somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

আকাশের চিঠি উপন্যাস নিয়ে লেখা

২১ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকালটি সুন্দর হয়ে যায়,যখন দেখি কেউ আমার কাজের উপরে আলোকপাত করে । আমার কাজের দিকে মনোযোগ দেয়, আমার কাজটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কারো কাছে।
নিজের সময় ব্যয় করে, একটি বই পড়ে তার উপরে বিশ্লেষণধর্মী একটি লেখা লিখা অনেকটা সময় নিয়ে করতে হয়। অনেক ভালোলাগা আর আগ্রহ না হলে সে কাজ কেউ করে না এই ব্যাস্ত জীবনে। সেই কাজটি করেছে মম কাজী। ঘুম থেকে জেগে আমার বইয়ের উপর এই লেখাটি দেখে মন ভরে গেল।
আজ বাইরে অনেক রোদের আলো ঝলমল করছে চারপাশ বরফের মধ্যে এত উজ্জ্বলতা ঝলমলে একটা দিন। আমার মনটাও ভরে গেল তেমনি। শুভ্র সোনালী আলোর রেনু গুলো আমার দেহ মনের কোনায় কোনায় যেন রশ্মি ছড়াচ্ছে।
আমার বই আকাশের চিঠি উপন্যাস নিয়ে, মমর লেখাটা আজ সকালের ভালোলাগার মতন সারা জীবন জড়িয়ে রাখবে আমাকে একটা মায়াবী উষ্ণ চাদরে আদরে।
আন্তরিক ধন্যবাদ মম
মম কাজীর লেখাটি সংযোগ করে দিলাম


রোকসানা লেইসের - “আকাশের চিঠি” - তে স্বাগতম
- মম কাজী
শরতের ঝকঝকে এক দিনে ভিনদেশের এক লেখক উৎসবে পরিচয় হয় কবি রোকসানা লেইসের সাথে। তাঁর ধাতব কন্ঠস্বরে রহস্যময় একটা ব্যাপার ছিল, একটি শব্দ শুনলে বারবার শুনতে ইচ্ছে করে। কোমল এবং কাঠেরের সমন্বয়ে কুয়াশাঘেরা। লেখক উৎসবে তাঁর কথাগুলো খুব চমতকার লেগেছিল। ইচ্ছে হল তাঁর কাজের সাথে পরিচিত হবার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়েও ফেললাম কিছু কবিতা। মুক্তিযুদ্ধ, প্রবাস জীবন এবং দারুন সব রোমাঞ্চকর ভ্রমনকথা।কবি থাকেন বেশ দূরে - সবুজের এবং শুভ্রতার কাছাকাছি, তাই ইচ্ছে থাকলেই ছুটে যাওয়ার জো নেই। তবে একদিন কবি আসলেন। সাথে নিয়ে আসলেন তাঁর “আকাশের চিঠি”। খিদে পেটে কে এফ সির মুরগীর ঠ্যাঙে কামড় দিতে দিতে হলে বাকবিনিময়। সে যে কত কথা - কত গান। বই এর মতই তাঁর জীবনের গল্প- উত্থান পতনের সমন্বয়ে দারুন রোমাঞ্চকর।
নীল- বইটির প্রচ্ছদে নীল- বইটির দেহে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে নীল। বইটির নাম “আকাশের চিঠি”- আকাশ নীল। বইটির প্রধান চরিত্র নীল, লেখিকার মনের অবস্থাও নীল- বেদনার নীল। কানাডার তুষারবিঘ্নিত রাতে ঝাপসা জানালার পাশে একাকী জুবুথুবু হয়ে পড়ার মত একটি বই। পড়তে পড়তে বুকের মাঝে হু হু করে ওঠে। কি এক অসম্পূর্ণতা- অনিশ্চয়তা।
চিঠির তৈরী বই কিংবা বই এর মাঝে চিঠি ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় “আকাশের চিঠি”। চলে চারটি বছর ধরে। শেষটা আসে আঠারো বছর পরে। বিরহে আক্রান্ত একজন স্ত্রী- যাকে স্ত্রী না বলে বরং প্রেমিকা বললেই বেশি মানানসই হবে। প্রিয়তমের বিরহরোগে আক্রান্ত, সিক্ত এবং আহত। প্রতিনিয়তই তাঁর ব্যাথার আহাজারি । আমরা তখনও জানি না, কি হয়েছে তাঁর সঙ্গীর? লেখিকা নিজেও জানেন না। তবে তাঁর নীল কষ্টের ব্যাথার উপলব্দ্ধি হয়। অভিমানে গলার কাছে দলা পাকানো কান্না ঠেলে উঠে আসতে চায়। নিজের জীবনের অসমাপ্ত গল্পের কথা মনে পড়ে। আর রাগ হয়- প্রচন্ড রাগ। নীলের ওপরে রাগ। মনে হয় পুরুষ জাতটাই খারাপ- জঘন্য। এমন একজন মানুষকে কেমন করে কষ্ট দিয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যায়?
বিরহ ব্যাথার চিঠিগুলোতে উঠে আসে একাকী শীতল প্রবাস জীবন। শত ব্যাথা সত্বেও জীবিকার তাড়নায় কাজ করা। আর পরক্ষনেই মস্তিষ্কের কর্কট রোগের মত প্রিয়জনের দূরে চলে যাওয়ার বেদনায় অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা। কান্না, ক্ষোভ এবং অভিমানে জর্জরিত মনের ভেতরের সব কথা যা লিখে তো ফেলা যায় কিন্তু মুখ ফুটে বলা যায় না। আপন মাকেও না।
বইটিতে উঠে এসেছে উত্তর আমোরিকা তথা কানাডায় বসবাসরত বাঙালি মানুষের জীবনযাত্রার কিছু ছবি। নিসঃঙ্গ মানুষের বিশ্বস্ত সঙ্গী কুকুর উঠে এসেছে কয়েকবার। বলা হয়েছে সাধারন এবং অপরিচিত মানুষের মনুষ্যত্বের নিদর্শন।
বিরহবেদনার চিঠি একসময় সুসংবাদ বয়ে আনে। প্রিয়ার মনে ইঙ্গিত দেয় প্রকৃতি, জানতে পারি সে আছে- বেঁচে আছে- প্রতারক নয় সে, বরং ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার। সহানুভূতি এবং অপরাধবোধে আপ্লুত হয় মন। বিদেশি হৃদয়বান মানুষের সাক্ষাত মেলে। একজন এবং লক্ষ হাজারজন।সামান্য কিছু অমানুষের হিংস্রতার জবাব দিতে হাজার মানুষ তাদের দয়ালু হৃদয় নিয়ে হাজির হয়। তবু হিংস্রতাকে থামিয়ে রাখতে পারে না। এখানেই যুদ্ধ এবং তার ভয়াবহ ফলাফল সামনে এগিয়ে আসে। মানুষ মানুষ হত্যা করে। মানুষ আবার মানুষের জন্য কাঁদে। কি বিচিত্র এক প্রাণী - মানুষ।
পুরো বইটিতেই একাকীত্বের এক সৌরভ মাখানো। একলা থাকার মজা এবং যন্ত্রণা। তবে প্রথম ভাগের একলা থাকার সাথে দ্বিতীয় ভাগের একলা থাকার যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। সম্পূর্নতা এবং অসম্পূর্ণতার পার্থক্য। একজন হারিয়ে যাওয়া মানুষের বিরহ বেদনার অমানুষিক যন্ত্রনা এবং একজন মৃত সঙ্গির বেদনাবৃত শোক। দুটোই মানব চরিত্রের বিশেষ দুটি দিক পরিদর্শন করে। বিরহবেদনায় লেখিকা অপ্রকৃতিস্থ হয়েছিলেন- কিন্তু সঙ্গির মৃত্যুশোক তাকে শক্তিশালী করে তুলেছে। তিনি হয়েছেন একজন পরিপূর্ন মা।
আর বলব না। আর বললে আপনারা আর বই পড়তে চাইবেন না। আমার অনুরোধ প্লিজ পড়বেন। বিশেষ করে কানাডা যদি আপনার বাসা হয়, তবে অবশ্যই পড়বেন। হৃদয়বান এই লেখক কবি আমাদের কাছাকাছিই থাকেন। আমাদের নিজস্ব প্রাণের মানুষ। তাই বইটি পড়লে নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারবেন। বলা যায় না হয়ত একটি চমতকার সম্পর্ক স্থাপন হতেই পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:১০
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×