই দিতে গ্যাস। কিন্তু তারা জানাল আজ কিছুতেই সম্ভব হবে না। কাল সকালে আসতে পারবে।
অনেক দিন পর বিকল্প ব্যবস্থা কাঠের ফায়ার প্লেস চালিয়ে তাপের ব্যবস্থা করতে হলো। আসলে অবস্থার পরিপেক্ষীতে বিকল্প কিছু, ব্যবস্থা ঠিক করে নিতে পারি আমরা মানুষ।
আজ সারাদিন বাইরে দেখছি বন্য প্রাণীর আনাগোনা। বাড়ির চারপাশ ঘিরে তাদের ঘুরে বেড়ানো মনে বেশ আনন্দ দিচ্ছে। প্রকৃতির মাঝে কি সুন্দর বিচরণ তাদের। বরফে পা ডুবিয়ে ঘুরছে বন্য তিতির। গত কিছুদিন ধরে দেখি তারা ফিরে ফিরে আসে। আজ পিছনের উঠানে যেন ঘুমিয়ে আছে মনে হলো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। তারপর এক সময় উঠে বরফের মাঝে মাথা উঁচু করে থাকা তৃণলতা থেকে খুঁটে খুঁটে কিছু খাচ্ছে দেখলাম।
শরতে, সময় না পাওয়ায় এই ঘাস লতা কাটতে পারিনি বলে আফসোস হচ্ছিল। অথচ যা আমার কাছে বন্য ঘাস এদের থেকে যাওয়ায় প্রাণীদের খাওয়ার জন্য কিছু রয়ে গেছে দেখে ভালোলাগল। জানলাম কিছু প্রকৃতির বিষয়।
খরগোশও খাওয়ার খুঁজে ঢুকে গেছে ফেলে রাখা বাগানের বেড়ার ভিতর ভাবছি ও বের হতে পারবে কিনা খাওয়া শেষে।
কাটঠোকরা যে কোথায় লুকিয়ে থাকে কে জানে। কিন্তু গাছের মাঝে লুকিয়ে থাকা, পোকা ঠিক সে খুঁজে নেয়। প্রকৃতি থেকে পাওয়া এসব আনন্দগুলো অকৃত্তিম ভালোলাগার।
ছবিগুলোর মালিক আমি
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৫৮