somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

মুক্তির মন্দির সোপানতলে

২৬ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১ এর রাত্রি যারা দেখেছেন তারা জানেন সে সময়টা কেমন ছিল। হঠাৎ করে নেমে এসেছিল এক কঠিন অবস্থা মানুষের জীবনে। কিছু একটা ঘটবে আশঙ্কা ছিল মনে কিন্তু এতটা রক্তপাত এতটা ভয়ঙ্ককর হয়ে উঠবে অবস্থা কারো কল্পনায় ছিল না। সবার অপেক্ষা ছিল নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা দেওয়া হবে। কিন্তু ধুরন্ধর অমানুষ পশ্চিম পাকিস্থানের শাসক গোষ্টি পূর্ব বাংলার বাঙালিদের মানুষ মনে করত না। তাদের প্রয়োজন ছিল শুধু অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ভূখণ্ড ব্যবহার। নির্বাচিত শেখ মুজিবর রহমানকে দেশের নেতা মেনে নেয়ার কোন মানসিকতা ছিল না পশ্চিম পাকিস্থানিদের মধ্যে। তারা কথা বলার নামে কালক্ষেপন করে সৈন্য এনে ভর্তি করছিল পূর্ব বাংলায়। নৌবহরে করে যেমন সৈন্যরা আসছিল। প্রতিদিনের যাত্রীদের আসা বন্ধ করে প্লেনে সাধারন পোষাকে বোঝাই করে সৈন্যদের পাঠাচ্ছিল ইয়াহিয়া, ভুট্টোরা। নিজেদের শলা পরামর্শ ছিল গোপনে। বাঙালিরা এতটা নৃশংসতা আন্দাজও করতে পারে নাই। নব্বই হাজার সৈন্য বাংলাদেশে চলে এসেছিল, পঁচিশে মাছের আগে। পাকিস্থানিদের যুদ্ধের প্রস্তুতি সব ছিল, বাঙালির অগোচরে।
ছাব্বিশে মার্চ রাত্রের অতর্কিত আক্রমণের ধ্বংস যজ্ঞের পর প্রাথমিক ভয়ে জীবন বাঁচাতে মানুষ পালাতে শুরু করে। কিন্তু কোথায় যাবে কোথায় নিরাপত্তা তাও জানা ছিল না প্রথম অবস্থায়।
বাকি নয় মাস মানুষের জীবনে যে ভয়াবহ সময় গেছে কোন কিছুর সাথে তার তুলনা হয় না। হঠাৎ আসা এই অবস্থার সাথে কি করা দরকার কি করা উচিত সাধারন মানুষ বুঝে উঠতে পারেনি প্রাথম অবস্থায়। কি হতে যাচ্ছে আগামী সময়ে। কিছু রাজনৈতিক সচেতন মানুষের পক্ষে হয় তো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ ছিল কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের অপেক্ষা ছিল সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাতকোটি মানুষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে সেই মতন অবস্থার মোকাবেলা করছেন বাকি সময়ে। মার খেতে খেতে প্রতিবাদী হয়ে যেমন যুদ্ধের অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন সাধারন মানুষ। তেমনি সৈনিকরাও বুঝে উঠেন নাই অনেকে কি হতে যাচ্ছে কি হবে। কি করা প্রয়োজন। সব মানুষের ভাবনা ধারনা এক রকম নয়। কেউ কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সাঠিক মূহুর্তে। কেউ সময় নিয়ে বুঝতে পারেন পরিস্থিতি।
অনেকে প্রশ্ন তুলেন, অনেকেই কেন মুক্তিযুদ্ধ করেন নাই। অনেকের সে সুযোগ ছিল না। অনেকে সব হারিয়ে যুদ্ধে চলে গেছেন। অনেকে সব হারিয়ে দিশাহারা হয়ে গেছেন।
আগের মানুষের জীবন যাপনের সাথে ভাবনা চিন্তাও ছিল বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেক ভিন্ন। আজকের ছোটরা যতটা সচেতন পঞ্চাশ বছর আগে অনেক বড় মানুষকেও ছোট হয়ে থাকতে হতো অভিভাবকের কাছে, পরিবারের মুরব্বীদের কাছে। নিজের ইচ্ছায় কিছু করার সুযোগ ছিল না সহজে। সামাজিকতা ছিল অনেক ভিন্ন আজকের অবস্থা থেকে।
সেই সময়কে ধারন করার জন্য টাইম মেশিনে চড়ে যদি পিছনে ভ্রমণ করার সুযোগ থাকত তবে হয় তো সেই আর্থ সামাজিক অবস্থা জীবন যাপন বোঝার চেষ্টা করলে অনেকটা অর্থবহ হবে। অনেক প্রশ্নের উত্তর হয় তো নিজের মনে পেতে পারেন অনেকে। কিন্তু নিজের অবস্থানে থেকে পঞ্চাশ বছর আগে কি হয়েছে কি হয়নি, কেন হয়নি, চুলচেরা হিসাব করা এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলা সহজ কিন্তু সে সময়কে উপলব্ধি করতে পারলে তখনকার পরিস্থিতি উপলব্ধি করা সহজ হবে।

কিছু দিন আগে এক মেসোর কাছে গল্প শুনেছিলাম। নেত্রকোনায় তাদের ভালো অবস্থা ছিল, প্রতাপ, প্রতিপত্তি, সমৃদ্ধি সুখি পরিবার এবং শহরের মানুষের সাথে সুন্দর সম্পর্ক। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে হিন্দু পরিবার ঠিক কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। সবাই বলছে পালিয়ে যান। কিন্তু সব কিছু রেখে পালিয়ে যাবেন কোথায়। কি ভাবে হবে জীবন যাপন। সব ভেবে দিশাহারা অবস্থা উনার তখন।
যুবতি স্ত্রীসহ বোন, কিশোরী মেয়েরা, জোয়ান ছেলে, আত্মিয় পরিজনে ভরপুর এত বড় বাড়ির এত মানুষ, সব ফেলে ছেড়ে বা সাথে নিয়ে কোথায় পালাবেন, কোথায় লুকাবেন। ভয়াবহ এক অবস্থা।
একটি নৌকায় পরিবারের ঘনিষ্ট কয়েকজনকে নিয়ে নদীতে নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঠিকানা বিহীন সে ঘোরা ফেরা, ভেসে বেড়ানো।
নদীতেও ঘুরে মিলিটারিদের গামবোট তখন লুকিয়ে থাকতে হয় নৌকা নিয়ে কোন হুগলার বনে, ঘাস, গাছের আড়ালে। এই ভাবে আতংক নিয়ে কতদিন পালিয়ে বাঁচা যায়। একা নন পুরো পরিবার সাথে, আছেন মহিলা উঠতি বয়সি মেয়েরা। রান্না খাওয়া ঘুম প্রাকৃতিক কাজ নৌকার মাঝে, কোন ব্যবস্থা নেই। অস্বাভাবিক জীবনযাপন।
এক সময় মাঝি বলে আর কতদিন এভাবে নদীতে ভাসবেন তারচেয়ে ওপাড়ে চলে যান। ওপাড় মানে নদীর ওপাড়, নদীর দুপাড়েই তো মিলিটারি এসে গেছে নামলেই ধরা পরার ভয়।
না এই ওপাড় নদীর পাড় নয় সীমান্তের ওপাড়, ভারতে চলে যান। নিজের দেশ ছেড়ে ভারতে যেতে হবে। এটা কি কথা বলো মাঝি। এখন অনেকেই যাচ্ছে আমি অনেককে পাড় করে দিয়েছি আগে, আপনারাও চলে যান।
চোখের জলে দেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নৌকা ভেসে চলল ভারতের সীমানা অভিমুখে। দেশের মাঝে সব জায়গায় আতংক ততদিনে কোথাও নিরাপত্ত নেই। এমন অবস্থায় সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে নিরাপত্তার খোঁজে যেতে হলো।
কয়েকদিন ধরে নৌকায় ঘোরাফেরা পালিয়ে থাকা জীবন, ঠিক মতন খাওয়া ঘুম নেই, সবাই ক্লান্ত অবসন্ন। সাথে জীবনের নিরাপত্তার অভাব যে কোন সময়, ধরা পরার ভয়ে সবার অবস্থা শোচনীয় ভাবে পাজলড হয়ে আছে।
এক সময় নৌকা যখন ভারতের সীমানার কাছাকাছি পৌঁছেছে। মাঝি হাত তুলে দেখাচ্ছে ঐ যে সীমানা ভারতের। এখানে আর কোন ভয় নেই।
নৌকার ভিতর লুকিয়ে থাকা সব মানুষ বেরিয়ে আসে সূর্যের আলোয়, জীবনের আলোয়। সবুজের মধ্যে লাল সূর্য তার মাঝে সোনালী বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়ছে। সাথে ভারতের পতাকাও উড়ছে এক সাথে। অনেক মানুষ পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই হাত বাড়িয়ে দেখাচ্ছে জয়বাংলার মানুষ এসেছে। জয় বাংলা ধ্বনী নিয়ে সবাই ডাকছে তাদের। এ কদিনের ভয় আতংক সব যেন নিমিশে শেষ হয়ে গেল। নৌকার মধ্যে থেকেও তারা জয় বাংলা বলে প্রতি উত্তর দিতে লাগল। ছেলেরা যেন সাঁতার দিয়ে চলে যেতে চায় এখন পাড়ে তারা ঝাঁপিয়ে নেমে পরল নদীর জলে।
কি অস্বাভাবিক অবস্থায় তারা কাটিয়েছে এ কদিন চারপাশে মৃত্যু গোলার শব্দ আগুনের লেলিহান শিখা। জলে নামতেও ভয় লাগত বৈঠার মাঝে লেগে যেত মানুষের বয়ে যাওয়া দেহ। মানুষের শব ভাসছে খড়খুটার মতন নদীর মাঝে। এমন অবস্থা কেউ আগে কখনও দেখেনি। কদিন তারা কাটিয়েছে এক বিভীষিকা জীবন। এখনও কেমন হবে জীবন সেটা অজানা। কিন্তু তারপরও নিরাপত্তা যেন জীবনের।
আনন্দে চোখে জল এসে গেল। অচেনা মানুষরা প্রাণের উচ্ছাসে স্বাগত জানাচ্ছে তাদের। চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে নৌকা থেকে নেমে আসে সবাই বিনা বিসা পাসপোর্টে পা রাখে অন্য দেশের মাটিতে অথচ তাদের বরণ করা হয় যেন তারা অতিথি।
সাতকোটি মানুষের ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন সেই সময়ের। একটা ঘটনার একটু উল্লেখ করলাম।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২২ রাত ২:০১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×