চায়ের কাপের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে রুপক।দীপ্ত চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
-কি হবে বলতো,যদি সব কৃষক ধান উৎপাদন বন্ধ করে দেয় একসাথে?
দীপ্তর কথায় রুপক চোখ তুলে তাকায়।
-সব কৃষক একসাথে? সম্ভব?
-ধর এমন ঘটনা যদি ঘটে।
-তা কিভাবে সম্ভব?
রুপক চায়ের কাপে চুমুক দেয়।আলো-আঁধারীর ঘর।সিগারেটের ধোঁয়া ঘুরছে সর্বত্র।রুপক একটি কাজের সুপারিশ নিয়ে এসেছে দীপ্তর কাছে।দীপ্ত ওকে নিয়ে এসেছে এই রেস্টুরেন্টে।সমাজের সব উপর তলার মানুষ এখানে আসে।
-জানিস গতরাতে আমি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি।
-তোর কি ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমানো লাগে?
-না,এখনও শারীরিকভাবে পুরো ফিট আছি।শোন যে কথা বলছিলাম,স্বপ্নে দেখলাম সব কৃষক ধান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
-সেটি কি অদৌ সম্ভব?ধান উৎপাদন না করলে সে চলবে কিভাবে?
-শুধু আমি নই।যত জন সংসদ সদস্য আছে সবাই একই স্বপ্ন দেখেছে গতরাতে।
-বলিস কি?নেত্রীও দেখেছে?
-দেখেছে।কিন্তু স্বপ্নের কথা সংসদে কেউ বলছেনা।
-প্রতিবারই ধানের দাম নিয়ে একটা ঘোঁট পাকে।তোরা এর সমাধান বের কর।
-এখানেই তো মূল সমস্যা।সবাই সমস্যা হওয়ার পর চিন্তা করছে।অনেকেই গলা ফাঠাচ্ছে কিন্তু সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছেনা।বিশেষ করে ফেসবুকের পাঁঠারা খুব লম্ফজম্ফ দিচ্ছে স্ট্যাটাস দিয়ে।
-লোক বলবেনা সমস্যার কথা?
-অবশ্যই লোকজন বলবে।আমি ভাবছি ধান উৎপাদন না হলে কি খাব?
-কেন খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলবি।
-এটি কি সমস্যার সমাধান হলো?
-কেন নয়? কয়টি দেশের প্রধান খাবার ভাত?পৃথিবীর বেশীর ভাগ দেশই তো ভাত খায়না।
-তা ঠিক।ভাত খায়না কিন্তু অন্যকিছু তো খায় যা তাদের প্রধান উৎপাদিত ফসল।তর্কের খাতিরে ধরলাম আমাদেরও খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হলো।এখন যে খাবারের উপর চাপ পড়বে তার উৎপাদন বাড়বে।আর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশী হলে দাম পড়ে যাবে।ঘুরে ফিরে যেই লাউ সেই কদু।
-সরকার কৃষকের কাছ হতে সরাসরি ধান কিনলেই তো পারে?
-কিভাবে কিনবে বল?যখনই এই নির্দেশনা আসবে দেখবি ডুপ্লিকেট কৃষক গজিয়ে যাবে।সত্যিকারের কৃষক লাভবান হবেনা।
-তাহলে?
-আমি ভাবছি আমার কথা।আমি ভাত ছাড়া খেতেই পারিনা।যদি খাদ্যাভ্যাস বদলাতেই হয় তবে এদেশে থেকে কি লাভ?
-তোর ছেলেমেয়ে দুটোই কানাডায় পড়ছে?
-হ্যাঁ।ওদের ওখানেই সেটল করে দেবো ভাবছি।
-তাই ভাল। তাহলে তো এক সময় তোকে ওদেশেই চলে যেতে হবে।
-হয়তো।তবে গতরাতের স্বপ্নটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে।আর দেখ এমনই এক স্বপ্ন সংসদের সবাই মিলে একসাথেই দেখলাম।
-লাভ কি তাতে?
-দুপুরে আমি সংসদে গিয়েছিলাম।এক সিনিয়রকে বললাম কি করা যায়।তিনি কোন উত্তর করলেন না।
রুপক দীপ্তর প্যাচাল শুনতে শুনতে অস্থির হয়ে উঠে। নিজের কথা যে উঠাবে তার সুযোগই পাচ্ছেনা সে।তালে তাল দিতে হচ্ছে।
-তুই কি কিছু বলবি?
-হ্যাঁ।
-কোন সুপারিশ?
-দোস্ত রাস্তার টেন্ডারটা আমাকে দে।
-সত্যি কথা কি বলবো,তুই কোন কিছু কোনদিন চাসনি।আর নিজেদের লোকদের কিছু বলাও যায় না।
-আমাকে কিছু বলতে হবে না।
-ঠিক আছে একবার তোকে কাজ দিয়ে দেখি।
দীপ্ত আর একবার চায়ের অর্ডার দেয়।আড্ডা শেষ করে রুপক গাড়িতে উঠে।ড্রাইভারকে বলে বাসায় যেতে।সেই রাত্রে রুপক অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে,বিশাল এক মাঠে সে পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ দিচ্ছে।পাওয়ার টিলারের পিছনে প্রচুর শালিক।মাঠের এক প্রান্তে একটি সাইন বোর্ড।তাতে লেখা,ভাগলপুর কৃষি সমবায় সমিতি।
২০/০৫/২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:০৫