somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নচুরি

৩১ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ দুইদিন হলো সোহেল বাসা থেকে চলে এসেছে।থাকছে বড় ভাইয়ের বাসায়।অথচ আফরোজা একটা ফোনও দেয়নি ওকে।ভাবি বারবার জানতে চাইছে কি নিয়ে অশান্তি,সোহেল বলতে পারছেনা।কোন সমস্যার কথা বলবে।সমস্যা তো আর একটা নয়।আফরোজার হরদম ছেলেবন্ধুর সাথে মেলামেশা,শ্বশুর বাড়ির কাউকে সহ্য করতে না পারা,ওর শারীরিক সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা-কোন সমস্যার কথা বলবে?শেষ পর্যন্ত ভাবিকে এই বলে শান্ত করে-ভাবি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয় তুমি তো জানোই।আমরা দু’জন একটু বেশীই ঝগড়া করি,বেশী বেশী ভালোবাসার জন্যে।

নাটকের মহড়া দেখতে বেশ বিরক্ত লাগে আফরোজার।জয়ার কাছ হতে বিদায় নিয়ে শিল্পকলা একাডেমী হতে বেরিয়ে আসে।গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে শান্তিনগরে ওর ফ্লাটে চলে আসে।বড় ছেলেটি পড়ছে।ছোটটি খেলনা নিয়ে ব্যস্ত।আফরোজাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই আম্মা আম্মা বলে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।ছোটটি মায়ের কাছে জানতে চায়-আব্বা কবে আসবে?চট করে আফরোজার মাথায় রক্ত চড়ে যায়।সে চেঁচিয়ে বুয়াকে ডাক দেয়।বুয়া হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসে।আফরোজা জানতে চায় যে ছোট ছেলেকে খাওয়ানো হয়েছে কিনা।বুয়া মাথা ঝাঁকায়।মায়ের অগ্নিমূর্তি দেখে ছোটটি আর কথা বাড়ায়না।রাতে দুই ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে সে ডায়েরী নিয়ে বসে।আজ ডায়েরীতে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছেনা।তবুও লেখে-দুইদিন হলো সোহেল বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।আমার আর ফোন দিতে ইচ্ছে করছেনা।এবার দিয়ে সোহেল মোট এগারো বার বাড়ি ছাড়লো।আফরোজা লেখা থামিয়ে দেয়।পুরানো একটি ডায়েরী বের করে।পড়তে শুরু করে-মা মারা যায় যখন তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি।বাবা ছিলেন ব্যবসায়ি।সারাদিন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।আমি আর দাদা কি খেলাম না খেলাম খোঁজ নেওয়ার সময় হতোনা তার।দুই বছর পর বাবা আবার বিয়ে করেন।দশম শ্রেণীতে থাকতে একবার খুব জ্বর হয় । পাশের বাড়ির স্বপ্না খালা এসে সেবা যত্ন করে যেতো।সৎ মা ভুলেও ওর ঘরে আসতোনা।মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে খালা বলতো,দেখিস তোর সাথে যার বিয়ে হবে সে তোকে খুব ভালোবাসবে।ডায়েরীটা বন্ধ করে রাখে।টাওয়েল দিয়ে চোখ মুছে।বাথরুমে গিয়ে চোখে পানির ঝাপটা মারে।আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখে।বয়স হয়েছে কি?মাত্র পঁয়ত্রিশ।ওর ফিগারও দারুণ।শুধু ভালোবাসার সমীকরণটা বদলে গেলো।ওর জীবনে ভালোবাসার সমীকরণটি খুব দ্রুত বদলায়।এখন বদলে গিয়েছে ওর আর সোহেলের মধ্যের ভালোবাসার সমীকরণ। ওদের জীবনের প্রথম দিনগুলি কি না উত্তাল ছিল।কি প্রচন্ড টান ছিল ওর সোহেলের প্রতি।সে সব সময়ই চেয়েছে সোহেলকে নিয়ে একা থাকতে।একদম একা।ওর পৃথিবীতে সোহেল আর ও ছাড়া কেউ থাকবেনা।কেউনা।বাথরুম থেকে ফিরে এসে আফরোজা বিছানায় শুয়ে পড়ে।সেদিন রাত্রে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে সে-সোহেল গোলাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আনন্দ মোহন কলেজের গেটে।সে এগিয়ে যাচ্ছে সোহেলের দিকে।যত সে সোহেলের কাছে যাচ্ছে ততই গোলাপের পাঁপড়িগুলি ঝরে পড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসীতে ভর্তি হয়েছিল সোহেল।বাড়ির ছোট ছেলে হওয়াতে ওর কোন চাওয়াই অপূর্ণ রাখতোনা ওর বাবা-মা।থাকতো ইকবাল হলে।বিস্তর বন্ধু-বান্ধব গড়ে উঠে।বিতর্ক প্রতিযোগিতা,কবিতা আবৃত্তি সর্বত্রই ওর আবাধ-স্বাচ্ছন্দ বিচরণ ছিল।সেই সাথে বিচরণ বাড়ে সীসা ক্লাবে,নাইট ক্লাবে । তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো ও কখনো মাতাল হতোনা।অনার্সেও ফাস্ট ক্লাস পায়।অনার্সের পরে ওর সাথে নতুন ভাবে বন্ধুত্ব হয় তারেকের।কবিতা আবৃত্তির সূত্র ধরেই ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।তারেকের বাবা ময়মনসিংহের নাম করা ব্যবসায়ি।বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই তারেকের বাড়িতে ওর যাতায়াত শুরু হয়।

-আচ্ছা আমরা বিয়ে করবো কবে?
আফরোজা জানতে চায়।
-সবেমাত্র পাস করলাম।একটা চাকরি পাই তবেই না বিয়ে।
সোহেল উত্তর করে।
-কেন এখন বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়?
-তোমার আব্বার কাছে এখন প্রস্তাব নিয়ে যাই আর উনি লাঠি নিয়ে তেড়ে আসুক আর কি।বলবে বেকার ছেলের সাহস কত।
দুই জনই হো হো করে হেসে উঠে।আচমকা দই জনের হাসি থেমে যায়।একে অপরের দিকে গভীরভাবে তাকায়।সোহেল ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে আনে আফরোজার মুখের কাছে।একে ওপরের ঠোঁটে ঠোঁট গুঁজে দেয়।ওরা কতক্ষণ এভাবে ছিল মনে করতে পারেনা।গলা খাকারির শব্দ শুনে একে অপরের কাছ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।আফরোজা জামা-কাপড় ঠিকঠাক করে নেয়।তারেক ওদের কাছে আসে।

-সোহেল আগামী তিন মাসের মধ্যে আমি লন্ডন চলে যাবো পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে।তার আগেই তোদের বিয়েটা সেরে ফেললে ভালো হয়।আফরোজা কি বলিস?
তারেক বলে।
-তুমি যা বলো ভাইয়া।
আফরোজা উত্তর করে।
-আমি তো এখনও বেকার।
সোহেল বলে।
-এবার ঢাকায় গিয়ে চল দু’জনে কোডায় যাই।একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।ঠিক আছে তোরা গল্প কর।আমি নীচে যাই।
তারেক চলে গেলে সোহেল আর আফরোজা একজন আর একজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
-উঃ লাগছে ছাড়ো।
আদুরে গলায় আফরোজা বলে।
-না ছাড়বোনা।
সোহেল উত্তর করে।

বড় ছেলে মৃদুল হওয়া পর্যন্ত সোহেল আর আফরোজার জীবন বেশ নির্বিঘ্নেই কাটছিল।প্রথম সন্তান হওয়ার পর বিপত্তির সূত্রপাত হয়। আফরোজা জেনে যায় সোহেল সব রকম নেশাতেই অভ্যস্ত।প্রথম প্রথম সে চেষ্টা চালিয়েছে নিজের মত করে।না পেরে শেষে শ্বশুর-শ্বাশুড়িকেও জানিয়েছে।কোন লাভই হয়নি।শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মান-সন্মান আর আভিজাত্যের দোহাই দিয়ে তাকে চেপে যেতে বলেছে।পরিশেষে নিজের মতই সে সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করে।প্রথমে সে সোহেলকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।সোহেলের সব বন্ধু-বান্ধবকে সন্দেহের দৃস্টিতে দেখতে থাকে।তাই বাড়িতে কাউকে এলাও না করার সিদ্ধান্ত নেয়।এ নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকতো দু’জনের মধ্যে।এভাবেই দিন চলছিল।আর এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তানও ওরা নেয়।ক্রমে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।ফ্লাট কেনার সময় ওদের মধ্যে আস্থাহীনতার বিষয়টি প্রকটভাবে ধরা পড়ে।

-ফ্লাট কার নামে করবে?
আফরোজা জানতে চায়।
-কেন আমার নামে।
সোহেল সোজা উত্তর দেয়।
-না,ফ্লাট আমার নামে কেন।
আফরোজা দৃঢ় কন্ঠে বলে।
আফরোজার দৃঢ়তায় সোহেল ভড়কে যায়।
-আমাকে দু’দিন ভাববার সময় দাও।
-দিলাম।
পরদিন রাত্রে আফরোজাকে কাছে টানে সোহেল।আফরোজা শক্তভাবে উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে থাকে।বেশ কয়েকবার সোহেল চেষ্টা করে।আফরোজা সাড়া দেয়না।সোহেল উঠে বাথরুমে যায়,মাষ্টারবেসন শেষে বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে।

-খেতে দাও।
সোহেল বলে।
-খাওয়ার নাই।রান্না-বান্না বন্ধ।
আফরোজা উত্তর করে।
-বাচ্চারা?
-না খেয়ে আছে সবাই।
সোহেল আফরোজার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। সে দ্রুত বেড়িয়ে যায়।কিছুক্ষণ পর খাবার কিনে নিয়ে ফিরে আসে।খাওয়া-দাওয়া শেষে সোহেল জানায় সে রাজি।ফ্লাট আফরোজার নামেই কিনবে।সেদিন রাত্রে আফরোজা নতুনভাবে ধরা দেয় সোহেলের কাছে।কিন্তু বিধি বাম।উত্তেজনার মাঝ পথেই সোহেলের বীর্যপাত হয়ে যায়।আফরোজা ধাক্কা দিয়ে সোহেলকে শরীরের উপর থেকে সরিয়ে দেয়।
-এর চেয়ে রিক্সাওয়ালা বিয়ে করা ভালো ছিল।অন্তত তোমার চেয়ে জোড়ে আর বেশিক্ষণ গুতাতে পারতো।কবে থেকে বলছি নেশা ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও।কে শুনে কার কথা।
সোহেল প্রচন্ড ক্ষেপে যায় আফরোজার কথায়।সে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে জামা-কাপড় পড়ে নেয়।
-কোথায় যাচ্ছো এতো রাত্রে।
-জাহান্নামে।
উত্তর দিয়েই সোহেল হন হন করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

আগামীকাল শুক্রবার।দুইদিন হয়ে গেলো বাচ্চাদের মুখ দেখেনি সোহেল। গত রাত্রে ঘুম হয়নি।আজ ঘুমের ঔষধ খাওয়া প্রয়োজন।গ্লাসে পানি নিয়ে সে ঘুমের ঔষধের পাতাটি হাতে নেয়।সে একটি করে ট্যাবলেট বের করে আর খায়।বের করে আর খায়।ট্যাবলেটের খালি স্ট্রীপ ঝুড়িতে ফেলে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।ঘুমানোর আগে ওর খুব করে মনে পড়ে আফরোজাকে প্রথম চুম্বনের দিনটির কথা।মুখে মৃদ হাসি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।


৩০/০৩/২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×