somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথাও অন্ধকার এক সুড়ঙ্গ দিয়ে

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোথাও অন্ধকার এক সুড়ঙ্গ দিয়ে একটি উন্মাদ লোক ছুটে চলেছে। হাতে একটি কাচের বোতল, বোতলে জল, জলে সবুজ ডাঁটা ডুবিয়ে রাখা একটি লাল গোলাপ ফুল। সুড়ঙ্গটির মেঝে অসমান, রুক্ষ- ছোটবড় গ্রানাইটের টুকরো আর হঠাৎ সৃষ্ট চোখের কোটরের মত গর্তে পূর্ণ ।
উন্মাদ লোকটি তবুও দুরন্ত বেগে ছুটে যাচ্ছে। গ্রানাইটের পাথরগুলোর সংঘর্ষে তার ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উপড়ে এলো, রক্ত বেরুচ্ছে। গর্তে পড়ে তার বাঁ পা-ও মচকে গেলো। কাচের বোতল থেকে জল ছলকে পড়ে গেছে অনেকখানি। গোলাপের সবুজ ডাঁটার শেষপ্রান্ত জলে ডুবে আছে কোনভাবে। উন্মাদ লোকটি দাঁত বের হাসছে।
সুড়ঙ্গটা নিকষ অন্ধকার, নীরব মহাকাল ছাড়া কোন দর্শক নেই। লোকটার হাসি, রক্তের ফোঁটা, গোলাপ, কাচের বোতল, বাড়ন্ত জল- কিছুই দেখার নেই কেউ।
উন্মাদ হঠাৎই এ সুড়ঙ্গে এসে পড়েছে, তার আর কোন পূর্ব স্মৃতি নেই। যেহেতু সে শ্বাস নিতে পারছে, সেহেতু ভেবে নিলো, নিশ্চয়ই কোন বাতাস আসার প্রশস্ত পথ আছে। সে ছুটতেই থাকলো। হঠাৎ পাথরে পা লেগে প্রথমবারের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো সরু সুড়ঙ্গের মেঝেতে। গ্রানাইটের দেয়ালে মাথা ঠুকে গেলো, রক্তে ভিজে উঠলো কপাল আর চুলের গোড়া। খানিক বাদেই এক জলভরা গর্তে পড়ে উপুড় হয়ে পড়লো আবার। এবার নট্ করে তার নাকের তরুণাস্থি ভেঙে গেলো, ভিজে উঠলো কালো দাড়িগোঁফ, হাসতে হাসতে বেরিয়ে পড়া দাঁতের ওপরের পাটিতে ছড়িয়ে গেল রক্ত। লোকটা তবুও ছুটতে থাকলো।
বহুক্ষণ পর হঠাৎ দূরে আলো দেখতে পেলো। মনে হলো যেন আলোর পর্দার ওপাশে সবুজাভ জলছায়া। লোকটা হেলতে দুলতে ছুটতে ছুটতে ভাঙতে ভাঙতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চললো সেদিকে।
সুড়ঙ্গ শেষ। দেখা গেলো এটা আসলে বিশাল এক কুয়োর মতো মস্ত গহ্বর। খোলা মুখ থেকে কিছু দূরে, ভূমি থেকে ওপরে উঠে গেছে মাটির দেয়াল, দেয়ালের চুড়ো থেকে শুরু হয়ে ক্রমশ সামনে এগিয়ে গেছে উজ্জ্বল অরণ্য, সুড়ঙ্গের মুখে দাঁড়িয়ে বোঝা যায়, দেখা যায় সামান্যই। কিন্তু চোখের সামনে যা স্পষ্ট, তা হলো মাটির দেয়াল ফুঁড়ে ভৌতিক হাতের মত বেরিয়ে থাকা অসংখ্য বৃক্ষের শেকড় কংকাল। কেউ যদি চায়, হাঁচড়ে পাঁচড়ে ওপরে উঠে যেতে পারবে।
লোকটা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে, কাচের বোতলে ফাটল ধরেছে। কিন্তু গোলাপটা এখনও খুব তাজা, রোদ পড়া নতুন লাল মখমলের মত লাগছে ওটাকে।
খোলা বাতাসে একবার শ্বাস নিয়ে, লোকটা ঘুরে আবার সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকে দৌড়োতে শুরু করলো। আর কেউ হলে, পথ পেলেই মুক্তি নিতো প্রথম, ভাবতো- যথেষ্ট হয়েছে। আর এমনটা করলো না বলেই সে উন্মাদ। কোথাও রক্ত দেখার কেউ নেই, কোথাও সৌন্দর্য দেখার জন্যে কেউ ছিল না। তারপরও তার পণ, গোলাপের পাপড়ি অক্ষত আছে যতক্ষণ, ততক্ষণ সে দৌড়োবে সুড়ঙ্গ পথে।
১ কোটি, ১২ লাখ, ৩৫ হাজার, ৮১৩ বার সে সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পেলো। কিন্তু বেরিয়ে যেতে পারলো না। কারণ তখনও গোলাপ অক্ষত, নতুন পরিণতিশূন্য। কাচের বোতলটা ভেঙে গিয়েছিল, গোলাপটাকে সে হাতেই ধরে রেখেছিল।
ফুলটা যে মূলত তার হাত থেকেই পুষ্টি নিয়ে বেঁচে ছিল, তা বুঝতে সে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময় নিলো। অতঃপর অনুভব করলো, পাপড়ির পরিণতি সে দেখে যেতে পারবে না, কারণ তা ঘটবে তার মৃত্যুর পর।
অন্ধকার গ্রানাইটের সুড়ঙ্গে উন্মাদ লোকটা মরে গেলে তার শরীর তাজা সোনালু গাছের ছোট ৯টি পাতাসহ ৮টি শাখার একটি ডাল হয়ে গেল। আর তার অগ্রে, সেই লাল গোলাপ ফুটে থাকলো আরও ১ হাজার ৯শ’ ৮৭ বছর।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×