আজ শীতের শেষ দিন কাল থেকে শুরু হবে বসন্ত তিন মাসের জন্য। ফুল ফুটুক না ফুটুক বসন্ত এসে যাবে।
আজ বড্ড কুয়াশা ঢাকা দিন। ঘন সরের মতন কুয়াশা জমে আছে চোখের সামনে। একটু পরে বৃষ্টি শুরু হবে কদিন বেশ বৃষ্টি হবে। আর বৃষ্টিতে ধুঁয়ে যাবে সকল বরফের স্তুপ। কদিন ধরে চারপাশে ছুটেছে বরফগলা নদীর স্রোত।কলকলঝলঝল বয়ে যাচ্ছে যে দিকে পথ পাচ্ছে ঢালুর দিকে। কোথাও ঝমে আছে বরফ জল আপনমনে সৃষ্টি করেছে নতুন এক হৃদ।
গত পরশু হাঁটতে গিয়েছিলাম অনেক দূর মাঠের ভিতর দিয়ে। কোথাও এখনও বরফের স্তুপ কোথাও খড় ঘাস জেগেছে। পা ডুবে যাচ্ছিল ভুস করে বরফের ভিতর। হাঁটতে না জানলে ঠ্যাং ভাঙ্গার সমুহ সম্ভাবনা। পুকুরে নামতে গিয়ে তলিয়েই যাচ্ছিলাম ভিতরে প্রায়। ভয়ের চেয়ে হাসি আসল আমার। কদিন আগে স্কেট করার সুযোগ ছিল যেখানে এখন কিনারা জুড়ে জলের দেখা আর কি ভীষণ সুন্দর কারুকাজ জেগেছে গলে যাওয়া বরফের পাশ দিয়ে।
লেক গুলোতে ছোট ছোট কেবিন বানিয়ে মাছ ধরছিল সৌখিন জেলেরা। এবার আমার যাওয়া হয়নি। দূর থেকে দেখলাম শুধু। কিনারা থেকে সেই বরফের স্তুপ ভেঙে জলের উপর ভাসছে ভিশাল একটা দ্বীপ যেন। হাঁস পানকৌড়ি বসে আছে। আরো আসছে ঝাঁক বেঁধে। রাত ভর শোনা যায় তাদের ক্যাক ক্যাক ডাক উড়তে উড়তে সঙ্গীদের ঠিক পথে রাখার জন্য ডেকে যায়। ঝাঁক থেকে যেন কেউ হারিয়ে না যায়। অবাক লাগে তাদের এই জিপি এস ছাড়া পথ চিনে চলে আসার শক্তি দেখে।
কাল সারা দিন গাছের উপর বসে ছিল কয়েক শত স্টারলিং। এরা যখন বসে এক সেকেন্ড চুপ থাকে না। এদের কথায় হাট বসে যায় যেন এত কথা বলে। নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে সরব শব্দ ছড়ায়, চারপাশ সরগরম হয়ে উঠে। কাছে গেলেই ঝাঁক বেঁধে উড়াল দিয়ে একটু দূরের গাছগুলোতে গিয়ে বসে। আর ওদের মিটিং চলতেই থাকে।
সাধারনত এদের এই দল ধরে মিটিং শুরু হয় আগস্টের শেষে কিন্ত এবার বসন্তর শুরুতেই এরা চলে এলো কেন বুঝলাম না। আবহাওয়া কি পরিবর্তন হয়েছে ওরা যেখানে ছিল সেদিকে বেশি গরম পরে গেছে, কে জানে । পাখি , প্রাণীরা নিজেরা অনুভব করে সব কোন বৈজ্ঞনিক আয়োজন ছাড়া তাদের ছোট মস্তিক তাদের ঠিক সিগন্যাল দিয়ে দেয়। কি করতে হবে।
আর দিন দশেকের মঝেই। জেগে উঠবে ফুলগুলো। মাঠ জুড়ে ফুটবে ভূঁই চাপা। বেগুনী নীল আর হলুদ সাদা রঙের ছড়াছড়ি। যেন অদ্ভুদ আলপনা আঁকা হবে প্রকৃতির খেয়ালে মাঠ জুড়ে। তারপর আসবে লিলি অফ দ্যা ভ্যালি, সাদার মধ্যে ছোট ছোট জুঁই ফুলের মতন ফুলগুলো মাটির দিকে মুখ করে চেয়ে থাকবে। অসম্ভব সুন্দর তাদের সুবাস কিন্তু ভীষণ বিষাক্ত। দূরে থেকে দেখাই ভালো কাছে না গিয়ে।
এরপরই আসবে নার্সিসাস, টিউলিপ, নানা রঙের আকারের আরো লিলি আর ব্লিডিং হার্ট । হার্টের মধ্য থেকে ঝরে পরবে যেন কান্না যে কোন সময় এমন অনুভব নিয়ে জেগে থাকবে তারা শরত পর্যন্ত।
পাতা গজানোর আগে জাগবে ফুলের সম্ভার গাছে গাছে। মনে হবে পাতা নয় ফল নয় শুধুই ফুলের গাছ আর তার মাঝে যত পাখিদের ঝাঁক। বসে থাকবে মধু খাওয়ার জন্য। হলুদ ফার্টিসা, ম্যাগনলিয়া, ক্যামেলিয়া আরো কত শত রঙ বাহার আকৃতি আর সব ফলের গাছ ভর্তি ফুল। বসন্ত বাহার জাগিয়ে দিবে প্রকৃতির প্রাণ সঞ্চার হবে। যেদিন গাছ জুরে ভ্রমর, মৌমাছি প্রজাপতির প্রথম দিনের মেলা বসবে। সারাদিন জুড়ে চলবে তাদের হামং সেদিন সারাদিন আমি বাইরে বসে উপভোগ করব এই আনন্দ। প্রতি বছর প্রথম দিনের এই সুখ অনেক দিন ধরে ঠাণ্ডায় জমে ঘরে বসে থাকা একদম ভুলিয়ে দেয় একদিনে।
শুরুর ছবিটা আমার করা একটা কোলাজ বসন্তের সুখ। বাকিরা বাগানের ফুল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১:০৩