somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাই লাস্ট উইশ।

০২ রা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জহির সাহেব আজ রাত ১২ টা ১ মিনিটে আপনার ফাঁশির রায় কার্যকর হয়েছে। আর মাত্র ৩ ঘণ্টা বাকী।
আপনার কোন শেষ ইচ্ছা আছে?
জহির ঃ জী। অনেকদিন ধরে মটর শুটি আর কই মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাইনা। সাথে ১ টা কাঁচা মরিচ। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।
কিছুক্ষন পর উকিল সাহেবের আগমন। তার চেহারা কিছুটা হতাশ। অনেক চেষ্টা করেও তিনি জহির কে নির্দোষ প্রমান করতে পারলেন না। যদিও তিনি জানেন যে মিলি আর মিলির স্বামীকে জহিরই খুন করেছে।
অবশ্য জহির নিজে থেকেই উকিল কে সব খুলে বলেছে। উকিলের চেহারা দেখে জহির বললও আপনার কিছু বলতে হবেনা আমি সব জানি। আর এজন্য আমার কোন আফসোস নেই। জহিরের বাবার বিশাল সম্পত্তি থাকা সত্তেও সে ছেলে কে বাঁচাতে পারলনা। এদিকে জহিরের মা রায় শুনার পর ৩ বার জ্ঞান হারিয়েছে। জহিরের চেহারাই নেই কোন ভয়, নেই কোন আফসোস। সে মনে করতে থাকে পিছনের দিন গুলর কথা। পড়িবারের ১ মাত্র ছেলে হওয়াই অনেক আদরের ছিল। অল্প বয়সেই অঢেল হাত খরচ পেত বাবার কাছ থেকে। বন্ধুদের সাথে নেশা করত আর রাতে নাইট ক্লাবে তো যেতই। এমন কোন কাজ নেই যা ও করতনা কারন সে জানতো যাই করুক বাবা তো আছেই।

জহির নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি তে সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিল। মেয়েদের কে উত্ত্যক্ত করা ওর যেন ১ টা স্বভাব ছিল। সেদিন সোমবার জহির আর তার ৪-৫ জন বন্ধু মিলে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিল। আর তাদের টপিকস ছিল কোন মেয়ে দেখতে কেমন। এই সময় ওর চোখ পরে গেটের সামনে দিয়ে আশা ১ টা মেয়ের দিকে। জহির অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় ওর এক বন্ধু বলে উঠে , কড়া জিনিস। মাল টা কে রে?
জহিরঃ কালকের মধ্যে সব খবর চাই ওর।
অতঃপর জানা গেলো তার নাম মিলি চতুর্থ বর্ষের ছাত্রি। ওদের থেকে ২ বছর সিনিয়র আর আগামী মাসে ওর বিয়ে।
জহিরের বন্ধুঃ দোস্ত ব্যাড লাক। ওই মেয়ে তো আমাদের থেকে বড় আর তাছাড়া আগামী মাসে ওই মেয়ের বিয়ে। ওইটারে বাদ দে।
জহিরঃ তো কি হইছে। বাদ দিমু মানে আমি ওরেই চাই। তোরা খালি দেখ আমি কি করি।
পরদিন মিলিকে আসতে দেখে জহির সরাসরি ওর কাছে যাই আর বলে,
জহিরঃ হ্যালো আপু, আমি জহির আপনার ২ ব্যাচ জুনিওর। আপনার মোবাইল নাম্বার টা একটু দরকার ছিল।
মিলিঃ কেনও?
জহিরঃ আমার আপনাকে ভাল লাগসে তাই।
মিলিঃ কি? এই ছেলে তুমার তো সাহস কম না। আমি কিন্তু প্রিন্সিপালের কাছে তুমার নামে কমপ্লেইন করবো।
জহিরঃ কুৎসিত ভাবে হাসে। করেন সমস্যা নাই কিন্তু এরপর আপনি এই ভার্সিটি তে টিকতে পারবেন তো? আমি তো বলতেসিনা যে আমাকে বিয়ে করো কিন্তু এঞ্জই তো সবাই করে।
কথা বলতে বলতে এক সময় ও মিলির হাত ধরতে গেলো। অতঃপর মিলি জহিরের বাম গালে খুব জোরে ১ টা চোর বসিয়ে দিলো। সবার সামনে। জহির হতভম্ব। তাছাড়া এই ঘটনাই ও টি সি খেতে খেতে বেচে গেলো ওর বাবার জোরে। কিন্তু এই অপমান ভোলার নই। এদিক দিয়ে ওর বন্ধুরা ওকে উসকাই,
বন্ধুঃ দোস্ত ওই মাইয়ার এত বড় সাহস তরে থাপ্পর মারে। তাও আবার সবার সামনে। আর তুই কিছুই কইলিনা। শেষ পর্যন্ত ১ টা মেয়ের হাতে চোর খাইলি। আমি তোর জাইগাই হইলে যে কি করতাম!!!!!!!!!! দোস্ত তরে কইতাসি তুই যদি পুলা হইয়া থাকস তাইলে ওরে এর শাস্তি তুই দিবি।
কিসের পুলা তুই। এইটা মান সম্মানের ব্যাপার।

জহির রাগে কাঁপতে থাকে। আজ পর্যন্ত ওর বাবা মা ওর গায়ে হাত তুলেনি আর ওই মেয়ে ওর গায়ে হাত তুললও। she has to pay for this.
মিলির বিয়ের দু দিন পর । ওই দিন মিলি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিল আর ওর স্বামী গোসল করছিলো এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। কাজের বুয়া দরোজা খুলতেই ওরা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে। এরপর শিটকিনি আটকে দেই। মিলিকে টেনে হিঁচড়ে বসার রুমে নিয়ে আসে। ওর চুলের মুঠি ধড়ে গালের মধ্যে ৪-৫ টা থাপ্পর বসিয়ে দেই। মিলি চিৎকার করতে থাকে। মিলির স্বামী এগিয়ে আসা মাত্রই ওরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওর গলাই বসিয়ে দেই মিলির চখের সামনে। এরপর,
জহিরঃ হারামজাদী আমারে অপমান কইরা ভাবছস সুখে থাকবি? তোর জাইগা হইল আমার পায়ের নিচে।
দ্যাখ তরে এহন আমি কি করি।
জহির মিলির গলা দুই হাত দিয়ে চেপে ধড়ে আর ওর বন্ধুরা মিলির হাত পা। মিলি বাঁচার শেষ চেষ্টা করেও পারলনা। কিছু সময় পর ওরা দেখল মিলির দেহে প্রান নাই। ওরা তারাতারি মিলির বাসা থেকে বের হয়ে আসে। বাসাই এসে জহির হাত মুখ ধুলো। এরপর ঘুমাতে গেলো। স্বপ্ন দেখছে ও দৌড়াচ্ছে জোরে অনেক জোরে আর যেখানেই থামছে সেখানে মিলি দারিয়ে হাসছে।

জহিরের ঘুম ভেঙ্গে যাই। ও ঘেমে গেছে। নিজের ভিতর একটা ভয় কাজ করছে। ওই দিন ঠিক সন্ধাই ও নিজে থেকেই থানাই যাই আর ওর খুনের কথা স্বীকার করে।


রাতের খাবার খেতে খেতে জহির ভাবে মা ছোটবেলাই কিভাবে ওকে মটর শুটি আর কই মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়াত। মনে মনে ভাবে আবার যদি সেই ছোটোটি হতে পারতাম তাহলে জীবনকে নতুন ভাবে গরতাম। জহিরের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×