দেশে থাকলে ভোট দিতে যেতাম। বাংলাদেশের মতন এত জমজমাট ভোট আর কোথাও হয় না। এত্ত আনন্দ উৎসব। কত রকমের বাহারি মিছিল হয়। পোষ্টারে পোষ্টারে দেশ সেজে উঠে রঙে রঙে। মাইক বাজিয়ে চিৎকার করে গুণগান চলতে থাকে। চা বিস্কুট থেকে গরু জবাই হয় ভোটের খাওয়া দাওয়া। টাকা পয়সার কত রকমের লেনদেন হয়।
প্রতিক চিহ্নর কত রকম সাজ, ভাস্কর্য বানানো হয়। প্রতিক নিয়ে মিছিল, প্রতিক অনুয়ায়ী মিছিল। মানুষের উৎসব আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। কাকে ভোট দিবে। কি জন্য দিবে।
প্রার্থী কেন নিজে পছন্দ করবে এসব বিষয়ে জানার চেয়ে। অন্য কেউ বলে দিয়েছে তার জন্য ভোট দেয়। প্রার্থীর গুণের চেয়ে বংশ, ধন, আর দল সবার উপরে। দলকে জিতানোর জন্য ভোট দেয়ার কথা চিন্তা করে। না দেয়ার কথাও চিন্তা করে। দল আবার থাকে কিছু মানুষের জন্য জানপরণ। দলের কলাগাছ নেতাও সাপোর্ট পায়। দূর্নীতিবাজও মাথায় থাকে। প্রার্থীর যত ভুল থাকুক পার্টির জন্য তাকে নির্বাচিত করা হবে। নিজের জীবন বাজী রাখে মানুষ নেতাদের জন্য।
জনগণের জন্য কাজের চেয়ে কে কত শান জৌলুস দেখাতে পারে তাদেরই পছন্দ করে। রাতের অন্ধকারে অনেকের মন দখল হয়। টাকার খেলায়। ভোটের জয় পরাজয় হয়। দেশের জন্য কে ভাবে, কে সৎ, শিক্ষিত এসবে পরোয়া নেই।
দেশের উন্নয়নে জনগণের স্বার্থে কাজ করার প্রয়োজনই পরে না প্রার্থীদের।
অনেক মানুষ মারা যায় ভোটের আগে পরে। এ বছর একজন প্রার্থীকে কুপিয়ে মারা হয়েছে ভোটের দিন। আর দেয়া হয়েছে ট্রেনে আগুন। মানুষ এত পিচাশ ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ মেরে ক্ষমতা দখল করতে চায়। মানুষের জন্য দয়া মায়া নাই জীবনের মূল্য এদের কাছে নেই তারা ক্ষমতায় গিয়ে মানুষের জন্য কি কাজ করবে এরা কিভাবে মানুষের নেতা হতে চায়। এই দুষ্কৃতিকারীদের প্রতি ঘৃনা।
যারা নেতাদের কথায় নাচানাচি করে রক্ত গরম করে ঝাঁপিয়ে পরে মানুষ মারতে। তাদের অবস্থা শেষে কি হয় নেতা তাদের কতটুকু দেখে। এসব বোঝাবুঝি বাংলাদেশের অগুনতি মানুষের খুব কম। যারা বোঝে তারা সব এড়িয়ে চলে, ঝামেলা র্নিজীব পরে থাকে নিজের মতন। ভোট হলে বা না হলে তাদের কিছু যায় আসে না।
চায়ের কাপে ঝড় তোলে ভোট কেন্দ্র করে। ভোটের পক্ষে বিপক্ষে গলা ফাটিয়ে কথা বলে সবাই। সবাই সব জানে। সবাই সিদ্ধান্ত দেয়। সবাই সবাইকে নিয়ন্ত্রন করতে চায়। বাচ্চারা পর্যন্ত খুশিতে অস্থির থাকে ভোট নিয়ে। ভোট এক মহা উৎসব।
ভোটের দিন সরকারি ছুটি থাকে সব কিছু। টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান ভোটের জন্য তিনদিন ব্যাপী।
বাড়ি বাড়ি যাওয়া আসা। খাওয়া দাওয়া। কত বেকার লোকের কত রকম আয়ের পথ খুলে যায় ভোটের সময়।
মারামারি রক্তারক্তি মানুষের মৃত্যু ভোটের জন্য সে তো বাংলাদেশেই হয়।
ভোটের আগে এবং পরে কিছু মানুষ মারা যায় ভোট উপলক্ষে । জয় পরাজয় সহজে কেউ মানতে চায় না। কেউ বিপক্ষদলকে মন খোলে অভিনন্দন জানায় না। শুধু গীবত করা হয়। মনে মনে ষড়যন্ত্র চলে।
এমন ভোটের উথালপাথাল ঢেউ পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে জানা নেই।
বিদেশে আজকাল মানুষ ভোট কেন্দ্রেও যায় না। ঘরে বসে ভোট দিয়ে দেয়। অন্য দেশে থাকলেও ভোট দেয়ার জন্য ব্যালট পাঠিয়ে দেয় ডাকে। অন্য দেশ থেকে নিজের দেশে ভোটে অংশ গ্রহণ করে বিদেশে থাকা সে দেশের নাগরিকরা।
বাংলাদেশী নাগরিক বিদেশে যারা থাকে তারা কবে নিজের ভোট দিতে পারবে বিদেশে থেকেও। কত রকমের গল্প তৈরি হয় ভোট ঘিরে এমন উৎসব দেখার সুযোগ হলো না। বড়ই আফসোস রয়ে গেলো।
এবার নাকি বাংলাদেশের ভোটের দিনও তেমন অস্থির ছিল না আগের মতন।
তিনদিন ব্যাপী ভোট গননার উৎসব। খবর পাওয়া আর টেলিভিশনের সামনে বসে খাওয়া দাওয়া আর সিনেমা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখাও তেমন নাকি জমে নাই।
সব চুপচাপ ঝটপট সারা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কি বিদেশ হয়ে যাচ্ছে! ভোটের ক্ষেত্রেও।
ইস আবার পাঁচ বছর পর ভোট আসবে আর তখন এ্ই মজার ভোট উপলক্ষে আনন্দ অনুষ্ঠান কি আরো কমে যাবে। আর বুঝি দেখা হলো না ভোটের আনন্দ।
লেখাটা ভোটের সময় লিখে ছিলাম। ভ্রমণের লেখার মাঝে পোষ্ট করিনি তখন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:৫৬