টাঙ্গাইলের করটিয়ার ধন্যাঢ্য জমিদার পরিবারের সন্তান মোহাম্মদ বায়জিদ খান পন্নী। উচ্চ শিক্ষিত এবং মেধাবী বায়জিদ খান পন্নী পরিবারের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগে শক্ত অবস্থান তৈরী করে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারি বায়জিদ পন্নী বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে দেশত্যাগ করে প্রথমে পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যে আত্মগোপন করে বসবাস করতে থাকে।১৯৮০ সালে জেনারেল জিয়ার আশ্বাসের ভিত্তিতে বায়েজিদ পন্নী বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে। ইতিমধ্যে বায়েজিদ পন্নীর ছোটো ভাই সেলিম পন্নী নিজেকে স্থানীয় ভাবে ইসলামি তাত্বিক ও চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। বড় ভাইয়ের দেশে প্রত্যাবর্তন তাকে আরও দুঃসাহসী করে তোলে। আশির দশকের শেষ দিকে সেলিম পন্নী নিজেকে 'ইমামুজ্জামান' বা জগৎ এর সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম রূপে ঘোষনা করে নিজেদের আকিদা বা বিশ্বাস প্রচার করা শুরু করে। এসময় বায়েজিদ পন্নী নিয়মিত মধ্যপ্রাচ্য সফর করে সংগঠন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্হান করেন।১৯৯২ সালে বায়েজিদ পন্নী হেজবুত তওহিদ নামে নিজস্ব সংগঠন তৈরি করে এবং সংগঠনের ইশতেহার প্রকাশ করে। দলটি ইশতেহারে প্রচলিত শাসন ব্যবস্হার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে এবং প্রচলিত শাসন ব্যবস্হাকে উচ্ছেদে শারিরীক শক্তি প্রয়োগকে বাধ্যতামূলক ঘোষনা করে। নিজেদের নিজস্ব মতধারারার বাইরের সকলকেই অমুসলিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করার বিনিময়ে হলেও আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিজ্ঞা এবং মানব সৃষ্ট সকল আইনকে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে দলটি নিজেরা কট্টর মৌলবাদী রূপে আত্ম প্রকাশ করে।১৯৯৬ সালে বায়েজিদ পন্নী "This is not true Islam" প্রকাশ করে, বইতে ইশতেহারের বিষয় গুলিকে আরও যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করা হয় ধর্মিয় বিকৃত সব যুক্তির মাধ্যমে, এমনকি ফজর ওয়াক্তের নামাজকে ফরজ হিসেবে স্বীকার না করা এবং প্রচলিত আযান কে কুকুরের ডাকের সাথেও তুলনা করা হয়েছে এই বইতে। এরপর হিজবুত তওহিদ নিজেদের সদস্যদের জন্য নামাজ পড়ার নিয়েমে পরিবর্তন করে বিকৃত ভাবে নামাজকে পড়া বাধ্যতামূলক করে।এই বিকৃত নামাজের ভিডিও ইউটিউবে সহজেই পাওয়া যায়। ২০০০ সালে তারা প্রথম সংহিসতা শুরু করে বরিশালের গৌরনদীতে।২০০৩ সালে বরিশালেই প্রথম জিহাদী লিফলেট বিতরন।পরবর্তীতে বায়জিদ পন্নী "দাজ্জাল/Dajjal" নামে আরেকটি বই প্রকাশ করে, যেখানে ইহুদী এবং খৃষ্টানদের দাজ্জালের দোসর আখ্যা দিয়ে এদের নির্মূলে সর্বশক্তি নিয়োগের আদেশ করা হয়েছে। ২০০৭ এর দিকে দেশের সমগ্র উত্তরান্ঞ্চলে জেএমবি, হুজি এবং হিজবুত তওহিদ মিলিত ভাবে জঙ্গী তৎপরতা পরিচালনা করেছে।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে সংগঠনটি চিটাগাং প্রেস ক্লাবের সামনে জিহাদি লিফলেট বিতরন কালে বর্তমান প্রধান রিয়াদ সহ তিন চারজন গ্রেফতার হয়। এরপর দলটি নিজেদের প্রচার কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন আনে এবং নিজেদের কে সংস্কারমনা ,সাহিত্য প্রেমী উদার ইসলামি দল হিসেবে অনলাইনে তুলে ধরতে শুরু করে। দলটি এভাবে সংস্কারের মোড়কে প্রভাবিত করে প্রাথমিক সদস্য করার পর তাদের নিজেদের কট্টর মতবাদ সদস্যকে ধীরে ধীরে আত্মস্হ করতে বাধ্য করে। সকল সচেতন বাংলাদেশী নাগরিকের একান্ত কর্তব্য নিজের অন্ধত্ব ঝেড়ে ফেলে এমন ধরনের দলকে সর্বক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যান করা।
তথ্যসূত্র :
* Islamist Militancy in Bangladesh: A Complex Web
By Ali Riaz .
(Routledge contemporary south Asia series)
Published by Routledge Taylor & Francis Co.
London, New York.
(Available at Google Doc)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৫