somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া

১১ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুলশানের হোলে আর্টিজান বেকারিতে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে তেমন কিছু লিখতে পারিনি, ঘটনাটা জানতে পারার পর থেকে আসলে স্বাভাবিকই ছিলাম না। ইশরাত আপার মৃত্যুর খবর জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী শ্রদ্ধেয় মাকসুদ ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারি, তারপর আরও অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম।বছর তিন বা চারেক আগে ইশরাত আপা ঢাকার কিছু রিকশা পেইন্টারকে প্রমোট করছিলেন,একটা এক্সিবিশন করেছিলেন রিকশা চিত্র বা পট চিত্র নিয়ে, তখন থেকেই তাকে চিনতাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি প্রজাপতির মতো প্রাণবন্ত কর্মমুখর একজন মানুষ কে; হটাৎ সব এমন হয়ে যাবে ভাবিনি।
এরই মাঝে দেখতে পেয়েছি কত মানুষ রাতারাতি বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠলেন।কেউ কমান্ডো অভিযান বিশেষজ্ঞ, কেউ মগজ ধোলাইয়ে বিশেষজ্ঞ, কেউবা সমরাস্ত্র বিশারদ। বিজ্ঞ ডাক্তার বন্ধুরা মাইন্ড কন্ট্রোল করার মতো বিপজ্জনক ঔষধ গুলির প্রেসক্রিপশন জনগনের মাঝে প্রকাশ্যে উন্মুক্ত করে দিলেন! ওনাদের অপরিপক্ক দায়িত্বহীন জ্ঞানের তারিফ করতেই হয়!
আর কিছু শ্রেণী আছে যারা সর্বদাই অবস্থা হতে ফায়দা লুটতে চায়।কারও রোড এক্সিডেন্ট হলে কিছু মানুষ মনুষত্বের কারণে ঝাপিয়ে পড়ে আবার কিছু দুপেয়ে জানোয়ার সাহায্য করার ছলে সেই সব মানুষের ঘড়ি, মোবাইল মেরে দেয়ারও চেষ্টা করে।এরা সবসময় পানি ঘোলা করে মজা পায়, মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলতে এরা পছন্দ করে।বর্তমানে হেযবুত তৌহিদ, ওলামা লীগ সহ অফিস সর্বস্ব দল গুলি মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে গেম খেলছে, নিজেদের রেটিং বাড়িয়ে নিচ্ছে।
দেশের এমন দুর্ভাগ্যজনক এবং লজ্জাজনক অবস্থায় আমরা সুফীবাদিরা পড়েছি চরম দুর্ভোগে, আমদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে।বিগত তিন বছর ধরে হাতে গোনা ত্রিশ থেকে চল্লিশজন সুফীবাদি মানুষ নীরবে কসামাজিক মাধ্যমগুলোতে উগ্রপন্থী আর তাদের প্রচারকে প্রতিরোধ করেছে। জীবনের মূল্যবান সময়গুলি তারা ধান্দা করে খরচ করেনি, মানুষকে উগ্রপন্থীদের প্ররোচনা হতে রক্ষা করে তারা সময়গুলো খরচ করেছেন। কয়জন মানুষ আমাদের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন? একশজন লোকও আমরা পাইনি! তারপরও গত কয়েক বছরে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আর মুর্শিদের কৃপায় আজ ফেসবুকে উগ্রপন্থীরা বিলুপ্ত প্রায়। পহেলা জুলাই এই নিবেদিত প্রাণ মানুষগুলো অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে, তাদের অনেকেরই মন ভেঙে গিয়েছে , আমাদের সকল পরিশ্রম আর সময় ব্যয়কে অর্থথহীন করে দিতে চেয়েছে কিন্তু তারা জানেনা যে আমরা সুফীরা কখনও হার জানিনা, শরীরে শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে উগ্রপন্থী সালাফিজমকে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কিছু দুর্বলতাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।
১. অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অপরিণত শিক্ষাক্রম (curriculum)
২.রাষ্ট্রের ধর্মনীতির অব্যবস্থাপনা
৩.ধর্মীয় অনুদানের উপর নজরদারির অভাব
৪.মসজিদ ভিত্তিক সন্ত্রাস এবং তাবলীগ জামাত

০১.অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অপরিণত শিক্ষাক্রম পাঠ্যক্রম (curriculum): বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরেই তিন ধরণের ব্যবস্থা বিদ্যমান, বাংলা মাধ্যম, ইংরেজী মাধ্যম, মাদ্রাসা মাধ্যম।শিশুরা একদম শুরু থেকেই তিন ধরনের মানসিকতা নিয়ে বড় হচ্ছে।মাদ্রাসার শিশুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরিদ্র শ্রেনী হতে আসে। তাদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞান না পড়িয়ে আরবি মুখস্থ করানোই যেন মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাড়িয়েছে।বাংলা মাধ্যম চলন সই পর্যায়ে থাকলেও ইংরেজী মাধ্যম স্কুলগুলি বস্তত নজরদারির বাইরে।মানারাত, স্কলাষ্টিকা, তুর্কিশ হোপ, আমেরিকান ইন্টা. স্কুলের প্রাথমিক শ্রেনীর পাঠ্য বইয়ের মধ্যে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে বিলাল ফিলিপ আর জাকির নায়েকের Islam for Today ধরনের বই রয়েছে! এমন একটা বই শিশুর সৃজনশীলতা ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।তাই সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সকল পাঠ্যক্রম সরকারের পাঠ্যসূচী অনুসারে একই রকম হতে হবে।

০২.রাষ্ট্রের ধর্মনীতির অব্যবস্থাপনা: অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ, তারা ধর্ম অবলম্বন করার ভিত্তি চায়।রাষ্ট্রের দুর্বলতার সুযোগে মধ্যপ্রাচ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু জ্ঞানপাপী আলেমরা জনগনকে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানে বুঝিয়েছে সালাফিজমকে।সালাফিজমের প্রচারকদের বড় বড় চ্যানেল স্পন্সর দিয়েছে।সরকারি নীতিমালা থাকলে সেটা তাদের করতে পারার কথা নয়।সালাফিজমকে ঠেকাতে চাইলে সুফীজমকে প্রমোট করতে হবে সরকারি ভাবে। সুফীজমকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে ইসলাম আরবের শেখরা আনেনি বরং সুফীরাই এনেছে।যেকোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকা অবশ্যই জরুরী।

০৩.ধর্মীয় অনুদানের উপর নজরদারির অভাব: দীর্ঘদিন ধরে আরবের দেশগুলো হতে প্রচুর টাকা অনুদান এসেছে, তাছাড়া দেশীয় অনেক ধনকুবেরও নিয়মিত অনুদান দিয়ে থাকে। এই অনুদানের টাকার সদব‍্যবহার কখনই নজরদারি করা হয়নি। ফলশ্রুতীতে সে টাকা দিয়ে গরীবের তেমন উপকার হয়নি, কেবলই কারুকার্যময় মসজিদ আর এতিমখানা তৈরী হয়েছে। এভাবে সমস্ত দেশে তারা নিজেদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিয়েছে।অতি সত্বর সকল মসজিদ এবং মাদ্রাসাগুলিকে নজরদারির মধ্যে আনতে হবে।

০৪.মসজিদ ভিত্তিক সন্ত্রাস এবং তাবলীগ জামাত : ইসলামী সালাফিজমের জনক ইবনে তাইমিয়ার ভাবশিষ্য হলো মওদুদী আর মওদুদীর ভাবশিষ‍্য হলো মওলানা ইলিয়াস।এই ইলিয়াস সাহেবের মতবাদ হচ্ছে আজকের তবলীগ জামাত অথচ দিনের পর দিন এদের দেশব্যাপী প্রচার চালাতে দেয়া হয়েছে।অনুদানের অর্থে নির্মিত মসজিদগুলিতে তারা নিজেদের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।সেই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জঙ্গিরা বর্তমানে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অথচ পবিত্র কুরআনে এমন অসৎ উদ্দেশ্যে তৈরী করা মসজিদ নিয়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই সাবধান করা আছে, এমনকি ঐসব মসজিদে রাসূলকে কোনোদিনই না দাড়ানোর আদেশ করেছেন স্বয়ং মহান আল্লাহপাক।
"আর যারা নির্মাণ করেছে মসজিদ জিদের বশে এবং কুফরীর তাড়নায় মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃস্টির উদ্দেশ্যে এবং ঐ লোকের জন্য ঘাটি স্বরূপ যে পূর্ব থেকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করে আসছে, আর তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, আমরা কেবল কল্যাণই চেয়েছি। পক্ষান্তরে আল্লাহ সাক্ষী যে, তারা সবাই মিথ্যুক।"
(তওবাহ :১০৭)
"আপনি কখনো সেখানে দাড়াবে না, যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, সেটিই আপনার দাঁড়াবার যোগ্য স্থান যেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন।"
(তওবাহ :১০৮)।

অর্থাৎ কুরআন মতেই তাবলীগ জামাতের মসজিদ ভিত্তিক নেটওয়ার্কিং নিষিদ্ধ। আজ জঙ্গিরা আশ্রয় হিসেবে কিছু মসজিদকে ব্যবহার করছে, মানুষ হত্যা করে তারা মসজিদে গিয়ে চাপাতি পরিস্কার করছে, মসজিদের ভিতরে আশ্রয় নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলিও চালাচ্ছে! জঙ্গিদের চিহ্নিত করতে না পারা এবং জঙ্গিদের স্হান পরিবর্তন ঠেকাতে না পারার কারণও তাবলীগ জামাত। তবলীগের দলের সাথে ছদ্মবেশে তারা সহজেই স্হান পরিবর্তন করতে পারছে।যদিও হজ্জ ছাড়া ইসলামে স্বীকৃত কোনো গণসমাবেশ নেই তারপরও প্রতি বছর হাজার খানেক বিদেশি জামাতিদের দেশে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বেদাত বিশ্ব ইজতেমা। সেই বিদেশিরা কোথায় যায় কতদিন থাকে তার কোনো নজরদারির বালাই নেই, অবশ্য আমাদের সেই জনবলও নেই।এই কারণেই ইজতেমা করার জন্য জায়গা দিতে একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশই সে সময় রাজি হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হলো পৃথিবীর যতগুলো দেশে তবলীগ জামাত আছে সেখানে জঙ্গিও আছে, যেসব দেশ তবলীগ জামায়াত বন্ধ করতে পেরেছে তারা জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে।
আশা করি আমার সকল শ্রদ্ধাভাজন সুহৃদ এবং বন্ধু লিখাটি পড়বেন এবং সাধ্যমত এ বিষয়টি প্রচার করবেন।আমি ক্ষুদ্র মানুষ, আমার লিখা বা কথা দেশের কর্তা ব্যক্তিদের হয়তো নজরে আসবে না কিন্তু আপনারা যারা আজ সেলিব্রেটি তারা সবাই যদি বলেন তবে তা প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
নিশ্চিতরূপেই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা অতীতেও সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছে, ভবিষ্যতেও জয়ী হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×