১২৬০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে নরপিশাচ হালাকু খানের বাহিনী ‘হালাব’ ধ্বংস করেছিল।
শহরে তারা বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। সবাই ধরেই নিয়েছিল, ইসলাম আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
কিন্তু ইসলামের রক্ষক স্বয়ং আল্লাহ সুবহানুতায়ালা।
মাত্র আট মাস পরেই হিসেব বদলে গেলো।
ফিলাস্তীনের আইনে জালূতের ময়দানে, হালাকু খানের মোঙ্গল বাহিনী নাস্তানাবূদ হয়ে গিয়েছিল।
সাইফুদ্দীন কুতুয রহ. ও রুকনুদ্দীন বায়বার্স রহ.-এর প্রচন্ড আক্রমণে।
হালাব এর অবস্থা এখনঃ Click This Link
আজো হালাব পুড়ছে।
পুড়ছে আমাদের হ্রিদয়।
এই দুঃসময়ে আল্লাহর সাহায্য কামনায়, সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন ,
প্রতি ফরয নামাযের পর কুনুতে নাজিলা পাঠের জন্য।
কুনুতে নাযেলা কি ও কেন?
মুসলমানদের ওপর যখন কোনো বিপদ-আপদ কিংবা শত্রুবাহিনীর আক্রমণ, ভূমিকম্প অথবা জলোচ্ছ্বাস ও দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি
আপতিত হয়, তখন তা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে যে প্রার্থনা করা হয় তাই হচ্ছে কুনুতে নাজিলা।
শেষ রাকাতে রুকু থেকে ওঠার পর দোয়া করা হয়, বিশেষ করে প্রকাশ্যে কিরাতবিশিষ্ট নামাজগুলোতে কুনুতে নাজিলা পড়া হয়।
বিপদ-মুসিবতে আল্লাহর কাছে ধরনা দেয়ার জন্য ইসলামি শরিয়া এ ধরনের প্রার্থনার অনুমোদন করেছেন।
হযরত মুহাম্মদ (স) দুশমনদের ধ্বংসকারীতা থেকে রক্ষার জন্যে তাদের শক্তি চূর্ণ করে তাদেরকে ধ্বংস করার জন্যে কুনুতে নাজিলা পড়েছেন। তাঁর পরে সাহাবায়ে কেরাম (রা) তা পড়ার ব্যবস্থা করেছেন।
শহীদ ইমাম হাসানুল বান্না ইসলামি শরিয়তের হুকুম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের বিরুদ্ধে
মিসরের জনগণকে সোচ্চার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তখন তিনি ‘আল ইখওয়ান আল মুসলিমুন’ পত্রিকার মাধ্যমে
মুসলমানদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, তারা যেন নামাজে কুনুতে নাজিলাহ পড়ার মাধ্যমে জবরদখলকারী
ইংরেজদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায়।
তিনি এ দোয়ার কিছু বাক্যেরও প্রস্তাব করেছিলেন; কিন্তু তিনি কারো ওপর তা চাপিয়ে দেননি।
দোয়ার বাক্যগুলো যা ছিল :
"হে আল্লাহ! বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, ভীতসন্ত্রস্তকে নিরাপত্তাদানকারী, অহঙ্কারীকে লাঞ্ছনাকারী এবং জালেম ও
অত্যাচারীদের ধ্বংসকারী।
হে আল্লাহ! তুমি তো জানো এ জালেম ইংরেজ দস্যুবাহিনী আমাদের দেশকে জবরদখল করেছে,
আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে, জনপদে জুলুম-অত্যাচার চালাচ্ছে, ফিতনা ফাসাদে দেশকে চুরমার করে দিচ্ছে।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন, তাদের তেজস্বীতাকে ভোঁতা করে দিন,
আপনার ভূখণ্ডে তাদের কর্তৃত্বের অবসান করে দিন এবং আপনার মুমিন বান্দাদের তাদের জুলুম-অত্যাচার থেকে হেফাজত করুন।
হে আল্লাহ! যারা তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে তারাসহ সবাইকে শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর হাতে পাকড়াও করুন।"
এমনিভাবে আমরা বিনয়ী ও দুনিয়াবিমুখ অবস্থায় নামাজের কাতারে থেকেও রাজনীতির যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারি।
"কুনুতে নাযেলা" এই লিংক এ যেয়ে ডাউনলোড করতে পারেন: https://www.youtube.com/watch?v=JKkUxaKJbMk
কুনুতে নাজিলার অর্থ:
"হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য প্রার্থী এবং তোমার কাছেই ক্ষমাপ্রার্থী।
তোমার উপর আমরা ঈমান এনেছি এবং তোমারই উপর ভরসা করি, তোমার প্রশংসা করি, তোমার শোকর আদায় করি,
তোমার নাফরমানি করি না, যারা তোমার নাফরমানী করে তাদের পরিত্যাগ করছি ও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছি।
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমারই জন্যে নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদা করি,
তোমার দিকেই দ্রুত ধাবিত হই, তোমারই হুকুম মানার জন্যে প্রস্তুত থাকি,
তোমার রহমতের আশা রাখি, তোমার আযাবকে ভয় পাই।
তোমার আযাব অবশ্যই কাফেরদেরকে ধ্বংস করবে।"
এছাড়াও আমরা যে দুয়া গুলো করতে পারি:
নবী নূহের করা দু'য়া:
"হে আমার রব! ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী কাফিরদের একজনকেও তুমি রেহাই দিও না"। (৭১:২৬)
"হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে যালিম গোষ্ঠী হতে রক্ষা কর"। (২৮:২১)
"হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্যধারণের শক্তি দান কর এবং আমাদের পদগুলো দৃঢ় রেখ এবং
কাফিরদলের উপর আমাদেরকে জয়যুক্ত কর"। (২:২৫০)
"হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের অপরাধগুলো এবং আমাদের কাজ কর্মে বাড়াবাড়িগুলোকে তুমি ক্ষমা করে দাও,
আমাদেরকে দৃঢ়পদ রেখ এবং কাফিরদলের উপর আমাদেরকে সাহায্য কর"। (৩:১৪৭)
আমরা যারা কিছুই করতে পারছি না, তারা কি একটু দুয়া করতে পারি না
আমাদের ভাইদের জন্য, আমাদের বোনদের জন্য, আমাদের সন্তানদের জন্য!
যেসব শিশুদের থাকতে পারত একটি চমতকার শৈশব,
তারা আজ হয়ে যাচ্ছে জান্নাতের সবুজ পাখি!
যেসব ভাইয়েরা, বোনেরা তীব্র ঘৃণা নিয়ে এই নিষ্ঠুর দুনিয়া ছেড়েছেন,
নিঃসন্দেহে জান্নাতকে সুশোভিত করা হয়েছে তাদের জন্য!
একটি নরম বিছানা, উষ্ণ চাদর, ধোয়া ওঠা সুস্বাদু ডিনার, হেডফোনে প্রিয় কোন লিরিকস,,,
এই নিয়ে আমাদের মত অধমরা কি জবাব দেব সেই দিন, ঠিক সেই দিন
যেদিন অণু পরিমাণ কর্মের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে সবচে কঠোর হিসাব- গ্রহণকারীর কাছে?
ওয়াল্লাহি, সেইদিন খুব দূরে নয়!
খুব বেশী দূরে নয়!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৭