somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মফস্বল টু প্যারিস !

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি নেট।

আমার দোস্ত দীপ্ত কতকাল পর দেখা হলো তা প্রায় কুড়ি বছর পর। এক সময় এমনভাবে মিশে ছিলাম মেতে ছিলাম দুজনে যেন একই মায়ের সন্তান। ধরবার কোন উপায় নেই। কতদিন বাদে আবার সাক্ষাৎ। ও একটু মোটা হয়েছে চুলে রঙ। আমারও চুলে রঙ তবে ওর মতো মোটা হই নাই। এই ফারাক শারীরিক দিক থেকে। গায়ের রঙ দুজনের প্রায় একই ফর্সা! না, উজ্জ্বল শ্যামলা ঠিক অত বুঝি না।

সে যাই হোক কতদিন পর দেখা। কত কথার মালা। কোনটা ছেড়ে কোনটা ধরব যেন সব এক্ষুনি বলা চাই। দুনিয়া যেন শেষের দিকে। ওর সেই পুরনো হাসি। আমি তো সব সময় হাসি যদিও এর কারণে মাঝেমধ্যে কথা শুনতে হয়। কি আর করা অভ্যাস। যা বদলানো কি যায়? দীপ্তরা ছিল নীচ তলায় আমরা ছিলাম দ্বিতীয় তলায়। অনেক কথার ভীড়ে কিছু চুম্বকীয় কথা তুলে ধরছি।

এটা মফস্বলের গল্প সেই ১৯৮৮ সালের কথা। চারপাশে জল থৈ থৈ সে কি বন্যা ! টিভিতে এরশাদ সাহেবের গান " আমি যেতে চাই বাংলার মানুষের কাছে " আর দেখছি উনি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। আহ! কি মহান নেতা! দুই বছর পর সেই উনি নাকি স্বৈরাচারী ! পরে আবার ভালো বন্ধু। সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র আমাদের নেতাদের চরিত্র !

তো সেসময় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ ছিল। কি আর করা?দীপ্ত আসে আমার বাসায় আমি যাই ওর বাসায়।সেবা প্রকাশনীর বই পড়ি তিন গোয়ান্দা, মাসুদ রানা আরও কতকি! তখন রসময় গুপ্ত সাহেবের দেখা পাইনি।আরও কয়েক বছর পর উনার সাক্ষাৎ মিলেছে এক ক্লাস সিনিয়র ব্রোর মাধ্যমে। দীপ্ত আমার বাসায় আসে দাবা খেলি, ক্যারাম খেলি এভাবে যাচ্ছে দিন। বিকালে ছাদে যাওয়া ছাড়া গতি নেই সকলের। পানি বন্ধী এক অসহনীয় জীবন।

নৌকা কেনা হলো চাঁদা তুলে। বড়রা কাজে কামে যায় নৌকায় করে আমরা যাই দুপুর টাইমে সাথে একজন আপু যেতো আর ওর বোন যে কিনা আমার ক্লাসমেট। সেই আপুর বাড়ন্ত শরীরে সবার চোখ আটকে থাকতো। কে আর সাধু ! হরমোনের ব্যাপার স্যাপার এখন বুঝি। বাসা থেকে খুব দূরে একটা দীঘি ছিল। সেখানে যেতাম এই আশায় যে,ওখানকার পানি হয়তো অতো অপরিষ্কার নয়! কি বোকার মতন চিন্তাভাবনা !

যাক ডুবিয়ে চোখ লাল করে বাসায় এসে মায়ের বকুনি। সেই আপুর মায়ের কি চিৎকার ! অসভ্য ধামরী মেয়ে ছেলেদের সাথে এতো কিসের ঢলাঢলি? দুই তিন দিন ওরা আমাদের সাথে গিয়েছিল। এরপরে আর যায়নি। আমি ডাকতে গেলে ওর মা বলতো এই কি চাছ?
এখন সেই আপু L A থাকে আর আমার ক্লাসমেট থাকে ফিনিক্স এরিজোনা মার্কিন মুল্লুকে।মাঝেমধ্যে ম্যাসেঞ্জারে ফোন দেই। দুষ্টুমি করি। সে উত্তরে বলে কয়দিন পর ছেলেমেয়ে বিয়ে দিমু ফাজিল। জীবন কত ছোট তাই নারে ! আফসোস করে। আলাপের এক পর্যায়ে ওরা মার্কিন মুল্লুকে যাওয়ার দাওয়াত দেয় এদিকে আমার ক্লাসমেট টিটকারি মেরে কয় আরে আপু উনি অস্ট্রেলিয়া যাবেন। এখন আমাদের বেইল নাই বুজলা ! আমি বলি, সেই চিন্তা বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। তবে যেকোনো দিন এসে পড়তে পারি। হা হা হা :) ওরা বলে আয় তোরে এহানকার একটা ধলার লগে বিয়া দিয়া দিমু। আমি কই আমার চাই কিম কারদাশিয়ান ! ওরা কয় আইচ্ছা ! ওকে এখন যাই তুই থাক কারদাশিয়ান লইয়া। :)

সে যাই হোক আবার দীপ্তর কথাই ফিরে আসি। দীপ্তর বাবার একটা এয়ার গান ছিল।শীতকালে ওর বাবা দূরের বিলে পাখি মারতে যেতেন। আমি দীপ্ত কয়েকবার গিয়েছি। কয়েকবার পাখি ছাড়া শুন্য হাতে মন খারাপ করে ঘরে ফিরতে হয়েছে আমাদের। যেন আহত সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে এসেছি এমন মনে হয়েছে। একদিন আমি দীপ্ত বারান্দায় ক্যারাম খেলছি। তো খেলার এক পর্যায়ে রেড টা ছিটকে বারান্দা থেকে নীচে পানিতে। পানিতে রেডটা দেখা যাচ্ছে। আমি রেডটা আনতে গেলাম। তখন ইংলিশ প্যান্ট বা হাফ প্যান্ট পড়ি। পানি হইছে হাঁটুর একটু উপরে। তো যাই হোক রেড তুলে ফেরার পথে দেখি আমার থেকে কয়েক হাত দূরে একটা জলঢোঁড়া সাপ।আমি তো চিল্লাইয়া উঠছি। দীপ্ত বলছে, নড়িছ না আর পানিতে সাপ কামড়াতে পারে না। কে শোনে কার কথা ! পাশের বাসার সেই আপুর আর আমার ক্লাসমেট এর সে কি হাসি! আমি কোনদিকে না চেয়ে সোজা অন্যদিকে দৌড় আসলে এটা দৌড়ের পর্যায়ে যায় কি না তীব্র গতিতে পানিতে ছোটা বলা চলে। যাক শেষমেশ রেড নিয়ে ঘরে ফেরা। আমাদের চিল্লাচিল্লিতে মা চলে এসেছে। এসেই দুই চড় গালে। সেই আপু তখন বলছে, আন্টি মারেন কেন? আমার তো ইজ্জতের লাড়ে লাপ্পা দশা ! বান্ধবীর সামনে মাইর খেলাম।

এরপর আমি আর দীপ্ত পরিকল্পনা করলাম, এয়ার গান দিয়ে সাপ মারবো। যেই ভাবা সেই কাজ আংকেল অফিসে গেলেই দুজন এয়ার গান নিয়ে বারান্দায় বসে থাকা ঘন্টার পর ঘন্টা আর ক্যারাম খেলা। অবাক কান্ড আর সাপ দেখিনি। কচুরিপানা সই করে গুলি ছুঁড়েছি। এতো পুরনো কথা দীপ্তকে মনে করিয়ে দেবার পর দীপ্ত বলল তুই কিছুই ভুলিছনি দেখছি।

তখন দীপ্তকে বলি জানিছ সেদিন আমরা ভুল সাপ মারার জন্য বন্দুক তাক করে বসে ছিলাম। এখন চারপাশে কতো কেউটে আর জাত সাপ!

দীপ্ত বলল, তো কি করবি? আমরা তো আইন হাতে নিতে পারি না নাকি ! পরক্ষনেই আমি বলি, না, আবার আইন মাথায় তুলে রাখার মতো অবস্থা ও নাই !  দীপ্ত বলল, সিরিয়াস কথা বাদ দে। কাল বাসায় আসিছ। পরশু চলে যাচ্ছি। দীপ্ত এখন প্যারিস। যাবার আগে বলে গেল কবিতায় মন দিছ আর মায়ের খেয়াল রাখিছ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×