আমাদের স্কুলে একটা পুকুর ছিল। পুকুরের জল পরিষ্কার ছিল। আমি সাঁতার পারতাম না, তাই কেবল সেই জলে পা ডুবিয়ে রাখতাম। স্কুল ছেড়ে আসার পূর্বে এক বন্ধুর সঙ্গে পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে গল্প গল্প করতে করতে বললাম, তোর সঙ্গে প্রতি মাসে একবার দেখা করব। ছোট্ট কতগুলো মাছ তখন কুট করে পায়ে কামড় বসিয়ে কই জানি চলে গেল। কলেজ জীবনের দু বছর পাখা লাগিয়ে উড়ে গিয়ে অথবা ইঞ্জিন লাগিয়ে ছুটে চলে চোখের পলকে শেষ হয়ে গেলে বিস্মিত হয়ে দেখতে পাই, বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে মাত্র পাঁচবার। অর্নাস জীবন শুরু করার আগে আবার সেই পুকুর পাড়ে আড্ডা দিতে গিয়ে খেয়াল করি, গল্পগুলো সব আগের মতোই আছে--খেলার গল্প, মাঠের গল্প, হাটের গল্প, মেয়ের গল্প, আকাশের গল্প, নীলের গল্প, মেঘের গল্প;কেবল পুকুরের জল ঘোলা হয়ে গেছে। এবার বলি, আবার বলি, বন্ধু নিশ্চয় দেখা হবে, অনেকবার দেখা হবে, বারবার দেখা হবে, জলঘেষা আড্ডা হবে; সেই আড্ডায় হয়ত কাউকে জোনাকির মালা পড়িয়ে দিয়ে, ব্যাকগ্রাউন্ডে সঙ্গীত বাজিয়ে ছোট্ট করে একটা নাচ হয়ে যাবে।
কলেজ জীবনের শেষে যখন ফেসবুকে অন্য আড্ডায়, অন্যভাবে ব্যস্ত তখন বন্ধুর বিয়ের ছবি আপলোড করতে দেখে, অভিনন্দন জানাই আর বলি হারামি খাওয়াবি কবে? অথচ একদিন তার বাড়ি গিয়ে স্ব-ইচ্ছায় হুট করে খেয়ে চলে আসতাম, অথচ একদিন তার ব্যাগ পকেটে রাখা টাকা দিয়ে না বলে ফুচকা খেয়ে দাঁত বের করে একচোট হেসে নিতাম।
তারপর একদিন ভার্সিটি জীবনের শুরুতে সেই স্কুলে ফিরে গেলে তন্য তন্য করে কোনো পুকুর খুঁজে পাই না, মাঠ খুঁজে পাই না, এক চিলতে নীল আকাশ খুঁজে পাই না। তখন স্কুলের বুড়ো দারোয়ান লাঠি হাতে নিয়ে হেসে বলে, কিছু খুঁজো মা ? এখন তো স্কুল টাইমের পর কেউ গল্প করে না।
এরপর বাড়ি ফিরে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে বলি, ছেলেপেলে আজ বড্ড যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে।
---
তখন আমি ও ছেলেটি চুপ করে বসে থাকি। কেননা, আমরা জানি, এভাবেই পুকুরের জল শুকিয়ে যায়, এভাবেই আকাশের নীল হারিয়ে যায় আর হ্যা, কিছু মনে পড়লে আমরা বড় জোর এভাবেই ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেই।
তবুও মন টা ওখানেই পরে থাকে .........

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




