ফাহিম এইবার ক্লাস এইটে উঠল। রোল নম্বর ৪৮। বরাবরই একটু পিছনের দিকের ছাত্র। ক্লাসে সব সময় দেরিতে ঢুকে। অবশ্য এর জন্য স্যারদের কাছে ঝারিও কম খাইনা। অঙ্কে কোনদিনও ৩৬ এর উপরে পাইনা। বরাবরই গণিতে কাঁচা। ফাহিমের বাবা-মার চিন্তার শেষ নাই ছেলেকে নিয়ে। প্রাইভেট পড়ার জন্য তারা কম টাকাও খরচ করলোনা কিন্তু তবু ছেলের একি দশা।
এদিকে ফাহিমের ক্লাসে মনও বসেনা। সেইদিনও ফাহিম ক্লাসে ঢুকল দেরিতে। স্যার নাম ডাকছিল। স্যার যখন ফাহিমের নাম ডাকল তখন সে দরজার ওপাশ থেকেই বলল, ইয়েস স্যার।
স্যারঃ ওই দেখো আমাদের জজ ব্যারিস্টার এর আসার টাইম হইছে এতক্ষণে। তো বাবা পথের মধ্যে আসতে কোনও সমস্যা হয়নাই তো?
ক্লাসে সবাই হেঁসে উঠল। ফাহিম ক্লাসের শেষ বেঞ্চ টাই গিয়ে বসলো। আর একমনে জানলার দিকে তাকিয়ে রইল। ক্লাসে তখন স্যার পিথাগোরাসের উপপাদ্য পড়াচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর স্যার লক্ষ্য করলো ফাহিম ক্লাসে অমনোযোগী। অতঃপর স্যার বললও,
স্যার ঃ ফাহিম আমি কি বলছি শুনছশ?
ফাহিমঃ জী স্যার, শুনছি।
স্যার ঃ আচ্ছা বল, আমি এইমাত্র কি বলছি?
ফাহিমঃ স্যার আপনে বলছেন যে, ফাহিম আমি কি বলছি শুনছশ?
ক্লাসে সবাই একসাথে হেঁসে উঠল এবং স্যার তাহাকে বেত্রাঘাত করলো। ফাহিম মন খারাপ করিয়া বাসায় ফিরল এবং তাঁহার মা জিজ্ঞাসা করিল ,
মাঃ কি রে ক্লাস কেমন ছিলও? সব পড়া পারছশ?
ফাহিমঃ তুমি যে কি বোলো না মা , আজকে আমি ক্লাসে সব পড়া পারছি।
মা বলিল হাত-মুখ ধুইয়া খাইতে আসো। এভাবে ফাহিমের দিন কাটিয়া যাই। এইদিকে পরীক্ষা সন্নিকটে। সে অঙ্কের অও পারেনা। পরিক্ষার দিন সে একগাদা নকল লইয়া ক্লাসে ঢুকল। কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন দেয়া হইল। কিন্তু হায় হায় প্রশ্ন দেখিয়া ফাহিমের মাথায় হাত। সে যা নকল আনিয়াছিল তাঁহার একটাও আসেনাই। অতঃপর সাদা খাতা জমা দিয়া তাহাকে ক্লাসরুম থেকে বের হইতে হইল। এইবার সে আগের সব রেকর্ড ব্রেক করিয়া অঙ্কে শূন্য পাইল।
বাসায় কাহাকেও এই কথা না বলিয়া সে বলিল গনিতে ৫০ পাইয়াছে। এতে তার বাবা-মা একটু খুশী হইয়া বলিল যাক অবশেষে ছেলের উন্নতি হইতাছে। এদিকে কাজ কইরা ফিরার সময় পথিমধ্যে ফাহিমের বাবার সাথে তাঁহার স্যার এর সাক্ষাত হইল এবং যা হইবার তাহাই হইল। স্যার এর নিকট হইতে ফাহিমের অঙ্কের আসল ফলাফল জানিয়া সে বাড়িতে ফিরিল।
এদিকে ফাহিম ক্রিকেট খেলিয়া বাড়িতে আসিবামাত্র উত্তম-মধ্যম খাইল তাঁহার বাবার নিকট। পরদিন ফাহিম ক্লাসে ঢুকিল এবং তাঁহার স্যার তাহাকে বলিল ,
স্যার ঃ এইদিকে আই।
ফাহিম স্যার এর কাছে যাইতেই স্যার বলিল,
স্যার ঃ তুই বাসায় তোর আব্বা-আম্মারে কি কইছস?
ফাহিমঃ স্যার , বলছি যে আমি অঙ্কে ৫০ পাইছি।
স্যার ঃ খেপিয়া যাইয়া, মিছা কথা কইছস এর লিগা তোর দুই গালে দুইডা থাপ্পর গাল টা এইদিকে আন।
ফাহিমঃ স্যার এর কাছে গাল এগিয়ে দেয়াতে স্যার ওর মাথায় হাত বুলাইয়া দিলো।
স্যার ঃ তোর যদি ক্লাসে অঙ্ক বুঝতে সমস্যা হয় তুই আমাকে বলবি । দরকার পরলে আমি তোকে আলাদা সময় দিবো। দেখ ফাহিম তোর বাবা গ্রামের একজন সম্মানিত মানুষ তুই কেন ঠিক মতো পড়িস না। তুই বিজ্ঞানী Einistain এর নাম শুনছশ?
ফাহিমঃ জী স্যার।
স্যার ঃ সেও ছোটবেলাই অঙ্কে ফেল করত অথচ দেখ সে কি আবিষ্কার করছে। চেষ্টা থাকলে সব হয়। শুধু লাইগা থাকতে হই। কিছু বুঝলি?
ফাহিমঃ জী স্যার, বুঝলাম। কিন্তু আমার পরশুনা করতে ভালো লাগেনা।
স্যার ঃ পড়াশুনা রে পড়াশুনার মতো কইরা পড়বিনা বরং জানার জন্য পড়বি । তুই যেমন ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করস ভাব্বি এইটাও একটা খেলা । তাইলে দেখবি তুই একদিন এই খেলাতে বিজয়ী হবি।
পরিশেষে বলতে চাই কথা টা আসলেই সত্যি। আমাদের দেশের শিক্ষা বেবস্থা এত খারাপ যে পড়াশুনার প্রতি অভুক্তি এসে যায়। এতে শিক্ষক দের এগিয়া আসা উচিত, তাদের বুঝানো উচিত পড়াশুনা করা উচিত পড়তে হবে এই জন্য নয় বরং জানার জন্য।