somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্তা

৩১ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চুপচাপ বসেছিল তার কক্ষে।বাহিরে আমবস্যার ঘোর আঁধার।বাহিরের আঁধার চেপে বসেছে কংসের মনে।মৃত্যু চিন্তা আচ্ছন্ন করেছে তাকে।দ্বার রক্ষী গুপ্তচরের আগমন বার্তা দেয়।কক্ষে গুপ্তচর প্রবেশ করে।
-কংস মহারাজের জয় হোক।জয় হোক কংস মহারাজের।
কংস হাত তুলে ইঙ্গিত করে।গুপ্তচর থেমে যায়।
-কি খবর?
-মহারাজ,নন্দরাজ আর তার প্রজারা মিলে পুতনার দেহ কেটে ছোট ছোট টুকরায় পরিণত করেছে।তারপর যমুনার পারে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করেছে।
দূতের কথা শুনে কংস উঠে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণ পায়চারী করে।
-পুতনার দেহ কত বড় হয়েছিল?
-বারো ক্রোশ মহারাজ।
কংস জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।বাহিরের আঁধারে জোনাকীর রাজত্ব।সে জানে সে এক প্রচন্ড অত্যাচারী রাজা।কিন্ত কি করবে?যখনই মনে হয় ওর জন্ম হলো ওর মায়ের ব্যভিচারের ফল,তখন সে পরিণত হয় রাক্ষস রাজায়।রাক্ষস কুলে জন্ম যে ওর।সে জানালার কাছ হতে সরে আসে।
-পুতনার অস্তিভস্ম?
গুপ্তচর তার পোটলার ভেতর হতে পেতলের ঘটি বের করে সামনের টেবিলে রাখে।সাদা কাপড়ে ঘটির মুখ বাঁধা।কংস ঘটির মুখ খুলতে বলে।গুপ্তচর কাপড় খুলে ফেলে।কক্ষে অন্যরকম সুন্দর এক গন্ধ ছড়িয়ে পরে।কংস এগিয়ে আসে।ঘটি তুলে নেয় হাতে।চোখ বন্ধ করে মন্ত্র পাঠ করে।তারপর আলতো করে ঘটিতে ফুঁ দেয়।ঘটি নামিয়ে রেখে আবার কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে।গুপ্তচরের হাতে ঘটি ফিরিয়ে দিয়ে কক্ষে কিছুক্ষণ পায়চারী করে।তারপর গুপ্তচরের কাছে এগিয়ে এসে খুব নীচু স্বরে নির্দেশনা দেয়।গুপ্তচর কুর্নিশ জানিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে।গোকুলের পথ ধরে সে।

শিয়ালদহ স্টেশন।আফজাল সাহেব তার দলের সাথে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন।উত্তর প্রদেশে যাবেন।এপার বাংলা আর ওপার বাংলার কয়েকজন নৃতত্ত্ববিদ নিয়ে গঠিত হয়েছে এই দল।বাংলাদেশ হতে আফজাল সাহেবের সাথে এসেছে তার দুই ছাত্র।যথা সময়ে ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশনে আসে।উনারা সবাই ট্রেনে চেপে বসেন।
-স্যার,আমরা কোথায় গিয়ে উঠবো?
ফিরোজ জানতে চায় আফজাল সাহেবের কাছে।পত্রিকাটি ভাঁজ করে একপাশে রাখেন আফজাল সাহেব।
-আমরা প্রথমে মথুরায় যাবো।ওখানে হোটেল বুকিং দেওয়া আছে।আর কস্তবদা একদল খননকারীও ঠিক করে রেখেছেন।
আফজাল সাহেবের কথা শুনে কস্তব স্মিত হাসেন।

মথুরায় দলটির সাথে ড.. নাড়গোড়া যোগ দেন।উনি এই অঞ্চলের বাসিন্দা।দলটির যাতায়াত সুবিধার জন্য দুটি মাইক্রো উনি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন।হোটেলে আফজাল সাহেবদের উনি স্বাগত জানান।পরিচয় পর্ব শেষ হলে যে যার রুমে চলে যান ফ্রেশ হওয়ার জন্যে।রাত্রে ডিনার শেষে সবাই একত্রিত হন।
-আমরা আগামীকাল প্রথমে কনস্কিলায় যাবো।তবে ওখানে কোন খনন কার্য পরিচালনা করবো না।
ড.নাড়গোড়া বলেন।
-কনস্কিলা কি যমুনার উত্তর তীরে?
ফিরোজ জানতে চায়।
আফজাল সাহেব মাথা নাড়িয়ে সায় দেন।

পরদিন সকাল নয়টায় সবাই মাইক্রোতে চেপে বসেন।
-এখানে অনেক বন ছিল আগে?
সোহেল প্রশ্ন করে।
-হ্যাঁ প্রাচীন ইতিহাস যদি আপনি দেখেন তবে দেখবেন এখানে বন-বনানীতে ভর্তি ছিল।
কস্তব উত্তর দেয়।
প্রথমদিন দলটি সারাদিন কনস্কিলায় কাটায়।বিভিন্ন ডাটা সংগ্রহ করে।প্রাচীন ধ্বংস স্তুপ চারপাশে।আচমকা আফজাল সাহেবের মনে হয় উনি যেন প্রাচীন রাজপ্রাসাদের অন্তপুরীতে হাঁটছেন।উনি যেন রাক্ষসরাজ দ্রুমিল।রুপ বদলে হয়ে গেলেন রাজা উগ্রসেন।পদ্মাবতীর কক্ষে প্রবেশ করলেন চুপিসারে।
-কি ভাবছেন অধ্যাপক।
নাড়গোড়ার প্রশ্নে ঘোর ভাঙ্গে আফজাল সাহেবের।
-কংসের জন্ম ইতিহাস মনে পড়লো।
-আমরা কি আগামীকাল হতে মূল কাজ শুরু করবো?
-আমাদের খননকারী শ্রমিক দলটি আজকে গোকুলে পৌঁছাবে।আমরা খুব সকালে ওখানে যাবো।

কাটরা কেশদেবের মন্দিরের পাশে একটি খোলা জায়গায় দলটি তাঁবু টাঙ্গিয়েছে।খনন কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।সবার মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করা আছে।সোহেল,ফিরোজ আর কলকাতার ছেলে অনিরুদ্ধ পিএইচডির স্টুডেন্ট।
-এই মন্দিরটি কোন সময়ে নির্মিত?
ফিরোজ প্রশ্ন করে।
-রাজা বীরসিংহ নির্মাণ করেন।কৃষ্ণের জন্মভূমি এটি।তবে মন্দিরটি আওরঙ্গজেব ধ্বংস করে,একটি ঈদগাঁ মাঠ বানিয়েছিলেন।
অনিরুদ্ধ গল্প বলার ঢং এ সব কথা বলে ফিরোজদের কাছে।

প্রচন্ড তাপদাহ চলছে।এই গরমে আফজাল সাহেবের খুব কষ্ট হচ্ছে।যদিও উনি ছায়াতেই অবস্থান করছে।আজ দুই দিন ধরে খনন কার্য চলছে।উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই।দলের অন্যসবাই আজ মথুরায় গিয়েছে।গরমে আফজাল সাহেব আর যাননি।শ্রমিকদের সাথে উনি খনন কার্য পরিচালনা করছেন।শ্রমিকদের একজন আফজালকে ডাক দেয়।আফজাল সাহেব উঠে সেদিকে যান।
-স্যার,একটি ঘটি পেয়েছি।পিতলের।
আফজাল সাহেব ঘটিটি নিয়ে উনার টেবিলে ফিরে আসেন।টেবিলে রেখে খুব সাবধানে ঘটি পরিস্কার করেন ।চমৎকার কারুকার্য খচিত পিতলের ঘটি।কাপড় দিয়ে ঢাকা।

তপন ভোজন বিলাসের সামনে গাড়ি পার্ক করে।সৌম্যকে ফোন দেয়।সৌম্য ওর খুবই কাছের বন্ধু।খুব করে ধরেছে তপনকে রামকৃষ্ণ মিশনে যাওয়ার জন্যে।দশ মিনিট পর সৌম্য ওর অফিস থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে।তপন গাড়িতে স্টার্ট দেয়।
-দেখ সৌম্য,আমি ধর্ম-কর্মে খুব একটা আস্থাশীল নই।তোর অনুরোধ ফেলতে পারছি না বলেই যাচ্ছি।
তপনের কথায় সৌম্য হেসে ফেলে।কোন উত্তর দেয় না।
রামকৃষ্ণ মিশনে এই প্রথমবার এলো তপন।সৌম্য ওকে মহারাজদের থাকবার জায়গায় নিয়ে যায়।যাওয়ার সময় সবুজ লন তপনকে মুগ্ধ করে।ওরা দুইজন দর্শনার্থীদের ঘরে গিয়ে বসে।বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী আগে থেকেই বসে ছিল।কিছুক্ষণ পর বয়স্ক এক মহারাজ ঘরে আসেন।উনার জন্য নির্ধারিত সোফায় গিয়ে বসেন।
-সবাইকে প্রসাদ দাও।
মহারাজ উনার সহচরকে প্রসাদ দিতে বলেন।
সহচরটি সবার হাতে হাতে প্রসাদের প্লেট দেয়।তপনকে দিতে আসলে তপন মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে।মহারাজের কাছে একজন তরুণ এগিয়ে যায়।গিয়ে মাটিতে সটান হয়ে প্রণাম করে।প্রণাম শেষ করে মহারাজের পাশেই কার্পেটে বসে পড়ে।মহারাজ ঝুড়ি থেকে চকলেট নিয়ে তরুণকে দেয়।
-বাবা,আমি ভগবত জ্ঞান পাবো কোথা হতে?
তরুণটি প্রশ্ন করে।
-পাকা পাকা কথা বলোনাতো।তুমি কতটুকু চেষ্টা করেছো?কল্পতরু-তুমি যা চাইবে তাই পাবে।
মহারাজ বলেন।
সৌম্য তপনকে ডেকে বাহিরে নিয়ে আসে।ওরা আর একটি ঘরে যায়।সেখানে চিন্ময় মহারাজের সাথে তপনকে পরিচয় করিয়ে দেয় সৌম্য।তপন জানতে পারে,চিন্ময় মহারাজ পেশায় একজন মনোচিকিৎসক ছিলেন।উনার জীবনে আচমকাই পরিবর্তন আসে।যার ফলে উনি পেশা ছেড়ে ঈশ্বরের পথে চলে আসেন।সৌম্য চিন্ময় মহারাজাকে নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করেন উনাদের পরবর্তী অনুষ্ঠানের করণীয় নিয়ে।

ফেরার পথে তপন সৌম্যকে বাসায় নামিয়ে দেয়।
-তুই তাহলে কবে আসবি নাটোরে।
তপন প্রশ্ন করে।
-তোর বিয়ে কয় তারিখে?
সৌম্য প্রশ্ন করে।
-আগামী মাসের চৌদ্দ তারিখে।
-আমি বারো তারিখে আসি?
-ঠিক আছে।
তপন গাড়ি স্টার্ট দেয়।
-ঢাকায় আর কয়দিন থাকবি?
-বিয়ের বাজার করতে যে কয়দিন সময় লাগে।

তপনের বড়দি ধানমন্ডিতে থাকে।সেখানেই উঠেছে তপন।দিদিকে নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করে সে।বিয়ের কেনাকাটায় এত হুজ্জত তা ওর জানা ছিলোনা।কেনাকাটা শেষ করে ও নাটোরে চলে আসে।ওদের বাড়িটি বেশ পুরানো ধাঁচের।কয়েকশো বছরের পুরানো।তপনের বাবা মারা যাবার দুই বছর আগে বাড়িটি কিনেছিলেন।যারা বাড়িটি বেচে দিয়েছেন তারাও খুব সম্ভ্রান্ত ছিলেন।উনারা এখন লন্ডনে থাকেন।উনাদের পিতা আফজাল সাহেব একজন বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক ছিলেন।কত দেশ-বিদেশ ঘুরেছেন।

বিয়ের কয়েকটি দিন স্বপ্নের মতই শেষ হয়ে যায় কান্তার।কত আত্মীয়-স্বজন,কত মানুষ।বাবা-মায়ের সজল চোখ।কান্তাদের পরিবারের সাথে তপনদের পরিবারের সম্পর্ক বেশ পুরানো।কান্তা আর তপনের বাবা খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন।আর সেই সূত্রেই বিয়ে।

রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে ল্যাপটপে কাজ করছিল তপন।আচমকা অচেনা এক সুন্দর গন্ধ ওর নাকে আসে।ক্রমেই গন্ধ তীব্রতর হতে থাকে।কাজ রেখে উঠে দাঁড়ায়।বিছানায় কান্তা স্থির হয়ে বসে আছে।মেয়েটি আসলেই খুব সুন্দরী,মনে মনে স্বীকার করে তপন।
-তুমি ঘরে এলে কখন?
তপনের কথায় কান্তা কোন উত্তর করেনা।
-তুমি কি কোন গন্ধ পাচ্ছো?
কান্তা মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেয়।
-তুমি কি গায়ে কিছু মেখেছো?
কান্তা কথা না বলে শুয়ে পড়ে।তপন আবার টেবিলে ফিরে আসে।কাজ শেষ করতে করতে রাত দুইটা বেজে যায়।ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়।তপন নুপুরের আওয়াজ পায়।বাহিরে কেউ হাঁটছে নুপুর পায়ে দিয়ে।তপন দরজা খুলে বাহিরে আসে।বাহিরে কেউ নেই।করিডোর ফাঁকা।সে হাঁটতে হাঁটতে বাহির বারান্দায় চলে আসে।খুব সুন্দর জ্যোৎস্না রাত।কিছুক্ষণ জ্যোৎস্না দেখে আবার ঘরে ফিরে আসে।

-মা,গতকাল কি জ্যোৎস্না ছিল?
সকালের নাস্তা সারতে সারতে তপন প্রশ্ন করে।
-হ্যাঁ,গতকাল জ্যোৎস্না ছিল।শোন বাবা,কান্তাকে আজ ওর বাবার বাড়িতে নিয়ে যাস একবার।বেয়াইন ফোন দিয়েছিল।
মিতালী দেবী তপনকে বলেন।
-ঠিক আছে মা।কান্তা তুমি রেডি থেকো,আমি বারোটার সময় নিতে আসবো।
নাস্তা ছেড়ে তপন বেরিয়ে পড়ে।

রাতে তপনকে একাই ফিরতে দেখে মিতালী।কিছু অবশ্য বলেনা।
-খাবিনা বাবা?
-না মা।আমি ও বাড়ি হতে খেয়ে এসেছি।তপন ওর ঘরে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে।

পরদিন দুপুরে কান্তার ফোন আসে।
-জানো আমাদের পাশের বাড়ির এক ছোট্ট বাচ্চা মারা গিয়েছে।
-কি ভাব মারা গেলো?
-ডাক্তার বলছে বিষ খাওয়ানো হয়েছে।
-শিশুকে বিষ খাইয়েছে?বলো কি?
-কি আর বলবো।কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।সবার খুব মন খারাপ।তুমি আগামীকাল এসে আমাকে নিয়ে যাও।আমার এসব ভাল লাগছে না।
-ঠিক আছে আমি বিকালে নিতে আসবো।
-আচ্ছা।

এভাবেই দিন কাটছিল।কয়েক মাস পরের ঘটনা।রাতে নুপুরের আওয়াজে তপনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।কান্তা ঘুমাচ্ছে।তপন বিছানা থেকে নেমে আসে।দরজা খুলে উঁকি মারে।কেউ নেই বাহিরে।দরজা বন্ধ করে বিছানায় ফিরে আসে।বিছানায় কান্তার অবস্থা দেখে খুব আশ্চর্য হয়।কান্তা উন্মুক্ত বক্ষে বসে আছে।তপন বিছানায় বসে কান্তাকে কাছে টানে।কান্তা নড়েনা।এবার বেশ জোরের সাথেই টানে।কিন্তু কান্তা অনড়।তপন আবার সেই সুন্দর গন্ধ পায়।
-কি হলো,এত শক্তভাবে বসে আছো কেন?কাছে আসো।
কান্তা কোন উত্তর দেয়না।শুয়ে পড়ে।


-বাবা,তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়।
-কেন কি হয়েছে মা?
-পাশের বাড়ির ছয় মাসের বাচ্চাকে কেউ বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে।
মায়ের ফোন পেয়েই তপন বাড়িতে চলে আসে।বাড়িতে শুধু কাজের মাসি আছে।সে জানায়,সবাই দীপকদের বাড়িতে গিয়েছে।তপনদের পাশের বাড়িটিই দীপকদের।তপনও ওই বাড়িতে যায়।সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।দীপকদার স্ত্রী মেঝেয় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে।কেউ কিছুই বলতে পারছেনা,কে বিষ খাইয়েছে এই দুধের শিশুকে?

শ্মশান থেকে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়।কিছু না খেয়েই তপন শুয়ে পড়ে।
-গতকাল রাতে তুমি বুকের কাপড় খুলে বসে ছিলে।আমি তোমাকে কাছে টেনেছি।কিন্তুতুমি আসোনি।
-কি বলছো এসব?
-কেন তুমি ভুলে গিয়েছো?
-কি ভুলে যাবো?
-গতরাতের ঘটনা।তাছাড়া মাঝে মাঝেই তুমি বিছানায় অদ্ভুদভাবে বসে থাকো।
-তুমি কি বলছো?
-তুমি কোন গন্ধ পেয়েছো গতরাতে?
-নাতো
তপন আর কথা বাড়ায় না।শুয়ে পড়ে।

একমাস পরের ঘটনা।মিতালী দেবী মেয়ের বাড়িতে গিয়েছেন।বাড়িতে তপন আর কান্তা।আর কয়েকজন কাজের লোক।গভীর রাত।তপনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।প্রথমে মনে করে ভুমিকম্প হচ্ছে।কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারে খাট নড়ছে।বিছানায় কান্তা নেই।পাশে তাকায় তপন।বুকের মধ্যে ধড়ফড় করে উঠে।খাটের পাশে ছোট্ট একটা বাচ্চা।ধরমড় করে উঠে বসে বিছানায়।সেই তীব্র ঘ্রাণ ঘরময়।কান্তাকে কোথাও দেখতে পায়না।সে দরজার দিকে তাকায়।দরজায় খিল দেওয়া।আবার বাচ্চার দিকে তাকায়।বাচ্চা নয় কান্তা দাঁড়িয়ে আছে।খাট আর কাঁপছে না।কান্তা বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে।তপন ভয়ে ভয়ে কান্তার গায়ে হাত দেয়।কান্তা গভীর ঘুমে।

পরদিন সকালেই কান্তাকে নিয়ে তপন ঢাকায় চলে আসে।মা এবং দিদি-জামাই বাবুকে সব খুলে বলে।সবাই ঠিক করে নিউরো মেডিসিনের কাউকে দেখাবে।ডাক্তার রুগীর ইতিহাস শুনে ইইজি,সিটিস্ক্যান সব পরীক্ষা করতে দেয়।পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার শুধু সিডেটিভ ড্রাগ লিখে দেয়।
-ডাক্তার সাহেব কি সমস্যা পেলেন?
তপন প্রশ্ন করে।
-পরীক্ষায় সব কিছুই নরমাল।একটা সিডেটিভ দিয়েছি।কিছুদিন অবজারভেশনে থাক।পনেরো দিন পর আবার আসেন।
তপন সবাইকে নিয়ে নাটোরে ফিরে আসে।পরবর্তী দুই মাস কান্তা বেশ ভালোই থাকে।এর মধ্যে কান্তার মা কান্তার হাতে তাবিজ পড়িয়ে দিয়েছে।পুরো বিষয়টি কান্তার কাছে অন্যরকম লাগে।সবাই বলছে সে অসুস্থ।কিন্তু সে বুঝতে পারছে না।তপনও আগের মত আর হাসি খুশি নেই।মাঝে মাঝে কান্তার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।এর মধ্যে ব্যবসার প্রয়োজনে তপন একদিন ঢাকায় যায়।রাতে প্রচন্ড শব্দে মিতালী দেবীর ঘুম ভেঙ্গে যায়।কান্তার ঘরের দিক হতে শব্দ আসছে।কাজের লোকদের ডেকে তুলে মিতালী দেবী। কান্তার ঘরের কাছে যায়।
-বউমা।বউমা কি হয়েছে?দরজা খোল।
সবাই দরজা ধাক্কায়।কান্তা দরজা খুলেনা।ভেতর থেকে ভীষণ রকম শব্দ ভেসে আসে।
-লক্ষ্মণ,তোরা দরজা ভেঙ্গে ফেল।
বহু কসরত করে দরজা ভেঙ্গে সবাই ভেতরে প্রবেশ করে।মিতালী দেবী আলো জ্বেলে দেন।আলো জ্বলতেই সবাই ভয়ে সেঁটিয়ে যায়।কান্তার খাট শূণ্যে ভাসছে।কান্তাও শূণ্যে ভাসছে।

কান্তাকে তার ডাক্তার হাসপাতালে ভর্তি করে নেয়।কান্তা ভীষণ রকম ভায়োলেন্ট হয়ে গিয়েছে।বেঁধে রাখও যায়না।যখন অসুখ বৃদ্ধি পায় তখন ভীষণ শক্তিশালী হয়ে যায়।বেশীর ভাগ সময় তাকে কড়া সিডেটিভ দিয়ে রাখতে হয়।দশজন ডাক্তারের বোর্ড বসে।কিন্তু কেউ কোন সমাধান দিতে পারেনা।তপন ডাক্তার সাহেবের সাথে দেখা করে।
-সমস্যা কোথায় জানা গেলো?
-আমরা প্রথমে প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া ধরে এগিয়েছিলাম।কিন্তু লক্ষণ বা প্যাথলজিক্যাল স্টেট মেলে না।ঠিক বুঝতে পারছি না,সমস্যাটা কি?
-ডাক্তার সাহেব,আপনি এই বিষয়ের বাংলাদেশের সেরা ডাক্তার।আপনি এমন কথা বললে আমরা কোথায় যাবো?
-তপন বাবু, আপনি ঈশ্বর বিশ্বাস করেন?
-আমি আসলে আস্তিক নই। কেন?
-আপনি কোন সাধুকে দিয়ে আপনার ওয়াইফকে দেখান।

সৌম্য সব ব্যবস্থা করে দেয়।রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান মহারাজকে সমস্ত বিষয় খুলে বলে সে।প্রধান মহারাজ চিন্ময় মহারাজকে নাটোর যেতে অনুমতি দেন।
-কান্ত এই দোলকটি দেখুন।দোলকটি দুলছে।আপনার ঘুম পাচ্ছে।এক,দুই,তিন…
চিন্ময়ের কথা শুনতে শুনতে কান্তা ঘুমিয়ে পড়ে।ঘরে তপন,সৌম্য আর চিন্ময়।
-কান্তা আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন।
-পাচ্ছি।
-আপনি কি কান্তা?
-হ্যাঁ আমি কান্তা।
-আমি কান্তার সাথে নয়,কান্তার ভেতরে যে বাস করছে তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।
-বলবো না।আমি কথা বলবো না।
সারা ঘরে একটা সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।কান্তার কন্ঠ বদলে যায়।চিন্ময় কান্তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।কন্ঠ বিকৃত করে বলে,কান্তার ভেতরে আপনি কে?
-আমি,আমি পুতনা।আমি পুতনা।
এই কথা বলতে বলতে কান্তা উঠে দাঁড়ায়।কলার ধরে চিন্ময়কে শূণ্যে তুলে ধরে।তারপর নীচে আছড়ে ফেলে।কান্তা নিজেও জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়।

এর কয়েক মাস পর তপন বাড়ি বদলায়।চিন্ময় মহারাজের নির্দেশ মোতাবেক একটি সুলক্ষণযুক্ত বাসা দেখে ভাড়া নেয়।আস্তে আস্তে কান্তা স্বাভাবিক হয়ে উঠে।এক বছর পর তপন ওই বাড়ি ভাড়া দিয়ে দেয়,এক বয়স্ক দম্পতিকে।উনাদের একটি মাত্র ছেলে আমেরিকায় থাকে।ভদ্রলোক পেশায় সরকারি ডাক্তার।

জয়নাল সাহেবের আজ খুব খুশির দিন।ছেলে আসছে আমেরিকা হতে।সাথে নতুন বউমা।ছেলে এক ভারতীয় বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করেছে।মেয়ে আমেরিকান সিটিজেন।

বাংলাদেশে এসে শুভশ্রী আপ্লুত হয়ে পড়ে।সবাই এত সজ্জন।ওর শ্বশুর বাড়িটি অনেক পুরানো।তবে এখনও চাকচিক্য আছে।রাতে খাবার পর শুভশ্রী আর আনিরুদ্ধ ছাদে যায়।জ্যোৎস্না রাত।দু’জন ছাদে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে।পরে জীবন বাবু ডাক দিলে ওরা উঠে পরে।
-অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছো?
অনিরুদ্ধ শুভশ্রীকে প্রশ্ন করে।
-একটু দাঁড়াও।আমি আসছি।
ফেরার পথে অনিরুদ্ধ শুভশ্রীর হাতে পোটলা মত কিছু একটা দেখতে পায়।ঘরে নিয়ে গিয়ে অনিরুদ্ধকে শুভশ্রী জিনিসটা দেখায়।
-দেখ কত পুরানো পিতলের ঘটি।কাপড়টাও অনেক পুরানো।
শুভশ্রী পিতলের কাপড় দিয়ে ঢাকা মুখ খুলতে যায়।অনিরুদ্ধ বাধা দেয়।
-ওসব দিনের বেলা দেখো।
গভীর রাতে অনিরুদ্ধের ঘুম ভেঙ্গে যায়।খুব সুন্দর একটি গন্ধ ছড়িয়ে আছে সারা ঘরময়।পাশে তাকাতেই দেখে শুভশ্রী বসে আছে।বুক উদোম।


জুন,২০১৯

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×