somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলাসীতার কথা।

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি গরীব পরিবারে জন্ম রূপ লাবণ্যে অদ্বিতীয়া সে, যাকে বলে গোবরে পদ্মফুল। অন্য দশজন মেয়ে যেভাবে বেড়ে উঠে সেও তাদের মতো করেই বেড়ে উঠতেছে। হাতের পাচঁটা অঙ্গুলি যেমন এক হয় না ঠিক সেই রকম ছিল গল্পের মেয়েটি। গ্রামের অন্যান্য সহজ সরল মেয়েদের মতো কিন্তু সে উচ্চাবিলাসী সৌন্দর্য অধিক মাত্রায় তাই অহংকারটাও সে তুলনায় বেশী। গরীব পরিবারে জন্ম তাই হয়তো চাষা বাবা তার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে না। সে এ নিয়ে মন ভারী করে বসে তাকলেও সেটা কাউকে বুঝার দেয় না। কিন্তু মনের মধ্যে সে স্বপ্ন আকেঁ একটা রাজকুমারের যে আসবে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে তুলে নিয়ে যাবে এক অট্টালিকায় যেখানে থাকবে তার শত শত দাসী। রাজকুমারটা তাকে আয়নার মতো করে যত্ন করে রাখবে। কৃষক ঘরে জন্ম নেয়া এই মেয়েটা প্রতিক্ষণে ভাঙ্গাঘরে থেকে স্বপ্ন দেখে যায়। নদীর পাড়ে জল আনার চলে গিয়ে অপেক্ষায় নদীর পানে চেয়ে তাকে এই বুঝি আসল জাহাজে চড়ে স্বপ্নের রাজকুমার। সেই স্বপ্ন ভাবুক মেয়েটি আর কেউ নয় উত্তর পাড়ার জমির মিঞার মেয়ে মীরা।
.
একদিন ঠিকই সে তার রাজকুমারের দেখা পেয়েছিল কিন্তু সেটা ছিল ক্ষণিকের জন্য এক কঠিন কাহিণী। গল্পটা এবার না হয় শুরু করা যাক।
বসন্তের শেষ দিককার সময় সূর্যি মামা মধ্যমা আকাশে তার উত্তপ্ত কিরণ চরাচ্ছে। রুদ্রের উত্তাপে পথিকের গায়ের চামড়া গলে যাওয়ার উপক্রম। স্নান ঘাট থেকে ডুব দিয়ে উঠছিল মীরা পুকুর পাড়ের গাছের একপাশ দাড়িঁয়ে ছিল মীরার স্বপ্নের রাজকুমার। মীরা চমকিত হয়ে যায় কিন্তু লজ্জা বলতে একটা জিনিস আছে তাই মিরার মুখটা হয়তো লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিল। পুকুর পাড়ে দাড়িয়েছিল এলাকার সব চেয়ে প্রতাপশালী ক্ষমতাধর ব্যাক্তির একমাত্র সন্তান রাজেল চৌধুরী। সেই প্রতাপশালী ব্যাক্তি সম্পর্কে কিছু বলি_ সাখাওয়াত চৌধুরী অত্র এলাকা তথা মিস্টিপুরের একজন ব্যাবসায়ী এবং জমিদার ব্যাক্তি যার কিনা ১০০শত একরেরও অধিক জমিজমা রয়ে গেছে। তার একমাত্র উত্তরাধিকারী এখন রয়েছে রাজেল চৌধুরী, সাখাওয়াত চৌধুরী বৃদ্ধা প্রায়। তিনি কখনো তার সন্তানের কোনো চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ রাখেন নি রাখবেনও না আশা করা যায়। মূল ঘটনায় ফেরা যাক।
.
প্রথম দেখাতেই বোধ হয় প্রেমে পড়ে যায় রাজেল চৌধুরী। মীরা কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না রাজেল গাছের এক পার্শে এখনো দাড়িঁয়ে। যথাসম্ভব মীরা স্নান ঘাট হতে প্রস্হান করে। এ দিকে এতোক্ষণে ঘোর কাঁটে রাজেলের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সেও বাড়ির দিকে পাঁ বাড়ায় মনে মনে কল্পনা করতে করতে এর সাথে আমার প্রেম করা চাই ই চাই। বাড়ি ফিরে মীরা ভাবে এবার তার রাজকুমার খুজে পেয়েছে তার সব স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আয়নায় বারে বারে নিজের চেহারা দেখা মুচকি হাঁসি হাঁসে মীরা। ঠোটে গাঢ় করে লাল লিপিস্টিক লাগায়, পায়ে আলতা মাখে চোখে কালো কাজল লাগায়। এভাবে প্রায় সময় ই মীরা আর রাজেলের দেখা হয় কিন্তু কথা হয় না। এখানে ভয়ের কোনো কারণ ছিল না, ছিল না কথা বলার মতো কোনো সুজোগ এরকম কোনো কিছুই। আসলে কেউ স্বাভাবিক হতে পারছিল না। একদিন আম গাছতলায় আকস্মিক ভাবে কথা হয়ে যায় তাদের। সেই থেকে ধীরে ধীরে কোনো এক সময় প্রেমপত্র দেয়ার মাধ্যমে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
.
প্রেমটা গাঢ় হতে শুরু করে গ্রামের সবার দৃস্টি সামনে চলে আসে এক পর্যায়ে জানতে পারেন মীরার বাবা জমির মিঞা। তিনি তার মেয়েকে বুঝাতে শুরু করেন_ রাজেল সে এক মুখোশধারী ভদ্রলোক তর সামনে ভদ্র সাজছে। রাতের পর রাত মেয়েদেরকে নিয়ে রাত কাঁটায়। বন্ধুদেরকে নিয়ে আড্ডা মদ্যপান সহ বিভিন্ন অপকর্ম করা তার মূল বিষয়। আসলে কোনো বাবাই চায় না তার মেয়ের খারাপ কিছু হোক। মীরা গভীর প্রেমে মত্ত সে এই বলে খুশি তার উচ্চাবিলাসীতার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। সে এখন আর কারো কথায় কাঁন দেয় না যেই এ সম্পর্কিত কথা বলে তাকেই শত্রু মনে হয়।
.
জমির মিঞা মেয়েকে বুঝাতে পারেন না গ্রামের মধ্যেও নিম্ন স্বরে বিভিন্ন কথা হয়। একদিন বাধ্য হয়ে তিনি তার মামাত ভাইয়ের ছেলে অনুকে ফোন দেন। অনু হচ্ছে মীরার মামাত ভাই _ শহরে থেকে পড়ালেখা শেষ করে কিছুদিন হলো চাকুরী নিয়েছে। অনু ফোন পেয়ে মীরাদের বাড়ি চলে আসে ছোট বেলা থেকে মীরা কারো কথা তেমন না শুনলেও অদ্ভুত কারণে অনুকে কিছুটা মানে। অনু মীরাকে বুঝানোর চেষ্টা করে
দেখ মীরা এই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যত নেই রাজেল তোমাকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তার ফাঁদে পেলতে চাইছে। তুমি একটিবার দেখ নিজের চোখ খুলে একটিবার! না মেয়েটি কারোর কথাই শুনেনি সে রাজেল চৌধুরীর প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঠিক বুঝা কষ্টসাধ্য সে রাজেলের প্রেমে পড়েছিল নাকি তার টাকাপয়সার উচ্চবিলাসী ভাবভঙ্গীর।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, ছোটবেলা থেকেই অনু;মীরাকে ভালোবাসে।
রাজেল ধীরে ধীরে মীরার সব স্বপ্ন পূরণ করতে লাগল। শুধু বাকি রয়েছিল বিয়েটা করার। মীরা এখন অবাধ চলাফেরা করে তার বাবা ঘরে দরজা লাগিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পারেনি, তার মেয়ে আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছিল।
প্রেমের মধ্যাপ্রহরে একদিন রাজেল চৌধুরী আবদার করে বসল মীরাকে তার বাড়ি যাওয়ার জন্য, গিয়েছিল মীরা সেখানে দিয়ে এসেছিল তার সতীত্ব। আর এটাই তো ছিল রাজেল চৌধুরীর ফাঁদ সে মীরাকে একটু ভালোবাসেনি বেসেছিল মীরার দেহকে। শুধুকি মীরা মীরার মতো আরো অনেকেরই সতীত্ব কেড়ে নিয়েছে সে প্রেমের টাকার এবং ক্ষমতার প্রলোভনে। দেহকে চাইছিল সে পেয়ে গেছে তারপর আর কি হলো প্রেম? প্রেম আর হবে কোথা হতে এখানেই তো তার ইতি গঠেছিল। মীরা শত চেষ্টা করেও তো রাজেলের নাগাল পায়নি।
.
মীরার বাবা উনি এ ঘটনার পর আত্মহত্যা করতে চাইছিলেন, মুখ ডেকে চলে যেতে যাইতে চাইছিলেন পরকালে। না উনি মরতে পারেন নি একমাত্র অনুই থাকে বাঁচিয়েছিল।
গল্পের নায়ক অনু সে বাস্তবিকই নায়ক তাকে বাহবা দেয়া যায়। সে মীরাকে ভালোবাসত এখনো ভালোবাসে তাই তো সে সবকিছু প্রত্যাক্ষান করে মীরাকে আপন করে নিয়েছিল। যেদিন বলেছিল সে মীরাকে তার বউ হিসেবে পেতে চায়, সেদিন মীরার বাবার চোখের জল দমিয়ে রাখে কে। মীরা সে কি খুশি হয়েছিল? না সে তখন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েছিল অনুর দিকে।
.
মীরা আজ আর স্বপ্ন দেখে না, সব কিছু এখন তিক্ত হয়ে গেছে। সে এখন ঘরের কোণে বসে বসে বিগত দিনের কথা ভাবে, ভাবে বিলাসীতার পরিণামের কথা। রাতভর তাস খেলে হ্যা একাকী কারো সাথে নয়। খেলে ঠিক বলা যাবে না উলঠ পালঠের মধ্যেই বিদ্যমান। তাস উলঠায় আর ভাবে তার জীবনটাও তাসের মতো করে উলঠে গেছে, সে এখন স্বাভাবিক কি?
অনু সারা দিন কাজ শেষে ঘরে ফিরে যখন মীরাকে দেখে তখন তার কষ্ট হয়। কিন্তু দিন শেষে মীরার সব চেয়ে আপন মানুষটাই অনু।
.
লেখক→সোহাগ আল এহসান।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:১৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×