গত পরশু রোদ জড়িয়ে ধরল বাইরে পা রাখার সাথে সাথে সোহাগে। মিষ্টি একটি উত্তাপ বারো সেলসিয়াসের উপরে। অনেকটা সময় উপভোগ করলাম বসন্ত সময় যেন কিন্তু বসন্ত আসার অনেক দেরি এখনও।
শুয়ে থাকা সব বরফ ছড়ানো ছিটানো। ছেঁড়াফাটা সাদা কাপড়ের মতন জমিনটা এখন। বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা শুকনো পাতারা উড়ছে মনে হয় যেন চড়ুই পাখিগুলো ফিরে এসেছে। প্রকৃতির মাঝে গেলে আমি সব ভুলে যাই বাস্তবতা, ব্যাস্ততা।
নিঃশ্বাস নিতে খুব ভালো লাগছিল টাটকা হাওয়ায়। কিন্তু আমাকে যেতে হবে অনেক দূর তাই গাড়িতে চেপে বসতে হলো । গায়ে চাপানো জ্যাকেট খুলে রাখলাম। টেম্পারেচার বন্ধ করে দিলাম গাড়ির। জানলা খুলে দিলাম খোলা হাওয়া পাওয়ার জন্য । সবটাই মন মতো কিন্তু বরফ গলা জলে কোথাও কোথাও থক থকে কাঁদা, কোথাও পানি জমা হ্রদ। গাড়ির অবস্থা অল্প সময়ে করুণ হয়ে গেল। কাঁদা ছিটা একটা প্রলেপ পরে, গাড়ির আসল রং আর বোঝার উপায় নেই ।
কোন পাখি নেই, পাতা নেই গাছে। শুকনো ধূসর এক রঙ চারপাশে। কিছু কাক উড়ছিল, ডাকছিল। এদেশে কাককে খুব বুদ্ধিমান প্রাণী ভাবা হয় । তাদেরকে দেখলে খারাপ কিছু ভাবা হয় না বরঞ্চ খুবই ভালোবাসে এদেশের মানুষ কাক পাখীকে। অনেকে পোষে কথাও শিখাচ্ছে। যা হোক জানলা বন্ধ করে দিতে হলো গাড়ির ।
দুটো দিন কেটে গেল শহুরে জীবনে, ব্যস্ততায় আর ভালোবাসায়, আনন্দে ।
গতকাল মাঝ রাতে যখন বাড়ি ফিরছি আমার সাথে সাথে চলছিল অনেকগুলো গাড়ি । পেছনে সামনে হেডলাইট আলোর বন্যা , চোখ ঝলসানো অথচ এই রাস্তায় আমি একাই চলতাম প্রায় সময় । এবং বেশ একটা অহংকার ছিল রাস্তাটা আমার একার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাত্রা টের পাচ্ছি। স্থানীয় ছাড়াও ফ্রাইডে নাইটে অনেকেই চলেছে রিসোর্ট গুলোতে শেষ শীতের আমেজ অনুভব করতে। এটাও একটা নতুন বিষয় শিখেছি, বরফের সাথে খেলা। প্রচন্ড ঠান্ডায় মানুষ আনন্দ করতে নেমে যায় বরফের মাঝে। কি আনন্দ। অনেক টাকা পয়সা খরচ করে অনেকে, এই বরফের সাথে খেলার জন্য। এ বছরটা তাদের বেশি আনন্দ করার সুযোগ হলো না। যেমন আমার কাছেও খুব ভালো লাগল না শীত জুড়ে বরফের স্বল্পতা।
শীতের এখনো মাঝামাঝি সময় কিন্তু উপভোগ করতে পারলাম না বরফ খেলা। মাঝে মাঝে প্রকৃতি একটু ভিন্ন রূপ দেখায়। তেমনি মনে হচ্ছে আর হবেই না মনমতন বরফপাত এবছর।
অনেকটা পথ পেরিয়ে আসার পরে গাড়িগুলো থেকে একটু নিস্তার পেলাম, একা চলার সুযোগ পেলাম। জোসনামাখা বনভূমি, রাস্তা নিস্তব্ধ নীরবতা একাকী সময় উপভোগের সুযোগ পেলাম ।
মাইনাস দশ সেলসিয়াস ঠান্ডা এই রাতে গাড়ি উড়িয়ে নিবে এমন মনে হচ্ছিল প্রচন্ড হাওয়ায়। আপস এন্ড ডাউন এমনই চলছে সারাক্ষণ তাপমাত্রার উঠা নামা। বাড়ি ফিরে সব আলো নিভিয়ে অনেকটা সময় বাইরে জোসনা উপভোগ করলাম। পূর্ণিমা আসেনি এখনো কিন্তু পঞ্চমীর দিন থেকেই তুমুল জোসনায় ভাসাচ্ছে প্রতিরাতে। বরফের মাঝে জোসনার বিচ্ছুরণের এই সৌন্দর্যটা অসাধারণ । যা উপভোগ করার জন্য আমি সব সময় অপেক্ষা করি শীতকালের আর অনেক বরফপাতের। ঠান্ডা বাতাস যেন সুঁচ ফোটাচ্ছে গায়ে তাই বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। জোসনা মাখা শীতের এক অপরূপ সৌন্দর্য অল্প দেখেই ঘরে ঢুকতে হলো। ঘরে ঢুকে, আমাকে বাতি জ্বালাতে হলো না ঘরের ভিতর ঝকঝক করছে চাঁদের আলো। অনেকটা সময় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলাম , ঘরে অন্ধকারে বাইরের চাঁদের স্নিগ্ধ মায়াবী আলোয় ডুবে রইলাম।