somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্ষার বিষাদ মাখা বাদলও দিনের ফুল..(চতুরভূজ)

২৫ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুপকথার সেই প্রিন্সেস সিনড্রেলা থেকে শুরু করে আধুনিক এই পৃথিবীর সকল মেয়েরাই স্বপ্ন দেখে কোনো এক প্রিন্স চার্মিং এসে তাকে পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়িয়ে স্বপ্ন দেশে নিয়ে যাবে, এরপর সুখে শান্তিতে অতিবাহিত করবে বাকিটা জীবন তার প্রিয়তমের সাথে।
কিন্তু পৃথিবীর সকল মেয়ের জীবনেই কি সেই প্রিন্স চার্মিং সত্যি সত্যি আসে যে কেবল তাকেই ভালবাসবে সকল কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে? হয়ত স্বামীর আগমন ঘটে কিন্তু সেকি পারে সেই মেয়েটির স্বপ্নকুমারের স্থানে নিজেকে অবস্থিত করতে? বাংলাদেশের কয়টা মেয়ের জীবনে তার রাজকুমার সম্পর্কিত স্বপ্ন সত্য হয়েছে আমার জানা নেই। তবে আজ আমি আমার খুব কাছের কারও হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার কাহিনী বর্ণনা করতে চাই-
১৮ বছর আগে কোনো এক ঝড় বৃষ্টি ময় রাতে আমার গল্পের নায়িকার জন্ম। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান বলে অতি আদর করে তার নাম রাখা হয় বর্ষা। ঘুম ছিল তার অতিপ্রিয়-মা এইজন্য নাম রাখতে চেয়েছিলেন ঘুমকুমারী। কিন্তু বাবার দেয়া নামই টিকে গেল। নাম বর্ষা হলেও তার জীবনে বর্ষার ছিটেফোটা লাগতে দেয়নি পিতা মাতা, যদিও অতি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ছিল সে। মাস শেষে বাবার সাড়ে সাত হাজার টাকা বেতনের বেশ অনেক খানি অংশই ব্যায় করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে যেতে ইন্টারমিডিয়েটে স্ট্যান্ড করে বসে আমাদের বর্ষা। মায়ের খুব শখ ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু বাধ সাধলো বাবার পেনশন! চাকরীর বয়স শেষ আর সংসারের খরচের দ্বীগুণ বোঝা তাঁকে ধীরে ধীরে সংসার বিমূখ করে দিল, মেয়ের বিয়ে দিয়ে সে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যেতে চায়। বাকি রইল আরও এক ছেলে। সে খুব ছোট বলে তার কথা এখনও ভাবছেননা তিনি। আর তাছাড়া, সুন্দরী বর্ষার জন্য হরহামেশাই পাত্র ওয়ালা বাবারা ভীড় করেন। বর্ষার বাবা ভাবেন এই সুযোগ। অতি কষ্টের মাঝে বেড়ে উঠার চাইতে স্বামীর ঘরে গিয়ে সুখ করুক, আমি দেখে তৃপ্তি পাই। পাড়ার বখাটে ছেলেপেলেদের বিরক্তিও কমে যাবে। প্রতিদিন ভয়ে থাকতে হয় দিনকাল খারাপ বলে, কখন আবার কি ঘটে বসে এরপর মান সন্মান নিয়ে টানাটানি! তার আগে আগে ভালয় ভালয় মেয়ের বিয়েটা সেরে ফেললেই দায়মুক্ত!
যেই ভাবা সেই কাজ। অনেক পাত্রের মাঝখান থেকে তিনি মেয়ের জন্য নির্বাচন করলেন ৬ ফিট উচ্চতার দারুণ হ্যান্ডসাম এক যুবক! শ্যামলা বরন মাথাভর্তি সিল্কী ঘন চুল তাকে আরও যেন পুরুষ করে তোলে! যদিও লেখাপড়ায় কম তবুও অর্থের অভাব নেই, খুব ছোট বেলায় পাড়ি দেয় জাপান এরপর ওখান থেকেই এত বৈভবের মালিক হয় সে। ঢাকায় দুটি বাড়ি, গাড়ি , জমিজমা কি নেই তার! তার উপর জাপানের রেসিডেন্স সে! যখন তখন মেয়েকে নিয়ে জাপান পাড়ি দিতে পারবে, একি কম কথা!
আর আমাদের বর্ষা? বর্ষা তো মা-বাবার অতি বাধ্য মেয়ে। যখন সে শুনলো তার লেখাপড়া চালিয়ে যাবার অনুমতি দিয়েছে বর পক্ষ তখন সে অমত করলনা বিয়ের পিঁরিতে বসতে, হয়ে গেল মালা বদল। বাসর রাতে ঘরে ঢুকে সেতো অবাক! দেখলো তার সবচেয়ে প্রিয় ফুলের মাতাল করা সুগন্ধে সারা ঘর যেন ম ম করছে, বিছানা ভর্তি তার প্রিয় ফুল! বর্ষার মনে হল এই বুঝি তার প্রিন্স চার্মিং! ঘোমটা তুলে পরম ভালবাসায় তার স্বামী তাকে চুমু খেল, আর বর্ষা কেঁপে কেঁপে উঠছিলো ভালবাসার তীব্রতা সইতে না পেরে, মনে মনে ভাবছিলো এত সুখ কি সত্যি আমার কপালে লিখা ছিল? মনে পড়ে গেল তার মধ্যবিত্ত জীবনের নানান স্বপ্নকথা। সারারাত সে যেন সুখের মাঝে ভাসছিলো, সে চাইছিলো যেন এ রাত আর ভোর না হয়। কিন্তু তবুও ভোর হোলো, চারদিক আলোকিত করে দিয়ে সূর্য্য উঠল। মনে মনে তার অতিপ্রিয় সূর্য্যকে তিরস্কার করতে করতে নিজ রুম থেকে দুই কদম বাইরে না যেতেই সে শুনতে পেল তার স্বামীর জাপানী ভাষায় কথোপকথোন টেলিফোনে। তার একটু পরেই স্বামী বেচারা এসে বলল আগামী পরশু তার চলে যেতে হবে! বর্ষা ভিষন রকম কষ্ট পেয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবো জনম জনম।

আমাদের প্রিন্স চলে যাবার ঠিক পরদিন এলো সেই টেলোফোন-এক যুবক বলল, "আপনার স্বামীযে জাপানে একটা বিয়ে করেছে সেটা কি আপনি জানেন? সে জাপানের রেসিডেন্স কিভাবে পেল এটা একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আপনার বাবা আপনার জীবন নষ্ট করেছে।" বর্ষা আর দেরী না করে সরাসরি তার শ্বাশুরী ও ননদকে জানালো টেলিফোনের কথা। শ্বাশুরী মাতা বললেন ওসব মিথ্যে। বর্ষার স্বামী প্রতিদিন ফোন করে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে কিন্তু সবসময় অস্বীকার করে ব্যাপারটা, বর্ষাও আর ঘাটাতে চায়না। কিন্তু কিছুদিন পর যখন বর্ষা নিজেই বহু প্রমান পায় এবং পাড়ার সবাই বলাবলি করতে লাগলো তখন সে তার বাবা-মাকে জানাতে বাধ্য হোলো। তার অসহায় বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে আমিও শুনেছি এমন,সবাই বলছে জাপানে বিয়ে না করলে নাকি সিটিজেন হতে পারেনা।

এরপর থেকে আমাদের বর্ষা আর ঘুমোতে পারেনা , সে আজও ঘুমোতে পারেনা।

পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন- বর্ষার এখন কি করা উচিত? তার কি উচিত সেই স্বামীরই ঘর করা, নাকি তার উচিত একলা পথে পা বাড়ানো, মুক্ত বিশাল আকাশের কাছে আশ্রয় গ্রহণ!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:২৩
১৪৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×