
সেপ্টেম্বর চৌদ্দ তারিখ লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে বই মেলা ও সংস্কৃতি উৎসব। অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ব্রিক লেন অবস্থিত রিপ্লেইনে অবস্থিত ব্র্যান্ডি সেন্টারে।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন শুরু হবে বেলা বারোটায়। সকালে উঠে তৈরি হয়ে নার্গিস আর আমি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম I ওর বাসা থেকে অনুষ্ঠানের পথ প্রায় আধ ঘন্টারI ব্রিকলেনের ব্রাডি আর্টস এন্ড কমিউনিটি সেন্টারে আমরা যখন পৌছালাম তখন উদ্বোধনী আয়োজন শুরু হচ্ছে I
অনুষ্ঠানের ব্যানার, বেলুন হাতে নিয়ে, সবাই অনুষ্ঠান ভেনুর সামনে রাস্তার উপরে দাঁড়ানো I ক্যামেরা নিয়ে অনেকে তৈরি, ছবি তোলার জন্যI আমি একপাশে দাঁড়িয়ে পড়লামI কিন্তু আমাকে ডেকে মাঝখানে ঢুকিয়ে নিলেন,পরিচিত কয়েকজন I
ছোট্ট উদ্বোধনী বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয় সংগীত গাওয়া শুরু হল I যে গানের সাথে শরীর রোমাঞ্চিত হয়I মনে আনন্দ হয় পৃথিবীর যেখানেই থাকি একটা দেশের সাথে সংযোগ স্থাপিত হয় I গভীর অনুভব তৈরি হয় I
প্রিয় জাতীয় সংগীত গাওয়া দিয়ে শুরু হল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান I একটা বিষয় খেয়াল করলাম যখন সবাই জাতীয় সংগীত গাইছিলেন, সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তায় অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে এবং সাইকেলে যেতে দাঁড়িয়েছিলেন সামনে। যদিও ভিনদেশী, ভিন্নভাসী মানুষ ছিলেন তারা, নিজের কাজে যাওয়া বাদ দিয়ে কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে শুনছিলেন, দেখছিলেন শান্ত হয়ে অথবা শ্রদ্ধা অবনত হয়েছিলেন, একটি দেশের জাতীয় সংগীত শুনে I বিষয়টা আমার খুব ভালো লেগেছিল ।

উদ্বোধনী শেষে হলের ভিতরে ঢুকে আমরা বইমেলার আয়োজনে, বইয়ের পসরা নিয়ে, লেখক প্রকাশক যারা বসেছেন পরিচয় করিয়ে দিলেন তাদের সাথে । আয়োজকরা আমাদের ঘুরিয়ে দেখালেন দেশ থেকে আসা প্রকাশক এবং লন্ডনের কবি লেখক যারা বসেছিলেন, বই নিয়ে তাদের সাথে।
কথা হলো লেখক প্রকাশকদের সাথে। আরো কিছুটা সময় বইয়ের সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই পর্ব কিছুটা দ্রুত সেরে লঞ্চের জন্য আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হল পাশের রুমে। দুপুর হয়ে গিয়েছিল এবং অনুষ্ঠানের শুরুর সময় কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল।
খাওয়ার পরে মূল অনুষ্ঠানের রুমে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো এবং সভাপতির উদ্বোধনী ভাষণের পরে, সম্পাদক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা শুরু করলেন। সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল, সম্পাদক উদয় শঙ্কর দুর্জয় দুজন মিলে অনুষ্ঠান উদ্বোধনীর ঘোষণার পরেই একে একে অতিথিকে ডেকে মঞ্চে উঠানো হলো।
কানাডা থেকে আরো কয়েকজন লেখকের যাওয়ার কথা শুনেছিলাম কিন্তু অন্য কাউকে পেলাম না। মঞ্চে আমার পাশে বসে ছিলেন মনট্রিয়াল থেকে যাওয়া আবুল হাসিব। তিনি আমার মত নতুন ছিলেন না আগেও লন্ডনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এসেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী শুভ্রদেব। ছিলেন লন্ডনের অভিবাসী একসময়ের বাংলাদেশের জার্নালিষ্ট লেখক শামীম আজাদ। অনেক বছর পর উনার সাথে দেখা হলো। দেশিয় সংস্কৃতির আর্ট এবং ফুলে ফুলে সাজানো সুন্দর মঞ্চটি ভরে উঠল গুণীজনে। মঞ্চে উপবিষ্ট সবাই ছোট ছোট শুভেচ্ছা বক্তব্য দিলেন।
বাংলাদেশীদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সময় দীর্ঘ। জীবন যাপন শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। মূলত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়েছিল। সাধারণ কাজ করার জন্য শ্রমিক হিসাবে। পরবর্তীতে কেউ কেউ কাজের খোঁজে চলে এসেছিলেন নিজ উদ্দোগে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী অভিবাসী সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের দীর্ঘ সময়ের অনুপাতে, অভিবাসী বাংলাদেশীদের নিজেদের সাহিত্য, সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার সময় খুবই ছোট। বইমেলা সংস্কৃতি উৎসব এর বয়স মাত্র ত্রয়োদশ। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বাংলাদেশীদের বেশিরভাগই এসেছেন সিলেট থেকে। বই আয়োজকদের বেশিরভাগও সিলেটি। তবে সিলেটিরা নিজেদের কব্জায় ধরে রাখেননি সারাদেশের বাংলাদেশীদের সংযুক্ত করেছেন এবং সবাইকে নিয়েই অনুষ্ঠান করছেন। আয়োজক এবারের সম্পাদক ছিলেন খুলনার উদয় শঙ্কর দুর্জয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজক অনেকের সাথে আমার সরাসরি পরিচয় না থাকলেও লেখালেখির মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল। তাদের সম্পাদিত, বইয়ে আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে অনেক আগে। যখন ফেসবুকে ছিল না। যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ইমেল এবং ওয়েব ম্যাগাজিন।
গত বছরের সম্পাদক ছিলেন এ কে এম আব্দুল্লাহ। তিনি গত বছর ইমেইল এবং মেসেজ দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
মঞ্চে উপবিষ্ট সবাই ছোট ছোট শুভেচ্ছা বক্তব্য দিলেন। প্রথম পর্বের এই অনুষ্ঠান চলে দীর্ঘ প্রায় তিন ঘন্টা। এ সময়ে গুনীজনঅনেকেই মঞ্চে আসেন,কথা বলেন,পুরস্কার দেওয়া হয় লন্ডনে অবস্থিত কিছু লেখক কবিকে। তারা আসেন পুরস্কার গ্রহণ করেন এবং তাদের বক্তব্য দেন।
এর মাঝে মাঝে মঞ্চে উপবিষ্ট এক একজনকে সম্মাননা দেওয়া হয় এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে বলা হয়। মঞ্চে শেষ পর্যন্ত অনেকেই আর থাকতে পারেননি। এই অনুষ্ঠানের শেষ পর্বটি ছিল নতুন প্রজন্মের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন।
লেখক জয়নব চৌধুরির মাই জার্নি থ্রু কেলি প্রাইমারি এবং ইউসুফ আব্দুর রহমানের, ইউসুফ'স ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ডস এ দুজন লেখককে শিশু লেখক বলা যায়, এখনো তারা কিশোর বয়স পার করেনি। তাদের লেখা ছিল ইংরেজিতে নতুন প্রজন্মের লেখালেখিতে আসার ব্যাপারে, তাদের বাবা মায়ের উৎসাহ অবদান অনেক। হল ভর্তি ছিল দর্শক এবং দর্শকরা নতুন প্রজন্মের লেখকদের অনুষ্ঠান পর্বটি আগ্রহভরে উপভোগ করেন।

দীর্ঘ সময় ধরে দর্শকের সামনে মঞ্চে বসে থাকা আমার জন্য একটা বিব্রতকর বিষয় ছিল। লেখালেখির মাধ্যমে আমি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি বেশি। দর্শকের সামনে হয়তো কবিতা পড়লাম দু চার মিনিট এটুকু সময়ই যথেষ্ট। কিন্তু আয়োজকরা আমাকে মঞ্চে বসিয়ে রাখলেন হঠাৎ করে দেখি আমার নাম,ডাকা হচ্ছে,সম্মাননা দেয়ার জন্য যা আমার ভাবনার একদমই বাইরে ছিল।
এটিএম আব্দুল্লাহ সাবেক সভাপতি আমাকে কেষ্ট হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আসলেন। সাথে আসলেন, নজরুল ইসলাম মিন্টু। ভালো লাগলো তাদের এই সম্মাননা ভালোবাসা গ্রহণ করে ।
দেশ-বিদেশ পত্রিকার সম্পাদক কানাডা থেকে আসা নজরুল ইসলাম মিন্টুকে দেখে ভালো লাগলো। দীর্ঘ সময় মঞ্চে বসে থাকার পর অবশেষে নেমে আসলাম দর্শকের মাঝে।
এ সময় আমার সাথে দেখা করতে আমার কিছু প্রিয়জন আসলে, তাদের সাথে কথা বলে সময়টা ভালই কাটল। অনুষ্ঠানের তিনটি রুম মোটামুটি মানুষ ভর্তি কিচেনে খাওয়ার দাবার বিক্রি হচ্ছে। তার পাশে বই বিক্রি হচ্ছে গল্প আড্ডা হচ্ছে ছবি তোলা হচ্ছে। অনেকে বলছিলেন এবারের অনুষ্ঠানের জায়গাটি ছোট হয়েছে। এর আগে বড় জায়গায় অনুষ্ঠান হয়েছে। সে যাই হোক আমার কাছে মনে হলো মানুষের সমাগম অনুযায়ী জায়গাটি ঠিকই ছিল।
এ সময় কিছু সুহৃদ চা এবং খাবার দাবার নাস্তা নিয়ে আসলেন। কেউ আবার এসে জানালেন আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু আপনি ছিলেন না অন্যরা নিয়ে গেল। ভালো লাগলো তাদের এই আন্তরিকতা। অনেকেই নিজে থেকে আলাপ করলেন এবং অবশ্যই সবার সাথে ছবি উঠানো ছিল অবশ্য করণীয় একটি বিষয়।
বিদেশি কয়েকজন মানুষ হলে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাদের সাথে কথা হলো তারা লেখালেখি করেন এবং নিজেদের কবিতা পড়লেন বেশ অনেকটা সময় জুড়ে তাদের কবিতা পড়ার পর্বটি চললো। একজন কবি বাংলাদেশে ছিলেন অনেকদিন। ওর লেখা কবিতায় বাংলাদেশের কথা শুনতে ভালো লাগল।
পরের পর্বের জন্য আবার মঞ্চে উঠে বসে থাকার জন্য, উদয় শংকর দুর্জয় এসে কানে কানে বলে গেল। কিন্তু মঞ্চে এই চেহারা দেখানোর কাজটা থেকে আমি পাশ কাটিয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ ধরে,মঞ্চে বসে চেহারা দেখানো হয়েছে আর নয়। বরঞ্চ সেই সময়টা ঘুরে ঘুরে মানুষের সাথে পরিচিত হলাম। বইপত্র দেখলাম এবং কবিদের কবিতা পাঠ দর্শকের সারিতে বসে শুনলাম।
পরবর্তী অনুষ্ঠান লন্ডন শহরের বাইরের শহরগুলো থেকে আসা কবিদের কবিতা পাঠ। বিভিন্ন কবিদের লেখা ভাবনার সাথে পরিচিত হলাম। মানুষের ভাবনার বৈচিত্র কত রকমের হতে পারে এবং কবিতায় সেটা প্রকাশ করার ক্ষমতা এক একজনের একেক রকম। বিভিন্ন কবিদের ভাবনা বৈচিত্রের অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় পেলাম তাদের কবিতা শোনার মাধ্যমে।
জমজমাট আনন্দ অনুষ্ঠান প্রত্যেকেই উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠান এমনটাই মনে হলো। নয়তো শুধু বসে থাকার কোন কারণ ছিল না।
পরিচয় হলো অনেকের সাথে নতুন করে। সরাসরি সাক্ষাতে চেনা হলো ভার্চুয়াল লেখার মাধ্যমে যাদের সাথে পরিচয় ছিল। ভালো লাগলো দেখে সুন্দর দেশের ঐতিহ্যের নানা শিল্পকর্ম আঁকা এবং বাংলা লেখা নীলাভ শাড়ি পরে, ঘুরছিলেন একঝাঁক নারী কর্মী। তদারকি করছিলেন বিভিন্ন বিষয়।
বিভিন্ন সময়ে সংসদে বাংলাদেশী কাউন্সিলর সদস্য যারা ছিলেন তাদের দু একজন এসেছিলেন। তাদের সাথে পরিচয় হলো। তবে সবচেয়ে মনে হলো বইমেলায় অনুষ্ঠানে বই বিক্রি খুব নেই। বই কেনার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল না মানুষের। পরিচিতদের ধরে এনে বিক্রি করা হচ্ছিল নিজেদের বই। বইয়ের প্রতি বাংলাদেশিদের আগ্রহ এত কম কেন, এটা উদ্বিগ্নতার বিষয়।
রাত হয়ে গেলো প্রথমদিনের অনুষ্ঠান শেষ হতে। মানুষের সমাগম বেশ ছিল শেষ পর্যন্ত । তবে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে দ্রুতই সবাই বেরিয়ে পড়লেন। আমাকে শাহ আলম বাসায় পৌঁছে দিবেন। তিনি বেশ দূরে গাড়ি পার্ক করেছেন। গাড়ি আনতে গিয়েছেন তাই আমরা কয়েকজন মিলে ভিতরে অপেক্ষা করছিলাম।
সেই সময় দেখলাম বাঙ্গালীদের পরিচ্ছন্নতার একটা রূপ । খাওয়া-দাওয়া করে ডাস্টবিনে না ফেলে টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাপ প্লেট রেখে চলে গেছেন। লন্ডন শহরের মত জায়গায় থেকেও যারা প্রতিদিন নিজের ঘর অফিস, নিয়মমাফিক পরিচ্ছন্ন রাখতে বাধ্য হন। তারা এই অনুষ্ঠানে বাঙালিপনা দেখিয়ে খাওয়া দাওয়া করে প্লেট রেখে ঠিক চলে গেছেন। বাঙালিদের এই স্বভাবটা সব জায়গাতেই একই রকম।
উদয় এবং দু-একটি ছেলে গার্বেজ ব্যাগে সেই উচ্ছিষ্ট কাপ প্লেট ভরে পরিচ্ছন্ন করছিল।
বিদেশে অনুষ্ঠান করতে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ সব একাই সামলাতে হয়। এক সময় আমিও কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজনের সাথে ছিলাম সংগঠক হিসাবে। যে রাধে সে চুলও বাঁধের মতন চেয়ার সাজানো, স্টেজ তৈরি করা থেকে সেজে এসে কবিতা পড়া। থেকে গাড়ি দিয়ে একে তাকে নিয়ে আসা। অনুষ্ঠানের জিনিসপত্র টানাটানি সব কিছু দুচারজন মিলেই সামলাতে হতো। সাথে পাওনা ছিল মানুষের সমালোচনা।
আমরা কয়েকজন মিলে শাহ আলমের গাড়িতে চড়ে রওনা হলাম। খুবই সজ্জন ব্যাক্তি এই শাহ আলম আমাদের কয়েকজনকে বাড়ি বাড়ি নামিয়ে দিয়ে নিজের বাড়িতে গেলেন। পথের পুরোটা সময় অনুষ্ঠান বিষয়ক আলোচনায়, আমাদের সময় ভালোই কাটল।
পরের দিন পনের সেপ্টেম্বর সোমবার অনুষ্ঠান দুপুরের পরেই শুরু হলো।
আমি যার বাসায় ছিলাম সে কাজে গিয়েছে। ওর কাজ থেকে ফিরে আসার পরই আমরা রওনা দিলাম। সেদিন আমাদের আর উবারে যেতে হলো না। নার্গিসের ছেলে আমাদের নামিয়ে দিল।
অনুষ্ঠানের গ্যালারি সে সময় ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ দর্শকে। প্রচুর মানুষ ভিতরেও বাইরে। কোথাও কোন চেয়ার খালি নেই দর্শকের সারিতে। আমাকে দেখে কয়েকজন চেয়ার ম্যানেজ করে বসতে দিলেন। মঞ্চে তখন চলছিল কবিদের কবিতা পাঠ। এক সময় আমাকেও কবিতা পড়তে ডাকা হলো। ছোট ছোট কয়েকটি কবিতা পড়লাম নিজের লেখা।
কয়েকজন এগিয়ে এসে বললেন কবিতা ভালোলেগেছে। যা ভালোলাগা দিল। আমার পরে আরো কয়েকজন কবির কবিতা পাঠের পরই সেদিনের এবং অনুষ্ঠানের শেষ আকর্ষন পর্ব ছিল গায়ক শুভ্র দেবের গান। শ্রোতারা অনেকক্ষণ থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তরুন সময়ের উন্মাদনা শুভ্রদেবের গান শোনার জন্য। যারা ভক্তছিলেন সেই তারুণ্যের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
শুভ্রদেবের গান আশির দশকে রেডিওতে, কেসেটে প্রচুর শুনলেও ওর সামনা সামনি পারফরম্যান্স আমার কখনো দেখা হয়নি। সে সময় পাশাপাশি তিনজন গায়ক একই সমান্তরালে ছিলেন ভালোলাগার। কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, শুভ্র দেব। অন্য দুজনের সাথে দেখা হলেও শুভ্র দেবের সাথে দেখা হলে লন্ডনের অনুষ্ঠানে।
আগের দিন মঞ্চে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ এক সাথে। সে সময় উনার কথা শুনেছিলাম গানের আগে। ভালো লেগেছিল উনার শুভেচ্ছাবার্তা।
আজ পুরো একটা সময় শুধু উনার জন্যই রাখা আছে সংস্কৃতির অংশতে উনি থাকছেন।
কিছুটা সময় মঞ্চ ঠিক করার জন্য নেয়া হলো। এরপর মঞ্চে এলেন জনপ্রিয় গায়ক শুভ্রদেব। গান শুধু নয় কথায় এবং গল্পে তিনি পুরো সময় মাতিয়ে রাখলেন দর্শকদের।
সদ্য প্রয়াত ফরিদা পারভিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গাইলেন লালন গীতি। এই নাকি প্রথম গাইলেন লালন গীতি। এবং সরাসরি শোনার সৌভাগ্য হলো আমার। গাইলেন রবীন্দ্র সংগীত। আধুনিক জনপ্রিয় গানের সাথে সিলেটি আঞ্চলিক গানও করলেন যথেষ্ট সুন্দর উচ্চারণে। জীবনের অনেক গুলো স্মৃতি কথার সাথে তার গাওয়া গান গুলো শুনতে ভালো লাগছিল।
শেষে অনেকেই নাচতেও শুরু করলেন গানের সাথে। তিনিও নেমে এলেন মঞ্চ থেকে দর্শকের মাঝে।
বেশ জমজমাট অবস্থার মাঝেই শেষ গানটি গেয়ে শেষ করলেন উনার অনুষ্ঠান। সাথেই শেষ হলো দুদিন ব্যাপী বইমেলা এবং সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
গান শেষ হতেই গায়কের কাছে যাওয়ার জন্য অস্থির দর্শক। উনাকে ঘিরে চলছে ছবি উঠানোর পালা।
উনি দর্শকের ভিড় থেকে বেরিয়ে এলে উনার হাতে তুলে দিলাম আমার একটা বই।
ভাঙ্গল মিলন, মেলা ভাঙ্গল সবার বাড়ি ফিরার তাড়া। আমি অনুষ্ঠান কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলে একজন বললেন, আপনাকে খুঁজছি । আপনার বই বিক্রি হয়েছে এইযে পাউণ্ড। আর কিছু বই রয়ে গেছে, এই যে ব্যাগে। সব কিছু নিয়ে সবার কছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম হল থেকে।
আমরা গতকালকের কয়েকজন মিলে আবার এক সাথে যাত্রা করব। শাহ আলম গাড়ির জন্য গিয়েছেন, আমরা গল্প করছি আর বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। এ সময় হঠাৎ উদয় এসে বলল, আপা আপনার বই একটা দেন। শুভ্র দেবকে যে বইটা দিয়েছিলেন সেটা কাউকে রাখতে দিয়েছিল নিয়ে চলে গেছে মনে হয়।
চলে যেতে গিয়ে ও হঠাৎ করেই মনে করেছে, একটা বই যে আমাকে দিয়েছিলেন, একজন আপা। একজনকে রাখতে দিয়েছিলাম। বইটা নিতে আমাকে পাঠিয়েছে। তাকে তো আর পাচ্ছি না।
আমি আরেকটা বই বের করে দিলাম ব্যাগ থেকে। বাঙালি চরিত্রর আরেকটি পরিচয় পেলাম শেষ মূহুর্তে। অন্যের জিনিস নিজের মনে করে নিয়ে যেতে কোন দ্বিধা হয় না। হয় তো বইটা পড়বেও না।
তবে ভালোলাগল যে শুভ্র দেব, বইটা সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছে। হারিয়ে ফেলতে চায়নি। এত ভিড়ের ভিতর হাতে তুলে দেয়া বইটার কথা ও ঠিক মনে রেখেছিল। ও বলেছিল আমি যখন প্রথম অনুষ্ঠান করতে শুরু করি। স্টুডিওতে যে ছেলেটা আমাকে এক কাপ চা খাওয়াত এনে আমি তাকেও মনে রাখি। আমার ছোটখাট অনেক ঘটনা অনেকের কথা মনে থাকে। ওর কথার সত্যতার প্রমান যেন সাথে সাথেই পেলাম।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন এবং দুদিনের অনুষ্ঠান উজ্জাপন শেষ হলো। নতুন চেনা বন্ধুদের সাথে আমরা আবার গল্পে গল্পে বাড়ির উদ্দেশ্যে পথে নামলাম । লন্ডনের রাতের আকাশ ছিল সুন্দর এবং মেঘহীন মৃদু বাতাসে ছিল উষ্ণতামাখা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



