somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতের শুভ্র ভাপা পিঠা...

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রাবণী টিভি দেখছে, শ্রাবণ ল্যাপটপে মুখ গুঁজে ক্লাসের এ্যাসাইনমেন্ট গুলো করছে। বিজ্ঞাপনের যন্ত্রনায় শ্রাবণী একবার এই চ্যানেল আবার ঐ চ্যানেল বদলে বদলে দেখছে। শ্রাবণ মাঝেমধ্যে এ্যাসাইনমেন্টের ফাঁকে টেলিভিশনের শব্দ শুনছে। কোন একটা চ্যানেল এ রান্নার অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে। ভাপা পিঠা বানানো শেখানো হচ্ছে। ভাপা পিঠার নাম শুনেই শ্রাবণের মুখে জল এসে যায়। ওদিকে শ্রাবণী খুবি বিরক্ত।
~বোরিং...
-কেনো বোরিং কেনো? অনেকদিন ভাপা পিঠা খাইনা। এক কাজ করো শিখে ফেলো। আমাকে বানিয়ে খাওয়াবা।
~পিঠা বানাবো? আমি?
-হু তুমি।
~No way...
‌-কেনো? আমাকে বানিয়ে খাওয়াবে না?
~আমি বানাতে পারলে তো...তাছাড়া আপনি জানেন রান্না-বান্নায় আমার‍‍ বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। আর ভাপা পিঠা আমি একদম পছন্দ করি না তাই এটা বানানো শিখার কোনো ইচ্ছাও নেই। :)
-কিন্তু আমি তো পছন্দ করি...
~ভাপা পিঠার চিন্তা বাদ দিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট শেষ করেন। দেশে গেলে পিঠা খাবেন, আম্মুকে বললেই বানিয়ে দিবে।

শ্রাবণ আর কথা বাড়ায় না। ওর খুব অবাক লাগে। এ কেমন মেয়ে বর কিছু খেতে চাইলে যে কি না বলে বানিয়ে খাওয়াতে পারবে না! অসন্তুষ্ট শ্রাবণ ভাবে, এর চাইতে অন্য কোন ভালো মেয়ে বিয়ে করলে ভালো হত। তাহলে হয়ত এখনই পাটা নিয়ে চাল গুঁড়ো করতে বসে যেত...কেন যে শ্রাবণীর মতো একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো! ওর মন খারাপ লাগে, মানুষের বউরা কত ভালো। এইতো সেদিন বাদল বলছিলো ও মিষ্টি খেতে পছন্দ করে তাই ওর গার্লফ্রেন্ড মিষ্টি বানানো শিখেছে। বিয়ের পর অফিস থেকে গেলে নাকি ওকে বানিয়ে খাওয়াবে। এমন কত কথাই তো শ্রাবণ শুনে, কিন্তু ভেবে পায় না ওর বউটা এমন কেনো! শ্রাবণ ভেবে পায়না কেন শ্রাবণী এমন করে। শ্রাবণী অদ্ভুত একটা মেয়ে। ও সবসময় শ্রাবণের খেয়াল রাখে অথচ অনেক সময় অনেক চেয়েও শ্রাবণ ওর কাছে কিছু পায় না। শ্রাবণী সকালের ঘুমের জন্য পাগল কিন্তু শ্রাবণের জ্বর আসলে সকালে উঠে জ্বর দেখে ঔষুধ খাওয়াবে, প্রতিদিন ধোয়া মোজা পড়ছে কিনা, সকালে নাস্তা খেয়েছে কিনা তার খেয়াল রাখবে অথচ রুটি, পিঠা বানাতে বললে ও বলবে পারবো না নিজে বানিয়ে খান! কি আর করা সব কপালের দোষ...কপালের দোষ না হলে কি আর ভাগ্যে এমন মেয়ে জোটে!

.......................................................................................................

আজকে ছুটির দিন। শ্রাবণ ঘুম ভেংগে পাশে হাত রাখতেই অবাক হয়ে যায়। শ্রাবণী নেই। বাথরুমে গিয়েছে? না তো কোন শব্দ আসছে না। এমন তো হবার কথা নয়। শ্রাবণী এমনিতেই ঘুমকাতুরে আর ছুটির দিনে তো কথাই নেই। সকালে ঘুম ভাংগলেও অনেকক্ষণ শ্রাবণের বুকে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে গল্প করে। জানেন কি হয়েছে আম্মুকে ফোন করেছিলাম আপনি নাকি আবার কাকা হয়েছেন আর আমি কাকি হিহিহি... কাকা-কাকি শুনতে মজা লাগে না?...আচ্ছা সামনে না বীনা আন্টিদের বাসায় পার্টি, কি নিয়ে যাওয়া যায়?...আচ্ছা আমরা কবে দেশে যাচ্ছি?জানেন সেদিন না খুব সুন্দর একটা ডায়মন্ডের রিং দেখেছি কিন্তু যা দাম! ...ইত‌্যাদি...ইত‌্যাদি...

পিঠা খেতে চাওয়ার ঘটনার পর প্রতিদিনি শ্রাবণ কোন না কোনভাবে শ্রাবণীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। শ্রাবণী আবার খুব অভিমানী। অভিমান করে উল্টাপাল্টা করার অভ্যাস আছে ওর। মনে একটা অশুভ ভাব টের পেয়ে শ্রাবণ ধরফর করে উঠে বসে। ঠিক তখনি শ্রাবণীর হাসিমাখা মুখ দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয়।
~সুপ্রভাত শ্রাবণমণি
‌-...
~চোখ বন্ধ করেন।
-কেনো?
~ X( করতে বলেছি, করেন।
-করলাম।
~এবার হা করেন।
-কেন?
~আহ করেন না...
-ওকে করলাম হাআআআ...

শ্রাবণ মুখে মিষ্টি কিছু অনুভব করে। চোখ খুলে দেখে শ্রাবণী প্লেইটে করে গুঁড় আর চালের গুঁড়োর মিশ্রণের মতো কিছু একটা নিয়ে বসে আছে। ওটাই ওর মুখে তুলে দিয়েছিলো।

~কেমন হয়েছে?
-মজাই তো। কি এগুলা?
~ভাপা পিঠা।
-এগুলা ভাপা পিঠা!
~হু...জোড়া লাগে না। :(
-তুমি খেয়েছো?
~না। প্রথমটাই বানিয়ে আপনার জন্য এনেছি।
-খাবে না?
~আপনি খাওয়ায় দিলে তো খাবো...একাই তো সব খেয়ে ফেলছেন।

শ্রাবণ ওর মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।
-তুমি এত ভালো কেনো শ্রাবণী?
~ভালো না ছাই। আপনি মুখ ধুয়ে আসেন আমি বাকিগুলো বানাচ্ছি।

হাতমুখ ধুয়ে এসে শ্রাবণ দেখে রান্নাঘরে যেন কুরুক্ষেত্র হয়ে গেছে। এখানে ওখানে চালের গুঁড়োয় মাখামাখি। শ্রাবণীও বাদ যায়নি।
-হাহাহা...আজকে তো খুব সুন্দর করে মেইক আপ করেছো। তোমাকে এক্কেবারে পরীর মতো লাগছে।শুধু একটু গুঁড় মিসিং...
~তাই! আসেন আপনাকেও মেইক আপ করে দেই
-হাহাহা...না না না...

শ্রাবণ ওর গালে একটু গুঁর লাগিয়ে দেয়।
~ধুর, বিরক্ত করেন না তো। এমনিতেই একটাও পিঠা জোড়া লাগে নাই।
-লাগবে
~লাগবে না X(
-আরে লাগবে লাগবে...

শ্রাবণ মুগ্ধ হয়ে শ্রাবনীকে দেখে। রেগে গিয়ে গাল লাল হয়ে গিয়েছে। মুখ, চুল চালের গুঁড়োয়া মাখামাখি। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে। ওকে আরও রাগাতে ইচ্ছা করে...ও আরও গুঁড় নিয়ে শ্রাবণীকে দেয়,
-নাও গুঁড় লাগিয়ে দিচ্ছি এখন তোমাকে মিষ্টি লাগছে। এখন আর রাগ করবা না। এখন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবা :)
~তাই! দাঁড়াণ... X( আপনাকেও মেইক আপ করাচ্ছি...

শ্রাবণী শ্রাবণের মুখেও চালের গুঁড়ো মেখে দিয়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। শ্রাবণও হাসি থামিয়ে রাখতে পারে না।
-চলো আমি তোমাকে হেল্প করি।
~ঠিক আছে।
-আচ্ছা তুমি সেদিন তো বানানো শিখোনি, তাহলে বানাচ্ছো কি করে?
~আম্মুকে ফোন করে জিগেস করেছি। ঐ মহিলাদের কাছে শিখবো কেনো? আপনি যেভাবে খেতে পছন্দ করেন ঠিক সেভাবে বানানোর জন্য আম্মুর কাছে শিখেছি :)

শ্রাবণের চোখে পানি চলে আসে...
~‍কি হলো? চোখে গিয়েছে নাকি গুঁড়ো।
-না কিছু না।

শ্রাবনী ওর আঁচল দিয়ে শ্রাবণের চোখ মুছে দেয়, চোখে ভাপ দেয়। বলে, আম্মুর মতো কি হয়েছে?
-হ্যাঁ স্বাদটা হয়েছে কিছুটা কিন্তু পিঠা তো ভাপা পিঠার ভর্তা মনে হয়...
~ :( X(
-ও লা লা...দেখো আমারটা কি সুন্দর হয়েছে। :)
~ওয়াও!!! হাহ, পচা হয়েছে খাবো না।
-তাহলে ওয়াও বললে কেনো?
~আপনি আমারটা পচা বলেছেন তাই খাবোনা।
-কই পচা বলেছি...তোমারটা অনেক মজা হয়েছে। আমারটা শুধু দেখতে একটু বেশী সুন্দর।
~X(
-লক্ষী সোনা চাঁদের কণা খাও...
~হা...
শ্রাবণী খেতে গিয়ে শ্রাবণের আংগুল কামড়ে দেয়।
-আউউউ...এটা কি হলো?
~আপনি পচা তাই আপনাকে শাস্তি দেয়া হলো। :)
-এহ আমি পচা আর তুমি কি? সেদিন কেন ওমন করেছিলে? কেন বলোনি যে আম্মুর কাছে শিখে বানিয়ে খাওয়াবা?
~সেদিন বলে দিলে কি আজকের মজাটা হত? সবই যদি আগে বলে দেই তাহলে আর মজা কি!

শ্রাবণ ওকে বুকে জড়িয়ে নেয়। নিজেকে ওর খুব সুখি সুখি মনে হয়। সেদিন কি সব ভাবছিলো ভেবে নিজেরই খারাপ লাগে। শ্রাবণ ভাবে আমার শ্রাবণী অন্য সবার মতো নয়। ও তো ও ই...ও যেমন তেমন ভাবেই আমার সুখি হওয়া উচিৎ। ওকে নিয়েই আমার যত সুখ...

এই শীতের শুভ্রতায় ভালবাসার উষ্ণতায় ওরা একজন আরএকজনকে জড়িয়ে রাখে...

********************************************************************

ছবিটা ইন্টেরনেট থেকে সংগৃহীত:Catch the dream
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ ভোর ৬:১৮
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×