somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একচিলতে নিশ্চিন্ত মৃত্যু!

২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

((১))

-এক্সকিউজ মি, আমি একটু বেরুব।
-ওহ! শ্যুর।
বলেই বিমানের উইনডো সিটের যাত্রিকে পথ ছেড়ে দিতে ছেলেটি তার আসন ছেড়ে উঠে আসে। অনেকটা ঘোরের মাঝেই। বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল ছেলেটি । ঘুমের মধ্যে ঠোঁট গড়িয়ে লালা পরনের নীল-সাদা স্ট্রাইপড শার্টের ডান কাঁধের কিছুটা ভিজিয়ে দিয়েছে। ব্যপারটা বরাবরই এমবারাসিং। চারপাশে একবার দেখে নিশ্চিত হয়ে নেয় আশেপাশের যাত্রীরা সেটা খেয়াল করেনি, অথবা কেউ না কেউ আগেই জিনিসটা খেয়াল করে মুচকি হেসেছে বা নাক সিঁটকেছে।

-ঘুমোচ্ছিলেন?
-না, স্বপ্ন দেখছিলাম।
-ফ্লাইটে অনেকের ঘুমই আসেনা আর আপনি দিব্যি স্বপ্ন দেখছিলেন! আচ্ছা কি স্বপ্নে দেখছিলেন?
কি যেন দেখছিলাম, উমমম.......। হলি ** (এই দুইটা তারকা ছেলেটি মুখে উচ্চারণ করেনা), সত্যি হল আমি খুবই খারাপ একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। এবং থ্যাংকস.....
-থ্যাংকস কেন?
-দুঃস্বপ্নের বাকিটা দেখার আগে আপনি আমার ঘুম ভাংগিয়ে দিয়েছেন বলে।
-তাহলেতো আপনি শুধু স্বপ্নই দেখেছেন, আপনার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে আর পারল কই।
-আমার স্বপ্নটার শুরু দেখেই শেষের পরিণতি নির্ধারণ করে নেওয়া যায়।
-দেখি আমাকে এমন একটা ঘটনা বলুন যেটা শুরু দেখেই শেষটা নিশ্চিত হওয়া যায়।
-একশ ভাগ নিশানা ঠিক রেখে কোন স্নাইপার যদি স্থির আমাকে এক মাইল দূর থেকে গুলি ছোঁড়ে তাহলে তার ৪.৫ সেকেন্ড পরে আমার মাথাটা জুস হয়ে যাবে। এই সাড়ে চার সেকেন্ডের হয়তো আমার কাছে কোন গুরুত্বই ছিলনা, তবে যে গুলি ছুঁড়েছে সে তো ঐ সময়টা আমার মৃত্যুর জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করেছিল, কারণ সে জানত তার আঙ্গুলে ট্রিগার টানার সাড়ে চার সেকেন্ড পরে আমার মৃত্যু হবেই।
-হাউ ডিসগাস্টিং! আকাশে উড়তে উড়তে এসব মৃত্যুর কথা না বললে হত না। যাক, কি দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন সেটা এবার বলুন।
-নাহ, থাক সে কথা। না হয় নিরাপদ ল্যান্ডিং এর পর বলা যাবে।




((২))

এতক্ষণ পাশাপাশি দুই বিমানযাত্রীর কথা হচ্ছিল। উপরে উল্লেখ না করলেও আপনারা বুঝে গিয়েছেন এর একজন ছিল মেয়ে আর একজন ছেলে। বিপরীত লিংগ বলেই হয়তো তাদের কথোপকথন এখনো চলছে। কখনো থেমে থেমে, কখনো কোন একজন, কোন একটা বিষয়ে অতি উৎসাহী হয়ে। মাঝে মেয়েটা অনেক্ষণ তার জানালার বাইরে তাকিয়ে কি যেন দেখতেছিল। চৌত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতায় দেখার মত কিছুই নেই, যেমনটা হাইওয়ের বাসের কিংবা ট্রেনের জানালায় দেখা যায়। তবুও মেয়েটা অধীর আগ্রহ নিয়ে তার জানালা থেকে লাফ দেওয়া দূরত্বে প্লেনের বাম পাখাটার দিকে টাকিয়ে থাকে। পাখাটা মাঝে মাঝে দুলে দুলে উঠছে। তাতে অনেকগুলো অংশ। এক একটা অংশ লাইন করা স্ক্রু দিয়ে আটকানো। আবার পাখার পেচনের দিকে লিখা, "নো স্টেপ"। নিশ্চয় এগুলো খুব সেনসিটিভ তাই হয়তো ওপাশটায় পা না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই ইনস্ট্রাকশনটা হয়তো ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য, যারা এগুলো বানায় বা মেরামত করে। সাধারণ মানুষ কখনো প্লেনের পাখায় উঠার সুযোগ পেলে বা পাখায় চড়তে হলে তখন কি তাদের এত সব 'নো স্টেপ' লিখা চোখে পড়বে?!

এরপর হঠাৎ মেয়েটি যা দেখল যেন নিজেকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারল না। একবার ভাবল পাশের জনকে ডেকে দেখাবে কিন্তু ছেলেটি আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে। মুখ দেখে বোঝা যায় একটু আগে সে খুব খারাপ একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে যার রেশ এখনো তার মাঝে আছে। কিন্তু মেয়েটা এখন যা দেখল সেটা তো বাস্তব, সে ঠিক বুঝতে পারছে না কি করবে।

-আচ্ছা, ফ্লাইট ক্র্যাশ করার আগে কি ককপিট থেকে যাত্রিদের জানানো হয়? মেয়েটি প্রশ্ন করে-
-আমি ঠিক জানিনা, কোনদিন এমন সিচ্যুয়েসনে পড়িনি। এমন প্রশন কেন করলেন বলুনতো?
-নাহ, এমনিটেই।
-আপনাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে, খুবই চিন্তিত।
-আপনাকেও ঠিক আমার মত দেখাচ্ছে, আচ্ছা আপনার দুঃস্বপ্নটা কি নিয়ে ছিল?
-আগে বলুন আপনি কি ভাবছেন?

এর মাঝে বিমানটি একটু একটু দুলতে শুরু করেছে, আর কেঁপে কেঁপে চলছে। কেবিনের বাতাস কেমন যেন ভারী হয়ে আসছে। অন্য যাত্রীদের মাঝেও কেমন যেন একটা আতংকিত ভাব, কেবিন ক্রুদের ব্যস্ততা।

আচ্ছা, অবস্থা যদি খুবই খারাপ হয় তাহলে কি আমাদের কিছুই করার থাকবে না? মেয়েটি জিজ্ঞেস করে-
-প্রথমত, না। তারপরেও কিছু করতে মন চাইলে, হ্যাঁ।
-এটা আবার কেমন?
-মনে করেন ফ্লাইট সত্যি যদি ক্র্যাশ করে তাহলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না, আর করতে চাইলে এটুকুই করতে পারেন, প্রার্থনা।
-প্রার্থনা মানে কি বেঁচে থাকার প্রার্থনা নাকি শান্তিতে মৃত্যুর প্রার্থনা!
-যদি কোন সিচ্যুয়েসন সত্যি তৈরি হয় তাহলে ক্যাপ্টেনরা যাত্রীদের, এয়ারক্রাফ্ট এবং তাদের নিজেদের বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবেন। যদি শেষ রক্ষা না হয় তবে আমাদের শান্তিতে মরাটা অন্তঃত তারা নিশ্চিত করবেন।
-ওহ, তাহলে শান্তিতে বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে মরার জন্যই শেষ বেলায় অক্সিজেন মাস্ক গুলো নেমে আসবে।
-ঐ যে বলেছিলাম, শান্তিতে মৃত্যুটা নিশ্চিত হবে।




((৩))

প্লেনের পাখার পেছনের দিকটায়, যেখানে নো স্টেপ লিখা আছে, ঠিক তার পরে একটা অংশের কয়েকটা স্ক্রু আলগা হয়ে আসে। একসময় পাখার ঐ অংশটা আকাশেই খুলে পড়ে। প্লেনের একটানা কম্পন, দুলুনি। -ঠিক এমনটাই ছিল ছেলেটার দুঃস্বপ্নের প্রথম অংশ আর মেয়েটার বাস্তবে দেখা।

এর ঠিক পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর টেলিভিশনে, ইন্টারনেটে ব্রেকিং নিউজ-
"২৪৫ জন যাত্রি নিয়ে অমুক এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সাগরে বিদ্ধস্থ, সব যাত্রী ও ক্রু নিখোঁজ"

আসলে ব্যপারটা ছিল ২৪৫ জন যাত্রীর একচিলতে নিশ্চিন্ত মৃত্যু!
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×