somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~~জোৎস্নাঘর~~

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন মধ্যরাত্রিতে জলজোৎস্নায় আমাদের নৌকাটা ভেসে যেতে থাকলো...খুব ভালো না হলেও আমি ওকে গানটা শোনাচ্ছিলাম---

ঘুমাও তুমি, ঘুমাও গো জান
ঘুমাও আমার কোলে
ভালোবাসার নাও ভাসাবো
ভালবাসি বলে।

তোমার চুলে হাত বুলাবো
পুর্ণ চাঁদের তলে
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার জোৎস্না পড়ুক গলে...

ও আমার কোলে মাথা রেখে শুনছিলো। উপুর হয়ে শুয়ে আছে, জোৎস্নার আলো ওর চোখে মুখে পড়েছে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ওকে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। অদ্ভুত সুন্দর লাগে..ইচ্ছে করে...

~এই...এই...এইইই শুনছো? তুমি কি ঘুমিয়ে গেলে?
-আছি
~আছি কি? কই আছো? ঘুমিয়ে যাচ্ছো তো...
-না ঘুমাইনি বলো।
~আমরা কি এভাবেই নৌকায় বসে থাকবো? হারিয়ে যাব তো...
-না হারাবো না। দাঁড়াও তোমাকে একটা যায়গায় নিয়ে যাই।
~কোথায়?
-বলা যাবে না। সারপ্রাইজ!
~আরও সারপ্রাইজ? ইয়েই!!!

ও উঠে গিয়ে নৌকা বাইতে শুরু করলো। আমি পানি তে হাত,পা ভিজানো শুরু করলাম। মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপতেই পানি নিয়ে ওকে ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিলাম।

-কি করো ভিজে যাচ্ছি তো!
~হিহিহি...
-এমন করলে কিন্তু...
~কি করবা? ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিবা? আমি কিন্তু সাঁতার জানি না।
-ধুর পাগলী!
~আমি তো খুব পঁচা মেয়ে এর জন্য আমাকে ফেলে দিবা তাই না?
-হু তুমি খুব পঁচা আর এই পচা মেয়েটাই আমার লক্ষী, এই পঁচা মেয়েকেই আমি আমার জানের মতো ভালবাসি, এই পঁচা মেয়ের সবকিছুই আমার কাছে ভাল। পঁচা মেয়েটাকে ফেলে দিলে আমার কি হবে!
~এই শুনো
-কি?
~তোমাকে আমি ভালোবাসি...
-আমিও তোমাকে ভালবাসি
অনেক অনেক ভালবাসি।
~তখন কিন্তু আমি দুষ্টমী করেছিলাম যে পানিতে ফেলে দিবে...রাগ করো না কিন্তু...
-আমি জানি।

ও বৈঠা রেখে সিগারেট ধরালো এবং ধূমপান করা শুরু করলো! ও আগে সিগারেট খেতো না। আমার কাছে সিগারেটের গন্ধ ভালো লাগে তাই মাঝে মাঝে ধরাতো। কিন্তু এখন খেতেও শুরু করেছে! সিগারেট তো না যেন আমার গায়ে আগুন ধরালো! আমার খুবই রাগ লাগতে থাকলো। আগে যখন কোন মেয়েকে দেখতাম ছেলেটা সিগারেট ধরালে রাগতো তখন আমি বুঝতাম না এতে এতো রাগার কি আছে! কিন্তু এখন বুঝি কেনো রাগতো। সিগারেট নামক এই জিনিশটা প্রিয় মানুষটার একটু একটু করে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে তাকে ধ্বংস করছে, একটু একটু করে তারাতারি দূরে নিয়ে যাবার পারতারা করছে...এগুলা ভেবেই রাগটা, ভয়টা চলে আসে। অথচ মেয়েদের এই সরল, সত্যি ভালবাসাটাই ছেলেরা বুঝে না! ভাবে তাকে dominated করছে, আধিপত্য খাটাচ্ছে! আমাকে রাগতে দেখে বললো,

-সিগারেট খাবা??
~খাবো
-:-* যাও ফুটো! :| ইশ তোমাকে সত্যিই এখন একবার খাওয়াতে ইচ্ছে করছে। :P
~X((
অতঃপর "সিগারেট খেয়ে" খুক খুক কাশি!

নৌকা নিয়ে কিছুদূর যেতেই নৌকার সামনে একটা ঘর দেখলাম। দেখে মনে হচ্ছে পানির উপরে ভাসছে।
~মাঝের ঘরটা তো সুন্দর!
-এটা সব কিছু থেকে আলাদা
~এই ঘরটাকে তোমরা কি বলো?
-কিছুই বলি না তো
~বললে ভালো হত। চলো এই ঘরটার একটা নাম দেই।
-এটার নাম কুঁড়ে ঘর। আমরা আজকে এখানে ঘুমাবো।
~সত্যি???
-হ্যাঁ
~কি মজা! যাদের ঘর তারা কিছু বলবে না?
-উহু।আমাদেরই এটা
‍~এই ঘরটার নাম দিলাম। কি জানো?
-কি?
~বলোতো।
-জানিনা
~উফ! তুমি যে কি? জানো না যে আমিও জানি। Guess করতে বললাম।
-আমি কিভাবে বলবো
~জোৎস্নাঘর
-ও...ভালো তো।

ঘরটা এত্ত সুন্দর। আমি মুগ্ধ হয়ে যাই...জোৎস্নায় পানি থৈ থৈ করছে, সেই জোৎস্নাজলে জোৎস্নাঘরটা ভাসছে...অপার্থীব সুন্দর! কত ছোট-খাট জিনিশেও কত্তো দারুণ লাগে! ঘরটার কাছে আসতেই ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর হাতে আলোর কিছু একটা ধরা।

~‍‍‍‍‍এটা কি?
-ফানুস
~ফানুস!!! সত‌্যি!? কই পেলে?
-নিয়ে এসেছিলাম। তুমি বলেছিলে তোমার ওড়ানোর ইচ্ছা। তাই...
~ওয়াও!!! কি মজা! চল উড়াই।
-চল
~এই...এই থামো, আগে একটা উইশ করে নেই।

আমরা দুজনে উইশ করে আকাশে ফানুসটা উড়িয়েদিলাম। ঐ ফানুসটার সাথে আজন্ম সলজ্ব সাধের ফানুসগুলো ও উড়লো...

*************************************
ভোর হয়ে গেছে। আমি ঘরের কিনারে বসে আমার ভাংগা চুড়ীগুলো পানিতে ফেলছিলাম। ও অঘোরে ঘুমাচ্ছে। উপুর হয়ে...এত্তো মায়া লাগে দেখলে...ইচ্ছে করে আদর করে দেই। কিন্তু ডাকতে হবে। ভোর হয়ে গিয়েছে।বাসায় ফিরতে হবে।

‍~এই উঠো। আর কতো ঘুমাবা?

ও উঠে বসে।
-শুনো। কাছে আসো
~ (!) কাছে এসে কি হবে?
-কিছু হবে না কাছে আসো।

আমি কাছে আসলাম...
-আমার বুকে মাথা রাখো। হার্টবীট শুনো।

আমি ওর বুকে মাথা রাখলাম। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমার চোখে পানি চলে আসলো। এই পৃথিবীতে বোধহয় আমার থেকে সুখি আর কেউ নেই!

ওর মোবাইল বেজে উঠলো।
-ধ্যাত! এখনও ঠিক ঠিক টাইমে মোবাইল বাজে! কেয়া টাইম হ্যায়!
~হিহিহি...নিশ্চয়ই আম্মু চিন্তা করছে। চলো রওনা দেই।
-আর একটু থাকি।সকাল হোক...
~শোনো। আমাদের যদি মেয়ে হয় নাম কি রাখবো মনে আছে?
-ই..
~হুমম...না
- :( তাহলে কি?
~ভুলে গিয়েছি, তোমার মতো
-শিওর? বলো।
~আগে মায়ের রাগ ভাঙ্গাও তারপর বলবো
-নাম কি ঠিক করা হয়েছিলো?
~বলবো না
-ঐ ছেমড়ি বলবি নাকি পুলিশ ডাকবো?
~ডাকো
-ডাকলাম কিন্তু
~তুই তুই করে বললা!?
-মজা করেছি তো...কি আজব!
~কই তোমার পুলিশ? ডাকো...
- ...৩৬৭, ৩৬৬,৩৬৫...
~মেয়ের নাম ঠিক করা হয়েছিলো সকাল। তোমার সাথে মিলিয়ে। তুমি বিকেল, আমি রাত আর ও আমাদের সকাল...

************************************
সেদিন সকাল থেকে আমরা একজন আর একজনকে অশেষ ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখে আমাদের সকালের জন্য অপেক্ষা করতে রইলাম...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৪০
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×