somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ সম্পর্কের কি নাম দিব ? বন্ধুত্ব না সম্ভাব্য প্রেম !!

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পার্ট:
এই তো সে দিন মানে গতমাসে গিয়েছিলাম প্রিয়ডিক মেড়িকেল চাকআপ করানোর জন্য দাম্মাম শহরে, আমি যে শহরে থাকি তার থেকে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দুরের শহর। কারণ...? প্রথমত, আমি যে শহরে থাকি এখানে ইন্টারনেশনাল সোস এর কোন রেজিষ্টার কোন ডক্টর নেই :(, দ্বতীয়ত, কম্পেনির অথারাইজ্ড ডক্টর এর কাছ থেকে মেডিকেল ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। তাই আমাকে বাধ্য হয়ে ই যেতে হলো। আর মেডিকেল চেকআপ এর রিকোরমেন্ট হলো খালি পেটে এমন কি পানি ও না। সত্যি পানি ছাড়া আমার এক মুহুর্ত ও চলে না, তার পর ও আমাকে সেই নিয়ম মেনেই হসপিটালে যেতে হলো।

তার পর ফিলিপাইনি নার্স কাম রিসিপসনিষ্ট আমার ডকুমেন্ট তৈরী করে, পর্যক্রমে বিভিন্ন রুমে পাঠিয়ে ইসিজি, এক্সরে, কান, চোখ, হাঁটু, ব্লাড, ইউরিন, ষ্টুল সব সেম্পল দেয়ার পর যখন ঐ ফিলিপাইনি নার্স এর সামনে দাঁড়িয়ে বিরক্তি মুখে জিজ্ঞাস করলাম আর কিছু ? সে বল্ল তুমি এট টা বিরক্ত কেন ? উত্তরে বল্লাম আমার পানি খাওয়া প্রয়োজন, সাথে কিছু নাস্তা করা খুব বেশি দরকার, কারণ আমি অনেক দুর থেকে এসেছি, তা ছাড়া রাতে আমার ভালো ঘুম হয়নি। সে বল্লো, তোমার ডক্টর রেডি আছে.... তোমার ডাক পাড়লেই যাবে। আমি বল্লাম আমি প্রথমে নাস্তা করবো তার পর........ সে খুব বিরক্তের সহিত ডাক্তার এর পারমিশন নিয়ে বল্ল.... ঠিক আছে যাও, তবে তাড়াতাড়ি করবে।

দ্বিতীয় পার্ট: মূল পর্ব
(একজন ডাক্তার কে কতটুকু আন্তরিক হতে হয় সে দিন আমি বুঝে নিয়েছিলম),
ডাক্তার এর চেম্বার এ ডু মারতেই দেখি, আনুমানিক ২৯/৩০ বছর বয়সী মহিলা ডক্টর খুব মনোযোগ দিয়ে আমার এক্সরে, ইসিজি ফাইল দেখছে, তার পর আমার দিকে তাকিয়ে আমার নাম উল্ল্যেখ করে কনর্ফাম হতে চাইল এবং বল্ল আরবি, ইংরেজী, উর্দু, হিন্দি কোন ভাষায় আমি কম্পোর্ট ফীল করি ?
আমি ডক্তর এর চোখের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বল্লাম ইংরেজীতে কন্ভারশেসন এ কোন সমস্য নায়, হিন্দি- উর্দু দুটোই আমার কাছে সেইম লেংগুয়েজ, বাংলা হলো খুব ভালো, আরবির কোন কিছুই বুঝনা, এবং ঠিক ঐ মুহুর্তে জানতে চাইলাম ডক্টর তুমি কোন দেশ থেকে ? আমাদের কথাবার্তা গুলো হিন্দ-উর্দু যা ই বলেন এ দিয়ে শুরু।
আমি বুঝতে পারছি, ডক্তার আমার কথায় খুব মজা পেয়েছে এবং সে নিজেও মজায় অংশ নিতে গিয়ে বল্ল, অনুমান কর ?
আমি বল্লাম, তোমার এসেন্স এ মনে হচ্ছে তুমি পাকিস্থান থেকে তবে তোমার ফেইসমাস্ক না সরালে সিওর করে বলতে পারবো না, আমাকে আশ্চার্য করে দিয়ে সে তার ফেইস মাস্ক সরিয়ে বল্ল এবার বল।
"সুবহানআল্লাহ" এই শব্দ টা আমার মনের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, সত্যি অসাধারণ সুন্দর। আমি তাকে বল্লাম অবশ্যই তুমি পাকিস্থান থেকে, আমাদের অন্চল এ (বাংলাদেশ, ভারত- পাকিস্থান) এত টা নেচাল সুন্দর মুখ শুধু মাত্র পাকিস্থান থেকে ই হতে পারে, এটা কখনো ই ভারতীয় হতে পারে না, কারণ তাদের নেচারাল বিউটি থেকে আর্টিফিসিল বিউটি টা ই বেশি।
ডক্টর এবার বল্ল তুমি কি আমার সাথে ফ্লার্ট করছ ? আমি ফাংসু মুখে আশ্চার্য হয়ে বল্লাম কি বলছ তুমি, আমি অলমোষ্ট ৪৩/৪৪ বছর বয়ষ্ক মানুষ। আবার হাসি মুখে বলি তুমি আমার ডক্টর,
"ডক্টর" বলাতে এবার আমাদের কথাবার্তা মূল পর্ব আসে।এবার ডাক্তার জানতে চাইল কিসের জন্য আমার এর মেডিকেল চাকআপ ? উত্তরে বল্লাম আমার জব পারপাস। গোটা পঞ্চাশেক কোশ্চেন করে আমার সিচুশন বুঝে নিয়ে ব্লাডপ্রেশার নিতে আসলো। দুর্ভাগ্য ক্রমে আমার বা হাতে ব্লাডপ্রেশার নেয়ার সময় বল্ল তোমার হাতে ব্লেড দিয়ে কেন কেটেছ ? হাঁসি মুখে বল্লাম দুটো প্রমিজ নিজের সাথে করেছি, আমি বুঝতে পারছি সে জানতে ইচ্ছুক কিন্তু বলতে পারছে না, আমি বল্লাম এটা কেটেছিলাম ২০০৪/৫ এর দিকে, বল্লাম প্রমিজ দুটো নিজের সাথে ছিল, আজ পর্যন্ত কেউ জানতে চায়নি, এই প্রথম কারো চোখে দেখলাম জানতে চাইছে, ১) জীবনে আর কখনো কাউকে ভালোবাসি বলবো না, ২) বুঝে নিয়েছি মা, বাবা ছাড়া আর কেউ ই আপন হতে পারে না, বাঁকি যারা আসে সার্থের কারনে আসে।

আমাদের ফরমাল কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় আমার প্রিয়ডিক মেড়িকেল চেকআপ এবং সময় তখন দুপুর ১২ টা, মানে দুপুর এর খাওয়ার সময়। সে নিজেও চেম্বার থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, চেম্বার থেকে বের হওয়ার আগ মুহুর্তে আমি বল্লাম মনে কিছু নিবে না প্লিজ, আপনি নিজের যত্ন নিচ্ছেন না কেন ? আমার কথায় সে এত টা আশ্চার্য হবে আমি ভাবতেই পারিনি, সে সামলে নিয়ে বল্ল চলুন আজ আপনি আমার সাথে লান্চ করবেন। আমি না বলার পর ও তার অনুরোধ এবং তার মুখ চোখ বলছে আমি গেলে সে খুশি হবে, আমি ও না করতে পারলাম না, হসপিটাল থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম সে রিসিপসন এ বলছে, যে সে আজ আর হসপিটালে ইমারজেন্সি না হলে আসছে না।

হসপিটাল থেকে বের হয়ে আমি একটা দোকানে গিয়ে এক পেকেট চুইংগাম সাথে একটা রোজ ফ্লেবার এর লিফজেল নিয়ে পকেটে রাখলাম।

ডক্টর গাড়ি ড্রইভ করছে, আমি তার পাসের সিটে.... আমি বল্লাম এই শহর টা আমি খুব একটা চিনি না তুমি তোমার পচন্দ মত যায়গায় নিয়ে যেতে পার। আমরা দাম্মাম থেকে আরো ২০/২৫ কিলোমিটার দুরে আল খোবার নামক এলাকায় গেলাম, দুপুরের খাবার খেলাম। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছি হঠাৎ বল্ল তুমি কেন বল্লে "আপনি নিজের যত্ন নিচ্ছেন না কেন ?" এর মানে কি ? কেন বলেছি ?

এবার আমি পকেট থেকে লিফজেল টা বের করে দিয়ে বল্লাম এটা আপনার জন্য..... এবং আপনার সব প্রশ্নের উত্তর এটাতে আছে।

পরিশষে:
আমরা সে দিন আরো কিছু সময় কাটিয়ে দু জন, দু জনের থেকে বিদায় নেয়ার মুহুর্তে, দু জন ই বলি "আজকের দিন টা সারা জীবন মনে থাকবে"। ফেরার মুহুর্তে সে আমার একটা টি শার্ট গিফ্ট করে (এক প্রকার জোর করে)

একটা মানুষ এতো অল্পতে খুশি হতে পারে তাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। ডক্টর ওয়ালার সাথে প্রায় প্রতিদিন ই কথা হয়, প্রমিজ করিয়ে নেয়া হয় দাম্মাম গেলে যেন তার সাথে একবার দেখা করি।

সত্যি বলতে কি..... মানুষের ভাষা, গায়ের রং, ধর্মিয় অনুভুতি, আচার-অনুষ্ঠান ভিন্ন হতে পারে, দেশ অন্চল ভিন্ন হতে পারে কিন্তু কষ্ট, ভালোবাসা- ভালোলাগা এ দুটো অনুভুতি কে কি ভাবে আলাদা করবেন ?

বি:দ: টাইপে ভুল-শুদ্ব নিজ গুনে ক্ষমা করে নিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:২৮
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×