somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বানিয়াচং সিলেট থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি বৃহৎ গ্রাম। স্থানীয় অধিবাসীরা এটিকে এশিয়ার সর্ববৃহৎ গ্রাম হিসেবে সম্বোধন করতে গর্ববোধ করে, কেউবা বিশ্বাস করে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম। অবস্থান ও আকারগত দিক থেকে গ্রামটি এতই বড় যে তাতে ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে স্থানীয় সরকার গঠন করতে হয়েছে। গ্রামটি প্রধানত মুসলমান অধ্যুষিত, এর জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। ঐতিহাসিকভাবে, বানিয়াচং সপ্তদশ শতাব্দীতে আবেদ রেজা নামক একজন মুসলমান জমিদারের অধীনে ছিল। তিনি নবাবি আমলের শেষভাগ পর্যন্ত গ্রামটি শাসন করেন। উল্লেখযোগ্য যে, বাংলার অন্যান্য জেলায় মূলত জমিদার ও তালুকদারই ছিল ভূমি-নিয়ন্ত্রক, কিন্তু সিলেট অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূমি-ব্যবহারকারী ছিল যাদের বলা হতো চৌধুরী। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় সিলেটে এসব জমির মালিকরা জমিদার অভিধা লাভ করে এবং সেসূত্রে বানিয়াচং পরগনার মালিকও জমিদার হিসেবে অভিহিত হন।

বানিয়াচং গ্রামের এলাকাগত বিশালতা গড়ে উঠেছে স্থানীয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ভূমি ভোগদখলের ধরন অনুযায়ী। এখানে রয়েছে অনেকগুলি বড় হাওর, যেমন- সোনা, জলডোবা, মকলকান্দি, মাচা, হাবিবপুর, বরম, ব্যাঙ্গক ইত্যাদি। এসব হাওরে শুধু শীতকালে আবাদ করা হতো। অধিকাংশ হাওরে শীতের মৌসুমেই মাছ ধরা হতো। অতীতে বর্ষাকালে এসব হাওরে বসবাস বা চাষ করা ছিল দুঃসাধ্য। তাই বানিয়াচং-এ নিকটবর্তী এলাকা ও হাওর তীরাঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল চাষি ও মৎস্যজীবীরা স্থায়ি বসতি গড়ে তোলে। শুষ্ক মৌসুমে তারা সাধারণত চাষ ও মাছ ধরার স্থানে যেত এবং সেখানে উপগ্রাম গড়ে তুলত। এদেরকে বলা হতো জিরাতি বা মৌসুমি রায়ত। এসব জিরাতি রায়তদের দ্বারাই গ্রামটি এতটা সম্প্রসারিত হয়।

বর্তমানে বানিয়াচং বাংলাদেশের উন্নত গ্রামগুলির একটি। এখানে আছে ব্যাংকের শাখা অফিস, সরকারি অফিস, ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি উচ্চ বিদ্যালয় (২টি সরকারি, ২টি বেসরকারি), ৬টি মাদ্রাসা, ২টি কলেজ, ২টি স্যাটেলাইট স্কুল, ১টি কমিউনিটি স্কুল এবং ১টি ব্র্যাক স্কুল। এছাড়াও গ্রামটিতে রয়েছে ১টি সরকারি হাসপাতাল ও ব্র্যাক প্রতিষ্ঠিত ১টি হাসপাতাল। গ্রামটিতে ৪টি বাজার এবং ২৬টি চালকল স্থাপিত হয়েছে। চলাচলের পথ কিছু অংশে পাকা, বাকিটা আধাপাকা।

বানিয়াচং অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান। এ অঞ্চলের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ব্যক্তিরা হলেন মেজর জেনারেল এম. আবদুর রব বীর উত্তম, ব্র্যাক চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ, প্রাক্তন মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান প্রমুখ। ইতিহাসখ্যাত রামনাথ বিশ্বাস, যিনি সাইকেলযোগে পৃথিবী ভ্রমণ করেন (১৯৩৬-৩৭), অন্ধকবি ফয়জুল কবির এবং স্বদেশী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হেম সেন ও সুশীল সেন এই গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×