বাইরে অনেক পাখি ডাকছে। অনেকদিন পরে পাখির ডাক শুনলাম, গতকাল অনেকক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে। আগের দিনের প্রবল বাতাস আর তুষারপাতের পরে একদম মায়াবী সময়। এখনও বরফে আচ্ছাদিত মাটি তার মাঝে কখনও একটু ঘাস দূর্বা দেখা যায়, যে দিন উত্তাপ বাড়ার জন্য মাটির বরফ গলে যায় কিছু জায়গা জুড়ে ঘাসের জমিন বেরিয়ে পরে। পাখি গুলো খুটে ঘাস তুলে নিয়ে ঘর বানানোর কাজ শুরু করেছে । ওদের উড়াউড়ি দেখতে ভালোলাগে। দীর্ঘ শীতল নিরব নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে।
শীতকালেও অবশ্য কিছু প্রাণী ঘোরাফেরা করেছে। এবার বাড়ির খুব কাছে ঘোরাফেরা করছিল কায়টি। আর একদিন সারারাত ধরে দৌড়ালাম একটা স্কাংক। ঘরের কাছে এসে গার্বেজ ধরে টানাটানি করছিল কিছুক্ষণ পর পর। আর আমিও দৌড়াচ্ছিলাম লেখা ছেড়ে তাকে তাড়াতে। ছিল রেকুনও, মাঝে মাঝে হানা দিত। গাছ বেয়ে উঠে বসে থাকত। আর ঘরের পাশে খাবার খুঁজত। একদিন দেখলাম কিছু সবজি পেয়ে কিছুটা খেলো কিছুটা বরফের নিচে ঢাকা দিয়ে রাখল সুন্দর করে। প্রকৃতির মতন তাদের নিজেস্ব ব্যবস্থা খাদ্য সঞ্চয়ের।
বরফের উপর তাদের পায়ের ছাপ দেখে বুঝতাম কে এসেছিল আজ, হরিন, কায়টি নাকি রেকুন অথবা কাঠবেড়ালীর ছুটাছুটি। সারা শীতকাল জুড়ে কাঠবেড়ালীর দৌরত্ব ছিল। অবাক হই দেখে এদের শীত লাগে না। বরফ পরছে তুমুল আর ওরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। এগাছ থেকে অন্য গাছ। তবে খুব বিরক্তও হই যখন ঘরের এ্যাটিকে ঢুকে খাদ্য সম্ভার জমিয়ে রাত ভর শব্দ করে । কি ভাবে যে ফাঁক ফোকর খুঁজে পায় নাকি নিজেরাই কেটে ফেলে রাস্তা বানায়। এদের জন্য কিছু মেন্টেইনেনস অর্থ রাখতে হয় প্রতি বসন্তে। একটা না একটা কিছু ক্ষতি করেছে পাওয়া যায় বাড়ির ভিতর।
শীতকালের শেষের দিকে জমিয়ে রাখা খাবার শেষ হয়ে গেলে প্রাণীগুলো খাবারের খোঁজে বের হয়। একদিন গার্বেজে না ফেলে খাবারের উচ্ছিস্ট বাইরে ছূঁড়ে দিয়েছিলাম। ওদের জন্যও মায়া হয় তারপরই তাদের আনাগোনা বেড়ে ছিল কদিন বাড়ির কাছে। প্রহরে প্রহরে হাকডাক দিত ঘরের কাছে কায়টি। কদিন ধরে এদের দেখছি না। মনে হয় নতুন সাবক হয়েছে তাদের আর কদিন পরে পুরো পরিবার আবার বের হবে রোদ পোহাতে। তারপর চলে যাবে জঙ্গলে। তখন শিকারীও বের হবে বন্দুক নিয়ে দূর থেকে শুনতে পাবো গুলির শব্দ। হরিণ, কায়টি, খরগোশ অনেক কিছুই শিকারীরা শিকার করে।
আর কদিন পর লুকিয়ে থাকা গ্রাহাউন্ডহাগ, বিভার, খরগোশ, তিতির গুলো বেরিয়ে আসবে। তাদের সাথে সময় কাটবে ভালো আমার।
রাতভর তুষারপাত হয়েছে ঝরছে সারাদিন। গলে যাওয়া বরফের উপর আবার জমছে পরত। থকথকে ভেজা কাঁদা নদী শুভ্রতায় ছেয়ে গেছে। এবার খুব বেশি বরফ হলো না তুলনামুলক অনেক কম। তবে চলছে অনেক লম্বা সময় ধরে অল্প অল্প ঝরে পরা। সাধারনত এ সময়ে থেমে যায়।
এখন যে পাখিগুলো এসেছে এই পাখিগুলো পুরুষ পাখি, দক্ষিণ থেকে আগে আগে উড়ে চলে আসে, ঘর বানায় নারী পাখিটি এলে গান গেয়ে মন ভুলায়ে, ঘরে নিয়ে যাবে তারপর বেশ কিছুদিন সুখে সংসার করবে নীড়ে। ডিম হবে বাচ্চা হবে, বাচ্চারা নিজের মতন উড়ে যাবে । নিজেদের বন্ধু বানাবে। আর দুটো পাখি নিজেদের আনন্দে এক সাথে কাটাবে শরত পর্যন্ত। এরপর উড়ে যাবে শীতের আগে অন্য আস্তানা খুঁজে।
আাহা পাখির মতন আমিও যদি উড়ে যেতে পারতাম নতুন উষ্ণ আস্তানায় ডানা দুটি মেলে ইচ্ছা হলেই। আর তখন বাড়ি রক্ষা করার কোন চিন্তা থাকত না শীতকালে। বানাতাম আবার নতুন করে ঘর কি মজা হতো। অথচ মানুষ কেবল শিকলে বন্দি নানা বাধা ধরে রাখে চারপাশ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৫০