somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা বাঙালি আমরা সাম্প্রদায়িক

১৯ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাঙালি যতদিন হিন্দু, বাঙালি যতদিন মুসলিম। বাঙালি ততদিনই সাম্প্রদায়িক। বাঙালি যতদিন বাঙালি, বাঙালি ততদিন অসাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কথাটা শুনতে খুব সুন্দর। ঘন্টার পর ঘন্টা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বক্তৃতা দিতে খুব ভালো লাগে। পাতার পর পাতা এই বিষয় নিয়ে সারগর্ভ প্রবন্ধ লিখতেও মন্দ লাগে না। বিশেষ করে নামী দামী পত্র পত্রিকায় ছাপা হলে। কিন্তু আমরা যদি অসাম্প্রদায়িক হতাম। তাহলেও কি আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে এত আলোচনা করার দরকার হতো কোন? আমরা যদি অসাম্প্রদায়িক হতাম, তাহলে কি আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য মিছিল মিটিং করতে হতো আদৌ? আমরা যদি অসাম্প্রদায়িক হতাম তাহলে কি যখন তখন আমাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগে যেত? কোন মন্দিরে গরুর মাংসের টুকরো পাওয়া গেল আর কোন মসজিদে কার মুর্তি বসিয়ে দিয়ে গেল বলে হৈ হৈ রৈ রৈ করে উঠতাম আমরা? নিশ্চয়ই নয়। আসলেই আমরা সকলেই ভিতরে ভিতরে সাম্প্রদায়িক। নিশ্চয়ই আমরা অধিকাংশই কেউ দাঙ্গাবাজ নই। অধিকাংশ বাঙালিই হিংসায় বিশ্বাসী নয়। অধিকাংশ বাঙালিই খুন জখম ধর্ষণের সমর্থক নয়। কিন্তু তবুও, যখনই ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কথা ওঠে। তখন অধিকাংশ বাঙালিই সাম্প্রদায়িক। তখনই বাঙালি হয় হিন্দু। না হলে মুসলিম। তখন বাঙালি আর বাঙালি থাকে না। কিংবা নংর্থক ভাবে দেখলে তখনই হয়তো বাঙালি সত্যি করেই বাঙালি হয়ে ওঠে। যদি বাঙালির প্রকৃতি হিসাবেই সাম্প্রদায়িকতাকে বাঙালির স্বভাবগত ধর্ম বলে ধরে নেওয়া যায়। অন্তত বাঙালির ইতিহাসের পাতা পিছনের দিকে ওল্টাতে থাকলে এই চিত্র এগিয়ে চলতেই থাকে।

অনেকেই মনে করেন, বাঙালির ভিতরে সাম্প্রদায়িক বিষের সংক্রমণ ব্রিটিশ যুগের অবদান। ব্রিটিশের সেই কুখ্যাত ডিভাইড এণ্ড রুলই এর জন্মদাতা। কিন্তু অনেকেই খেয়াল রাখেন না, বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রবেশের অনেক আগে থাকেই বাঙালির সাম্প্রদায়িক চরিত্রের উদ্ঘাটন হয়ে গিয়েছিল। পাল যুগে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির সম্প্রসারণের প্রায় তিনশত বছরের ইতিহাস ছিল। কিন্তু তার পরে কর্নাটক আগত সেন বংশের সাম্রাজ্য বিস্তারের সময়পর্বে শঙ্করাচার্য্যের হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণের হাত ধরে এই বাংলায় বৌদ্ধদের উপরে নৃশংস নিপীড়ন ও অত্যাচারের পর্ব শুরু হয়ে যায়। যা বেশ কয়েক শতক চলতে থাকে। বাংলার মাটির নীচে সেই ইতিহাস হয়তো আজ প্রায় সম্পূর্ণই চাপা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই মাটি খুঁড়ে দেখলে সেদিনের সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের ইতিহাস খুঁড়ে বার করা কঠিন কাজও নয়। একের পর এক বৌদ্ধ মঠ জ্বালিয়ে দেওয়া। বৌদ্ধদের ঘরে ঘরে আগ্নিসংযেগ। লুঠপাঠ। অর্থনৈতিক শোষণ। সামাজিক বয়কট ইত্যাদির হাত ধরে বাংলা থেকে বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রায় নিঃশ্চিহ্ন করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। ইখতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর গৌড় দখলের পরবর্তীতে বাংলায় ইসলাম আসে শান্তি সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বাণী নিয়ে। ফলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাঙালিসহ সেদিনের নিপীড়িত জনসম্প্রদায়ের ভিতরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের একটা হিড়িক পড়ে যায়। না, মুসলিম শাসকের তরবারির আতঙ্কে নয়। ইসলামের প্রচারিত সেই শান্তি সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বাণীতে ভরসা করে বর্ণহিন্দু সম্প্রদায়ের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে আত্মরক্ষার তাগিদে। অনেকেই বিরুদ্ধমত পোষণ করতে চাইবেন। সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁরা খেয়াল করে দেখতে চান না। মুসলিম শাসকের তরবারির আতঙ্কেই যদি বাঙালির একটা বড়ো অংশ দিনে দিনে ধর্মান্তরিত হতো। তাহলে বর্ণহিন্দুরা ব্রিটিশ আসার আগে অব্দিও সমাজের বুকে জাঁকিয়ে বসে থেকে সমাজ পরিচালিত করতে পারতো না নিশ্চয়। তারাও ইসলামের তথাকথিত আতঙ্ক ও অত্যাচার থেকে আত্মরক্ষার তাগিদেই ইসলাম ধর্মই গ্রহণ করতে বাধ্য হতো। কিন্তু না। ইতিহাসে সত্যিই তেমনটা ঘটে নি। আজকের রাজনীতি যে তত্ত্বই প্রচার করুক না কেন। সেদিন বর্ণহিন্দুদের সামাজিক অত্যাচার ও অর্থনৈতিক শোষণ থেকেই আত্মরক্ষার্থে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাঙালিসহ নিম্নবর্ণের হিন্দুসমাজ দিনে দিনে ইসলামের আশ্রয়ে থাকার আশায় ধর্মান্তরিত হতে থাকে। ফলে বাঙালায় ইসলামের প্রসারের পিছনেই বাঙালির সাম্প্রদায়িক স্বভাব প্রকৃতির ইতিহাস রয়ে গিয়েছে। অবশ্যই সেই ইতিহাস আজ অনেকেই স্বীকার করতে রাজি নয় আর। কারণ, তার কোন স্ক্রিনশট আজ আর কেউ দেখাতে পারবে না। ফলে এই যুগের মাপকাঠিতে সেদিনের ইতিহাস প্রমাণ করে দেখানো ঐতিহাসিকদের পক্ষেও কঠিন কাজ হবে বৈকি। ইতিহাস প্রমাণের অপেক্ষাও রাখে না বিশেষ। প্রমাণ হোক না হোক। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারদিকে ঘুরতেই থাকবে। ঠিক তেমনই ইতিহাসও মাটি চাপা পড়ে থাকবে। বাঙালির ইতিহাসে বাঙালির সেই সাম্প্রদায়িক স্বভাব প্রকৃতি না থাকলে, বাংলায় আজও বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতিরই রয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।

সাধারণ মানুষ সামজিক অত্যাচার ও অর্থনৈতিক শোষণের থেকে আত্মরক্ষার কারণে আজও যদি নতুন কোন ধর্মের বাণীর কাছে ভরসা করার মতো কোন সূত্র পায়। তবে আবারও নতুন সেই ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে দ্বিধা করবে না। কথায় বলে আপনি বাঁচলে বাপের নাম। মানুষের জীবনে তাই ধর্মের চেয়েও প্রাণ অনেক বড়ো। অনেক বেশি মূল্যবান। ১৯৪৭ সালে পুর্ব বঙ্গ থেকে কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি ত্যাগ করেছিল ধর্মের মোহে নয়। আত্মরক্ষার তাগিদে। কথাটা কেন বলছি সেটি একটু বোঝার দরকার রয়েছে। ব্রিটিশ ও তাদের ভারতীয় প্রতিনিধি কংগ্রেস ও মুসলীম লীগ উভয়েই বুঝতে পেরেছিল। সাধারণ বাঙালি দেশভাগ চায় না। দেশ ভাগ হলেও তারা নিজ ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যাবে না সহজে। কারণ নিজের ভিটে মাটি ত্যাগ করে উদ্বাস্তু হয়ে দেশত্যাগ করতে স্বভাবতঃই মানুষের ভিতরে আতঙ্ক ও ভয় কাজ করতে থাকে। নিশ্চিত জীবন ত্যাগ করে কপর্দকহীন ভাবে অনিশ্চিত জীবনের পিছনে দুই একজন ছুটতে পারে। কোটি কোটি মানুষ সহ একটা গোটা সম্প্রদায় সেই ঝুঁকির পিছনে ছোটে না। তার ফলে পরবর্তীতে সাধারণ বাঙালিই দুটুকরো বাংলাকে জোড়া দেওয়ার আনন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। সেরকম হলে ব্রিটিশ এবং তাদের ভারতীয় প্রতিনিধি কংগ্রেস ও মুসলীম লীগের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থহানীর সম্ভাবনা। তারা জানতো বাঙালির ভিতরে সাম্প্রদায়িক বিষ সুপ্ত হয়ে ঘুমন্ত রয়েছে। সেই সুপ্ত বিষকে খুঁচিয়ে না তুললে বাংলা ভাগ করলেও সেই ভাগ বেশিদিন টিকিয়ে রাখা মুশকিল। ঠিক এই কারণেই ব্রিটিশ উত্তর ভারতের বর্তমানের উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকে অবাঙালি সমাজবিরোধীদের বাংলায় ঢোকায়। তাদেরকে অস্ত্রশস্ত্র জোগায়। এবং ব্রিটিশ কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের পরিকল্পনা মতো বাংলায় দাঙ্গা সংঘটিত হয়। লক্ষ্য করে দেখার, দিল্লীসহ উত্তরপ্রদেশ ও সেই সময়ের হায়দ্রাবাদ রাজ্যে হিন্দু মুসলিম পাশাপাশি থেকেও দাঙ্গা বাঁধেনি। কারণ ঐদুটি অঞ্চল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের ভাগ বাঁটোয়ারার সিলেবাসে ছিল না। থাকলে দাঙ্গা লাগানো হতো সেখানেও। অর্থাৎ অত্যন্ত সুকৌশলে নৃশংস পরিকল্পনায় বাংলায় দাঙ্গা লাগানো হয়েছিল। না হলে পূর্ব বাংলার হিন্দুদের ভিতরে প্রাণের ভয় ধরানো যেতো না সহজে। ফলে ধর্মের কারণে হলেও ধর্মরক্ষার জন্য কেউ দেশত্যাগ করেনি। প্রাণের মায়ায় আত্মরক্ষার জন্যেই কোটি কোটি বাঙালি উদ্বাস্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। বাধ্য করেছিল ব্রিটিশ কংগ্রেস ও মুসলীম লীগ।

কিন্তু এখানেই ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন। আমরা বাঙালিরা যদি সত্যিই অসাম্প্রদায়িক হতাম। তাহলেও কি ব্রিটিশের পক্ষে ও তাদের ভারতীয় প্রতিনিধি স্বরূপ কংগ্রেস ও মুসলীম লীগের স্বার্থে দাঙ্গা লাগানো সম্ভব হতো? নিশ্চিত করেই বলা যায় হতো না। হতো না কারণ, দাঙ্গা লাগায় ভারাটে গুণ্ডারা। সেটা ব্রিটিশ যুগেও যেমন সত্য। এই ইনটারনেট যুগেও একই রকমের সত্য। কিন্তু দাঙ্গা ছড়ায় সাধারণ মানুষের ভিতরে সুপ্ত থাকা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায় দুইটির ভিতরে মিলনের প্রাঙ্গণ যদি শতকের পর শতক ধরে বন্ধ না থাকতো। যদি তাদের ভিতরে আত্মীয়তা থাকতো। তাহলে পারস্পরিক বিদ্বেষ বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারতো না। সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপই এই বিদ্বেষ বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা গড়ে তোলে। ব্রিটিশই সকলের আগে বাঙালির ইতিহাস বাঙালির থেকেও অনেক বেশি ভালো করে উপলব্ধি করতে পেরেছিল। আর গোটা ব্রিটিশ শাসন পর্বে ব্রিটিশ যেহেতু বাঙালির হাতেই সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের পথরেখায়। তাই চলে যাওয়ার আগে জাতি হিসাবে বাঙালির মেরুদণ্ডকে বহু বহু শতকের জন্য ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বিশেষ দক্ষতায়। আর সেই পরিকল্পনা সার্থক হয়েছিল শুধুমাত্র আমাদের স্বভাবজাত সাম্প্রদায়িক মানসিকতায়। আমরা আগে হিন্দু আগে মুসলিম। তারপর ভাষাগত কারণে নামেমাত্র বাঙালি। এটাই বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতার জায়গা। আর রাজ্যপাট ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে ব্রিটিশ সেই দুর্বলতার জায়গাটাকেই সঠিক সময়ে টার্গেট করেছিল। তাতে ব্রিটিশের আহত অহং -এর উপশমে মলম লেগেছিল। কিন্তু আসল লাভ হয়েছিল কংগ্রেস ও মুসলীম লীগের।

দুঃখের বিষয় ইতিহাস বিমুখ জাতি হিসাবে আমরা কোনদিনও সুস্থ ভাবে আমাদের জাতিগত ইতিহাস চর্চা করতে যাইনি। ইতিহাস চর্চা আবার বাঙালির স্বভাববিরুদ্ধ। ফলে যা হবার। তাই হয়, হয়েছে এবং বার বার হবে আর হতেই থাকবে। আমরা আমাদের আসল দুর্বলতার জায়গাটাকেই চিহ্ণিত করতে পারিনি। কিংবা পারলেও করতে চাই না। আমরা বুঝেও বুঝবো না গোত্রের মানুষ। ঠিক সেই কারণেই আমাদের মজ্জাগত এই সাম্প্রদায়িক দ্বেষ বিদ্বেষের স্বভাব প্রকৃতিকে আমরা প্রতিদিন ঘুম পাড়িয়ে রেখে দিই। যাতে কানে সুরসুরি লাগলেই সেটা জেগে উঠতে পারে। না কোন মন্দিরে গরুর মাংস পাওয়া গেল। কোন মসজিদে দেবতার মুর্তি উদ্ধার হলো। সেসব খবর কানে আসলেই আমরা দাঙ্গা করতে নেমে যাই না ঠিক কথা। কিন্তু এই খবরগুলির প্রতিক্রিয়ায় আমাদের অন্তরস্থ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ আমরা যখন যেমন সুযোগ পাই উগড়িয়ে দিতে থাকি। কারণ এটাই আমাদের আসল ধর্ম। কে হিন্দু কে মুসলিম সেটা তো অনেক পরের বিষয়। আগে তো আমরা নৃতাত্ত্বিক ভাবে বাঙালি। ফলে স্বভাবধর্ম যাবে কোথায়? বিষ তো আমরা ঢালবোই। হ্যাঁ গত শতক অব্দি সেই বিষ ঢালার উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম ছিল না আমাদের হাতের কাছে। তাই ঘরের ভিতরেই আহত বাঘের মতো নড়াচড়া করতাম। খাওয়ার টেবিল থেকে ড্রয়িং রুম আমাদের সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে গরম হয়ে উঠত। কিন্তু তার আভা ঘরের বাইরে বার হওয়ার কোন পথ ছিল না। কিন্তু এ একুশ শতক। ডিজিটাল যুগ। হাতে হাতে মোবাইল আর নেট কানেকশন। ফলে ছুতো একটা পেলেই হলো। পথসারমেয়র মতো অন্তরের আন্তরিক ভাষায় আমরা বংশানুক্রমিক ভাবে বহন করা ঐতিহ্যস্বরূপ সেই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প উগরিয়ে দিচ্ছি এখন ফেসবুক টুইটারে। না আমরা পড়শীর ঘরে আগুন দিতে যাচ্ছি না ঠিক। কারণ ওটা রাজনৈতিক ক্যাডার কিংবা ভাড়াটে গুণ্ডাদের কাজ। আমরা অত নীচে নামতে পারি না। আর ওটাই ওদের পেশা। দুইবেলা অন্নসংস্থানের পথ। কিন্তু তাই বলে আমরা আমাদের বিষ উগরিয়ে দেবো না। তা নিশ্চয় হতে পারে না। ফলে একুশ শতকে এসে বাংলার দুই পার জুড়ে বাঙালির সাম্প্রদায়িক চরিত্র আজ সম্পূর্ণ বেআব্রু হয়ে উঠেছে। না তাতে আর লজ্জা কি? আমরা তো হয় হিন্দু নয় মুসলিম। হয় আমাদের হাতে গীতা নাহয় কোরান। হয় আমরা গীতার বাণী মুখস্থ ঝারছি। নাহলে কোরানের আয়াত মুখস্থ ঝারছি। কে বলে আমারা ধার্মিক নই? গোটা বিশ্বে বাঙালির থেকে আর কে বেশি ধার্মিক? আমাদের স্কুল কলেজ হাসপাতালের অভাব থাকতে পারে। কিন্ত মন্দির মসজিদের কোন অভাব নাই। আমাদের লেখাপড়া জানা শিক্ষকের অভাব থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মের বাণী শো‌নানোর ঠিকাদারের কোন অভাব নাই। আমাদের চিকিৎসকের অভাব থাকতে পারে। যারা মৃতপ্রায় রোগীকে জীবনদান করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দাঙ্গাবাজ ধার্মিকের কোন অভাব নাই। যারা জীবন্ত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে যখন তখন। যেখানে সেখানে। যে কোন অজুহাতে। এবং সবচেয়ে বড়ো কথা। সেই অপকর্মের পক্ষে ওকালতি করার অজুহাত দেওয়ার মতো সাধারণ মানুষের কিন্তু কোন অভাব নেই। যারা প্রত্যক্ষ হিংসার পক্ষে না থেকেও মনে মনে অন্তরের অন্তরে আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

অনেকেই বলতে পারেন তা কেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বহু বাঙালি হাজারে হাজারে তো পথে নেমে প্রতিবাদ সংঘটিত করছে। কাঁটাতারের দুই পারেই। করছে বইকি। অনেকে বাড়িতে বসেও নেটদুনিয়ায় লগইন করে মৌখিক হোক লিখিত হোক প্রতিবাদে সামিলও হচ্ছেন। কিন্তু সংখ্যার হিসাবে কতজন? আর সংখ্যার হিসাবে কতজন কোন প্রতিবাদ করছেন না? কতজন সাম্প্রাদায়িকতার বিষ উগরিয়ে দিচ্ছেন এই সুযোগে? যারা নীরবতা পালনে ব্যস্ত। আর যারা সাম্প্রদায়িক বিষ উগড়ে দিচ্ছেন নেটে লগইন করে। উভয়েই অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। উভয়েই সাম্প্রদায়িকতাকেই ইন্ধন জুগিয়ে চলেছেন। উভয়ই এই বাংলায় সংখাগরিষ্ঠ, জনসংখ্যার হিসাবে। বাংলায় যারা রাজনীতি করে করেকম্মে খায়। তাদের কাছে এই হিসাব একেবারে জলের মতন পরিস্কার। তারা তাই জানে বাংলায় গণতন্ত্রের চাকা সচল রাখতে কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলে যেতে হয়। দশকের পর দশক। তারা জানে কিভাবে সেই তাস ঠিকঠাক খেলার উপরেই ক্ষমতার মধুক্ষেতে প্রবেশের ছাড়পত্র পাওয়া সহজ হয়। আর সেই হিসাব নিকাশ করেই একটির পর একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো। পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বার্থে। দাঙ্গা লাগানোর এই কার্যক্রম ঠিক ততদিনই চলবে। বাঙালি অন্তরে বাহিরে যতদিন সাম্প্রদায়িক থাকবে। ততদিনই। তার একদিন বেশিও নয় কমও নয়। এই ঐতিহাসিক সত্যটুকু আমরা কবে বুঝবো সেকথা ইতিহাসও জানে না। আমরাও জানি না। আপাতত যেটা বোঝা যাচ্ছে সেটা হলো। না, আমরা এই সত্য বুঝতে কোনদিন রাজি ছিলাম না। আজও রাজি নই। এবং আগামীতেও রাজি থাকবো না। আমরা বাঙালি। আমরা সাম্প্রদায়িক।

১৯শে অক্টোবর’ ২০২১
কপিরাইট শ্রীশুভ্র কর্তক সংরক্ষিত
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৯
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×