নবী করিম হযরত মুহাম্মদ সা: এর আগমনের পূর্বের আরব জাতী অজ্ঞতা, কুসংস্কার আর মিথ্যায় নিমজ্জিত ছিল|অসভ্য বর্বরদের মতো মধ্যযুগীয় কায়দায় তাহারা জীবন যাপন করিত, এমনকি আরবদের নিজস্ব কোনো ক্যালেণ্ডার বা দিনপন্ঞ্জিকাও ছিলনা; অশিক্ষিত আরবেরা তখন ইহুদীদের বর্ষপন্ঞ্জীর মাধ্যমে দিন গণনা করিত| নবীজি তাঁর কিশোর বয়সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই সমাজের সংস্কারে ব্রত হন|নবীজি জাহেরি হায়াতে থাকা অবস্থায় আরবের কুরাইশ বংশের মন মানসিকতাকে অনেক খানি পরিবর্তন করেন|যাহারা তখনও মানসিকতা পরিবর্তন করিতে পারে নাই, মক্কা বিজয়ের পর তাহারাও অনিচ্ছাকৃত ভাবে পরিবর্তনের অভিনয় করিতে লাগিল|রাসূল জোর জবস্তিতে বিশ্বাস করিতেন না, অত্যাচারে অভ্যস্ত ছিলেন না, বাজে ভাষা, গালি গালাজ করিয়া তর্কে জয় লাভ করিতে তিনি মোটেই আগ্রহী ছিলেন না; তিনি ভালোবাসা এবং ক্ষমাতে বিশ্বাসী ছিলেন|এই কারণেই তিনি মক্কা বিজয়ের কালে এক ফোঁটা রক্তপাতও করেন নাই বরং বিজয়ের পরে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং আবু সুফিয়ান, মুয়াবিয়া, হিন্দা এবং ইয়াজিদ সহ অনেক মুনাফেকদের ইসলামে দাখিল হইবার সুযোগ করিয়া দেন|মুনাফেক আরবদের এমন অভিনয় বেশী দিন স্হায়ী হয় নাই, নবীজির ওফাতের পরপরই তাহারা স্বরূপে আবির্ভূত হয়|নবীজির মনোনিত প্রখ্যাত সমরবিদ খালিদ বিন ওয়ালিদকে সেনাপতির পদ হইতে অন্যায্য ভাবে অপসারণ করিবার মাধ্যমে ইসলাম প্রচারে যে শান্তি এবং সহিষ্ণুতার সুখ্যাতী ছিল তাহার অবসান ঘটে|মুয়াবিয়াকে নতুন সেনাপতির পদে নিয়োগ দেয়া হয় এবং মিশর অভিযানে প্রেরণ করা হয়, মুয়াবিয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় ভাবে হাজার হাজার মিশরীয়কে হত্যা করিয়া আলেকজেন্দ্রীয়া শহর দখল করে| প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম ' আলেকজেন্দ্রীয়ার বাতি ঘর ' এবং ততকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরী ' আলেকজান্দ্রীয়া বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী ' এই শহরেই অবস্হিত ছিল|মুয়াবিয়া আলেকজেন্দ্রীয়া লাইব্রেরী আগুন দিয়া পোড়াইয়া সম্পূর্ণ ধ্বংস করিয়া দেয় এবং বাতিঘরটিকে ভাঙিয়া রদ্দি লোহার দরে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রয় করিয়া দেয়! সেই সময় নীলনদের জল পোড়া ছাই দিয়া কালো বর্ণ ধারণ করিয়াছিল| মুয়াবিয়া পরবর্তীকালে আহলে বায়াতকে প্রতিহত করিবার জন্যে মসজিদে খুতবার পরে শের এ আলী কারামুল্লাহকে গালি গালাজ করার রীতিও চালু করে|
মধ্যযুগে মোঙ্গলরা ইসলামকে সাথে করিয়া লইয়া ভারতবর্ষে আসে, মোঙ্গলরা যখন ভারতবর্ষ আক্রমণ করে তখন তাদের নেতৃত্বে ছিল ইখতিয়ার মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি|মুয়াবিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া বখতিয়ার খিলজিও নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালাইতে থাকেন|সিকিম, শিমলা হইয়া পশ্চিমবঙ্গের দ্বারভাঙা দিয়া বখতিয়ার খিলজি ভারত বর্ষে প্রবেশ করে|ততকালীন খ্যাতনামা বিদ্যাপিঠ 'নালন্দা' পশ্চিমবঙ্গেই অবস্থিত ছিল|বখতিয়ার তার আরবীয় পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্নি সংযোগ করে, তিন মাস ধরিয়া সে আগুন জ্বলিয়াছে, আগুন নিভাইবার মত জীবিত মানুষ সেখানে কমই অবশিষ্ট ছিল|
মুয়াবিয়া তথা ওয়াহাব নজদী এবং তাইমিয়ার মতানুসারিদের এহেন নেক্কারজনক কর্মের আধুনিক উদাহরণ হইতেছে তালেবান এবং আই.এস.এস|
নিকট অতীতে ওসামা বিন লাদেন এবং মোল্লা ওমর আফগানিস্তান দখল করিয়া একই রকম মধ্যযুগীয় পন্থায় দেশের সকল বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ করিয়া দেয় এবং পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা বুদ্ধের সাতশ ফুটের প্রাচীন মূর্তিটিকে ধ্বংস করে|এই মূর্তিটি ইউনিসেফের বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত একটি প্রাচীন স্হাপনা ছিল|
যাইহোক, মোদ্দা কথা হইতেছে রাসূল ইসলাম প্রচারে শান্তি এবং সহিষ্ণুতার যে প্রয়োগ ঘটাইয়া ছিলেন তা রাসূলের ওফাতের পর সকলেই বিস্মৃত হইয়াছে|হিংসা এবং নৃশংসতার সাথে ইসলাম প্রচারের যে ভ্রান্ত নীতি মুয়াবিয়া প্রচলন করিয়াছে সেই মতেই অধিকাংশ মুসলিম আজও নিজেদের মানসিকতাকে লালন করিতেছে| রাসূলের ওফাতের পর হইতে প্রাচীন মুসলিমদের যে মানসিকতা ছিল আর আধুনিক মুসলিমদের যে মানসিকতা তাহা প্রায় একই রহিয়া গেছে; তাহার বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় নাই|এই কারণেই আই.এস.এস এর মতো সন্ত্রাসবাদী দল অমানবিক নৃশংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তথাকথিত ইসলাম প্রচারের কাজ করিয়া বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হইতেছে আর তা সত্বেও সাধারণ মুসলিমদের সমর্থন লাভ করিতেছে!
ইহা প্রমাণ করে যে, প্রাচীন অন্ধত্বের অভিশাপ হইতে মুসলিমরা আজও মুক্তিলাভ করিতে পারে নাই বরং দিন দিন তাহারা স্হায়ী অন্ধত্বের দিকে আগাইয়া যাইতেছে|
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:২৫