বাংলাদেশকে আমরা মা বলে ডাকি কিন্তু তাকে কি আমরা মায়ের প্রাপ্য সম্মান দিতে পেরেছি?যদি পারতাম তাহলে কি তাকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দিতাম?
উচ্চ শিক্ষিত জ্ঞানী বন্ধুগন যখন সুন্দরবনকে ইতিমধ্যেই মৃতপ্রায় আখ্যা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিতে বলছেন তখন সত্যিই সন্দেহ জাগে যে তারা আসলেই বাংলা মায়ের সন্তান কিনা!নিজের মায়ের শরীরে অসুখ হলে তাকে চিকিৎসা না করিয়ে তিলে তিলে মরতে দেয়া কোনো সুসন্তানের পরিচয় বহন করে না।
আমি কোনো জ্বালানি বিশেষজ্ঞ নই, পাওয়ার প্লান্ট বিশেষজ্ঞ নই, এমনকি বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞও নই। সুন্দরবনের পাশে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্হাপনের কথা শুনে বিবেকের দায়ে এ বিষয়ে কিছু পড়াশুনা করার চেষ্টা করেছি। জৈব বৈচিত্র্য এবং পরিবেশ একটি বনের প্রধান বৈশিষ্ট্য, বনের জৈব বৈচিত্র্যের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে মানব সৃষ্ট যেকোনো নির্মাণ (man made structure)।কোনো দূষণের প্রয়োজনীয়তা নেই, শুধু অসামন্জ্ঞস্যপূর্ণ একটি মানব সৃষ্ট স্থাপনা বন্য প্রাণীদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলের (natural habitat) প্রভূত ক্ষতি সাধন করে।ফলে বন্য প্রাণীরা বনের অন্যত্র সরে যেতে থাকে।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার হুমকিতে থাকা রয়েল বেঙ্গল বাঘ সম্পর্কে একটি তথ্য সম্ভবত অনেকেই জানেন না।একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘের বিচরণের জন্য ২৭ কি. মি. থেকে ৩১ কি. মি. বনান্ঞ্চল প্রয়োজন। আমাদের দেশে এখনও বেঁচে থাকা শ'খানেক বাঘের জন্য আবাসস্থল হিসেবে বনান্ঞ্চলের আয়তন এমনিতেই কম, তার উপর রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি বনান্ঞ্চল আরো সঙ্কুচিত করে ফেলে তবে বাঘ নিজেদের আবাসস্থল পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে।
সুন্দরবন ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেরই ভূমিতেই অবস্থিত, বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে আয়তনে ছোট হলেও সুন্দরবনের বড় অংশটাই আমাদের দেশে পড়েছে। তারপরও ভারতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশী বাঘ আছে, আর বাংলাদেশে বাঘ নিয়মিত কমছে। কারণ বাংলাদেশী নির্বোধদের অত্যাচারে বাঘ সহ অসংখ্য প্রাণী ইতিমধ্যে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে নিজেদের স্থানান্তর (Migration) করেছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের উপর নিজের প্রভাব দশ ক.মি. ব্যাসার্ধ (radius) নিয়ে প্রায় ১০০ কি মি. জুড়ে প্রভাব বলয় (Effected area) তৈরি করবে। যাতে করে বাঘ সহ অন্যান্য প্রাণী কুলের বাসস্থান আরও কমে আসবে। বাঘ আর অন্যান্য বন্য প্রাণীরা কিন্তু আমাদের মতো ভিসা আর বর্ডারের তোয়াক্কা করে না।আপনার দেশের গৌরব জাতীয় প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানে নিজের আত্মপরিচয় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া, এটা কি আপনারা বোঝেন? অথচ আপনারা সজ্ঞানে নিজেদের সব বাঘ ভারতকে উপহার দিয়ে দিতে চাচ্ছেন!
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প কতটুকু পরিবেশ দূষণ করবে তা নিয়ে বিস্তর কথা হয়েছে, যুক্তি তর্ক হয়েছে কিন্তু কথা হয়নি প্রকল্পের জ্বালানি অর্থাৎ কয়লা নিয়ে।যারা সিলেটের তামাবিল গিয়েছেন তারা সবাই জানেন কয়লা তামাবিলের দশ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে।গাছের পাতা কয়লার ধুলায় ঢেকে গেছে, মাটির রং পর্যন্ত কালো হয়ে গেছে। তামাবিলে কোনো বিদ্যুৎ প্রকল্প নেই, শুধু কয়লা লোড আনলোড করার ফলে ই এই অবস্থা! সমুদ্রতট অথবা পশুর নদীর যেকোনো স্থানে কয়লা পরিবহনের জন্য এমন ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করার সিদ্ধান্ত আত্মহত্যার সামিল।
আমি ইটের ভাটার ভয়াবহ প্রভাব দেখেছি, গাজীপুর জেলার কালীগন্ঞ্জ উপজেলার সকল মানুষ দেখেছে। একসময় গাছে ফল আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ঘাস জন্মানোও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল! দীর্ঘদিন ধরে ইটের ভাটার আধুনিকায়ন করতে করতে এখন অবস্থার উন্নতি হলেও ফলন আগের তুলনায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
আমরা ঘর পোড়া গরু, এখন আমাদের সিঁদূরে মেঘ দেখলেও অনেক ভয় হয়। বিদ্যুৎ'র প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছিনা কিন্তু তাই বলে সুন্দরবন ধ্বংস করে তা চাইনা। দয়াকরে সুন্দরবন কে ছেড়ে আপনারা আপনাদের সুপার ক্রিটিকাল মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা দেশের অন্য কোথাও প্রদর্শন করুন।আপনাদের পায়ে ধরি আমাদের মাকে আর বিবস্ত্র করবেন না।সন্তানের চোখের সামনে মায়ের এমন অপমান সহ্য করা যায়না।
"আমার মাটি আমার মা
উজাড় হতে দিবোনা"
#SaveSundarban
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:২১