somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ব্যবসা বানিজ্য খাবার ঐতিহ্য

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের এখন অনেকেই বিজনেস করছে অনলাইনে । প্রথমে শুরু হয় কাপড়ের বিজনেস দিয়ে মনে হয় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির সাথে মিল ছিল বলে তারপর শুরু হয় অলংকার ,গহনা চুড়ি, দুল, গলার হার, পায়ের নুপুর, আংটি হালকা থেকে জড়োয়া, মাটি থেকে পাথরের কত রকমের আর ফেসবুক বন্ধুরা অনেকেই জড়িয়ে পড়ে এসব ব্যবসায়। কর্মহীন মানুষ ব্যস্ত হয়ে পরে বানিজ্যে। বিষয়টা ভালো। সবাই চেষ্টা করছে বসে না থেকে কিছু করার। অল্প বয়সী থেকে গৃহিনী যারা কখনো কিছু করেননি। মধ্য বয়সীরাও বাড়তি আয় করতে ব্যবসা খুলেছেন। নোটিফিকেশন আসতে থাকে পেইজ লাইক দাও। ভালোবেসে লাইক দিলাম তারপর শুধু তাদের পেইজের নোটিফিকেশন পাই। আর তারা তো ব্যাস্ত তাই আমার পোষ্ট আর দেখেন না। আগে যেমন সাধারন কথা বার্তা হতো এখন সব বানিজ্য ভিত্তিক।
এখন অন্য সব ছাড়িয়ে ব্যবসা হয়েছে খাওয়া দাওয়ার। ঘরের রান্না খাবার ডেলিভারি দেয়ার। দেশীয় খাবার থেকে কাবাব চাইনিজ, জাপানি, ইন্ডিয়ান খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া আছে ইংলিশ, মোগলাইও। দেশীয় রান্না শাক, ছোট মাছ, ভর্তা ভাজি যদি কেউ হোম সার্ভিস পাঠিয়ে দেয় ঘরে বসে খেতে মন্দ লাগেনা। ঘরের প্রতিদিনের খাবার থেকে পার্টির জন্য খাবার সরবরাহ করা হয়। ক্রেতাও এখন প্রচুর দেশে। নানা বিষয়ে উৎসব আয়োজনে বাইরের খাবার কেনা হয়।
অনেক আগে একসময় হোম সার্ভিসের মতন খাবার পাঠানো হতো অফিসগুলোতে। কিছু মানুষ ছিল যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার ভর্তি, টিফিন ক্যারিয়ার কালেক্ট করে সেটা পৌছে দিত অফিসে অফিসে। বাড়ির কর্তারা ঘরের গিন্নির বানানো খাবার খেতেন অফিসে বসে দুপুর বেলা। আর সেই খাবার দুপুরবেলা টিফিন ক্যারিয়ারের বোঝা বয়ে এই পেশার মানুষ, অফিসগুলোতে খাবার পৌঁছে দিত। এখন পাঠাও ঘরে ঘরে ডেলিভারি শুরু হয়েছে এটা কিন্তু নতুন নয়। বিদেশে খুব জনপ্রিয় উবার ইটিং এখন। দেশে এই ব্যবস্থা আগেও ছিল এ পাঠানো হোম ডেলিভারির সাথে হোম রান্না করা।
এখন বিজ্ঞাপন সারাক্ষণ,কত রকমের রান্না হচ্ছে আর তার বিজ্ঞাপন চলছে তার প্রচার চলছে। নানারকম সামাজিক মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য দারুন জমে উঠেছে। রান্না হচ্ছে এক জায়গায়,খাবার যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি। রান্নার ছবি তুলছে যারা পাঠাচ্ছে খাবার তারা, আবার যারা খাচ্ছে তারা। এক খাবারের দুই তিনবার ছবি পোষ্ট হচ্ছে ভিন্ন টেবিলে, বিভিন্ন বাসায়।
বানিজ্যের খাবার ছাড়া নিজেদের রান্নার ছবিও জুড়ে আছে নানা রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেন জানি এত খাবার দেখে বিরক্ত লাগছে খুব। নানাপদের খাবার দেখতে দেখতে নিজের আর কিছু খেতেই ইচ্ছা করছে না। কোন বিজ্ঞাপন কোন খাবারের ছবি দেখতে চাই না বলে সবকিছু ব্লক করে রাখলাম। তারপরও কতটা পার পাবো না দেখে জানিনা।
শুধু দেশি না বিদেশী কিছু ছোট রীল, ভিডিও চলে আসত। এক গামলা ভর্তি খাবার সামনে নিয়ে গপগপ করে খাচ্ছে। একজন খাচ্ছে আর বসে বসে তার খাবার দেখতে হবে এত নোংরা মনে হয় আমার কাছে। অথচ মানুষ দেখতে খুব ভালোবাসে বোঝা যায়। মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। তারা যে দেখে শুধু তা না তার লাইক শেয়ার কমেন্টও করে।
আরো এক ধরনের খাবারের ভিডিও আসছে, যা আমার কাছে খুব ভয়ংকর মনে হয়েছে। এবং বাংলাদেশের কিছু নাটক এবং ব্যাক্তিগত ভিডিওতে এই অনুকরন চলে এসেছে দেখলাম। খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেয়া। এটা বিভিন্ন দেশের মানুষ করছে। বয়ফ্রেন্ড গালফ্রেণ্ডকে বা বউ স্বামীকে, বা স্বামী স্ত্রীকে। বা শাশুড়ি বউ। আসলে যাকে পছন্দ নয় তার খাবারে ঢেলে দিচ্ছে বিষ। এবং এই নোংরা প্রাকটিস অনুসরণ করছে বাংলাদেশের নাটক এবং ব্যাক্তি গত ভিডিওতেও। এমনিতেই কত রকম ভাবে অনিরাপদ মানুষ এখন। তার উপর আনন্দ করে শিখানো হচ্ছে এই সব বিষ ঢালা।
আমি বসে বসে এই খাবার ভিডিও দেখি তা নয় এসব চলে আসে দেখতে না চাইলেও অতিরিক্ত দেখা হয়েছে বলে।
দেশে গিয়ে দেখেছিলাম সারি সারি নানান দেশের খাবার এখন ঢাকায়। এত এত ভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন বাংলাদেশ বাঙালি অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমনিতেই আমরা উৎসব আয়োজনে মোগলের মতন খেতে ভালোবাসি। বিয়ে শাদী বিরিয়ানী রোস্ট, কাবাব ছাড়া আর কিছু খেতে চাই না। অন্য আয়োজনে চাইনিজ হই। কিন্তু ভাত, মাছ, ভর্তা, ডাল এমন বাঙালীর খাবার গুলো কোন সময় উৎসবের খাবার নয়।
হিন্দু বাড়িতে এক সময় দেশি ডাল বেগুন ভাজা, সবজী, মাছ, মাংস বাঙালি নিয়মে রান্না করা খাবার গুলো উৎসবে প্রচলিত ছিল কিন্তু এখন হিন্দু বাড়ির উৎসবেও বিরিয়ানী রোস্ট পোলাউ রেজালা হয়।
এক সময় ছিল প্রিন্স, প্রভিন্স নামে স্টেডিয়ামে দুটো দোকান, দেশি খাবার খুব ভালো পাওয়া যেত। আমার খুব প্রিয় ছিল। এরপর এলো ঘরোয়া। পরে কস্তুরি, রাঁধুনি নতুন ঢাকার দিকে দেশি খাবার পাওয়া যেত। কিছু চিনে রেস্তোরাঁ একটা দুটো পিজ্জা দোকান। ক্যান্টাকি ফ্রাইর মতন চিকেন ভাজা বিক্রি হত বিকেলের দিকে বেইলি রোডে। সময়টা নব্বই দশকের দিকে।
ঢাকা শহরে কফি খাওয়ার কোন কফি শপ খুঁজে পেতাম না। স্টুডেন্ট সময় কলাবাগানের একটা কফি শপ হয়েছিল আইসকফি খেতে যেতাম সেখানে।
কফি জিনিসটা কেমন আমাদের তেমন ধারনা ছিল না, বাড়িতে বানানো হতো ইনস্ট্যান্ট কফি অনেক ঘন দুধ দিয়ে আর ঢাকায় খেতাম ঐ কলাবাগানের দোকানে আইস কফি। এছাড়া ব্ল্যাক কফি, মকা লাটো এসপ্রেসো এসব নাম জানা ছিল না। কালো কফির গুনের চেয়ে, তি-ত্ত-তা এই লম্বা করে বলার সাথে বিকৃত মুখ ভঙ্গী দেখার মতন ছিল যারা কখনো খেয়েছে তাদের।
ওই গ্রামের লোক যখন তার বউকে শহর থেকে চা পাতা এনে দিয়ে বলেছিল, চা করে দিতে তখন সে হলুদ মরিচ বাগাড় দিয়ে তার ভিতরে চা পাতা দিয়ে রান্না করে দিয়েছিল চ।, আমাদের কফি খাওয়াও সেই রকমটাই ছিল।
রিয়েল কফির কোন ব্যাপার জানতাম না। অনেক বছর আগে প্রথম নিউ ইয়র্কে কফি খেতে গেলে প্রথম নাম শুনেছিলাম হরেক রকমের অচেনা কফির। কোনটা পছন্দ করব কি খাব। বুঝতে না পেরে চেনা কোল্ড কফির ওর্ডার যখন করছি, তখন মেঝে মুছতে থাকা ছেলেটা পাশ থেকে বলল, কোল্ড কফি নিয়েন না এখানে গরম কফির ভিতর আইস দিয়ে দেয়। আমাদের দেশের মতন বানায় না। ছেলেটা যে বাঙালি আর আমাদের বাংলা কথা শুনছে পাশ থেকে ওর কথা শুনে জানলাম। চায়ের দেশে চাই প্রিয় ছিল, বিদেশি কফি কখনো তেমন খাওয়া হতো না। ধীরে ধীরে জানা হলো কত কিছু। অথচ বর্তমান প্রজন্ম ছোট ছোট শহরে সকাল বিকাল কফি খেতে যায় নানা রকম ক্যাফেতে। সময় তো পেরিয়ে গেছে অনেকটা তারা আর শুধু দেশি চা পান করে না।
যদিও চায়ের দেশ থেকে এসে এখন বিদেশে দেখছি কত রকমের চা। গ্রীন টির ছাড়াছড়ি, উপকারিতা। যা কখনো জানতাম না। শুধু চা পাতার চা নয়। হলুদের চা, কত রকমের পাতার চা। ফুলের চা। আর রিয়েল চায়েরও নানা রকম ব্যবহার।
আমার মায়ের খুব শখ ছিল পিঠা পুলি বদেও কেক,পেস্ট্রি বানানোর। আমাদের শহরে কোন কেকের দোকান ছিল না। লন্ডন শহর থেকে দেশে ফিরে এক দম্পত্তি একটা রেস্টুরেন্ট করেছিলেন । ঢাকা থেকে বাবুর্চি আনিয়ে ছিলেন সেখানে। সেই বাবুর্চি পারদর্শী কেক পেস্ট্রি বানানোয়। মা মাঝে মধ্যে সেই সেফকে, বাসায় নিয়ে এসে কেক বানাতেন। আর আমাকে ও কেক বানানো শিখার জন্য ময়দা, ডিম চিনি, সব দিয়ে বসাতেন। সেফ ময়দা মাখছে এক গামলায়। আমিও মাখছি অন্য গামলায়। মেশিন পত্র কিছু ছিল না। সব করতে হতো হাতে।
আমার ছোট হাত ওই আটা, মাখনগুলা চিনি ডিম দুধ ঘষে ঘষে হাত ব্যথা হয়ে যেত। তারপর সেই মাখানো গোলা ব্যাক করা এক কঠিন কাজ ছিল। চুলার উপরে তাওয়া বসিয়ে তার উপরে সে পাত্র রেখে তার উপরে কয়লা ঢেলে উপর নিচে সমানতালে উত্তাপ দেওয়া আসলে কঠিন।
তন্দুরি রুটি যেমন ভালোভাবে সেঁকা হয় না তন্দুরি উনুন নাহলে । কেক ব্যাক করা কঠিন ছিল। পুডিং এর মতন পানিতে জ্বাল করে এখন কেক বানানো হচ্ছে এই পদ্ধতি জানা ছিল না। নানা কসরতে তাও আমরা কত কষ্ট করে কেক বানিয়ে মহা খুশি হয়ে খেতাম ।

যখন আমি ঢাকা পড়তে গেলাম তখন দেখলাম দোকানে বিক্রি হচ্ছে এক ধরনের ওভেন আসলে টিনের একটা বাক্স যেটা চুলার উপর বসিয়ে দিলে চারপাশ থেকে বেশ ওভেনের মত গরম হয়। সেই বড় আকারের টিনের ট্রাংকের মত চারকোনা বাক্স ঢাকা থেকে বয়ে মায়ের জন্য নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু খুব বেশি কেক মনে হয় ওই ওভেনে বানানো হয়নি। মাঝে মাঝে ডাল ঘুটনি ঘুটে দুধ থেকে মাখন তুলতে বসিয়ে দিতেন মা। এই সব কাজ একদমই করতে ইচ্ছা করত না আমার কিন্তু করতে হতো, হাত ব্যাথা করে।
এখন মেশিনে মাখন চিনি ডিম সব দিয়ে দিলে একটার পর একটা আপন মনে মেশিন সবকিছু মিক্স করে দেয় আর ওভেনে দিয়ে দেই কোন যন্ত্রনা ছাড়া কেক হয় ঝটপট।
তখন ছোটবেলার কথা মনে পড়ে মাঝে মাঝে তবু চেষ্টা ছিল কাজ করার নতুন কিছু বানানোর।
এখন তো ঘরে ঘরে আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে কেক বানানোর। খুব সোজা হয়েছে বাংলাদেশও রান্না করা।
এছাড়া আমাদের সব সময় একটা ভয় ছিল দোকানের কেকের মধ্যে পচা ডিম মিশে আছে। ভালো ডিমের মধ্যে দু একটা পচা ডিম পেলে ওগুলো মিশিয়েই কেক বানায়। ডিম পচা হলে দোকানে নিশ্চয়ই সেটা ফেলে দিবে না অনেক ডিমের সাথে মিশিয়ে দিবে।
সেমাই খেতে গেলে ঘেন্না লাগতো লোকরা নাকি পা দিয়ে সেই আটা দলাই মলাই করে,পাউরুটি ও নাকি পা দিয়ে ডলে এজন্য নাম পাউ রুটি। আসলে বাংলাদেশের সব কিছুতেই কিছু দুই নাম্বারি থাকবে এই ধরনের একটা চিন্তা ভাবনা আমাদের থেকেই যেতো। হয়তো সেটা এখন নয় আগে থেকেই সততার বিষয়টা সৎ ভাবে আমরা বিশ্বাস করতে পারতাম না । না হলে কেন এই ধরনের চিন্তা ছিল ভাবনাটা তো আমাদের মাথায় এমনি আসিনি। বড়রা নিশ্চিয় এ বিষয়ে কথা বলতেন তাই আমাদের ধারণা হয়েছে বাইরের খাবারের পঁচা, বাসী থাকতে পারে।
কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম ছোট ছোট শহর গুলিতেও বাইরে গিয়ে খেতে পছন্দ করে চটপটি খেতে বার্গার বিরিয়ানি কাবাব চাইনিজ নানা ধরনের খাবার অনেক ধরনের রেস্টুরেন্ট ছোট শহরের কোনে কোনে।স্বাস্থ্যসম্মত কতটা জানি না। তবে খাবার বানান হচ্ছে বিক্রি হচ্ছে খাচ্ছেও মানুষ মহাউৎসাহে। বিদেশে প্রতিটি খাবার দোকানের রান্নার লোকের গায়ে থাকে এপ্রোন, মাথায় ক্যাপ, আর হাতে গ্লাবস। খাবার যারা সার্ভ করে তৈরি করে তাদের অবশ্যই গ্লাব্স পরতে হয়।
অনেক সময় দেখি লাল রঙের সিলগালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কোন খাবার দোকান। খাবার বিক্রির ব্যবসায়ীদের নানা রকম সতর্কতার সাথে চলতে হয়। একটু ভুলের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা। তাই বড় থেকে ছোট সব ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যর জন্য খারাপ, মেয়াদ উত্তীর্ণ বা অস্বাস্থ্যকর ভাবে খাবার তৈরি এবং পরিবেশন করতে পারে না।
আমাদের দেশে বেশির ভাগ হোটেলে গামছা গলায় ঝুলিয়ে রাখে সার্ভার। সেটা দিয়ে টেবিল মুছে। সেটা দিয়ে, নাক মুছে ঘামও মুছে। আমরা এমনি দেখে অভ্যস্থ ছিলাম এখনও আছি। খুব দামী জায়গায় যাওয়ার সুযোগ না পেলে ঐ এক গামছায় মুছা টেবিলে বসে খেতে হয় ক্রেতাদের।
আমাদের ছোটবেলায় বাইরের কেনা খাবারের মধ্যে মিষ্টি খেতাম। যা ছিল ঐতিহ্য আর তাদের যত্ন দিয়ে বানানো। পিঠা পুলি কেনা যেত না ,বানানো হতো ঘরে। উৎসব আয়োজনে।
টোস্ট বিস্কিট আর প্যাকেটের ক্রিম দেয়া বিস্কিটের পরে স্থানীয় দোকানে বানানো হতো মিষ্টি বিস্কুট। ব্যাকারির বিস্কুট বলতাম। এটুকু উন্নয়ন ছিল আমার সময়।
দেশে যে এত খাবারের দোকান হয়েছে নতুন নতুন তাতে খেয়ে আমি কোন মজা পাইনি এবং আমার শরীর খারাপ হয়েছে সেসব খাওয়ার পরে। অথচ আগে মাঝে মধ্যে আমি দু-একটা যা রেস্টুরেন্ট ছিল সেখানে গিয়ে খেতাম ভালোও লাগতো। একমাত্র পুরানো হাজির বিরিয়ানি খেয়ে আমার কোন সমস্যা হয়নি এই সময়ে।
বছর কয়েক আগে একসময় দেখলাম মিষ্টি, কাবাব, বিদেশি নানান রকম খাবার সবকিছুই দুই নম্বরের জন্য ধরা পড়ছে । দামী দামী দোকানে ফাইন করছে দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেটরা। অথচ আত্মীয়-স্বজনরা অনেক ভালো বলে সেসব রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছে আমাকে এবং আমি খাওয়া দেখে পছন্দ করিনি।
একটা চাইনিজে নিয়ে গেলে আমি বলেছিলাম, এম এস জি বা টেস্টিং সল্ট যা চাইনিজ রান্নায় খুব ব্যবহার করে তা ব্যবহার না করতে। জানাল টেস্টিং সল্ট ছাড়া রান্না করতে পারবে না। অথচ বিদেশে টেস্টিং সল্ট খাবারে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। চাইনিজ খেতে শুরু করার পর অনুভব করতাম,খাওয়ার পর আমার মাথা কেমন করছে। বিদেশে আসার পর জানলাম এটা টেস্টিং সল্ট বা এম এসজির প্রভাব।
এখন যারা ঘরের খাবার বানিয়ে পাঠাচ্ছে তারা হয়তো স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে খাবার তৈরি করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখে।
তবে বাংলাদেশের খাবারের দাম যে ভয়াবহ রকম বেশি এর কোন কারন খুঁজে পাই না।
বিশ হাজার টাকার জিলাপী বানানোর কি দরকার যে জিলাপী সবার প্রিয় অল্পমূল্যে পাওয়া যায়। তার দাম এভাবে বাড়ানোর কারণ কি। আবার এত্তুটুকুন কেকের দাম বারো হাজার,পনের হাজার। কেক নয় আর্ট পিস নাকি । ওকি সাজিয়ে রাখার জন্য?
এই সব বিক্রেতা আবার বলছেন তাদের শিক্ষা থেকে যাবতীয় ব্যবসা স্ট্যাবলিশের হিসাব। এক কেকের মাধ্যমেই তারা পুজি আদায় না করে যদি আরো বেশি মানুষের চাহিদা মিটাতেন কম দামে মনে হয় সেটাই হতো ভালো। কিন্তু তাদের ক্রেতারাও তাদের আগলে রাখছেন শুধু তারাই খাবেন বলে।
বাইশ পরিবার ধনী ছিল বাংলাদেশে এক সময় এখন তো হিসাব ছাড়া কোটিপতি। আর তাদের কত রকমের আয়োজনে কেক কাটতে হয় বিদেশি স্টাইলে। আমরা অনুকরণ প্রিয় জাতি।
আমি নানা রকম বিদেশি খাবার খেয়ে দেখেছি, শেষ মেশ মনে হয় ডাল ভর্তা মাছ ভাত সহজ পাচ্য এবং স্বাস্থ্যসম্মত। যা আমরা এখন খেতে ভুলে যাচ্ছি। ইউরোপ আমেরিকার খাবার তেল ঝাল ছাড়া এক দুবার খেতে ভালোলাগে দিনের পর দিন নয়। এছাড়া ওরা যে সসগুলো ব্যবহার করে খুব বেশি রিচ, খেলে মোটা হতেই হবে। খারাপ কলোস্টেরেল বাড়বে নিশ্চিন্ত ভাবে। খুদ ইটালিতে যে ফ্রেস খাবার পাওয়া যায় অন্য দেশে তার কিচ্ছু পাওয়া যায় না শুধু নামটাই সমৃদ্ধ।
চাইনিজরা নিজ দেশে যে স্বাস্থ্যসম্মত রান্না করে, বিদেশের মানুষদের তা তারা খাওয়ায় না। জাপানের খাবার বেশ ভালো। আর মোগলাই খাবার এক দুবার খাওয়া যায়। ইন্ডিয়ার বেশির ভাগ মানুষ ভেজ খাবারে অভ্যস্থ। সেই হিসাবে দোশা আমার বেশ পছন্দ নানা রকম ডাল সবজির মিশ্রণ এক সাথে পাওয়া যায়।
ব্যবসার সাথে আছে ফুড ব্লগ আর ব্লগার। এটাও বেশ ভালো ব্যবসা খেয়ে দেয়ে কথা বলে, পয়সা পাওয়ার সাথে ইউটিইব, টুইটারে ফেস বুকে শেয়ার করে আয় করছেন এই সব ফুড ব্লগার। কদিন আগে দেখলাম এরা বছর সেরা ফুড ব্লগার, ইউটিউবার আরো কিকি সব বিষয়ে যেন পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। তারকার মেলা বসেছে পাঁচতারা হোটেলের পার্টি রুমে। আগে তারকা ছিল, চিত্র তারকা এখন তারকা অনলাইন সেলিব্রেটিরাও। বদলে যাচ্ছে চেনা দেশ।
আমরা জাপান চীন কোরিয়া নেপাল, ভুটান কিউবা, ফ্যান্স এদের মতন নিজস্বতা নিয়ে থাকতে পারি না। বাংলাদেশি নিজস্বতা, স্বকীয়তা হারিয়ে অন্যদের নানা রকম ঐতিহ্য নিয়ে আমরা হয়ে উঠছি মাল্টিকালচার জাতি।
শুধু নানা উৎসবে, বিশেষ দিনে না হয়ে আমরা যদি প্রতিদিন বাঙালি থাকতাম খাওয়ায়, পরায়, চলায় বলায়। ভাষা শহীদ আর স্বাধীনতার জন্য শহীদদের আত্মা হয়ত শান্তি পেত।
বিদেশি খাবারের জন্য যদি আলাদা জায়গা থাকত শহরের এক পাশে পুরো শহর জুড়ে না থেকে। বাকিটা থাকত দেশিয় ঐতিহ্যে ভরপুর তাহলে মন্দ হতো না। সারা সময় বিদেশে থাকি দেশে গেলে যদি দেশী আবহ না পাই কেমন লাগে। বিদেশ না হয়ে যদি বাংলাদেশটা বাংলাদেশ হতো, নিজের দেশে গেলে নিজের দেশটাকে খুঁজে পেতাম ঐতিহ্যময় সংস্কৃতিতে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:২৫
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×