সাকিব খান। কেউ কেউ তাকে ডাকে শাইক্যা। যে নামেই
ডাকুন না কেন,সে ই কিন্তু ঢালিউডের প্রান।
আমরা যারা বাংলা ছবি নিয়ে নাক ছিটকাই
কিনবা যারা বলে উঠি, 'ছে ছে ছে,কি খ্যাত রে বাপু '
তাদের কথা অবশ্য আলাদা। আমি নিজেও ওই গোত্রের ই সদস্য
ছিলাম। এখন যে নেই তা বলে দোজখে যাওয়ার পথ টা সুগম
করতে চাই না।
যখন ঢালিউডের সমালোচনা করা হয় ,মানদন্ড
হিসেবে হলিউড কিনবা বলিউড কে আইডল ধরা হয়। আমার
আপত্তি টা কিন্তু সেখানেই । Rambo
সিনেমা টি দেখেনি এমন লোক কম ই আছে (যারা movie
বেশী দেখে)। Rambo movie তে যখন Sylvester
Stallone একা ই সকল দুশমনদের মেরে কোপকাত
করে ,আমরা বাহ বাহ করে উঠি। আর ঢালিউডে সাকিব খান
যখন মাথায় পট্টি বেধে জঙ্গলের ফাক ফোকর দিয়ে শত্রুর
হাজার হাজার গুলি পাশ
কাটিয়ে হারিয়ে যাওয়া মা কে উদ্ধ্যার
করে,আমরা হা হা করে হেসে উঠি। হিসেব মিলাতে ব্যস্ত
হয়ে পরি রিভলবারে থাকে ৮গুলি, ১৫টা বের হইল কেমনে!
(প্রশ্ন টা আমারও)।
বলিউডের সালমান খান। আমার দেখা অনেক সিনেমা তেই
শাড়ী পরে মেয়ে সেজেছে , কানে তো দোল সবসময় ই পড়ে।
কিন্তু কখনও শুনিনি তাকে কেউ হিজলা বলতে। আর
বেচারা সাকিব!!কি দোষ ছিল বেচারার! একবার নাহয়
কানে দোল পরলই,তাই বলে তাকে এত পচানোর মানে হয়?!
(আধুনিক ছেলে বলে কথা,দোল পরতেই পারে)।
তাকে হিজলা বলে facebook এ যতগুলু post আছে,আমার
তো মনে হয় কোন celebrity কে নিয়েও এত post নেই।
এই post টি যদি আমার friend রা দেখে আমাকে যে কত
কত বিচিত্র নামে সম্মোধন করবে,করার ই কথা,আমরাও
ভার্সিটি লাইফ এ করেছিলাম। এখনও হইত
শাইক্যা কে নিয়ে কিছু লেখা হত না,যদি না...
আমি office এ যাওয়ার সময় সকালের নাস্তা বাইরেই
করি (ব্যাচলর মানুষ,রুটি বানানোর
বেলুন,পিড়ি পাবো কোথায়!!)। নাস্তা করার দোকানটি মুলত
একটা টঙ দোকান। ২টা কারনে টঙটি আমার পছন্দ। মামার
সাথে ভালো relation আর খাওয়ার সময় Tv তে খবর
দেখা যায়। সবসময় যে খবর চলে তা না,মাঝে মাঝে vcd
তে বাংলা সিনেমা ও চলে। বাংলা সিনেমা আমার
দেখা হইনা (ঠিক যে কারনে আপনিও দেখেন না), তাই টঙ এ
বসে ১০-১৫ মিনিট সিনেমা দেখতে তেমন খারাপ লাগেনা।
যদিও প্রত্যেক সিনেমা তেই অসংগতি থাকেই তবুও কিছু
অসংগতি একদম ই বেমানান। উদাহরন দেওয়ার লোভ
সামলাতে পারছিনা।
১. ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়ার সময় সাকিব এর
মা তারে যে কাপড় দিয়া পেচাইছিল,ওইডা সাকিব এর
হাতে বড় হওয়া পর্যন্ত ছিল। ঠিক আগের মতই
ঝকঝকা,ফকফকা (কোন সাবান use করছে জানিনা)
২. সাকিব এর এক ঘুষি তে পেপে গাছের
সাথে বাড়ী খাইয়া villan এর ইন্তেকাল (!!!)
৩. সাকিব রে ১০/১২ জন গুলি করে কিন্তু লাগেনা। সাকিব
পিছন থেকে আইসা দমাদম
কিলাইতে থাকে(গুলি করে সামনে,সাকিব পিছনে গেল
কেমনে)
৪. villan কে ঘুষি দিয়া dustbin এ ফেলে,কাক
আইসা ঠুকরাইয়া খাইয়া ফেলে (its interesting)
৫. ব্লা ব্লা ব্লা...
এমন ভুল হাজার হাজার, চাইলেই যে কেউ
ধরতে পারবে,সাকিব
কে পচাতে পারবে,বাংলা ছবি কে নিয়ে হাসতে পারবে।
আমিও হাসি। কিন্তু হাসেনা তারা যারা এইমাত্র
রোদে পোড়ে আসছে টং এ একটু বিশ্রাম নিতে,
হাসেনা তারা যারা ঘরে রান্না বসিয়ে বেড়ার ফাক
দিয়ে TV দেখে, হাসেনা তারা যারা school ছুটির পর
ঘরে না গিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে সাকিব এর ছবি দেখে।
আমি দেখেছি সাকিব এর ছবি মানে তাদের কাছে অন্য কিছু।
তারা tom cruise কিনবা Jason statum
কে চিনেনা,চিনতে চায়ও না। কারন তাদের আছে সাকিব
খান। সাকিব মার খেলে তারা আহ করে,সাকিব মার
দিলে বাহ বাহ করে,সাকিব কস্ট পেলে তারা চোখ
মুছে,সাকিব মজা পাইলে হাততালি দেয়।
এইসব কিছুই আমাদের হইত স্পর্শ করেনা। আমরা তাদের হইত
খ্যাত বলেই ডাকি। সাকিব কে পচাতে পাড়ানোকেই
বলি smartness। যত ভালো অভিনয়ই করুক
তাকে হিজলা উপাধি থেকে রেহাই দিবনা। অথচ, সালমান
কিনবা টম ক্রুজ যা ই করুক,যা ই বলুক তারাই idol।
নাহলে সবাই আমাদের খ্যাত বলবে।
আমরা যারা মধ্যবিত্ত কিনবা উচ্চ ,তাদের বিনোদন পাবার
মাধ্যম অনেক। এক mobile টিপেই দিন কাটানো যাবে।
কিন্তু নিম্নবিত্তদের বিনোদন মানেই বাংলা সিনেমা,তাও
সাকিব খানের্। তাদের কাছে সাকিব ই সব। সাকিব
কে পচানোতে কোনো বাহাদুরি নেই,বাহাদুরি হবে যখন
আপনি নিজে তার যায়গায় যেতে পারবেন।মানুষের দোষ
ধরা খুব সহজ,এইবার একটু গুনটাও ধরে দেখেন। তাহলেই বুঝব
আপনি কেমন বাহাদুর্।
আমি জানি, এই post টির খুব একটা value হবেনা,কেউ
হইত পড়তে গিয়েও পড়বেনা। যারা পড়বে অনেকেই হইত অনেক
বাজে comments ও দিবে। তাদের জন্যই
বলছি,আপনারা হইত কখনও টঙ এ যাননি। গেলেও শুধু উদর
পুর্তি করে চলে এসেছেন। আমি বলি কি,কাল একবার সময়
করে যান। সাকিবের ছবি চালু থাকলে কস্ট করে শেষ পর্যন্ত
দেখুন।
কি দেখলেন? রোদে পোড়া মানুষদের যে প্রশান্তির
হাসি,আপনি কি কখনও সালমান কিনবা টম ক্রুজের
সিনেমা দেখে তা দিছেন??? প্রশ্নটা থেকেই গেল...