somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কচিবেলা !

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি নেট ।

আমার ছেলেবেলা অনেকেই লিখেছেন উহা দেখিয়া এবং পড়িয়া আমারও ইচ্ছে হইল ভাসা ভাসা যেসব স্মৃতি যা এখন মনে পড়ছে তা লিখে রাখি যাতে বুড়ো বয়সে পড়তে পারি। এই একমাত্র লক্ষ্য। অবশ্য আমি লিখছি আমার কচিবেলা!

কিন্তু কি দিয়ে শুরু করব তাই ভাবছি এত এত স্মৃতি!অনেকটা পুরানো ঢাকার বিদ্যুৎ খুটির সাথে প্যাঁচ লাগানো তারের মতন। একটা খুলতে যেয়ে আরেকটা জুড়ে যাচ্ছে বা আরও জট তৈরী হচ্ছে। যাক আল্লাহর নাম নিয়া বুকে ছ্যাপ দিয়া শুরু করলাম আর কি!

একটা সময় নানা বাড়িতে বড় হয়েছি। সে সময়কার স্মৃতি বেশী মনে পড়ে।একদম ছোটকালের কথা অত মনে নাই।তবে একবার খেয়াল আছে আমার শিক্ষক মহোদয় বসে রয়েছেন আমি উধাও।

মা তো রেগে আগুন। রাশেদ নামে একজন কাজের ছেলে ছিল যে কি না নানার গৃহস্থালি কাজে কর্মে সাহায্য করত আর আমারে স্কুলে আনা নেয়া করতো।

রাশেদ কে মা হুকুম করলেন, যেখানে আমারে পায় ধরে যেন নিয়ে আসে। রাশেদ কই খুঁজবে আন্দাজে। তবুও এরে ওরে জিজ্ঞেস করে খবর পেল আমি দুই বিল পরে এক বিলে আমার এক বন্ধুর সাথে ঘুড়ি উড়াতে গেছি।

আমি রাশেদকে দূর থেকে দেখেই বুঝেছি খবর আছে নইলে ও কেন আসবে?নিশ্চয়ই স্যার আসছে। যা ভাবা তাই।

রাশেদ বলতে লাগলো " আপনারে খালা ডাহে মাষ্টার আইয়া বইসা রইছে "
আমি কি করমু বুঝতাছি না। মুখটা ভয়ে শুকিয়ে কিসমিস। কথা না বাড়িয়ে আস্তে আস্তে ওরে অনুসরণ করলাম। পুকুর ঘাটে দেখি মা দাঁড়িয়ে। পড়ন্ত বিকেলে মায়ের মুখ যেন সকালের সুরুজ। বুঝলাম কপালে কি ঘটতে যাচ্ছে। কাছে যেতে ভয় করছে।

রাশেদ বলল, এই যে খালা, হেয় ডেবা গো বাড়ির পরে যে বিল আছে ঐহানে ঘুড়ি উড়াইতেছিল। এই বলে ও চলে যেতে দেরি।

মা যেন ঈগলের মতন আমারে ধরল। ধরেই দুই গালে টাটাইয়া দুই চড়। আর বলতে শুরু করল, দাঁড়া আইজকা তোর খবর আছে! আমি তো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছি। মা ধমক দিয়ে বলল, চেহারা রোদে পুড়ে হইছে কি! স্যার আইসা বইসা রইছে আর উনি ঘুড়ি উড়িয়ে নিউটন হবেন!এদিকে আয় জানোয়ার! এই বলে, আবার দুই চড় গালে।

আমার তো ভলিউম আরও বেড়ে গেল। নানু জলদি এসে আমাকে উদ্ধার করল। নানু বলল, আর একবার ওর গায়ে হাত দিলে তোর খবর আছে। আমার সোনার মতন নাতি টারে মাইরা শেষ করতাছে। যা ঘরে যা। মা বলতে লাগলো, না মারলে পোলাপান ঠিক থাকে না। নানুর উত্তর তোরে কয়দিন মারছি? খালি ফাও প্যাঁচাল। মা, মেয়ে ঝগড়া লাগে এমন হাল।
শেষমেশ নানু আমার হাত মুখ পুকুর জলে ধুঁয়ে ভেতর ঘরে নিয়ে জামা কাপড় পালটে গালে তিব্বত স্নো, বগলের নীচে মিল্লাত পাউডার দিয়ে স্যার এর কাছে পাঠালেন। আমি তখনো কাঁদছি আমার চোখ মুখ লাল। ছোট বুকটা উঠছে নামছে। নানু স্যার কে বলতে লাগলেন, ওর মা মারছে আপনে আবার মাইরেন না।

জানি আপনার টাইমের দাম আছে কিন্তু বুঝেন তো ছোট মানুষ কত রকমের হাউস করে। আমি কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু হচ্ছিল না আরও বেশী খারাপ লাগছে আমার কারণ আরেক প্রতিবেশী খালার মেয়ে পড়তো আমার সাথে। নাম ছিল হাসি। ওর সামনে এমন কথা আমার ইজ্জত যেন সাইকেলের টায়ার ফাটা ফুস! হাসি দেখলাম মাথা নীচু করে হাসছে।

আজও সেই ছোট আমাকে আমি যেন দেখছি।সেই ছোট হাসিকে দেখছি।যে মেয়েটার নাম হাসি। সে মেয়েটা এখন যতদুর শুনেছি হাসতে ভুলেই গেছে। বিয়ের তিন বছর পর এক ছেলের সাথে ডিভোর্স! কারণ যৌতুক। তারপর কত সংগ্রাম করেছে ও নিজের সাথে আশেপাশের মানুষের সাথে।
আসলে এ সমাজে একটা মেয়ের একলা থাকা কত যে কষ্টের!অথচ সেই যৌতুক লোভী স্বামী কিন্তু দিব্যি আরেকটা বিয়ে করে সুখে আছে। তারে সমাজ কিচ্ছু বলে না। বলে হাসির মতন আছে যারা তাদের। এখনো এই শতকে ও বলে। তাজ্জব!

হাসি কষ্ট করে ছেলেকে কলেজ পর্যন্ত পড়িয়েছে তারপর দুবাই পাঠিয়ে দেয়। এখন ওদের কাঁচা বাড়ি পাকা। যাক সেসব কথা। হাসির সংগ্রামের কথা আরেক দিন হবে।

আমার কচিবেলা লিখতে যেয়ে কত মানুষের মুখ যে ভেসে উঠছে। যারা বর্তমানে দুনিয়ায় নেই। তবে একদিক দিয়ে ভাগ্যবান ছিলাম আমি। আমার নানু বাড়িতে থাকতে এমন কারো বাড়ির উঠোনে নেই যে, আমি লাটিম আর মার্বেল খেলি নাই। তারপর আমের বড়া, লিচুর বিচি দিয়ে খেলছি। এমন কি গ্রামের মাটির সড়কে হাডুডু পর্যন্ত খেলেছি। সব উঠোনে খেলেছি কেউ কোনদিন বকা দেয়নি বরং আদর করেছেন।

এখনো মনে পড়ছে হালিম দের উঠোন, রফিকুল দের উঠোন, মাজহার, জামিল, রহিম, জামাল আরও কতজনের উঠোন। যেখানে এসব করে বেড়িয়েছি সেই দিন গুলি মনে হতে আজও এত বছর পর চোখের কোণায় জল জমছে ভেতরে একটা মোচড় দিচ্ছে। উফফ! কি দুর্দান্ত ছিল সেই দিন!

যদিও আজ নানা, নানু নেই। মা একা হয়ে গেছেন। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে আবার এমন কিছু করি যাতে মা আবার শাসন করে ইচ্ছে মতন মারে। কতদিন হইছে মায়ের মাইর খাই না। শেষ মাইর খেয়েছি কলেজ পড়ার সময় এতদূর মনে আছে। কেন খেয়েছি তা আরেকদিন হবে।

আর এখন যখন এ বড় শহর এর ছেলে মেয়েদের দেখি সত্যি! আমার আফসোস হয়। আসলে আমি ভাগ্যবান সে সময় জন্মেছিলাম।

এখনকার এরা আছে পাবজি, নীড ফর স্পীড আরও কতকি! একটা বাক্সের কাছে হারিয়ে গেছে ওদের সব স্মৃতি! ওদের ছেলেবেলা! আজ এ পর্যন্ত! ভালো থাকবেন সকলে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×