ঢাকা শহর ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে, মিলিয়ে যাচ্ছে মিটিমিটি তারা গুলো। মনে হচ্ছে আমার বহু পুরাতন করুণ শহরটাকে হাজার হাজার জোনাক পোকা ঘীরে ধরেছে। জোনাকী গুলো ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমার বাইরে। চোখ হয়ে আসছে ঝাপসা.....
আমি এখন আকাশে। সেইযে কবে মানুষের মনে পাখির মত আকাশে ওড়ার বাসনা তৈরী হয়েছিল সেই থেকে সে কেবল উড়ে বেড়াতে চায়। এখান থেকে সেখানে , সেখান থেকে এখানে, এই ভূবন থেকে অন্য ভূবনে। মানুষই একমাত্র প্রানী যে ইচ্ছে করেই মমতায় জড়ায় আবার সকল মমতার বন্ধন ছিন্ন করে উড়াল দিতে চায়! এই আদিম বাসনা সৃষ্টিকর্তাই তাঁর সৃষ্টির ডি এন এ তে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এতে আমাদের কোনো দোষ নেই।
তেইশ বছর ধরে যে মাটিতে দৌড়ে বেড়িয়েছি, যে মাটির ভালবাসা আমাকে আঁঠার মত আটকে রেখেছিলো আজ সেই মাটি ছেড়ে চলে যাই অন্য কারও ফুটপাথে, অন্য কোনো বসতিতে। নতুন করে আবাস গড়ার জন্য, নতুন ভালবাসায় নিজেকে ভেজাবার জন্য। পুরোনো ভালবাসার মলাটে নতুন প্রেমের ধূলোর আস্তরণ ফেলবার জন্য।
বাংলাদেশ থেকে সমস্ত মায়া মমতার বাঁধন ছিন্ন করে নতুন দেশে এলাম। সারা রাস্তা প্লেনে চড়ে সমস্ত স্মৃতী মনে করে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছিলাম। আমার কেবলই চোখে ভাসছিলো লোকে লোকারণ্য ঢাকা শহরের কথা, বারবার মনে আসছিল আমার গ্রামের পুকুরঘাটার সেই শিউলী গাছটার কথা। দেশে থাকতে যে মানুষটাকে দেখে গা জ্বালা করত আজ যেন তার মুখটা সামনে আনতেই সেই চেহারা করুণ লাগছিলো! তেইশ বছর বয়সী কোনো তরুনী কাঁদতে কাঁদতে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে - এটাই একটা অদ্ভুদ বিষয়! এতই যদি কান্না তবে উড়াল দেয়া কেন? কে বাধ্য করেছে নিজের চির আপন ভূমি ছেড়ে চলে যেতে? কোন জীবনের আশায়? কে বলতে পারে সে জীবনে সুখের আবাস নাকি কষ্টের? কে জানে সুখ পাখিটা কোন দেশে বাস করে?
তবুও মানুষ দূরে পাড়ি দেয়, তবুও।
সিডনী এয়ারপোর্ট এসে আমি কারও জন্য অপেক্ষা করছিলাম যে আমাকে নিতে আসবে। তাকে দেখিনি কখনও! মনে মনে বলছিলাম অপেক্ষার মত যন্ত্রনাদায়ক যন্ত্রনার মাঝখান দিয়ে কেউ আমাকে আর নিওনা প্লীজ, ঠিক তখনই একটা ভরাট কন্ঠ বলে উঠল," আপনি কি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন? আপনি কি ....?'' শুরু হল নতুন কাহিনীর। একই সাথে ব্যাথা এবং সুখ পাওয়ার এক অদ্ভুদ মিশ্রন। একই সাথে মৃত্যর বাসনা আর বেঁচে থাকার কামনা। শুরু হল নীল বেদনার অতৃপ্ত সুখ। কে বলেছে জীবন ছোট? জীবন আসলে অনেক বড়-কত ঘটনার সমন্বয়ে গড়া আমার এই জীবন। আমি কি পারব আমার জীবনের সমস্ত সাদা-কালো ও রঙীন কাহিনীর বর্ণনা করতে? আমাকে কি ঐ সময়টুকু দেয়া হবে! কে বলতে পারে এই এই জীবনের শেষটা কোথায় কোন মোহনায় গিয়ে মিশেছে। কে বলতে পারে সে কোনোদিন নীল রং এর শাড়ি পড়ে এক শান্ত নদীর তীরে কোনো এক কদম গাছের নিচে কারও হাত ধরে দাঁড়িয়ে স্বর্গ সুখে ভাসতে পারবে কিনা! জীবনে যে সুখের আশায় পরিচিত গন্ধ ছেড়ে এসেছে, সেই সুখ পাবে কিনা, কে বলতে পারে। তুমি কি পারবে শোনাতে আমাকে সেই না শোনা কাহিনী?
সাদা কালো ও রঙ্গিন জীবন (চতুরভূজ)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬৪টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।