চায়নাতে লেখাপড়া করছি বিগত একবছর ধরে। যতটুকু বুঝলাম তারা নিজের দেশ নিয়ে খুবই অহংকারী।
একদিন চাইনিজ টিচার নিজের দেশে এই আছে সেই আছে, আমার দেশ এমন তেমন বলতে বলতে হঠাত তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠলো, " তোমার বাংলাদেশে কি আছে? নাম কেউ শুনেছে এই দেশের? "
ব্যাপারটা আসলেই ভেবে দেখার মতো। আসলেই আমার দেশে কি আছে? নিজের উপর অভিমান নিয়েই আমি মাথা নিচু করে বলা শুরু করলাম,
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্মস্থান। আমার বাংলা ভাষা পৃথিবীতে ৪র্থ। পৃথিবীতে ভাষার জন্যে আপনার দেশ প্রাণ দেয়নি, দিয়েছে "বাংলাদেশ" নামে ছোট্ট একটা দেশের মানুষ।
মাইক্রো-ক্রেডিট সিস্টেমের জন্মস্থান আমার বাংলাদেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষনীয় সংসদ ভবন আমার দেশে আছে। পৃথিবীর ১১তম বৃহত্তম সেতু আমার দেশে অবস্থিত।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শীপ-ব্রেকিং ইয়ার্ড আমার দেশে আছে। পৃথিবীর একমাত্র বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত আমার দেশে অবস্থিত। পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন আমার দেশেই আছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমার দেশের সম্পদ। ঋতুবৈচিত্রে আমার দেশ সেরা।
বাংলাদেশ, আইটি সেক্টরে অনেক এগিয়ে গেছে। গ্যাস, কয়লা সহ অসংখ্য খনিজ সম্পদের ভান্ডার আমার দেশ। গার্মেন্টস সেক্টরে আমার দেশ দ্বিতীয়।
আমরা অসীম সাহসের সাথে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমার দেশের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়েও পৃথিবীর ১১তম সুখী দেশ হিসেবে পরিগণিত হই। ওয়াট এলস ডু ইউ নীড?
আমি মাথা তুলে দাঁড়াই। টিচারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলি, " আমার দেশ নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না স্যার। আমরা ভালোই আছি। আপনি নিজের দেশ বাঁচান। "
স্যারের চেহারা দেখে খুব মায়া হলো। ছোট চোখগুলো আর ছোট হয়ে গেল। তিনি লজ্জিত বোঝা গেল।
আমার জন্যে এতটুকুই যথেষ্ঠ।