somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি পরকীয়া প্রেমের গল্প।

১৫ ই জুন, ২০১২ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

".....হ্যালো জান, কি কর?"
....এইতো কিছু না।
....তোমাকে ভীষন মিস করছি। কাল ভোরেই পৌছে যাবো। তোমাকে দেখার জন্য আমিতো একেবারে পাগল হয়ে আছি.....
তৃপ্তি আনমনাভাবে কথাগুলো শুনতে থাকে। মাঝেমধ্যে একটু হুঁ-হাঁ করে। অভিনয় আজকাল সে ভালোই পারে। মনে মনে একটু হাসি পায় তার, তাতে দু্ঃখ মেশানো। ফোন রেখে একদৃষ্টিতে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে জল ঝরছে। নিজের চেহারাটা নিজের কাছেই বড্ড অচেনা মনে হয়। "তৃপ্তি! তুই তো এমন ছিলি না! কেন করছিস তুই এসব? বন্ধ কর----আয়নার ভেতরের প্রতিবিম্বটা যেন ধিক্কার দিতে থাকে তাকে।
..........................................

স্বপন তৃপ্তির হাতদুটো নিজের হাতে নিয়ে একনাগাড়ে বকবক করে চলেছে। সিঙ্গাপুরে গিয়ে এত মানুষের মধ্যে থেকেও সে তৃপ্তিকে কতটা মিস করেছে, কি কি গিফট কিনেছে এসব। তৃপ্তির এসবে মন নেই। সে একবার নিজের হাতদুটোর দিকে তাকায়। কেমন নির্জীব হয়ে পড়ে আছে! তার দৃষ্টি যায় স্বপনের চেহারার দিকে। কেমন যেন এক ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠে। হাত ছাড়িয়ে নিতে চায় তবু তার হাত যেন মনের সাথে সাড়া দেয় না। স্বপন হঠাৎই তৃপ্তিকে বুকে টেনে নেয়। বুকভরে একবার নিঃশ্বাস নেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় তৃপ্তি, বাতাসটাও যেন বিষাক্ত হয়ে আছে। স্বপন দীর্ঘ চুমু খায় কিন্তু সেখানেও তৃপ্তি অনুপস্থিত। প্রিয়তমাকে কাছে পাবার উত্তেজনায় স্বপনের চোখ এড়িয়ে যায় এই অনীহাগুলো। তাছাড়া সে জানে, তৃপ্তি বরাবর এমনই-শান্ত, চুপচাপ। কিছুটা ধাতস্থ স্বপন তৃপ্তিকে আলিঙ্গন থেকে মুক্তি দেয়। মেয়েটার চোখে একটা বিষন্নতা, যা কখনই মোছে না। তবু ঐ চাহনীতে কী যেন আছে, স্বপন অনেক দেখেও চোখ ফেরাতে পারে না।
----------------------------------------------

বিকালবেলা অফিস থেকে ফিরেই অনুপ হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়ে।
"....উফ! কাজের এত চাপ অফিসে! সরি তৃপ্তি, আজ তোমাকে একবারও কল দিতে পারিনি। তুমি নিশ্চয়ই ঘরে বসে বসে বোর হয়ে গেছ।"
তৃপ্তি কিছু বলছেনা দেখে অনুপ আবার বললো,
"...ঠিক আছে। এই উইকএন্ড-এ আমরা মুভি দেখতে যাবো একসাথে, কেমন?"
একটুখানি মাথা দুলিয়ে তৃপ্তি সায় দেয়। আসার পর থেকে সে অনুপের মুখের দিকে তাকিয়েই আছে। চোখ সরায় না এক মুহুর্তের জন্যেও। অনুপ না তাকিয়েও বুঝতা পারে তৃপ্তি তাকে দেখছে। অনুপ কিছুটে অস্বস্তি বোধ করে। কিন্তু এই দৃষ্টির মানে সে বুঝতে পারে না।
"কি এত দেখে মেয়েটা?"
অনুপ প্রায়ই লক্ষ্য করে বিষয়টা। তৃপ্তি কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে, যেন অনুপ একটা অচেনা মানুষ! তবে একটা সময় ছিল, যখন তৃপ্তির চোখের সামান্য পলকটুকুর অর্থও অনুপ ধরতে পারতো। তিন বছরের সংসার ওদের। এমন লক্ষী বউ সবার কপালে জোটে না। অনুপ পেয়েছে। চোখ বন্ধ করে একমুহুর্তের জন্য সে তৃপ্তির হাসিমুখ মনে করার চেষ্টা করে।
কই, মনে পড়ছে না তো! আশ্চর্য্য! হঠাৎই আবিষ্কার হয় গত ছয়মাসে তৃপ্তিকে সে একবারও প্রাণখুলে হাসতে দেখেনি। অবাক ব্যাপার তো! তবুও অনুপ চেষ্টা করে। হঠাৎই একটা হাসিমুখ তার চোখের সামনে ভেসে উঠে।
----------------------------------------------

"লীনা!!
অনুপের ছোটবেলার ভালোবাসা। লীনাকে কখনোই বলা হয়নি মনের কথা। কোনদিন সাহস করে বলা হয়নি "ভালোবাসি"। স্কুল ছাড়িয়ে কলেজ জীবনে পা দেয়ার সময়েই লীনা হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে। কয়েকটা বছর কী যে হাহাকার করে কেটেছে তার! তারপর জীবনে আসে তৃপ্তি। তৃপ্তিকে ভালো সে কখনোই বাসেনি সে লীনার মতন করে, কিন্তু মেয়েটাকে কেন যেন জীবনের সাথে জড়িয়ে নেয় সে। ওকে ভালোবাসতে শেখায়। তার কাছ থেকেই তৃপ্তি শেখে- ভালোবাসা কি?

তৃপ্তিকে নিয়ে ভালোই কাটছিল জীবন। নাইবা হল ভালোবাসা, তৃপ্তি তো তাকে ভালোবেসেছে খাঁটি। তৃপ্তির সেই নিষ্পাপ ভালোবাসার সামনে ওকে কখনোই বলা হয়নি "ভালোবাসিনা"। অবুঝ মেয়েটা যে কিছুতেই তা মেনে নিতে পারতো না। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া লীনা যে আবার হঠাৎই তার জীবনে ফিরে আসবে তা কি অনুপ জানতো?!!!
তারপর যখন লীনা একদিন তাকেজড়িয়ে ধরে কান্নায় বলে সেও অনুপকে সেই স্কুল থেকে ভালোবাসে, তারপর কি আর স্থির থাকা যায়?

অনুপের সমস্ত দুনিয়া ওলট পালট হয়ে যায়। না, লীনাকে সে হারাতে পারবে না। কিছুতেই না। লীনাও মেনে নেয় এই পরকীয়া সম্পর্ক। অবশ্য অনুপের মতে এটা পরকীয়া নয়। লীনা তার প্রথম ভালোবাসা, তৃপ্তি দ্বিতীয়।

অনুপ চোখ মেলে ছাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফ্যানটা সর্বশক্তি দিয়ে ঘুরছে। সেই সাথে অনুপের ভাবলাগুলোও কেমন যেন ঘুরতে থাকে। লীনা আর তৃপ্তি- এই দুজনের একজনও কম গুরুত্বপুর্ণ না তার জীবনে। লীনাকে সে ছাড়তে পারবে না, আবার তৃপ্তিকেও সে হারাতে পারবে না। আচমকা সবকিছু বড় নীরব মনে হয়।

তৃপ্তিকে কিছু একটা বলবে বলে ঘাড় ফেরাতেই দেখে তৃপ্তি ঠান্ডা জলের গ্লাস হাতে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে। চোখে সেই কেমন করা দৃষ্টি!
.................................................................


রাত দুটো বেজে ছাব্বিশ। অনুপ ঘুমুচ্ছে। সেদিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেয় তৃপ্তি, অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার নীরব চোখের জলে ভিজে গেছে শাড়ির অনেকটা অংশ। অনুপের বিশ্বাসঘাতকতার কথা সে জেনেছে ছয়মাস আগে। সেই ভয়াবহ দিনটার কথা যতই সে ভুলতে চেষ্টা করে ততই আরও যেন বেশি করে মনে পড়ে যায়। কিভাবে ভুলবে তৃপ্তি? ১৭ বার অজ্ঞান হয়েছিল সে। বারবার চেতন-অচেতনে একটাই প্রশ্ন ছিল,
"কেন অনুপ কেন?
---- কেন এমন করলে তুমি? আমার সমস্ত বিশ্বাসকে এভাবে টুকরো টুকরো করার আগে একবারও কি মনে হয়নি আমার কথা? কীভাবে পারলে তুমি?...

নীরব চিৎকার যেন ঝড় হয়ে এখনো বয়ে চলেছে মনে। সে জানে, আজ সারা দিন অনুপ কোথায় ছিল। লীনার সাথে। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর তীব্র কষ্টে তৃপ্তির দম বন্ধ হয়ে আসে। নিজের শুন্যতা নিজের মধ্যেই চেপে রেখে দিয়েছে, এমনকি আজ পর্যন্ত অনুপকেও জানতে
দেয়নি। একবার মনে হয়েছিল চলে যাবে অনুপের জীবন থেকে। কিন্তু কোথায় যাবে? অনুপের ভালোবাসা হয়তো মরে গেছে, কিন্তু তৃপ্তি? তৃপ্তিতো আজও অনুপকেই ভালোবাসে। একটা মানুষকে একই সাথে কীভাবে এত ভালোবাসা যায়, আবার একইভাবে ঘৃণাও করা যায়-ভেবে হাসি পায় তৃপ্তির। প্রতিশোধ! প্রতিশোধের নেশায় সেও জড়িয়ে পড়েছে পরকীয়ায়।

"কিন্তু আমিতো শান্তি পাই না অনুপ। এক দিন, এক মুহুর্তের জন্যেও আমি স্বপনকে ভালোবাসতে পারিনি। মন জুড়ে শুধু তুমি আর তুমি। তবে তুমি কিভাবে পারলে? ভুলে গেলে আমাকে? কি অকপটে তুমি মিথ্যার পর মিথ্যা বলে যাও! চোখের দুফোঁটা জল রেলিংয়ের উপর পড়ে ছোট ছোট বিন্দুর মত ছিটকে যায় এদিক ওদিক। হাতের ওষুধের শিশিটার দিকে একবার তাকায় সে। শান্তি চাই, একটু শান্তি! কেউ দেবে আমায়??? কোথায় গেলে আমি একটু শান্তি পাবো- নীরব আকাশের বুকে যেন এই প্রশ্নটা জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে.......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৪:১৫
১৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×