somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গন্তব্য !

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি নেট।


১৯৮৭ সনের পিচ গলা রোদ্দুরে টয়োটা স্প্রিন্টার খুব জোরে চলছে গন্তব্য ঢাকা টু গাজীপুর।ভেতরে দুজন মানব মানবী বসে আছেন। একজনের নাম মলি অপরজন মামুন।

মলি দেখতে ফর্সা সুন্দরী। চওড়া কাঁদ, জোরা ভ্রু, বড় বড় আইরিশ চোখ, নাকটা একটু লম্বা অনেকটা প্রিন্সেস ডায়নার মতন। উঁচু করে খোপা তুলেছে। পড়নে নীল রঙের চিকন পাড়ের সিল্ক এর শাড়ী।সাথে গোলাপি রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ। চোখে রোদ চশমা। যা লাগছে সোজা বাংলায় আগুন! 

মামুন এ শহরের এক উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলে।বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস সামাল দিতে দেশে এসেছে। মাঝারি আকার এর চোখ, রোমানদের মতন নাক, বোতল গ্রিন রঙের পলো শার্ট পড়ে আছে সাথে ডেনিম ব্লু জিন্স। চোখে রোদ চশমা। সোজা বাংলায় সুদর্শন। ঢাকার ফিল্মের হিরো ওর সামনে লবন গলা পানি। কয়েকবার মডেলিং এর অফার পেয়েছিল কিন্তু ও করেনি।

গাড়ীতে গান বাজছে জনপ্রিয় শিল্পী Sade এর " smooth operator " গাড়ির গতি ৬০ থেকে ৭০ এর মাঝামাঝি। দুজন দুজনকে দেখছে আর হাসছে।

মলি ভাবছে, ইশ! প্রেমে এত এত সুখ! মামুন ভাবছে এত এত বিদেশ ঘুরলাম এত বিদেশি মেয়ে দেখলাম কিন্তু মলির মতন কাউরে মনে ধরেনি। আসলে দেশীয় নারীর অলওয়েজ একটা বিশেষ চাহিদা আছে।যার ধারে কাছে কেউ নাই। তার উপর যদি হয় মলির মতন কেউ।

মলি প্রথম নীরবতা ভাংলো

- আচ্ছা,আমরা গাজীপুর কেন যাচ্ছি?
- একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য তাই।
- কি কি সারপ্রাইজ?( গলার টোনে একটা বাড়তি ব্যস্ততা) প্লিজ বলো।
- আরে, আজব! বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকে নাকি!গেলেই দেখতে পাবে।
- হুম, মানে তুমি বলবে না।
- না, সবুর কর, সবুরের ফল ভীষণ মিঠা।
- না, আমি পারব না। তুমি জানো না আমার মেজাজ একবার চড়ে গেলে সহজে নীচে নামে না। (একটু বিরতি দিয়ে) এই তোমার অন্যকোন মতলব নেই তো? এই ধর যে,একলা আমারে পেয়ে তারপর ওসব করে দুদিন পর টাটা বাই বাই।
- ছিঃ! এসব কি ভাবছ? এই যে, ছয় মাসের রিলেশন আমাদের চলছে কখনো আমার আচরণে এমন কিছু পেয়েছ?
-না, তবে পুরুষ মানুষের বিশ্বাস কম?
-হা হা হা, তা ম্যাডাম! কয়টা পুরুষ মানুষ দেখেছ?
- কি? কি বলতে চাও? একদম চোখ বড় করে প্রশ্নটা করল মলি। রাগলে যে কি লাগে সেটা মামুন জানে। এ যেন সাক্ষাৎ দেবী দুর্গা!

- কিচ্ছু বলতে চাচ্ছি না। এসব বেহুদা প্যাঁচাল রাখ। জার্নিটা এনজয় কর। যা হচ্ছে না তা কেন ভাবছ। আর এতই যখন ভয় তাহলে আজ কাজী ডেকে বিয়ে করে নেই। কি বলো?
- উম, (ঠোঁট ভেংচি দিয়ে) বয়েই গেছে আমার তোমারে এখন বিয়ে করতে। তুমি আসবা আমাদের বাড়ি তারপর খুব বড় করে অনুষ্ঠান হবে। এমনি এমনি কেউ জানল না। হলো যত্তসব!

- মামুন কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে মলিকে দেখে ভাবল, এই মেয়েকে এখনো সে বুঝতে পারছে না। আসলে মামুন কোনদিন কোন মেয়ের এত কাছে আসেনি। আর নারীদের কয়জন পুরুষ বুঝতে পেরেছেন?

মলি ব্যাগ থেকে Lay's এর প্যাকেট টা নিয়ে তা খুলে খেতে শুরু করল আর মামুনকে ও খাওয়াতে লাগলো আর মামুনকে দেখছে। মনে মনে দোয়া করছে ও যেন এমন থাকে সারাজীবন। এমন শিশুর মতন অবুঝ!

কিছুক্ষণ পর কোকের বোতলটা আস্তে করে খুলতে লাগলো যাতে করে ঝাঁকিতে না পড়ে যায় এবং কাপড় নষ্ট না হয়।কোক পান করার সময় মামুনের দৃষ্টি বন্দী হয়ে গেল মলির ক্লিন সেভ বগলে আর তখনই ভেতরে একটা পশু জেগে উঠতে শুরু করল। যার নাম কামনার পশু! যদিও বহুদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে আছে কিন্তু আজ ভাংতে চাচ্ছে সব শেকল বাঁধা নিয়ম। মলির চোখে ধরা পড়ল ব্যাপারটা।

মলির চোখে চোখ পড়তেই সাথে সাথে মামুন চোখ ঘুরিয়ে নিল। মলি একটা হাসি দিল। আর বলতে লাগলো " কি সাহেব মতি গতি ঠিক আছে?"  মনযোগ দিয়ে গাড়ি চালাও। এদিক সেদিক চোখ কেন যায়?

মামুন আমতাআমতা করে বলল কি করেছি? আহা! সাধু কিছু করে নাই। মেয়েরা ছেলেদের চোখ দেখলেই সব বুঝে ফেলে বুঝলে!

আমাদের প্রকৃতি বিশেষ একটা শক্তি দিয়েছে। আসলে মলি ও চাইছে মামুন এ ভুল বারবার করুক কিন্তু সায় না দেবার ভান করছে। এত সহজে ধরা দিতে চাচ্ছে না। তাই এমন ঝগড়া করছে। যা করতে ওর খুব ভালো লাগে।

কিছুক্ষণ পর মলি বলল, আচ্ছা, অন্য গান চালাও না প্লিজ। (এই বলে মামুনকে অনুরোধ করল)

মামুন বলল, ডেস্ক খুলে দেখ কোনটা পছন্দ হয়। মলি তাই করল কিন্তু ওর একটাও পছন্দ হলো না। আসলে ওর আজ মন উড়ো উড়ো কোন কিছুতে মনযোগ দিতে পারছে না।

শুধু ভাবছে, ইশ! প্রেম। মামুন যেন সব সময় এমন থাকে। কোন ক্যাসেট শুনবে ভেবে না পেয়ে শেষমেশ বিরক্ত হয়ে রেডিও অন করে দিল। গান বাজছে রুনা লায়লার

" যদি জানাজানি হয় ভালবাসা
কেমন করে হবে মেলামেশা
মনে জাগে শুধু ভয়
যদি বেশী কিছু হয়
আমি চাইতে পারিনা চোখে তওবা তওবা
দিলে জখম হলো উহু আহা
একি শরম এলো উহু আহা ! "

গাড়ি ছুটছে গতি ৭০ গন্তব্য গাজীপুর।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×